তারেক জিয়ার মামলাঃ উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার না শত্রু দমন?

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৩৯:১৭ রাত

।। ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার।।

অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট গ্রহন করেছে। এ মামলায় নিম্ন আদালতের নথিও তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারিক আদালতে তিনি জামিন চাইতে পারবেন। বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। আদালতের কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করে এমন কিছু বলতে বা লিখতে চাইনা। কিন্তু আদালত যে গোপন অঙ্গুলী ইশারায় কখনো বেগবান আবার কখনো শ্লথ হয়ে যায়,সেই গোপন শক্তির উদ্দেশ্যকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ জানানো যায়।

জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতেই উদ্দীন সরকারের আগমন ঘটেছিল। তাদের নির্দেশে অমানবিক নির্যাতনে প্রায় পঙ্গু হয়েছিল তারেক রহমান। দাবী অনুযায়ী লগী-বৈঠার আন্দোলনের ফসল ছিল সেই সরকার। যে কারনে লোক দেখাতে হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু ষরযন্ত্রের নীল নকশা হিসাবে তাকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।আর অন্যদিকে তারেক রহমানকে চিকিৎসার নামে প্রবাসে যেতে বাধ্য করা হয়।সেই থেকে তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি কিছুটা সুস্থ। তবে ডাক্তার তাকে এখনো পূর্ন সুস্থ বলে ছাড় পত্র দেয় নাই। এই কারনে ইচ্ছা থাকলেও তিনি এখনও দেশে যেতে পারেননি।কিন্তু সরকার তাকে যত শিঘ্র দেশে ফেরত নিতে চায়। এই উদ্দ্যশ্যে ইন্টারপুল নোটিশ,ওয়ারেন্ট সহ সকল প্রকার হম্বিতম্বি করা শেষ। কিন্তু কাজ কিছুই হয় নাই। সর্বশেষ হাইকোর্ট তাকে দেশে ফিড়ে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পন করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে সরকার তাকে সত্যই দেশে ফেরত নিতে চায় কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উদ্দীন সরকার দুর্নিতির অভিযোগে মামলা করেছিল।সেই মামলা গুলো আজও চলমান। উদ্দীন সরকার কিন্তু হাসিনার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা করেছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন হয়ে উদ্দীন সরকারের দায়ের করা তার সকল মামলা নির্বাহী আদেশে উঠিয়ে নেন। যুক্তি হল ঐ মামলা গুলো ছিল মিথ্যা,বানোয়াট এবং হয়রানি মূলক। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যদি মিথ্যা,বানোয়াট এবং হয়রানি মূলক হয় তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একই সরকারের আনীত অভিযোগ সত্য হয় কোন যুক্তিতে? হাসিনা সরকার যদি আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থাবান হয় তবে উচিত তারেক রহমানের মামলা গুলোও উঠিয়ে নেওয়া। আর সেটাই হবে ন্যায় বিচার। কিন্তু হাসিনা সরকার মামলা গুলো শত্রু দমনের অস্র হিসাবে ব্যাবহার করছে।

ক্ষমতায় থাকার সময় তারক রহমানের বিরুদ্ধে হাওয়া ভবন সংস্লিষ্ট অনেক দুর্নিতির অভিযোগে বর্তমান সরকারও বেশ কিছু মামলা করেছে। অভিযোগ যে কারো বিরুদ্ধেই উঠতে পারে। তবে অভিযোগ চুড়ান্ত প্রমানের পরই তাকে দুর্নিতিবাজ বলা যায়,তার আগে নয়। আর কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খন্ডনে বিদ্দমান আইনি কাঠামোতে সকল সুবিধা পবার অধিকার ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তির রয়েছে। যে দেশে আধা মন্ত্রী কামরুলরা হুংকার দিলে ঘুমন্ত দুদক জেগে উঠে আর আদালত ওয়ারেন্ট প্রসব করে সেখানে অভিযুক্ত ব্যাক্তির সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ প্রায় অসম্ভব। বর্তমান সরকারের অধীনে পরিচালিত আদালতে তারেক রহমান কতটুকু ন্যায় বিচার পাবেন সেটা কেউ বলতে পারেনা।

তারেক রহমানকে গ্রেপ্তরে ইন্টারপুল নোটিশ জারী করেছিল। একটি আদালত ওয়ারেন্ট জারী করে আবার প্রত্যহারও করেছিল। সর্বশেষ উচ্চ আদালত মারফত তাকে দেশে ফিড়ে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পন করতে নির্দেশ দেওয়া হল। সরকার যদি তাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য এটা করে থাকে ভাল কথা। তবে এসব করে তাকে ফেরত আনা যাবেনা। কারন তিনি একটি দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। সরকার নিজেও জানে এভাবে তাকে দেশে আনা যাবেনা। কিন্তু তবুও এসব করা হচ্ছে জনমনে এই ধারনা সৃষ্টি করতে যে ,সরকার সত্যই তাকে ফিড়িয়ে আনতে চায় । প্রকৃত পক্ষে সরকার চায় দেশের ভেতর এমন পরিস্থিতি কায়েম রাখতে যাতে তিনি নিজ থেকেই দেশে না আসেন।

তারেক রহমান একজন প্রমানীত দক্ষ সংগঠক। তার সাংগঠনিক ক্ষমতার সুফল বিএনপি পেয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচনে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে জয়ী হওয়া অবৈধ সরকারটি অতি শীঘ্র আবার নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে, এটা সরকারের রংহেডেড শীর্ষ ব্যাক্তিও ওয়াকিবহাল। আর নূতন নির্বাচনের তারিক ঘোষিত হলে তারেক জিয়া যদি ভোটের আগে দেশে ফিড়েন, সেটা সরকারের জন্য বিরুপ অবস্থা সৃষ্টি করবে। ভোটের জন্য তিনি দেশ চষে বেড়াবেন।এতে জণসমর্থনহীন সরকারের পরাজয়ের ব্যবধান আরও বারাবে। অপরদিকে তাকে যদি জেলে পুরা হয়, সেটাও সরকারের জন্য ভয়ংকর পরিনতি ডেকে আনতে পারে।কারন মুক্ত তারেকের চেয়ে বন্দি তারেক ভোটারের কাছে অনেক বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে বরং তাকে জুজুর ভয় দেখিয়ে নির্বাচন কালীন সময় প্রবাসে রাখাই সরকারের কাম্য।

একটি কথা এখন সবার জানা।শেখ পরিবারে আবির্ভূত নতুন পীর চমক বাবা জয়। তিনি ফেসবুক আর টুইটারে জাতিকে গণতন্ত্রত শিক্ষা দেন। ধবলা সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে মার্কিন মূলুকে থাকেন। নব্বই ভাগ মুসলিম অধিবাসির দেশে পর্দা,মাদ্রাসা,হেফাজত এসব নির্মূলের স্বপ্ন দেখেন।নৌকা অস্তমান হলেও তিনি আওয়ামিলীগ ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে বলে তথ্য দেন। তারেক রহমান যখন কৃষি,শিল্প,বাণিজ্য এসব নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা বয়ান করেন তখন বুতল বাবা দেশীয় পুষাক পরে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে ভোটারের মন পেতে ব্যস্ত। এমন জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত শিক্ষিত ছেলে যে রাখাল রাজা তারেককে সামলাতে পারবেনা এটা জনগণ যেমন জানে তেমন তার মা হাসিনাও ওয়াকিবহাল। তাইতো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অঢেল অর্থ বিনিয়োগে দেশী-বিদেশী মিডিয়া চক্রান্তের ডালি সাজায় তার চরিত্র হননে। এত কিছুর পরও তার পাহাড় সম জনপ্রিয়তা একটুও কমানো যায়নি। কাজেই জেনে শুনে এমন শত্রু কি ঘরে ফিরতে দেওয়া যায়?

তারেক রহমান মাটি ভেদ করে উঠা কোন তৃণলতা নন যে ইচ্ছে করলেই ছাগলে মারাবে। তার পিতা বাংলাদশের স্বাধীণতার মহান ঘোষক আর মাতা তিন তিনবার নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী। তিনি নিজে বিএনপির মত প্রতিষ্ঠিত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। এমন ব্যাক্তি একদিনতো দেশে ফিড়বেনই। সেদিন যে বাধ ভাঙ্গা জনজোয়ারের সৃষ্টি হবে তার স্রোতে ডিজিটাল স্বপ্নচারী পুত্র আর অটিজম কণ্যারা খরকুটুর মত ভেসে যাবে। আর সেই পরিস্থিতি আচ করতে পেরেই হাসিনা সরকার আদালতের প্রতি অশুভ নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে যাতে মামলার ভয়ে তারেক জিয়া প্রবাসে থাকতে বাধ্য হন।

বিষয়: রাজনীতি

১৪০৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

164745
২০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:১০
হতভাগা লিখেছেন : তারেকের উচিত মামলাগুলো এসে ফেস করা । জামায়াতরা তো করছেই ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File