হাসিনার উন্মত্ত খাহেসঃ বাংলাদেশের ভবিষ্যত

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৩০:২৪ রাত



।।হাসনাত।।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে পতন পর্যন্ত কত গুলো ঘটনা যুগপৎভাবে ঘটেছিল ।নবাবের সাথে তার খালা ঘসেটি বেগমের ক্ষমতা কেন্দ্রিক পারিবারিক ঝগড়া,মীর জাফরের বিশ্বাস ঘাতকতা,উমিচাঁদ বা জগৎশেঠদের অর্থ লিপ্সা, এর সব গুলোই ছিল নবাবের দেশ শাসনের অন্তরায় ।কুচক্রি মহল প্রজা সাধারণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে নবাব একজন ভোগ বিলাসী দুষ্চরিত্র লম্পট,আর প্রজাদের যত অভাব,অভিযোগ,দুঃখ-কষ্ট এর মূলে স্বয়ং নবাব ।কাজেই এই নবাবকে উৎখাত করতে পারলে মীর জাফররা যেমন ক্ষমতার স্বাদ পাবেন,উমিচাঁদরা যেমন অঢেল অর্থ পাবেন,ঠিক তেমনি নবাব পরিবর্তনে প্রজা সাধারনের ভাগ্যেরও আমল পরিবর্তন ঘটবে । ঘসেটি বেগমের সাথে নবাবের সম্পর্ক দিনকে দিন তিক্ত হয়েছে ।আর এই তিক্ততা চরম আকার ধারন করে,যখন নবাব বাহিনীর কাছে পালিত পুত্র শওকত জং নিহত হন ।মীর জাফর বৃটিশদের সাথে আতাত করে চলতেন,এটা নবাবও জানতেন । আর জানতেন বলেই তাকে কখনও বিশ্বাস করতেন না । উমিচাঁদ-জগৎশেঠদের বিলাসী জীবন যাপনে প্রকাশ্য দরবারে ভৎসনা করে নবাব ছিলেন তাদের চক্ষুশুল । অবস্থা এমন হয়ে উঠেছিল যে পরাধীনতা হয়ত সহ্য হবে কিন্তু নবাবের শাসন আর নয় । নবাবের সাথে তার নিকট আত্মীয় ও সভাসদের এই দন্দ্বটিকেই গুটি হিসাবে ব্যবহার করেছে চতুর ইংরেজ ।

বৃটিশদের চক্রান্ত আর মীর জাফরের বিশ্বাস ঘতকতায় নবাব পরাজিত হয়েছিলেন। নবাবের পরাজয়ে মীর জাফর কি ক্ষমতা পেয়েছিলেন,জগৎশেঠরা কি অর্থ পেয়েছিলেন,বা প্রজা সাধারন কি সত্যই অধিক সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করেছিল ?এই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটাই-না । কিন্তু আমাদের দেশটি ঠিকই স্বাধীনতা হারিয়েছিল,যা উদ্ধার করতে সময় লাগে প্রায় ২০০ বছর ।

আমদের দেশটা এখন বড়ই কদাঁচার সময় পার করছে ।পাঁচ বছর পর পর সাধারন নির্বাচন হবে,সেই নির্বাচন হবে একটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে,যারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাবস্থা করবে ।দেশের সকল দল সেই নির্বাচনে অংশ নিবে এবং সংখ্যা গরিষ্ঠ দল ক্ষমতায় যাবে এমনটিই নিয়ম ছিল ।কিন্তু ক্ষমতা কেন্দ্রিক দল গুলোর মধ্যে দন্দ্ব,সংঘাত আর অবিশ্বাস এমন এক জায়গায় গিয়ে দাড়িয়েছে যে কেউ তার বিরোধী পক্ষকে মেনে নিতে পারছে না ।সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে নিজেরা আলোচনা না করে বহিঃ শক্তির পরামর্শ নিচ্ছে,অথচ বুঝতে চাইছে না বিদেশীরা আমাদের সংকট সমাধানের চাইতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায়ই বেশী মনযোগী ।অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে বিদেশী পরামর্শ,সাহায্য,নির্ভরশীলতা এমনকি পরোক্ষভাবে পরাধীতা মেনে পুতুল সরকার হয়ে থাকতে পারলেও খুশী ।কিন্তু জনদাবী মেনে নিয়ে এমন কোন নির্বাচনের ব্যাবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব না,যেখানে নিজে পরাজিত হবার সম্ভাবনা থাকে । সরকার ও বিরোধীদল জাতীয় স্বার্থে মিলতে পারবেনা বা মিলতে দেওয়া হবেনা এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারকে সমর্থন যোগাচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষকে স্মরণ রাখতে হবে,নবাবের পরাজয় হলেও মীরজাফর কিন্তু দেশের নবাব হতে পারেনি । শেখ হাসিনা নবাবের রোল প্লে করলেও মূলত মীরজাফরের মতই কাজ করে আসছে তার জীবনের শুরু থেকেই। ইংরেজরা মীরজাফরকে প্রকৃত নবাব বানাতে টাকা-করি খরচ করেনি ।বরং বানিজ্যের নামে দেশ দখলের যে মিশনে তারা এসেছিল,ধাপে ধাপে সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছে ।আজ যারা নিজেদের অর্থ-শক্তি ও কৌশল দিয়ে জনমতের বাহিরে সরকারকে ক্ষমতা রাখতে বদ্ধ পরিকর,তারা মুখে মৌলবাদ মুক্ত প্রতিবেশী দেশ প্রাপ্তি,ট্রাঞ্জিট ও ব্যাবসা প্রাপ্তির কথা বললেও তাদের তাদের আশার শিকর অনেক গভীরে,যেখানে তারা ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে ।সাত বোন খ্যাত ভারতের পূর্বাঞ্চল শাসনে আমাদের ছোট্ট ভূখন্ডটি বিশাল ভারত যে কোন মূল্যে নিজের দখলে নিতে চায় এই সহজ সত্যটি সরকার ও বিরুধীদলের দুই প্রধান শেখ হাসিনাকে বুঝতে হবে,নচেৎ ইতিহাসের পূনঃরাবৃত্তি হতে বাধ্য ।মনে রাখতে হবে দেশ দখলে ইংরেজদের সুযোগ করে দেবার জন্য মীরজাফরকে আজও এই জাতি যেমন ক্ষমা করেনি,তেমনি কারও ক্ষমতার লোভ বা হিংসার কারনে দেশ যদি পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় জাতি ঐ নতুন মীর জাফরকেও জাতি কোন দিন ক্ষমা করবে না।

বিষয়: রাজনীতি

১০৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File