নয়াদিগন্তে মীনা ফারাহ-র এই কলামটি অনেক ভালো লাগলো তাই শেয়ার করলাম (সাময়িক পোষ্ট)
লিখেছেন লিখেছেন মিষ্টি স্বপ্ন আরিফ ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৮:৩৮ সকাল
১
পণ্ডিত স্যারের সারা শরীরে হঠাৎ নীল রঙের ফোঁসকা উঠলে রাম-রহিম, যদু-মধুর মাথায় হাত। অসম্ভব স্যার! আপনার মতো বড়মাপের মানুষের জন্য এ দেশে চিকিৎসা নয়। আমরা ছোট মানুষ, মরলেই কী? একুশে টিভির সংবাদে বলল, (৫ ডিসেম্বর) বিদেশে চিকিৎসারত প্রেসিডেন্ট ফিরলেই তাকে পদত্যাগপত্র দেবেন এরশাদ। একই খবরে কী বলল জানেন! বার্ন ইউনিটে যে কিশোরটি মারা গেল তাকে নাকি ঠিকমতো চিকিৎসাই দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে মৃতের অভিভাবক। এবার বুঝুন! শুনছি, ‘মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল’ এখন বাংলাদেশীদের টাকাতেই চলে। পণ্ডিত স্যার তখন বললেন, আমি পণ্ডিত হতে পারি কিন্তু অন্ধ নই যদু। যাও তোমাদের ‘সব ভালো হয়ে যাবে’ ডাক্তারকে আনো। তোমরা ভালো হলে আমি হবো না কেন? পরীা শেষে ডাক্তার বললেন, এটা কোনো অসুখ? নীল ফোসকাগুলো এক দিনেই ভেনিস করে দেবো! আড়াই মাস পর দাগগুলো ফিরে এলো সাথে প্রচণ্ড চুলকানি। আত্মবিশ্বাসী ডাক্তার বললেন, অ্যালোপ্যাথিতে কাজ হবে না, কেঁচো বাটা খেতে হবে। কেঁচো বাটা খেয়ে ভালো হয়ে যাওয়া পণ্ডিত দারুণ খুশি। দুই মাস পর শুরু হলো পাইলস, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, রক্ত আমাশা। ধুমছে জ্বর। যদু-মধু বলল, আপনাকে মাউন্ট এলিজাবেথে পাঠিয়েই ছাড়ব, দেখি কী করেন। পণ্ডিত বললেন, অসম্ভব! ফের নিয়ে আসো সব ভালো হয়ে যাও ডাক্তারকে। সে বিভিন্ন ধরনের রোগ ভালো করছে, আমারটাও হবে, ধৈর্য ধরো যদু, ধৈর্যই সব।
যথারীতি পরীা করে ডাক্তার বললেন, আপনার লাগবে জিন চিকিৎসা। আমি স্পষ্ট দেখছি আপনার ভেতরে একটি চায়নিজ পিশাচ প্রবেশ করেছে। এরপর পণ্ডিত পুরোপুরি সুস্থ। শীতের সকালে ধানের েেত চেয়ারে বসে ‘অ্যাঙ্গেলস’ আওড়াতে আওড়াতে ভাবলেন, পণ্ডিত! সত্যিই তুই সুস্থ হয়ে গেলি!! চিকিৎসার জন্য যারা সুদূর চীন যায়, ওরা সব গাধা। গ্রামের এই গুণী ডাক্তারকে নিয়ে পণ্ডিতের উচ্চাকাক্সা বেড়ে গেল। ঠিক করলেন, পত্রিকায় কলাম লিখবেন যেন আর কেউ ‘মাউন্ট এলিজাবেথে’ না যায়। এক মাস পর শরীর ফুলে ঢোল, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, অসহ্য যন্ত্রণা। সব ভালো হয়ে যাও ডাক্তার এসে বললেন, সর্বনাশ! এখনো আপনার কলিজা খাচ্ছে ‘পলা’ নামের প্রেতাত্মা। এবার আপনার জন্য ঝাড়–চিকিৎসা। পণ্ডিত বললেন, ঝাড়ো।
দুই মাস পর পণ্ডিত প্রায় মরো মরো। শরীরজুড়ে বিশ্রী ঘা, ঊর্ধ্বশ্বাস। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ডাক্তার পরীা শেষে জানালেন, সারা শরীরে চতুর্থপর্যায়ের ক্যান্সার ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। তিন মাস বাঁচবেন, বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটান। রোগ এক মাস নয়, এক বছরেও হয়নি। অন্তত বছরখানেক আগে ডাক্তার দেখালে প্রথম স্টেজেই ঘায়েল হয়ে যেত। কেন? দেশে কি ডাক্তার ছিল না? পণ্ডিত চুপ। এরপর খুলে বললে উত্তরে ডাক্তার বললেন, যে আপনার চিকিৎসা করেছে সে শুধু মলম লাগিয়েছে; কিন্তু ঘা কেন হয়েছে, তলিয়ে দেখার মতো জ্ঞান তার নেই। থাকলে সিটিস্ক্যান, এমআরআই, রক্ত পরীা... সব করাতো। তাহলেই ধরা পড়ত ঘায়ের উৎপত্তিস্থল চামড়া নয় বরং লিভার ক্যান্সার। পণ্ডিতের মাথায় হাত, লিভার ক্যান্সার?
ফিরে এলে কান্নায় ভেঙে পড়ল যদু-মধু। আপনি কিছুতেই মরবেন না স্যার, প্রয়োজনে আন্দোলন করব। কাজ না হলে জ্বালাও, পোড়াও-অবরোধ করব। রাম-রহিম ফিরল সব ভালো ডাক্তারসহ। ডাক্তার বললেন, চিন্তা করবেন না, এবার অন্য মেডিসিন। গলায় ছাইয়ের ভাণ্ড ঝুলিয়ে দেবো, এখানে যে ছাই থাকবে তা ফুসফুসে ঢুকলে পারমাণবিক কাজ হবে। ছাই হচ্ছে ‘তৈমুর লং’ যুগের মেডিসিন। এর মধ্যেই হিটলার বধে আইনস্টাইনের পারমাণবিক ফর্মুলা। কথায় আছে না, ‘উড়াইয়া দেখো ছাই পাইলে পাইতে পারো মাণিক রতন।’ আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, ছাইচিকিৎসা সব জীবাণু ছারখার করে দেবে। গ্রামের মানুষেরাই আমাকে তৈরি করেছে, এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। পণ্ডিত অবাক হয়ে ছাইয়ের ভাণ্ড দেখছেন। কৃষ্ণ-কাওসার এসেই চিৎকার, খবরদার স্যার! শুনেছি ও নাকি কোয়াক! বেটা আগে বলেনি। সবাই মিলে ওকে ধরো, ধোলাই দেবো।
পণ্ডিত বললেন, না। ধোলাই আমাকে দাও। আমিই কোয়াক। তোমরা না চিনলেও আসল-নকল চেনা উচিত ছিল আমার। দুঃখ দুঃখ চেহারার অখিল মাঝি মুখ খুলল, এবার তাহলে আমার কথা শোনেন। আমি আসলেই কিছু না, যদু-মধুরা কথা শুনল না। ওরাই আমাকে এই পর্যায়ে আনার জন্য দায়ী। ফোড়া কাটায় হাত ভালো দেখে সবাই সব রোগের জন্য আমাকেই ডাকে। প্রাণ যায় যায় পণ্ডিত বললেন, সবাই দূর হয়ে যা।
মূল সমস্যা শুরু হলো পণ্ডিতের মৃত্যুর পর। ওই যে তার লেখা কলামটি, পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে গেলে ব্যাপক সাড়া। বিদেশী পত্রিকাতেও প্রচার হলো ‘সব ভালো ডাক্তারের’ খবর। শুধুই কি দেশী? বিদেশীরাও দলে দলে আসতে শুরু করলে এক মাইল লম্বা লাইন। ডাক্তারের সামনে ডলারের স্তূপ, মানপত্র আর ফুলের মালায় এক এলাহি কাণ্ড। ‘অসলো শহরের মেয়র’ তার পুরনো ফোড়া কাটাতে পেরে খুশিতে ঘোষণা দিলেন, ফিরে গিয়েই নোবেল কমিটিকে বলব, কাউকেই যদি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল দিতে হয়, সে হচ্ছে অখিল মাঝি।
দ্র: ইহার পর অখিলের ডাক্তারি ব্যবসা স্বাভাবিকের যেকোনো সীমারেখা অতিক্রম করিল।
২
দুইভাবে বিখ্যাত হওয়া যায়। ক. আপনি যদি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো ‘মোনালিসা’ আঁকতে জানেন, আপনার শিল্পকর্ম দেখার জন্য ৬০০ বছর পরেও মানুষ বহু দূর ছুটে যাবে। যেমন গেল গ্রীষ্মে মোনালিসা দেখতে প্যারিস গেলাম। মোনালিসা দেখে যত না অবাক হয়েছি, বেশি হয়েছি বুলেটপ্র“ফ কাঁচের ভেতরে কয়েক ইঞ্চির সাম্রাজ্যবাদী দুর্দান্ত প্রতাপশালী মোনালিসাকে দেখে। তাকে ঘিরে সৈন্য-সামন্ত এবং সীমান্ত বেড়া। ভিড়ে মোনালিসার সামনে এক মিনিটের বেশি দাঁড়ানো অসম্ভব। এরপর আশ্চর্য হয়েছি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব সম্রাট নেপোলিয়নের ‘ফন্টেন ব্লু’ প্রাসাদে গিয়ে। আমার রক্ত তখন খুশিতে ড্রাম পেটাচ্ছিল। অনুভূতিগুলো মার্চপাস্ট করছিল। কানের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধঘোড়ার খুরের আওয়াজ। আমার সামনে সম্রাটের ব্যবহৃত পোশাক ও তৈজস! খুশিতে আমি মরো মরো। হ্যাঁ, বিখ্যাত একেই বলে। এরপর ছুটে গেলাম লুই সাম্রাজ্যের ‘ভার্সাই প্যালেসে’। প্রায় হাজারখানেক ছবি তুলতে তুলতে মেয়েকে বললাম, কিরে! বড় হয়ে কী হবি? মৌসুমী শুধুই হাসে। আমার সামনে যুদ্ধবাজ, জুলুমবাজ, বদমাইশ রাজা লুইয়ের ডিনার টেবিল। এখানে সপরিবারে খাওয়ার সময় গরিব প্রজাদের বসিয়ে দেখাতেন, সম্রাট কত বড় মানবতাবাদী। এমনকি ইউরোপের অন্যান্য ছোট রাজা-রানীকেও অদূরে বসিয়ে মানবতা দেখতে বাধ্য করতেন। সেই টেবিলের পেছনেই একটি দরজা, যেখান দিয়ে প্যালেস আক্রান্ত হওয়ার পর অত্যাচারী রানী ‘এন্টোনয়েড’ পালিয়ে গেলে পরে তাকে ধরে এনে গলা কর্তন। রাজপ্রাসাদ নয় যেন এলাহি কাণ্ড... গুণী না হলে কার মতা, ‘ভার্সাই’ বানায়? অবাক হয়েছি, ৫০০ বছর আগে এদের মাথায় এত বুদ্ধি! সুতরাং বিখ্যাত হওয়ার নানা ফর্মুলার মধ্যে এগুলোই আমার খাতায় শ্রেষ্ঠ।
খ. আরেকভাবেও বিখ্যাত হওয়া যায়। যাদের কোনো গুণ নেই কিন্তু যেকোনো মূল্যে বিখ্যাত হওয়ার যন্ত্রণা আছে। সহজ গন্তব্যের স্বার্থে এই সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণটি টানছি, যেমন সাম্প্রতিক কালে দারুণ আলোচিত ঢাকার ‘বার্ন ইউনিট’টি। ওরা পুড়ছে বলেই তো বিশেষ করে সদ্য শপথ নেয়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে এই সুবর্ণ সুযোগে পতাকাবাহী গাড়ি হাঁকিয়ে গীতা সরকারদের দেখতে গেলেন। ওরা না পুড়লে কিভাবে দেখাতো বেদনাকিষ্ট মুখ? সরকারের মুরোদে না কুলালে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দানখয়রাতের ঘোষণা দিতে পারতেন? গীতা সরকারদের জন্য না হলে অনেকেই যাদের ওয়ার্ড কমিশনারের যোগ্যতাটুকু নেই, রাতারাতি নামের আগে এমন খাস্তা পদবি জুটত কি? যেমন করে হলমার্ক, স্টক মার্কেট না ঘটলে কিছুতেই জানতাম না অর্থমন্ত্রীর চেহারা কিসের মতো! পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি না হলে কী করে বুঝতাম মন্ত্রী আবুল হোসেন কত টনের দেশপ্রেমিক? সাগর-রুনি খুন না হলে মন্ত্রী সাহারা খাতুনের ওই রূপ হয়তো চিনতামই না। রানা প্লাজার ঘটনা না ঘটলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কখনোই এমন ভয়ানক আলোচিত হওয়ার সৌভাগ্য পেতেন না সর্বোচ্চ মন্ত্রী। বিশ্বজিৎকে ওভাবে খুন না করলে, ম খা আলমগীরের মতার ঝাঁজ বুঝতাম কি? তিনি বলেছিলেন, হরতালকারীদের প্রতিহত করতে রাস্তায় নেমে আসেন। ঘরে ঘরে ঢুকে হরতালকারীদের হত্যার ফর্মুলা দিয়ে মন্ত্রিত্ব জানালেন কোনো এক লতিফ সিদ্দিকী। একমাত্র কালোবিড়ালের পরেই বুঝলাম, সুরঞ্জিতবাবু নাকি একজন মন্ত্রী। হলমার্কের ‘হেনরি ম্যাডাম’ জানিয়ে দিলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ওজন কত বেশি। একদলীয় নির্বাচনের জন্য না হলে কখনোই জানতাম কি আমু-তোফায়েলদের মন্ত্রিত্ব আর কত সস্তা হতে পারে! পত্রিকার কল্যাণে জানলাম, দীপুমনি আমাদেরপী মন্ত্রী। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ হলো, কিছু মন্ত্রী রাষ্ট্রদ্রোহীর মতো সাহসী। এই যে মনুষ্যরচিত দুর্যোগ, এগুলো ছাড়া মন্ত্রিত্ব প্রমাণ করত কিভাবে? সুতরাং বারবার রানা প্লাজা, বেগুনবাড়ি, তাজরীনের মতো হত্যাকাণ্ডগুলো ব্যক্তিবিশেষে ‘রাজা লুইয়ের’ মানবতা দেখানোর মতোই নোংরা সুযোগ। যতই ওরা মরে, সেই সুযোগে ততই ভুয়া মানবতাবাদে লিপ্ত হয়। সময় মতোই কিছু জৈবপদার্থ জড়ো করা হয় গণভবনে চেক বিতরণের অনুষ্ঠানে। বিতরণ শেষে অপরপকে গালাগাল, প্রতি ঘণ্টার খবরে এক নম্বর। ‘কাদম্বীনি মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’-এর মতোই গীতা সরকাররা পুড়িয়া পূরণ করিল, কিছু লোকের মন্ত্রী পদবি ভোগের তীব্র যন্ত্রণা।
৩
কেউ যদি জেনেশুনে দরজা খোলা রেখে ঘুমায়, চোর কি বসে থাকবে? কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের বৌকে বদমাশ পুরুষের সাথে সিনেমা দেখতে পাঠায়, আর সেই বউ যদি হয় গাধা, তাহলে বলতে হয় একটি গল্প। সিলেটের এক মাড়োয়ারি তার ভৃত্যকে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার মহেশ! ঘটি মাজছ যে! ভৃত্য মহেশ তখন কালোয়ার বাবুকে বলল, মালিক! ২২ বছর আমি কায়মনে শুধু আপনার সেবাযতœই করেছি। একবারও দেশে যাইনি। খবর এসেছে আমার স্ত্রীর সন্তান হবে তাই, উড়িষ্যা যাবো।
স্বেচ্ছায় যারা দেশটাকে দুই নেত্রীর ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়ে বলে, দু’জনের জন্য ফিফটি-ফিফটি, এরাই যদু-মধু যাদেরকে চিহ্নিত করেছি কিন্তু জীবাণু দূর করতে ব্যর্থ হয়েছি। এদেরই অমতায় মধ্যরাতের টকশোগুলো আবারো ’৭১-এর মতো উত্তাল। এদের কারণে সমাজে দূরত্ব বেড়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বনাম অহিংস আন্দোলনের মতো। আবারো ’৭১-এর মতো দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি মুখোমুখি। এ দিকে পুরুষ নেতৃত্বে দারুণ মঙ্গা। নারীবাদীদের মুখে থাপ্পড় মেরে ‘নারীর মতায়ন’ অসুখটি এমন চরম আকারে পৌঁছেছে, যা দেখে দেশে-বিদেশে অনেকেই অতিষ্ঠ। বাংলাদেশ এখন প্রায় পুরুষ আধিপত্যবাদশূন্য। সংসদ থেকে শাহবাগ, দশমির মণ্ডপ থেকে রমনার বটমূল, নারী মতায়নের চাপে জাতির নাভিশ্বাস। ক্রমেই বঙ্গনারীরা যে হারে পুরুষ পেটানো জাতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, এর মাধ্যমে ‘সংখ্যালঘু পুরুষ’ নামে একটি ভিন্ন শ্রেণীর জন্ম হয়েছে। হয়তো চুড়িও পরিয়ে দেবে।
পণ্ডিত সক্রেটিস খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে যে কথা বলেছিলেন, ‘বিবাহ করা ভালো, বৌ যদি ভালো হয় তবে তুমি সুখী হবে। আর বৌ যদি বদমাশ হয়, তুমি পাগল হয়ে যাবে।’
৪
আমাদের সমস্যার একটিই কারণ, ৪২ বছর ধরেই মনের জানলা-দরজা সব বন্ধ। অন্ধকারে ‘ফাঙ্গাসের’ অপ্রতিরোধ্য বিস্তারে আলো দেখার সমতা পুরোপুরি নিভে গেছে। মনের আলোর বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে ‘টয়লেট রাজনীতি’। ৯৯ ভাগই বিএনপি-আওয়ামী লীগ রোগে আক্রান্ত। বাস্তবে একটি বস্তুকে অনেকভাবেই দেখা সম্ভব। তবে বাংলাদেশ এখন টয়লেট রাজনীতির মনোপলি হওয়ায় এর বাইরে দেখার সুযোগ নেই। উপরিউক্ত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা এরকম। আপেল কখনোই ওপর দিকে পড়ে না। পানিতে ঢিল ছুড়লেই তাৎণিক প্রতিক্রিয়ার কারণ নিউটনের হুকুমÑ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সমান। সব মানুষই পরিস্থিতি ও পরিবেশের শিকার। যে যে পরিবেশে বড় হয়, সারা জীবন তার প্রভাব থাকে। গোলাপকে নীলকণ্ঠ বললে ভুল। দেশ বিভাগের ৬৬ বছরের মধ্যে আওয়ামী রাজনীতির বয়স ৬৫ আর বিএনপির ৩৪। মূলত রাজনীতিতে রাজত্ব আওয়ামীদেরই। ফলে প্রভাবও বেশি। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সবার জন্য জিয়াউর রহমানের রাজনীতি কঠিন করার বক্তব্যটি দৃশ্যত কার্যকরী করলেন হাসিনা। সত্যি সত্যি রাজনীতিকে তিনি অসম্ভব অসহনীয় করেছেন। যদিও দু’টি দলই দমন-পীড়ন করছে ৮৫ ভাগ মানুষের জীবন, তার পরেও পচনটি আওয়ামী রাজনীতিতেই ধরেছে। যেমন এরশাদ নির্বাচনে গেলে পুষিয়ে দেবে, না গেলে জেলে পচাবে। এটা যদি টয়লেট রাজনীতি না হয়, কোনটা? হয়তো এরা রাজনীতিই বোঝে না কিংবা ‘সব ভালো ডাক্তারের’ মতো কোয়াক। রাজনীতিতে এরা যে নাবালক, সন্দেহ আছে কি? এদের হাতে দেশ এবং মানুষ কখনোই নিরাপদ হতে পারে না। যে সন্তানের বাবা-মা পাগল কিংবা অত্যাচারী, তার ভবিষ্যতের সঙ্গে সুস্থ পরিবারের সন্তানটির বিস্তর তফাত। কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলবেন, বিশ্বে আর কোনো জাতি বহির্বিশ্বের প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি খুলে মারামারি করে? এদের চাহিদা মেটাতেই নিত্য-নতুন বাংলা পত্রিকার বাম্পার ফলন হচ্ছে নিউ ইয়র্কে। জন্মভূমি নামের স্থানীয় বাংলা পত্রিকায় ২১ অগ্রহায়ণ সংখ্যার একটি শিরোনামÑ ‘নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটির ভাবমূর্তি সঙ্কট।’ ‘...ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কেলেঙ্কারি, ফুডস্ট্যাম্প জালিয়াতি, ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা, কমিউনিটি সভায় মারামারি।’
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ওই সব সরকারেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে ভিসায় কাটছাঁট করছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলবেন, হয়তো এগুলো কচি বয়সে অর্জিত অসুস্থ পরিস্থিতির বিলম্বিত প্রভাব। যে বালকটি ধোলাইখালে মেশিন চালায়, সে বালকটি হয়তো হার্ভার্ডে পড়ার উপযুক্ত। মনের চেয়ে স্বাধীন কেউই নয়। তাই ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশে যা ঘটছে, দেশে-বিদেশের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তারই প্রতিফলন। কেউই কি বলবেন না, নতুন প্রজন্মকে কোন আস্তাকুঁড়ে নিপে করছি? ‘ওয়েস্ট মিনস্টার’ গণতন্ত্রের দোহাই দিলে রোগ সারবে? সবার আগে আমাদের দেখার অভ্যাস বদলে ফেলতে হবে। অন্যকে নয়, বিশ্বাস নিজের ওপর স্থাপন করতে হবে। টলস্টয় বলেছেন, ‘কবরে পাঠালেও ২+২=৬ হবে না।’
৫
জাতিসঙ্ঘ আসলেই কী চায় পরিষ্কার নয়। বান কি মুন দানব সৃষ্টির জন্য যে অনেকটাই দায়ী, এড়ানো যাবে কি? গেল পাঁচ বছর ধরে জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার এবং অপব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের শিষ্টাচারবহির্ভূত প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে কেউই আপত্তি তুলল না। বান কি মুনের হাসিনা উৎসাহ এবং ব্যক্তিত্বহীনতায় রীতিমতো ভিরমি খেয়েছি। জাতিসঙ্ঘ যদি খুলে বলত কী চায়, তারানকোর প্রয়োজন হতো কি? একজন নারী যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বামীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়, সেই নারীর হাত-পা বাঁধা। বাংলাদেশও সেই স্বামীমুখাপেী নারীর মতো পশ্চিমাদের হাতে বাঁধা। নিজের বলতে তার কিছুই নেই। যে ভাত দেয় সে কিলাতেও পারে। কাউকে সোজা করতে চাইলে আঘাত করতে হয় পেটে। যেমনটি ৭ মার্চে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘তোমাদের আমরা ভাতে মারব, পানিতে মারব।’ তারানকো নয় বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি, কাজ না হলে নিষেধাজ্ঞা। ইরানের অর্থনীতি চুরমার হলে দস্তখত দিয়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে রা পেলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। কাজটি করা উচিত ছিল সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের আগেই। জীবন অতি মূল্যবান, ফিরে আসে না। মতা গেলেও আবার আসে। পশ্চিমাদের হুমকিটুকুই দেশটাকে মিসর হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রধান বিরোধী দলকে এখন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ভিডিও মেসেজ দিতে হয়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছেন হাসিনা! এ জন্য বান কি মুন অবশ্যই কমবেশি দায়ী। হাসিনা বিশ্বায়নে নিউ ইয়র্কের জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশ মিশন কয় শ’ মিলিয়ন ডলারের লবি করল, তদন্তযোগ্য নয় কেন!
বাংলাদেশে যখন প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের গুলিতে মানুষ মরছে (দেখুন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট), তখন আফ্রিকার শান্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে আমাদের সেনাবাহিনী ব্যবহারের নৈতিক অধিকার জাতিসঙ্ঘের নেই। সেন্ট্রাল আফ্রিকায় যে গণহত্যা চলছে, একই গণহত্যা বাংলাদেশেও। সেখানে যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘের হয়ে আফ্রিকার গণহত্যা থামায়, সেটা এক ধরনের মানবতাবিরোধী আচরণ নয় কি?
৬
আজ যে স্বৈরাচারের জন্ম হলো, এটা বরফের মাথা, শরীর পানির তলে। একে বড় হতে দিলে অস্তিত্ব সঙ্কট অবধারিত। সুতরাং নব্য স্বৈরাচারকে বাধ্য করতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাই একমাত্র অস্ত্র যা ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসঙ্ঘের হাতে। অরুণাচল প্রদেশকে নিয়ে ’৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধ এবং ’৬৫ সালে কাশ্মির নিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধের কথা আমরা জানি। বর্তমান বাংলাদেশকে ঘিরে অতীতের মতো আরেকটি ত্রিভুজ যুদ্ধ পরিস্থিতি উঁকি দিচ্ছে না, বলা কঠিন। দিল্লির ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়ন এখন খোলাবাজারে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেন্টিমেন্ট জাগাতে মুজিবের মতো আবারো ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তোলার বিকল্প কোথায়? অন্যথায় সিকিম অথবা মিসরের উদাহরণ তো সামনেই।
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন