সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও মুন্নী সাহার প্রতিক্রিয়া
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:১২:৪২ বিকাল
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের নামে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা সংবিধান থেকে উঠিয়ে দিলে বিরোধী দল সরকারের অন্য সকল ব্যর্থতা নিয়ে আন্দোলন না করে বরং নির্বাচন কালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে জামাত তাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের কর্মসূচী চালিয়ে যেতে থাকে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের ত্রুটি বিচ্চুতি নিয়ে,যেখানে তাদের শীর্ষ নেতাদের ৭১ এ মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে বিচার হচ্ছে। বিএনপি-জামাত জোট যখন এসব কর্মসূচী নিয়ে ব্যাস্ত,তখন সরকার অবলীলায় দুর্নিতি,সন্ত্রাস আর লুটপাট চালিয়েছে। শেয়ার বাজার,ডেসটিনি,হলমার্ক সহ অসংখ্য খাতে দুর্নিতি করে লক্ষ লক্ষ সাধারন মানুষকে পথে বসিয়েছে। পিলখানা হত্যার মত বিভৎস ও জঘন্য ঘটনার মাধ্যমে একই সাথে বর্ডার গার্ড এবং সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য গত পাঁচ বছর কখনোই সাধারন মানুষের ক্রয় সীমায় রাখতে পারেনি। কিন্তু আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য,বিরোধীদল এসব জণস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বরং সরকারই একের পর এক বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে বিরোধীদলকে আন্দোলনের ইস্যু পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। ফলে একটি ইস্যুতে ব্যাপক জনসংশ্লিষ্টতা সৃষ্টির আগেই বিরোধীদল সরকার সৃষ্ট অন্য ইস্যুর দিকে নজর দিতে বাধ্য হয়েছে এবং যথারীতি আন্দোলন ব্যার্থ হয়েছে। সরকার সৃষ্ট জঘন্যতম ইস্যু গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল আমার আজকের আলোচ্য বিষয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা।
৫ই জানুয়ারীর ভোটার এবং প্রার্থীবিহীন নির্বাচনে ১০% ভোট পেয়ে ২৩২ আসনে জয় লাভ করে যখন ফ্যাসিস্ট প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন,ঠিক তখনই নির্বাচনোত্তর সংহিংসতায় একদল সংখ্যা লঘু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যা এই মূহুর্তে কারো কাম্য ছিলনা। সেই আক্রান্ত সম্প্রদায়েরই একজন, সাংবাদিক মুন্নী সাহা। তিনি ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন, আর সহ্য করবেননা,এবার তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আইন নিজের হাতে তোলে নিয়ে তিনি কার বিরোদ্ধে যুদ্ধ করবেন,সরকার না বিরোধীদলের?
আলোচ্য সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি সকল নির্বাচনেই বর্তমান সরকার আওয়ামিলীগের ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যাবহার হয়ে আসছে। যদিও হিন্দু সম্পত্তি দখল,মন্দির দখল,ভোটের আগে-পরে ভীতি প্রদর্শনে আওয়ামিলীগ অদ্বিতীয়, তবু তারা নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে আওয়ামিলীগেই ভোট দিয়েছে। ডান পন্থী জামাত বা মধ্যপন্থী বিএনপি সেই অর্থে কখনোই তাদের আস্থার প্রতীক বলে বিবেচিত হয়ে উঠেনি। কারন তাদের বুঝানো হয়েছে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হবে। তাই জুজুর ভয়ে সংখ্যা লঘুরা চোখ বন্ধ করে নৌকায় সীল মেরেছে।
রামু,সাতক্ষীরা,সিরাজগঞ্জ,ঠাকুরগাঁও,কুষ্টিয়া সহ সারাদেশে যখনই সাম্প্রদায়িক আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে,কোন বিচার বিশ্লষন বা প্রমান ব্যাতিতই অঙ্গুলী প্রদর্শন করা হয়েছে বিএনপি জামাতের দিকে। অথচ নিরপেক্ষ তদন্ত,পত্রিকার রিপুর্ট এবং অসংখ্য ভিডিও ক্লীপে প্রমান রয়েছে রামু ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামি-ছাত্র-যুবলীগ,সাতক্ষিরায় ছাত্র-যুবলীগ,সিরাজগঞ্জে মন্ত্রী টুকু,কুষ্টিয়ায় হুইপ উহাব সহ সারাদেশেই এসব ঘটনায় জড়িত আওয়ামিলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলাপ্রশাসকরা যে রিপুর্ট পাঠিয়েছেন সেখানেও আওয়ামিলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট। অবস্থা এতই বেগতিক যে কানা মিজান খ্যাত মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান একটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলতে বাধ্য হয়েছেন জামাতকে দায়ী করে সরকার পার পাবেনা,হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্ঠান ঐক্য পরিষদও আওয়ামিলীগকে দায়ী করছে।
বিএনপি-জামাতের নেতারা বরাবরই বলে আসছে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রাখার পক্ষে,সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তায় তারা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠনের আহবান জানাচ্ছে। বিরোধীদল তার অবস্থান থেকে সম্ভব সব কিছুই করার চেষ্টা করছে,যদিও ধর্ম,বর্ণ নির্বিবাদে সকলের নিরাপত্তা দান করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
ভোটার বিহীন নির্বাচনের কলঙ্ক জনক আলোচনা থেকে দেশবাসী তথা বিশ্ব নেতাদের নজর ঘুরিয়ে দেবার আশা নিয়েই সরকার এবার সংখ্যা লঘুদের উপর নগ্ন হামলার প্রজক্ট হাতে নিয়েছে।
ছাত্র,শিক্ষক,পুলিশ,সাংবাদিক,মানবাধিকার কর্মী সহ দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছেই এই সরল সহজ সত্য খবরটি পৌছে গেছে। বুম হাতে খবরের খুজে দেশ-বিদেশ ছুটে বেড়ানো মুন্নী সাহার কাছেও নিশ্চই পরিষ্কার হয়ে গেছে কে কি উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক হামলা করছে। যদি সাহস থাকে,সততা থাকে,সাম্প্রদায়িক হামলা মোকাবেলা করার সৎ উদ্দেশ্য থাকে তবে তার উচিত তার সম্প্রদায়ের সকলকে সাথে নিয়ে আওয়ামিলীগের এই ঘৃন্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদে মাঠে নামা। আর এ ক্ষেত্রে তার অপছন্দের বিএনপি-জামাত যথা সম্ভব সহযোগীতা করবে। কুকর্মে নিমজ্জিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে,না প্রকৃত সত্য প্রকাশ করে চক্রান্তকারীদের মুখুশ খুলে দিবে সে সিদ্ধান্ত মুন্নী সাহাদেরই নিতে হবে। সময় বেশী নাই,যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
২০১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন