নাজীরা থেমেছিল ১৯৪৫ সালে-বাকশালীরা থামবে কখন!

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:২৫:৪৮ বিকাল



“হাসনাত”

“ন্যাসনাল সোসালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি” যা সংক্ষেপে নাজী পার্টি নামে পরিচিত, এর প্রধান হিসেবেই এডল্ফ হিটলার জার্মান শাসন করেছেন । তার শাসন আমলেই জার্মান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেখানে নাগরিক জীবনের প্রতিটি ধাপ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে । ১৯৩৩ সালে হিটলার চ্যান্সেলর নিযোক্ত হয়েই বিরোধী মতের দমন পীড়ন শুরু করেন ।১৯৩৪ সালে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে ফোয়েরার তথা লিডার ঘোষনা দিয়ে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত করে তাকে সকল আইনের উপরে স্থান দেওয়া হয় । রেসিজমকে তার ক্ষমতার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে নীল নয়না জার্মানকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি বলে প্রচার করা হয় । ইহূদি এবং অন্যান্য জাতি গুষ্ঠীকে অজাত ও অনাকাংক্ষিত বিবেচনায় নির্যাতন ও হত্যা করা হয় । লিবারেল শ্রেনী,সুশীল সমাজ ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বিরোধী শক্তিকে নির্যাতন করা,হত্যা করা, জেলে বন্দী করা বা দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয় । খৃষ্ঠান চার্চ এবং এর প্রধানরাও তার নির্যাতনের শিকার হন ।

নাজী শাসনে মত প্রকাশের কোন সুযোগ ছিলনা । সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করা হতনা । সমালোচনাকারীকে কঠিন হস্তে দমনের জন্য গেস্টাপো বাহিনীকে ব্যবহার করা হত । এই পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়েছিল সেই সমস্ত তরুণ নাজী সদস্যদের দিয়ে যারা মনে প্রাণে হিটলারের কঠিন নীতিতে বিশ্বাস করত । যে কোন মানুষকে যে কোন সময় তারা ধরে নিয়ে আটক,নির্যাতন,এমনকি হত্যা করতে পারত । ইহূদী সম্প্রদায়ের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুন । তাদের নির্যাতন বা হত্যা করতে কোন কারন দেখাতে হতনা,তারা ইহূদী শুধু মাত্র সে কারনেই তাদের আটক,নির্যাতন,ধর্ষন এমনকি হত্যা করা হত । জার্মান জাতির তুলনায় তারা নিকৃষ্ট,শুধু মাত্র সেই বিবেচনাতেই ষাট লক্ষ ইহূদী নিধন করা হয় । এত কিছুর ভেতরেও হিটলার দুটি কাজ খুব স্বার্থক ভাবে করতে পেরেছিল । এক,অর্থনৈতিক দূর্দশা থেকে জার্মানকে বের করে আনা । দুই,জার্মান জাতিকে বুঝানো,তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি আর অন্যরা নিকৃষ্ট । নিকৃষ্ট বাকী জাতি গুষ্ঠির প্রতি কোন প্রকার শ্রদ্ধা,ভালবাসা বা করুণা কিছুই থাকতে নেই। ফলে তৎকালীন জার্মান সমাজটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল ।

সবকিছুর যেমন শুরু আছে,তেমনি শেষও আছে । হিটলার এবং তার গেস্টাপো বাহিনীর অত্যাচার,হত্যা আর নির্মমতার মহোৎসবের ইতি ঘটে তখনই যখন দ্বিতীয় বিশ্ব যোদ্ধে অক্ষ শক্তির পরাজয় ঘটে । চরম দাম্ভিক হিটলার মিত্র বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে নিজ বাঙ্কারে আত্মহত্যা করে । গেস্টাপো বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যেকেরই নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে বিচার হয় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে । সেই থেকে আজও নাজী পার্টী বা তার আদর্শ জার্মানতো বটেই সারা দুনিয়াতেই নিষিদ্ধ ।

এবার আমি বাকশাল নিয়ে কিছু কথা লিখব । মাওলানা ভাসানী ও জননেতা শামসুল হক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ ১৯৫৭ সালে শেখ মুজিব কর্তৃক ছিনতাই হবার পর তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকে । ১৯৬২ সালে শহীদ সরোয়ার্দী মৃত্যু বরণ করলে দলটির উপর শেখ মুজিবের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং আগরতলা মামলার কারনে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হয়ে যুদ্ধ কালীন নয় মাস কারাবরন শেষে ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে এসেই প্রধান মন্ত্রীর পদ লাভ করেন । প্রবল জনপ্রিয়তার কারনে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন । নিজের নিরাপত্তা এবং শক্তি বজায় রাখতে রক্ষিবাহিনী গঠন করেন । এই বাহিনীকে তিনি বিরোদ্ধ মত দলনে ব্যবহার করতে থাকেন,যাদের হাতে সিরাজ সিকদার সহ প্রায় ৩০ হাজার জাসদ কর্মী হত্যার শিকার হন, যাদের অধিকাংশই ছিল মুক্তিযুদ্ধা । তার লালিত রক্ষিবাহিনীর দ্বারা গুম,হত্যা,ধর্ষণ ও লুটপাট অবলীলায় চলতে থাকে । এক পর্যায়ে শেখ মুজিব উপলব্দী করেন প্রধান মন্ত্রীর পদ তার আকাংখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় । সে কারনে সংবিধানে সংশোধনী এনে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষনা করেন । বেয়ারা বিরোধী মত ও মিডিয়াকে বাগে আনতে চতুর্থ সংশোধনী মারফত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল রাজনৈতক দল এবং চারটি বাদে সকল পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন । রক্ষিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে বাকশাল জাতির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে লাল ঘোড়া দাবড়াতে থাকে । বাকশালী জামানায় আইন আদালত,বিচার প্রশাসন সব কিছুই নিরর্থক হয়ে যায় ।শেখ মুজিবের কথাকে সংবিধান আর রক্ষি বাহিনীর আদেশ নির্দেশকে আইন বিবেচনায় দেশ চলতে থাকে । ফলে যে কেউ শেখ মুজিব দূরে থাক,বাকশালী কোন নেতার বিরোদ্ধাচরন করলেই সে নির্যাতন,গুম বা হত্যার শিকার হত । শেখ কামালের নেতৃত্বে ব্যাংক লোট,পরস্রী অপহরণ,বাকশাল কতৃক হিন্দু সম্পত্তি গ্রাস ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । অবশেষে উপর ওয়ালার নির্দেশে কর্নেল ফারুক-রশিদের ক্যুতে বাকশালের প্রথম পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জেনারেল জিয়া সকল দল ও মিডিয়ার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে শেখ মুজিবের হাতে নিহত আওয়ামিলীগ পুনর্জন্ম লাভ করে । তবে তখনও দেশবাসীর মনে রক্ষিবাহিনীর অত্যাচারের স্মৃতি জাগ্রত ছিল,সন্তান হারানো পিতা মাতার আর্তনাদ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল,শেখ কামালগংদের কাছে সম্ভ্রম হারানো নারীদের কষ্ট গুলো সবাই জানত, যে কারনে ভোটের বাজারে আওয়ামিলীগ সুবিধা করে উঠতে পারেনি । দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন নতুন একটি প্রজন্মের সংখ্যাধিখ্য ঘটে যারা ৭২-৭৫ দুশাসন দেখেনি,তাদেরকে চেতনা নামক ইয়াবা সেবনে উত্তেজিত করে ৯৬ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসে । ২১ বছরের ক্ষুধার্ত দলটি ক্ষমতায় এসেই বিভিন্ন এলাকায় গডফাদার সৃষ্টি,টেন্ডার,সন্ত্রাস,ধর্ষণ সেঞ্চুরী আর লুটপাট অব্যাহত রাখলেও সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি । তবে তাদের সে আশা পূর্ন করতে অপেক্ষা করতে হয় মাত্র সাতটি বছর । বিএনপির জণপ্রিয়তা হারানো,আন্তর্জাতিক চক্রান্ত আর উদ্দীন গংদের সাজানো নির্বাচনের উপর ভর করে আওয়ামী জোট যখন ২৬৩ সীটে বিজয়ী হয় তখনই শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরনে ব্রতী হয় ।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিস্ট রুপের উপর টানানো গণতান্ত্রিক লেবাসের প্রথম পর্দাটি সরিয়ে নেন ।এর পর একে একে মিডিয়া বন্ধ করে,প্রতিবাদী সাংবাদিকদের হত্যা করে, বেগম জিয়াকে বাড়ী থেকে উৎখাত করে, নির্বিচারে গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর গুলি চালিয়ে,হত্যা-গুম-ক্রসফায়ার বজায় রেখে,মিটিং মিছিল আর গণতান্ত্রিক সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে তার গুপন অঙ্গের সকল পরিধেয় বস্র নিজ ইচ্ছায় হরন করে যখন নগ্নপ্রায়,তখনই তার প্রকৃত ফ্যাসিস্ট রুপ প্রকাশ পায় । জনমনে এখন আর বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই বাকশালী চেতনায় আবিষ্ট হয়েই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ শাসন করলেন । তার দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনকালে অবাধে শিবির কর্মীদের হত্যার চিত্র হিটলারের ইহূদী হত্যার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । আর আজকের র্যাব পুলিশের আচরণ যে সেদিনের গ্যাস্টাপো বাহিনীর চেয়ে কম ভয়ংকর নয়,তার প্রমাণ ৫মের অভিযান,সাতক্ষীরা বা লক্ষিপুর অভিযানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয় । এসব অভিযানে আঠার দলের নেতা কর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে জনপদ,বুলডোজারে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বাড়ি ঘড়,অনেক মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছে । এত অন্যায় অবিচার আর নির্মমতা পাকিস্থান বা বৃটিশরাও দেখায়নি । তবে জাহান্নামী এই আজাবেরও একটি ভাল দিক আছে সেটি হল,সেই সকল যুবক-যুবতি যারা বাকশাল দেখেনি,যারা রক্ষিবাহিনী দেখেনি,যারা চেতনা বটি সেবন করে আওয়ামিলীগকে গত যাত্রায় ভোট দিয়েছিল,তারা দেখুক বাকশাল কি জিনিষ,রক্ষিবাহিনী কি জিনিষ,এটারও দরকার ছিল।

হিটলারের নাজি পার্টী আজ নেই । সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যারেস্মাটিক লিডার হয়ে নিজ জাতির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেও শুধু মাত্র অহংকার, দম্ভ, ফ্যাসিস্ট ও স্যাডিস্ট হবার কারনে তার কি পরিণতি হয়েছিল আমরা সবাই জানি। তার গ্যাস্টাপু বাহিনীর সদস্যরাও মৃত্যু দন্ড বা জেল এবং সাথে বুনাস লক্ষ কোটি মানুষের ঘৃণা নিয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে পতিত হয়েছে । আমি ইতিহাসের বিশ্লেষণ থেকে বলছি অজস্র আলেম হত্যাকারী,ষোল কোটি মানুষের সাথে প্রতারণাকারী,গুম,খুন,হত্যা আর নির্যাতনের নির্দেশ দান কারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একদিন পতন হবে । তার অন্যায় নির্দেশ পালনকারী র্যাব পুলিশও একদিন বিচারের মুখূমুখি হবে । জি হ্যা,উপর ওয়ালার নির্দেশেই তা ঘটবে,কিন্তু কবে সেটাই প্রশ্ন ।

বিষয়: রাজনীতি

১৪৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File