সজীব জয়দের ঘারে বেনিয়ার ভূত
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৫০:১৯ রাত
।।ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার।।
হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটলে এটি প্রমানীত,দক্ষিন এশিয়ার ছুট্ট দেশ বাংলাদেশ, বার বার উপনিবেশিক শাসনের খপ্পরে পরে শাসিত,শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছে। এ দেশের মা,মাটি আর মানুষের ঘাম ঝরানো অর্জন বেনিয়ার দেশে পাচার হয়েছে অবলীলায়। এ দেশে অর্জিত সম্পদ ওরা নিজ দেশের উন্নয়নে ব্যাবহার করেছে কিন্তু অভূক্ত থেকেছে সেই সব কৃষক,শ্রমিক আর মজুর যাদের ঘামের ফসল ছিল ঐ সম্পদ।সামান্য ব্যতিক্রম বাদে বেনিয়ারা কখনোই বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তাও করেনি। বরং এই দেশটাকে তারা ব্যবহার করেছে সম্পদ অর্জনের ভাগার হিসাবে আর লুন্ঠিত সম্পদ পাচার করেছে সেই দেশে যেখানে তারা স্ত্রী পরিজন নিয়ে বসবাস করত। বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে বেনিয়ারা কেবল উদাসীন ছিলনা বরং দেশটাকে উন্নয়ন বঞ্চিত রেখে নিজ দেশের আখের গুছানোই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
বেনিয়ারা যাতে সূনিপুন ভাবে লুটপাট চালাতে পারে সে জন্য তারা দেশের ভেতরেই সৃষ্টি করেছিল সুবিধাবাদী শ্রেনী। রাজায় রাজায় বিভেদ সৃষ্টি করা “ডিভাইড এন্ড রোল” প্রথাতো ছিলই, তার উপর আবার রাজা বাহাদূর,নবাব,জমিদার,স্যার এ সব তকমা দিয়ে সুবিধা বাদী শ্রেনীকে কবজায় রেখে বছরের পর বছর দেশটা শোষণ করেছে। বেনিয়ারা রাজা, রাজারা জমিদার আর জমিদাররা লাঠিয়াল পোষে শোষনের ধারাবাহিকতা তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। কিন্তু জুলুম আর শোষনেরও তো একটা শেষ আছে। একসময় দেশের কৃষক,শ্রমিক,মজুর এক হয়ে জেগে উঠলেই বেনিয়ারা এই দেশ ছেড়ে বিদায় নেয়। কিন্তু দেশীয় রাজনীতিকদের ভুল সিদ্ধান্ত আর তৎকালীন পরিস্থিতির কারনে এই কূলে মাথা আর ঐ কূলে লেজ মাঝখানে মহা ভারত নিয়ে জন্ম তৎকালীন পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র।
পূর্ব আর পশ্চিম নিয়ে নতুন দেশ সৃষ্টি হলেও পশ্চিমারা নতুন বেনিয়া হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। যথারীতি তারাও পূর্বের মাল পশ্চিমে পাচার করেছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। শাসনের ডান্ডা আর শোষনের মাত্রা চলেছে সমান তালে। লাঞ্চনা আর বঞ্চনার ঘানি টানতে টানতে এদেশের মানুষ যখন একেবারেই ক্লান্ত ঠিক তখন এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ,যেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি বাদে সকলের ভাষা,সংকৃতি,কৃষ্টি সবই এক। স্বাধিকার আন্দোলনে জয়ী বাংলাদেশী জাতি ভেবেছিল এবার আর সইতে হবেনা লাঞ্চনা,গঞ্জনা, থাকবেনা শোষন আর শাসনের ডান্ডা। শাসক আর শাসিত সকলের মিলন মেলায় ধরার বুকে স্বর্গ সুখে এক হয়ে থাকবে সবাই। কিন্তু হায় মানুষ ভাবে এক আর আরেক।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পরের ইতিহাস সকলেরই জানা আছে। ঘটনার পরিক্রমায় দেশের নেতৃত্ব নিতে অপেক্ষমান স্বাধীন দেশের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম। এই নতুন প্রজন্মের দিকেই এবার দৃ্টি দেওয়া যাক। নতুন প্রজন্ম শিক্ষা,ব্যবসা বা রাজনৈতিক প্রয়োজনেই অগ্রজ নেতৃত্বে তোলনায় অনেক বেশী বর্হিমূখি। তাদের অনেকের আবার জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে দেশের বাহিরে, কারো আবার সারা জীবনটাই। বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের বংশধরেরা দেশের ষোল কোটি মানুষের মধ্যে একজনকেও খুজে পায় নাই যারা তাদের যোগ্য জীবন সঙ্গী হতে পারত। ভিনদেশীতে তাদের আশক্তি প্রকট। প্রেম ভালবাসার কারনে সেটা থাকলে ভাল কথা,কারন প্রেম মানেনা জাতকূল। কিন্তু বাংলাদেশী সকল যুবক-যুবতী তাদের কৌলিন্যে ঠাই পেতে অযোগ্য এই মানষিকতা থেকে সিদ্ধান্ত এসে থাকলে সেটা খুবই আপত্তিকর। আজকের কূলিনদের ভুলে গেলে চলবেনা রাজা জমিদারদের বিপরীতে তাদের পূর্ব পুরুষ অতি সাধারন ছিলেন আর এই সাধারন মানুষের নেতৃত্ব এদেশের মানুষ পছন্দ করত বলেই রথীমহারথীদের পিছনে ফেলে তারা নেতৃত্বে আসতে পেরেছিলেন।
বাংলাদেশ ষোল কোটি মানুষের দেশ। শত সীমাবদ্ধতার ভেতরেও দেশটাকে আমরা সবাই ভালবাসি। প্রতিদিন গুম,খুন,ছিনতাই,চাঁদাবাজী সহ অসংখ্য হয়রানির বুঝা মাথায় নিয়েও এদেশের কৃষক,শ্রমিক,মজুর,চিকিৎসক,প্রকৌশলী,ব্যবসায়ী সবাই একযোগে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতে একদিকে মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে সাফল্য পাচ্ছে আর দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যারা দেশের নেতৃত্ব দেন বা ভবিষ্যতে দিবেন বলে আশা রাখেন,তারা সব সময় দেশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে ভিন্ন দেশে থাকেন। তাদের স্ত্রী সন্তানরাও তাই। অনেকে আবার নিরাপত্তার দোহাই দেন যদিও তাদের গুম হবার ভয় নেই এসএসএফ,র্যাব সহ সকল নিরাপত্তা ব্যাবস্থা তাদের জন্য রয়েছে। দেশের সাধারন মানুষকে নিরাপত্তা,জানমালের নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও নিজের নিরাপত্তার ভয়ে অস্থির স্বর্থপর এসব রাজনীতিক বিদেশে বসে ফেস বুক আর বিভিন্ন ব্লগে দেশবাসীকে ছবক দেন। কিন্তু নির্বাচন সমাগত হলে ঠিকই আবার দেশীয় পুশাক সজ্জি,মুখে আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে খাটি দেশ দরদী সাজেন।
দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী তো বটেই, সকল প্রবাসী তাদের শ্রম লব্দ অর্থ দেশে প্রেরন করে দেশের ভান্ডার বৈদাশিক মুদ্রায় ভরে দেয় এই আশায় যাতে তাদের দেশটার উন্নতি হয়। দেশের উন্নতিকেই নিজের ভবিষ্যতের উন্নতি বলে জ্ঞান করে। অথচ আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে উজির,নাজির,আর্দালি,চাপরাশি যারা ক্ষমতার গন্ধ পায়, তারা নিজেরা ঘুষ,কমিশন,চাঁদা যা কিছুই পায় সেটা পাচারে ব্যাস্ত থাকে সেই দেশে যেখানে তাদের স্ত্রী পরিজনরা বসবাস করে। আগে বেনিয়ারা নবাব,জমিদার আর লাঠিয়াল দিয়ে অর্থ শোষন করত। প্রভাবশালীদের বিভিন্ন উপাধী দিয়ে কব্জায় রাখত। আর শোষিত অর্থ নিজ দেশে পাচার করত। শীর্ষ নেতৃত্ব এখন উজির,নাজির আর সভাসদ সদস্যের মাধ্যমে ছাত্র,যুবক,শ্রমিক সহ বিভিন্ন শ্রেনীকে লাঠিয়াল বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটের কু-কাজটি করে যাচ্ছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। আজকের দলকানা বুদ্ধিজীবিরা স্যার,বাহাদুর উপাধি না পেলেও বিভিন্ন পদ,পুরস্কার আর ক্ষেত্র বিশেষ নগদ সহায়তার কাছে বিবের বিক্রি করেন। তারা নিজ ঘরনার শাসকদের ভুল ধরাতো দূরে থাক অন্যায় গুলো গণচক্ষুর আড়াল করতে সবরকম সহায়তা প্রদান করেন।
শাষন কার্যের ভাগদাররা যদি দেশ প্রেমিক হতেন,প্রজা দরদী হতেন,ক্ষমতার মসনদ অপেক্ষা জনগনকে বেশী ভালবাসতেন, তবে তারা নিজের ঘুম হারাম করে গদীকে তুচ্ছ ভেবে জণকল্যান মূলক কাজে আত্নিয়োগ করতেন ।ক্ষমতার লোভে দেশের স্বার্থ বিদেশে বিকিয়ে না দিয়ে ক্ষমতাকেই তুচ্ছ ভাবতেন। সাধারন জনগন যেমন নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করে,জীবিকার প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থান করলেও সঞ্চিত অর্থ প্রেরন করে নিজ দেশে,ক্ষমতার ভাগিদাররা বা বংশধররাও তাই করতেন। কিন্তু দূঃখ জনক ভাবে দেখা যায় তারা দেশের ভেতর বিভিন্ন শ্রেনী আর লাঠিয়াল দিয়ে যে অর্থ সম্পদ শোষন করে, সেটার নিরাপদ উপভূগে বংশধরেরা উন্নত দেশে বসবাস করে সেখানে কাল টাকার পাহাড় বানায়। কদাঁচ দেশের মাটিতে বিভিন্ন ধানধায় উকিঝুকি মারলেও স্হায়ী ভাবে দেশ মূখি হবার চিন্তা ওরা কখনওই করেনা। আর যারা এই দেশটাকে স্ত্রী পরিজন নিয়ে বসবাসের উপযোগীই মনে করেনা তারা ঐ দেশের উন্নয়নে আত্ম নিয়োগ করার কোন কারন নেই। শাসক শ্রেনীর মাথায় বেনীয়ার ভূত আছর করেছে বলেই ওরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে,নিজ দেশটাকে বসবাসের অযোগ্য মনে করে কিন্তু অর্থ ও ক্ষমতা অর্জনের মোক্ষম ক্ষেত্র ভেবে এই দেশটাকে চিরতরে ছেড়ে যায় না । বরং শোষনের এই নিরাপদ ক্ষেত্র আজীবন দখলে রাখতে নতুন নতুন ছল চাতুরীর আশ্রয় নেয়। বেনীয়ার এই ভূত ওদের মাথা থেকে দূর হবার কোন লক্ষন নাই। দিনদিন বেনীয়াপনার মাত্রা উর্ধ্ব সূচক দেখাচ্ছে।
বিষয়: রাজনীতি
১৫২৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
না হলে সেই ৪০-৪২ বছরের ঘটনা আঁকড়ে না ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেত ।
২য় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার বোমা খেয়েও জাপান এখন বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির একটা । এটা তারা আমেরিকাসহ ততকালীন মিত্র শক্তির সবার সাথে দোস্তী করেই হয়েছে।
তারা কিন্তু কথায় কথায় ১৯৪৫ এ ফিরে যায় না । যদি ফিরে যেত তাহলে তাদের এই পথ চলা কঠিন হয়ে যেত । জাপানের আশে পাশে কিন্তু রাশিয়া , চীন আছে যারা সে সময় অক্ষশক্তির সাথে ছিল না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন