১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ একই চেতনার ধারাবাহিকতা ৷ সা ই য়ে দ মা হ ফু জ খ ন্দ কা র
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ২৬ মার্চ, ২০১৪, ১১:৪৩:০৬ সকাল
সুদীর্ঘ ২০০'শ বছর স্বাধিকার সংগ্রাম করার পর ১৯৪৭ সালে ভারতের মুসলিম সমাজ স্বাধীনতার দারপ্রান্তে পৌছে, ইংরেজরা ভারতকে স্বাধীনতা দিতে রাজি হয়, ভারতীয় মুসলমানদের সপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছিল ৷ তখনই বাধা হয়ে দাড়ায় ভারতীয় উগ্র হিন্দু গুষ্টি, গান্ধীর নেতৃত্তাধীন কংগ্রেস ভারতীয় মুসলিমদের দাবি মানতে অশিকৃতি জানায় ৷৷ গান্ধী নেহুরু কোনো ভাবেই মুসলিম সমাজের দাবি মেনে নেবেনা বলে ছাফ জানিয়ে দেয় ৷৷ মুসলমানরা স্বাধীন দেশে পরাধীনতার শিকল পড়তে রাজি হননি, ভারতের মুসলিম নেতৃবৃন্দ বাধ্য হয়ে দাবি করেন ভারতকে ভাগ করে মুসলমানদের আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে ৷৷
অনেক কিছুর পর সিদ্ধান্ত হয় ভারত ভেঙ্গে দুইটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা হবে ৷৷ এই রাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি বা চেতনা হবে ধর্ম ৷৷ সে অনুযায়ী দুইটি রাষ্ট্রের নাম ঠিক করা হয় পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান, পাকিস্তান মানে পবিত্র স্থান আর হিন্দুস্থান মানে হিন্দুদের স্থান ৷
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ইংরেজ সরকার মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়, তবে এখানেও ইংরেজরা মুসলমানদের ঠকিয়েছে, মুসলমানরা যেটুকু পাওয়ার কথা ছিল তার অনেক কমটুকুই দেয়া হয় ৷
যাক সে কথা, আমার মূল আলোচ্য বিষয় ফিরে আসি; পাকিস্তানের স্বাধীনতার চেতনা ছিল ধর্ম, পাকিস্তানের সংবিধানের মূল চেতনা ছিল ধর্ম, পাকিস্তানের রাজনীতির প্রধান বিষয় ছিল ধর্ম, পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থান প্রধান উত্স ছিল ধর্ম, মোট কথা পাকিস্থানের স্বাধীনতার চেতনায় ছিল ধর্ম ৷ তবে দুঃক্ষ জনক বিষয় হলো পাকিস্তানের তত্কালীন শাসক গুষ্টি পাকিস্তানের স্বাধীনতার চেতনার বাস্তবায়ন তো করেননি উল্টো তা ধংস করেছে ৷৷
সে কারনেই প্রতিষ্ঠিত হবার দুই যোগ না পেরুতেই ভাঙ্গনের মুখে পড়তে হয় পাকিস্থানকে !! ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত ভাবে ভেঙ্গে যায় পাকিস্থান, উদয় হয় নতুন এক দেশে, নাম 'বাংলাদেশ' তবে তা কোনো নির্দিস্ট চেতনার উপর ভিত্তি করে কিংবা নির্দিস্ট কোনো চেতনাকে অবজ্ঞা করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি ৷৷ তাই স্বাধীনতার ঘোষণায় কিংবা স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগেও কোনো নির্দিস্ট চেতনার কথা বলা হয়নি, অথবা পূর্বের যে চেতনা ছিল সেটাকেও ত্যগ করার কথা বলা হয়নি ৷৷ ২৬ মার্চ রাত্রে মেজর জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেখানে নতুন কোনো চেতনার কথা উল্লেখ ছিলনা ৷৷ কিংবা ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে যে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয় সেখানেও কোনো চেতনার কথা উল্লেখ ছিল না ৷৷ নিছে ঘোষণা পত্রগুলার লিংক দিয়ে দিচ্ছি আপনারা দেখে নেবেন ৷৷
অনেকের মতে ৬৬' সালের ছয় দফায় হলো স্বাধীনতার ভিত্তি, ছয় দফাকেই কেন্দ্র করে পবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়, কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো ছয় দফার কথাও কোনো চেতনার কথা উল্লেখ নেই, কথাও বলা হয়নি যে এই চেতনার উপর বাংলাদেশ চলবে ৷৷ বরং ছয় দফার মধ্যে পাকিস্থানি স্বাধীনতার চেতনাকে সর্বৌচ্ছ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছিল ৷৷ নিচে লিংক দিয়েছি দেখে নেবেন ছয় দফা ৷৷
এতে স্পস্ট বুজা যাচ্ছে পূর্বের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বলবত ছিল ৷৷
বাংলাদেশের মুক্তিজুদ্ধাগন পাকিস্তান রাষ্ট্র যে চেতনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই চেতনাই বহন করেছিল ৷৷ তার পরেও যদি কোনো চেতনার সন্ধান করতে হয় তাহলে সেটা করতে হবে তত্কালীন পূর্বপাকিস্তানের জনগনের ইচ্ছা আকাংক্ষার উপর ভিত্তি করে ৷৷ তত্কালীন পূর্বপাকিস্থানের জনগন চেয়েছিল তাদের সমান অধিকার, ন্যায় বিচারের অধিকার, খাদ্যের অধিকার, পড়াশোনার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার এবং সবচেয়ে বেসি যেটা চেয়েছিল তা হলো ভোটের অধিকার, এই ভোটের অধিকার আদায় করতেই স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয় যা শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে রুপান্তরিত হয় ৷
সেদিন যদি পশ্চিমা শাসক গুষ্টি পূর্বপাকিস্তানিদের ভোটের অধিকারের উপর সম্মান দেখিয়ে শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়ে দিত তাহলে এই দেশে কোনো যুদ্ধেরই প্রয়োজন হতনা ৷৷ তা না করাতেই ৭১ হয়, যার ফলে বাংলাদেশ হয় ৷৷
যেসব অধিকারের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো তার কোনটার সাথেই পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার চেতনা অর্থাত ধর্মীয় চেতনার সাথে বিরোধ ছিলনা এবং এখনো নেই, তার মানে পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার চেতনা বিলোপ্ত হবার কোনো কারনই নেই, বরং পাকিস্থান ভেঙ্গে গেলেও পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার চেতনা দুই পাকিস্থান অর্থাত বাংলাদেশ-পাকিস্থানে সমান ভাবে কার্যকর আছে ৷৷ কারন ৪৭'এর চেতনা প্রতিষ্টা করতে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে এই অঞ্চলের মানুষ অর্থাত বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ ৷৷
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৭৭২ সালের ১০ জানুয়ারী শেখ মুজিব পাকিস্থান জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের মাটিতে পা রেখে ভারতের তত্কালীন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে খুশি করতে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ হবে 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' এই 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটা বাংলার মানুষ সেদিনই সর্বপ্রথম শুনতে পায় ৷৷ আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি এই শব্দটা বাংলার মানুষ ইতিপূর্বে কখনই শুনেনি ৷৷
পরবর্তিতে এটাকেই বলা হয় স্বাধীনতার চেতনা !! কি অবাক করা বিসয়, দেশ সাধীন হবার অর যে চেতনার আবিষ্কার হয় সেটা আবার স্বাধীনতার চেতনা হয় কি করে !! এটাই যদি স্বাধীনতার চেতনা হয়ে থাকে তাহলে এই চেতনার কথা তো ছয় দফাতে থাকত, স্বাধীনতার ঘোষনায় থাকত, স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রে থাকত ৷৷
মুক্তিযুদ্ধের পরে যে চেতনার আবিষ্কার হয় তা কিছুতেই স্বাধীনতার চেতনা হতে পারেনা, স্বাধীনতার চেতনা সেটাই যেটা মুক্তিযুদ্ধের আগে ও মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের মানুষ অন্তর দিয়ে ধারন করত, আর তা হলো ৪৭' সালের ধর্মীয় চেতনা ৷৷
যদি এই চেতনার পরিবর্তন করতে হয় তাহলে গণভোটের ব্যবস্থা করা হোক, তখনই প্রমান হবে এই দেশের মানুষ কোন চেতনাকে গ্রহন করে, ধর্মীয় চেতনাকে নাকি ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে ৷৷
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা
http://bn.wikipedia.org/wiki/জিয়াউর_রহমান
মুক্তিযুদ্ধের ঘষা পত্র
http://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশের_স্বাধীনতার_ঘোষণাপত্র
ছয় দফা
http://bn.m.wikipedia.org/wiki/ছয়_দফা_আন্দোলন
বিষয়: বিবিধ
২৯৬৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বাধীনতার পরে জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগই এসব আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে।
সহমত
১৯৭১ সালে যুদ্ধে একটি ব্যপক প্রচারনা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিঃ
"দেশের জন্য প্রাণ দিলে শহীদ হয়।"
মন্তব্য করতে লগইন করুন