ইসলামপন্থী পিতা-মাতাই কি গড়েন ধর্মনিরপেক্ষ সন্তান!!!
লিখেছেন লিখেছেন জিনান মামনি ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:১৮:২৭ রাত
ইসলামী আন্দোলন করেন এমন পিতামাতা যেমন সন্তানের পড়াশোনা,পুষ্টি বা বেড়ে ওঠা, ভালো ফলাফল, ভালো প্রতিষ্ঠাণে ভর্তি, ফ্রেন্ড সার্কেলসহ নানা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন, তেমনি তাদের উদ্বেগের একটি বড় কারণ তার সন্তানের আদর্শিকভাবে গড়ে ওঠে নিয়ে। আন্দোলনকে ভালোবাসেন এমন সব পিতামাতাই সন্তানের আন্দোলনের পথে পিছিয়ে পড়ায় চিন্তিত হন। কিন্তু কথাটি অতি আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আন্দোলনের নির্ভেজাল চেতনাভূক্ত পরিবারের শতভাগ আন্তরিক পিতা মাতার একটু সচেতনতা, সন্তানের হক আদায়ে পিছিয়ে থাকা আর সময়দানের অভাব, তার নিজের অজান্তেই সন্তানকে ধর্মনিরপেক্ষতার শিকারে পরিণত করছে। হয়তবা আমার সাথে অনেকেই এক মত হবেন না। প্রয়োজনও নেই। তবে নিচে আমার দেখা অনেকগুলো সত্য ঘটনা নিয়েই একটি চিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করেছি, এমনও হতে পারে কারও সাথে মিলেও যেতে পরে। আমার অনুরোধ থাকবে সেটি পাঠ করার সময় নিজে পরিবারের প্রিয় সন্তানটিকে আদর্শের পথে এগিয়ে নিতে কোথায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে, সে বিষয়টিই সকলে অনুধাবনের প্রয়াস পাব। আর মিলে যাবে কি যাবে না, সেটি বড় কথা নয়। বরং আমাদের নতুন প্রজন্ম ইসলামের আদর্শে সত্যিকারের অনুসারী হচ্ছে কিনা, সেটাই মুখ্য। কেননা নিখাঁদ উৎস থেকে আগত প্রজন্ম যদি আদর্শের পথে এগিয়ে না আসে, আন্দোলনের পরিবার থেকে যদি বিরোধী সমর্থক তৈরী হয়, সে পিতা-মাতার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? এর চাইতে একজন দায়ীর বড় ব্যর্থতা আর কিছু হতে পারে কি? নিজের পারিবারিক পরিমন্ডল নিয়ে সামান্য একটু একটু চিন্তা করলেই আমরা অনেক কিছুর ব্যাখ্যা খুঁজে পাব।
(ক)
শফিক সাহেব ছাত্রজীবনে অত্যন্ত ডেডিকেশন নিয়ে ইসলামের কথা বলতেন, অনেক শ্রম-ঘামের বিনিয়োগও আছে তার। ভালোবাসার এখনও বিন্দুমাত্র কমতি হয়েছে, তা-ও নয়। তবে র্বতমানে ততটা একটিভ না হলেও আন্দোলনকে প্রাণের চাইতে বেশি ভালোবাসেন। যখনই ডাক আসে চেষ্টা করেন র্সবস্ব দিয়ে সহযোগিতা করার। সমাজের এলিট পেশায় আছেন। তাই ব্যস্ততাটাও প্রচন্ড , পরিবারকে সময় খুব একটা দেয়াই হয় না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলেন,
ওর মা আছে না? সেই-ই সব দায়িত্ব পালন কর। আসলে ওদের গাইডের সব ক্রেডিট ওদের মায়েরই। বড় দুই মেয়ে রিনা-দিনা আর এক ছেলে আহমাদকে নিয়ে তার সংসার। আহমাদ স্কুলের ক্লাস এইটের সবচাইতে মেধাবী ছাত্র। প্রতি বছর ক্লাসে দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়। এ নিয়ে শফিক সাহেবের গর্বের কোন শেষ নেই। অবশ্য দুই মেয়ে পর আল্লাহর কাছে মানত করেছিলেন, একটি ছেলে হলে তাকে ইসলামী স্কলার করে তুলবেন। কিন্তু চারিদিকের অবস্থা দেখে ছেলের ভবিষ্যত ভেবেই সাহস করেননি। কিছু করে তো খেতে হবে। এই ভেবেই দেশ সেরা ইংরেজী মিডিয়াম বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। যদিও ছেলের সিলেবাসের বই গুলো দেখে বুঝে ওঠেন না, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সামান্যতম ধর্মীয় বই সিলেবাসে না রেখে ইন্ডিয়ান প্রকাশনার প্রকাশিত হেরাডোটাসের লাইফ হিষ্ট্রি আর সেক্সপিয়ারের গল্প পড়ে নিজের মাতৃভূমির জন্য, ধর্মের প্রতি ছেলে কি ডেডিকেশন অনুভব করবে? তার পরে সবাই তো পড়ছে, এই ভেবে ছেলের পেছনে অকাতরে অর্থ খরচ করছেন, যদি তার সম্মান আরও বাড়ে, এ ভেবে।
(খ)
ফব্রুয়ারীর বই মেলা। আহামদের বন্ধুরা একুশের বই মেলায় যাবে বই কিনতে। ছেলে এস বাবার কাছে টাকা চাইতে শফিক সাহেব বললেন,
দুর! গল্প উপন্যাস কিনে ফালতু খরচ করে লাভ কি? আহমাদও নাছোড়বান্দা।
অবশেষে মায়ের সুপারিশে দুটো বইতে রফা হয়। বই দুটোর নামও আগে থেকেই ঠিক করা। এবারের হট কেক। দুই লেখক ভায়ের বই। ও দুটো অন্তত না পড়লে যেন পুরো বছরটাই খারাপ যাবে আর বন্ধু মহলের আড্ডায় প্রেস্টিজ বলে একটা কথা আছে না?
ঠিক আছে। এই নাও।
মা ক্ষীণ স্বরে বলেন, আরও কিছু টাকা দাও। এ উছিলায় দু একটা ভালো বই কিনুক। নাম আমি বলে দিচ্ছি।
বাদ দাও তো। ওদিকে বেশি ঝোঁক হয়ে গেলে পড়াশুনা খারাপ হয়ে যাবে। বাসার সেলফ ভরা ভালো ভালো বই, বছর ধরে সেগুলো ধুলো পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে নজর নেই আরো ভালো বই কিনবে? পড়লে তো?
মা আর কথা বাড়ান না। হতেও পারে।
(গ)
আহামদের কিছু ভালো বন্ধু আছে। অনেকে অবশ্য বয়সে বড়। এপার্টমেন্টের গেটে ঢুকতে গিয়ে প্রতিবারেই অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকা, ইন্টারকমে কনফার্ম করা মার্কা ঝামেলা পোহাতে হলেও মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় আসে। বাবার সাথে কথা বলে, ম্যাগাজিন, বই পৌছে দেয়। আহমাদেরও নামাযের খোঁজ খবর নেয়। সময়ে সময়ে ভালো প্রোগ্রামেও নিয়ে যায়। শফিক সাহেব অবশ্য পরামর্শ দেন, তোমাদের সাথে বেশি না নিয়ে শিশু কল্যানে ওকে নাও, গান-টান শেখাও। অবশ্য শফিক সাহেবের এ চিন্তার পেছনে এক ধরনের ভীতিও কাজ করে, এদিকে অ্যাকটিভ হলে আবার কত কিছু ফেস করতে হয়। একটা মাত্র ছেলে, শিশু বিভাগে তো আর এসবের ঝামেলা নেই। ছেলেরা অবশ্য বলে যে চাচা! আন্দোলনের পরিবারে ছেলেদের কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকে, তাই সরাসরি আন্দোলনের কাজ করাটাই ওর জন্য বেস্ট। পরে যদি ওখানে প্রয়োজন হয়, হাজারবার যাবে। তারপরেও শফিক সাহেব গর রাজী। শত হোক, বাবা তো।
ওই ভাইয়া গুলোই একবার কতগুলো টিকিট নিয়ে এল। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। আহমাদকে নিয়ে যাবার কথাটা শফিক সাহেবকে বলতেই বলেন, দূর! পড়াশুনা বাদ দিয়ে ওসব অনুষ্ঠান এখন আপাতত থাক। দেড় মা পর পরীক্ষা। রেজাল্ট খারাপ হতে পারে। তিনি ভাইয়াদেরকে বোঝান, দেখ বাবা। তোমরা যত খুশী আমার বাসায় এসে প্রোগ্রাম কর। ওকে বাইরে টানাটানি কোরনা। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। পরীক্ষাটা যাক। তারপরে তোমাদের হাতে ছেড়ে দেব। তবে মাঝে মাঝে মাঝে এসে অবশ্যই নামাযের খোঁজ নেবে কিন্তু।
(ঘ)
শফিক সাহেবে বাসায় রাখা হয় তথাকথিত প্রগতিশীল-সুশীল এক দৈনিক। তিনি যে খুব পছন্দ করে রাখেন, তা নয় বরং মাঝে নেতাদের বিকৃত ছবি দেয়, কটাক্ষ করে, মিথ্যাচার করে বলে তিনি রীতি মতো ঘৃনাই করেন। তার ইচ্ছা সত্য কথা বলে, মনের খোরাক পাওয়াযায়, এমন কোন দৈনিক রাখার। কিন্তু ওগুলো এতটাই মরা ধরা যে ছেলে মেয়েরা সায় দেয়না। আবার এক সাথে দুটো পত্রিকা রাখার মতো বাজে খরচও তিনি করতে চান না। কি দরকার বাড়তি দুশ টাকা খরচ করে? আদর্শের বিরোধিতা করে, রাসুলকে কটাক্ষ করে কার্টুন ছাপাবার পরে এবার ভেবেছিলেন এই শেষ। কিছু খবরে তো তার অন্তরও জ্বলে যায়। তারপরেও ছেলে মেয়ের পছন্দ বলে কথা। পত্রিকার সাথে বোনাস টোটকা প্রতি সপ্তাহের বাড়তি ম্যাগাজিনের লোভ তো ছাড়া যায়না? ঘর শুদ্ধ সকলে ভীষণ ভক্ত সেগুলোর। পত্রিকাটির উদ্যোগে একবার ঘোষনা এলো গণিত নিয়ে মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে এক তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। কোন মোবাইল কোম্পানীর স্পন্সরশীপে। পুরস্কারও চমকে দেবার মতো। বিজ্ঞাপন দেখে আহমাদ বাবাকে বলে,
আব্বু! আমিও নাম দেব।
দেবে না মানে? ক্লাসের সেরা ছাত্র তুমি, নির্ঘাত ফার্স্ট হবে। কত মানুষ র্গব করবে তোমাকে নিয়ে? ঠিক আছে বাবা! পরশু আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তোমার ফরম পূরণ করে দিয়ে আসব।
অবশেষে প্রতিযোগিতাও শেষ হলো। অভাবনীয় পারফর্মেন্স প্রর্দশন করে দ্বিতীয় হলো আহমাদ।। পুরস্কার বিতরণের দিন আবার অফিস থেকে ছুটি নিলেন শফিক সাহেব, সমস্যা নেই। অনেক ছুটি পাওনা হয়ে আছে তার। হাজার হোক, শত শত মানুষের সামনে নিজের সন্তান পুরস্কর নিচ্ছে, এটা দেখার র্গবই আলাদা।
আয়োজন স্থলে গিয়ে দেখলেন অতিথি হিসাবে এসেছেন, তাদের মধ্যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ বুদ্ধিজীবী, কেউবা লেখক। সকলেই পরিচিত মুখ। দুয়েক জন অভিনেতাও আছেন। পছন্দ করেন বা আদর্শিক ভাবে ভালো জানেন, এমন কাউকে পেলেন না তিনি। অনুষ্ঠান শুরু হলো। অতিথিরা একে একে নানা কথা বলে গেলেন। স্বাধীনতার চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে। দেশকে গড়তে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা। কিন্তু এদেশে ধর্মের নামে কিছু ব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি, প্রগতি বিরোধীরা সকলকে এসব ভালো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে চায়। এদেরকে বয়কট করতে পারলেই সবাই মিলে এ দেশটাকে গড়া যাবে। প্রতিযোগিরা সবাই এতে রাজি কিনা? হাজারো কোমল ফুলের মত মেধাবী উচ্ছাসে দুহাত তুলে বলে, রাজি। আসনে বসা শফিক সাহেবের কাছে কথা গুলো কেমন যেন লাগে? তবে মঞ্চে দাড়ানো ছেলেকে দেখে র্গবে বুক ভরে যায় তার, ভুলে যান ওসব তেতো কথা। খানিক পরে শুরু হয় তার অন্যতম অপছন্দের ব্যান্ড শো। নাচের তালে তালে প্রিয় সন্তানকেও হারিয়ে যেতে দেখেন। হঠাৎ লম্বা এক জরুরী ফোনে ব্যস্ত হয়ে যান তিনি। বাবাকে ব্যস্ত দেখে বন্ধুদের সাথে আহমাদও নাচতে থাকে।
(ঙ)
ফেব্রুয়ারী মাস আসার আগেই আবার আহমাদের নাম দেন ভাষা প্রতিযোগ-এ। ইন্টার ন্যাশনাল এক ব্যাংকের স্পন্সরশীপে প্রতিযোগিতা। বিরাট রষ্কার। স্কুলের ডাকসাইটে মেধাবী আহমাদের যথারীত পুরস্কার লাভ, বিরাট সুনাম, সেই অনুষ্ঠান, সেই অতিথি, সেই মন ভোলানো কথা আর ব্যান্ড শো আর একই রকমের সমাপ্তি। আহমাদ এখন বোঝে, তাকে এগিয়ে যেতে হবে, হতে হবে মঞ্চে আসীন ওই বড় মানুষগুলোর মত।
(চ)
টক শোগুলো ভীষণ পছন্দের শফিক সাহেবের। সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ টক শোগুলো যেন কোন বিষয় খুঁজে পায়না। ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী মানুষগুলো আসলেই যে কত জঘন্য, সেসব নিয়েই কাল্পনিক আলাপচারিতা। নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত আর পত্রিকার কাটিং দিয়ে আলোচকরা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশের একমাত্র এবং মৌলিক সমস্যা এরাই; এরা ইসলামের কথা বলে আর নিজেদের সাফাই গায়। জঙ্গী আমদানীর হোতাও এরাই। এদের উচ্ছেদ করতে পারলেই দেশের উন্নতি নিশ্চিত। পাঁচ বছরের মধ্যে দেশ সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে।
ওদের আজগুবি কথা আর মিথ্যাচারগুলি শুনতে ভালোই লাগে শফিক সাহেবের। কি অবলীলাক্রমে মিথ্যা বলে যাচ্ছে লোকগুলো! অকাট্য মিথ্যাচারের এ অভিনয় দেখার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ আছে। তিনি ভাবেন, মিথ্যাবাদী লোকগুলো নিজেদের আবার সম্মানীয় বলে সমাজের স্বীকৃতিও পাচ্ছে। পাশে বসে আহমাদও শুনছে এসব কল্প কাহিনী। অবশ্য সে অত কিছু বোঝেনা ,তবে তার ভালোই লাগছে। যদিও মনে একটু খটকা লাগছে, কারণ আব্বু যে লোকগুলোকে পছন্দ করে, এরা তাদেরকে কেন খারাপ বলছে, সে বুঝতে পারেনা। আব্বুর তো মন খারাপ হবেই তাহলে? কিন্তু বাসার পত্রিকাটিও কি মিথ্যা বলে? অন্যরাও যে মিথ্যা বলছে তা এলো কোথা হতে? দ্বন্দময় হয়ে ওঠে এইট পড়ুয়া আহমাদের মন। জবাব পেতে প্রশ্ন করে বাবাকে, বাবা ওরা যা বলে তা কি সত্য?
ধুর, ওরা সব চোর, মিথ্যাবাদী, প্রতারক। মিথ্যা বলাই বলাই ওদের কাজ।
কিন্তু ওদেরকেই তো সব সময় টিভিতে দেখি? জানতে চায় আহমাদ।
টভিটাই তো ওদের। কিন্তু ওদের কথা সত্য নয়।
তাহলে সত্যটা কি বাবা?
যাও, যাও! নিজের কাজে যাও। সারা দিন পরে এসে খবর দেখছি। বিরক্ত কোরনা।
আহমাদ বিষন্ন মনে চলে যায়, কিন্তু প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে মনটাতে। এত কাগজ পত্র নিয়ে অত বড় গলা করে বলা লোকগুলোর সবগুলো কথা মিথ্যে? তবে সঠিকটা কি? বাবাও তো কিছু বলল না।
(ছ)
শফিক সাহেব আবার হিন্দী গজল আর কাওয়ালীর ভক্ত। মাঝে মাঝে চ্যানেল ঘুরিয়ে চান্স পেলেই উপভোগ করেন। বাংলা চ্যানেল গুলো একবারেই অখাদ্য, তার উপর এককটা প্রোগ্রামের মাঝে দশ মিনিট করে অ্যাড। বিরক্তিকর! তার তুলনায় কোলকাতার চ্যানেলগুলো কত ভালো। ছেলে মেয়েরাও সনি, ষ্টারে দু একটা সিরিয়ালও মাঝে মধ্যে সময় পেলে নেড়ে চেড়ে দেখে। অবশ্য বাবার সামনে নয়। শফিক সাহেব ভাবেন মানুষ ওদিকে যাবেনা কেন? কি ওদের মেকিং আর গল্প বিন্যাস। শালার বাঙ্গালী এখনও ক্ষ্যাতই থেকে গেল। কিন্তু সমস্যা হয় ইন্ডিয়ান অ্যাডগুলো একটু নোংরা টাইপের, তার উপর মাঝে মধ্যে দু একটা গান হয়, ভীষণ বেশ নোংরা। ব্যাটারা আসলেই নির্লজ্জ। চ্যানেল চেঞ্জ করতে মন চাইছেনা। এই তো দুয়েক মিনিট পরেই তো শেষ হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে পাশে বসা ছেলে মেয়েদের দিকে আড় চোখে তাকান, ওদের প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করেন। না! ওদের এসব বোঝার বয়স তো আর হয়নি। বয়স হলে তখন এসব আজেবাজে চ্যানেলগুলো বদলে দেব। তখন শুধু বাংলা আর ইসলামিক চ্যানেল থাকবে।
ক্লাসের বন্ধুদের কাছে প্রায়ই নানা কথা শুনতে হয় আহমাদকে। বিশেষ করে যে ভাইয়ারা মাঝে মধ্যে ওদের বাসায় আসে, বাবার সাথে কথা বলে তাদের নিয়েই। ওরা রগ কাটে, ওরা সন্ত্রাসী। ওরা ব্যাকডেটেড। মুখে মিষ্টি কথা বলে আসলে ভয়ঙ্কর প্রাণী। এসব শুনে শুনে ওরও কেমন মনে হয় আসলেই তো, হয়তবা ওর বাবা ভালো; তাই বলে সবাই তো আর ভালো নয়। বাবা-মা ওদের ভালো বলেন কিন্তু সবাই খারাপ বলে কেন? নাহ! এই রগ কাটা পার্টির ভাইয়ারা ডাকলে আমি আর যাবনা।
পরদিন আহমাদ বাবাকে বলে, বাবা আমি আর রগকাটাদের প্রোগ্রামে যাবনা।
শুনে আকাশ থেকে পড়েন শফিক সাহেব। আশ্চর্য! কোথা থেকে শিখল এ কথা। তার নিজের ছেলে কিনা আজ এ কথা বলছে? গর্জে ওঠেন,
চোপ! কে বলেছে এসব? সব মিথ্যা কথা? বানোয়াট। যারা ইসলামের শত্রু, তারাই এসব বানিয়ে বলে।
আমার বন্ধুরাও যে বলে। যে স্যারের কাছে পড়ি, তিনি তো ভালো। তাবলীগ করেন, তিনিও কি মিথ্যা বলেন? তাহলে সত্যটা কি?
আমি যেটা বলি সেটা। যাও, পড়তে বস।
মনের অন্তরালে জবাব খুঁজে পায়না আহমাদ। দ্বান্ধিক সমস্যা আরো প্রকট হয় । একদিকে বন্ধু বান্ধব, শিক্ষক আর মিডিয়ার কথা অন্যদিকে বাবার কড়া ধমক। গুমড়ে মরে তার মন, জবাবের প্রত্যাশায়।
(জ)
ছেলেকে দুমাস হলো ইন্টারনেট মডেমসহ কম্পিউটার কিনে দিয়েছেন শফিক সাহেব। একেতো এ যুগের ছেলে, তার ওপর আবার ব্রিলিয়ান্ট। ছোট বয়স থেকেই যদি কম্পিউটার ব্যবহার না করে পিছিয়ে পড়বে না। মনে হচ্ছে সে আরও মনোযোগী হয়েছে। আগে রাতে যত না পড়া শোনা করত, তার চেয়েও বেশি পড়ে। ইংরেজীটাও যেন ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে, সেজন্য ইষ্টার্ন প্লাজা থেকে বেশ কিছু মুভিও এনে দেন। দোকানদার বলল, এগুলোই নাকি এখন হট। অস্কারও পেয়েছে। তিনি সানন্দে মানুষের কাছে বলেন, আমার ছেলে সারা রাত কম্পিউটারে পড়া শোনা করে।
দু মাস না যেতেই হঠাৎ অনুভব করলেন, আহমাদের মা কানের কাছে এসে কদিন খুনসুটি করছে। তিনিই সময় দিতে পারছেননা। হঠাৎ একদিন রাতে জানতে চাইলে মিসেস শফিক বললেন, তুমি শুনলে রাগ করবে, কিন্তু না বলে পারছিনা। আগেই বলেছিলাম টেলিভিশন, কম্পিউটার সবসময় বাড়ির কমন প্লেস এ রাখা উচিত, যেখানে লোক চলাচল আছে। তোমার ছেলে হাফ ইয়ার্লিতে সপ্তম হয়েছে।
আচমকা লাফ দিয়ে ওঠেন। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। কি সর্বনেশে কথা! কম্পিউটারে সারা রাত পড়েও রেজাল্ট খারাপ। কিসের কমন প্লেস, বাসায় কোন কম্পিউটারই থাকবেনা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত।
যা হবার তাই হল। বাবার অফিসে নিয়ে যাবার পর থেকে আহমাদও তাকে এড়িযে চলা শুরু করল। বাবার কথাগুলো কেন জানি শুনতে ভালো লাগেনা তার।
(ঝ)
এদিকে আহমাদের মাও তার নাইনে পড়ুয়া ছোট মেয়েকে নিয়ে বেশ ভাবনায় আছেন। ফাইভ এ ওঠার পর থেকেই তাকে স্কার্ফ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু শফিক সাহেবের অবহেলায় তা সম্ভব হয়নি। বলেন,
এত ছোট মেয়ে পর্দার কি বোঝে,খামাখা চাপাচাপি কর কেন? যখন বুঝবে আপনাতেই চেয়ে নেবে? মাঝে গার্লস স্কুলে গানে ফার্স্ট হওয়ায় এখন বায়না ধরেছে একজন পেশাদার ওস্তাদের কাছে গান শিখবে। এত বড় ময়েকে দিতে মন সায় দেয়না তার। অনেক আবদারের পর তিনি অনুমতি দিলেন, ঠিক আছে, এক বছরের জন্য। না দিয়েও বা করবেন কি?
স্কুলের ম্যাডামরাও বলেছে যে সে দারুন গান করে। বাবা মা ধর্ম প্রাণ তাতে কি? এখন তো মুখে কড়া মেকাপ-লিপিস্টিক মেখে হিজাব পড়ে বাংলাদেশী মেয়েরাও ইসলামী চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে। ওরা কি ধর্ম প্রাণ নয়? মিসেস শফিকও না করতে পারেন না।
ঠিকই তো। ওরা যদি সব পারে। আমার মেয়ে একটু আধটু করলে কি এমন অশুচি হবে? কিন্তু সমস্যা সেখানে নয়। মেয়ে কেন যেন স্কার্ফ পড়তে চাইছেনা। নামাযেও অমনোযোগী। এ নিয়ে তার মনটাও খারাপ।
স্বামী শফিক সাহেবকে বললে তিনিও শুনতে চান না। বলেন, এত জোরাজুরির কি আছে? সময় হলে নিজেই নেবে? ওর প্রাইভেট টিউটর যে ছেলেটা আসে, ওকে বলো মাঝে মাঝে একটু সবক দিতে। দেখবে কদিনেই ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি একটু ডেকে বলেন না? আর আমার চিন্তা ছেলেটাকে এ মাসে বিদায় দেব। মেয়ে বড় হচ্ছে। পর্দার ব্যাপার আছেনা?
আর ওতটুকু মেয়ে, ছেলেটাও টিচার ভালো। দরকার নেই। পড়ালে সমস্যা কি? রেজাল্ট ভালো না করলে তোমার আমার মান ইজ্জত থাকবে? সবার বাচ্চা কাচ্চা কোথায় গেছে, বোঝ? দরকার হলে আরেকটা মেয়ে টিচার রাখ। মানতে পারেনা মিসেস শফিক। ভবিষ্যতের আশঙ্কার কথা ভাবতে চান না তিনি।
(সর্বশেষ পরিণতি আমার জানা নেই। ছেলেটি বাবার মতো কিংবা মেয়েটি মায়ের মনের মতো হয়েছে কিনা? কিন্তু না হলেও তাতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। আর এজন্য দায়ী কে, তা সহজেই অনুমেয়)
সমালোচনা করে কেউ হয়ত বলবেন, নিজেরা ভালো কাজ করার মুরোদ নেই আবার অন্যের ভালো কাজে সমালোচনা করতে ওস্তাদ। সবকিছুতেই শুধু নেগেটিভ সেন্স। আমি কারও ভালো উদ্যোগের বিরোধিতা করতে চাইনা বরং আরও আক্ষেপ করি নৈতিকতা আর ভালোর আন্দোলন যারা করেন, তারা কেন এ জাতীয় সমাদৃত প্রোগ্রাম করতে উদ্যোগী হন না? বিরোধীরা পারছে, তাই তাদেরকেই তো মানুষ উচ্চে তুলে ধরবে, জয় জয়কার হবে তাদেরই- এ কথা চিরন্তন। তবে সত্যের বিরোধিতাকারীদের স্পন্সরশীপের অভাব হয়না, একথাও মাথায় রাখতে হবে।
--পানির মাঝে বিচরনে সমস্যা নেই, কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম কি আগামী দিনে ময়লা পানির ভেতর কাঁদা বাচিয়ে চলতে শিখছে?
--কয়দিন নামাযে দাড়িয়ে মাণিককে পাশে দাড় করিয়েছি কিংবা জুমার নামাযে নিয়ে গিয়েছি?
--কয়দিন আমার মাণিককে বুঝিয়েছি ভালো ছাত্র, ভালো ফলাফল হওয়াটা যেমন জরুরী, চরিত্রবান কর্মী হওয়াটা তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়?
আবার এ কথাও তো বলতে পারি আমি বড় ভাই/বোন/মা কিংবা বাবা হিসাবে এ পৃথিবীতে শিশুটির যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, কিছু পুরস্কারের লোভে মগজ ধোলাইকারী অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবার জন্য যতটা উদ্যোগী হই, অফিস হতে ছুটি নিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করে আসি, মানুষকে র্গব করে বলে বেড়াই; ঠিক সেভাবে নৈতিকতাপূর্ণ প্রোগ্রামে যাবার সময় কি অজুহাতকে আঁকড়ে ধরিনা?
--কয়টি দিন আমরা নতুন প্রজন্মকে আর্দর্শের পতাকাবাহী সংগঠনের প্রোগ্রামে যেতে জোর করেছি বা উদ্ধুদ্ধ করেছি কিংবা নিজের উদ্যোগে নিয়ে গেছি গঠণমূলক প্রোগ্রাম গুলোতে? অফিস থেকে ছুটি, সে তো অকল্পনীয়! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এমন সৌভাগ্যবান পিতা-মাতার সংখ্যা খুবই কম।
--আপনি কি জানেন, আপনার সন্তান বাংলা একাডেমী বই মেলায় কোন লেখকের বই কেনে? কেন কেনে? ভাবছেন আজ থেকে সব নিষিদ্ধ। অতি বড় ভুল হবে সেটা। বরং তাকে সাথে আরও ভালো বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। ঐসব লেখকদের লেখার অসারতা যুক্তি দিয়ে তুলে ধরুন। তাকে বোঝাতে হবে দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। শয়তান মানুষরে হৃদয়ে কল্যানকামী হয়েই প্রবেশ করে। তাকে বড় হবার স্বপ্ন দেখিয়েই অপর্কমে ধাবিত করে।
--সত্যি ভাববার সময় এসেছে, আমরা কটি দিন আমাদের হৃদয় উদ্বেল করা বইগুলো পাশে শুইয়ে প্রিয়তম সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে পড়ে শুনিয়েছি কিংবা বলেছি, বাবা নাও, এটি আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে ভালো বই?
--আর্দর্শিক বই বিক্রেতার দোকানে গিয়ে ক'টি দিন বলেছি, ভাই! আমার সন্তানের জন্য পড়ার উপযোগী ভালো বই কি এসেছে? ভাই আমার বাচ্চাটার জন্য আপনার সিডি-ডিভিডির ভালো কালেকশানগুলো দিন।
আমরা কি টের পাই নিজের অজান্তেই আমার পাশে থেকে সে কোন কালচারে অনুরক্ত হয়ে পড়ছে?
--তথ্য প্রযুক্তিকে ভয় করে এড়িয়ে চলে আপনি সত্যিই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করেছেন যে সন্তানটি কম্পিউটার বা ভিডিও মোবইলে কি চালাচ্ছে, তা বোঝার মতা আপনার নেই।
--ছোট বলে যাকে নামায বা অন্য ফরজ পালনের ব্যাপারে তাগিদ করছেন না, সে কেনইবা নিজে থেকে তার তাগিদ অনুভব করবে?
অনেকেই সন্তানদের ভালো মুসলিম হিসাবে গঠনকে কম গুরুত্ব দিয়ে বৈষয়িক বা একাডেমিক বিষয়ে প্রাণান্ত চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন, সন্তান কোথায় পড়ে, কোন দেশে আছে বা কোন বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে, তা গর্ব ও পরম তৃপ্তির সাথে বলে থাকেন। অথচ সন্তান যদি আদর্শিক সুসন্তানই না হয়, বাংলাদেশের লাখো উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকের ন্যায় একজন সুশিক্ষিত হলে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনেরই বা কি আসে যায় আর ভবিষ্যতে যে সে ''গর্বিত'' বাবা মায়ের সেবায় রত হবে তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু ব্যর্থতার দায় না নিয়ে ''হেদায়াতের মালিক আল্লাহ'' বা নুহ নবীর ছেলের কথা বলে বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। পেশা আর আন্দোলনের ব্যস্ততা যতই থাকুক, পরিবারে একটি দিন বা একটি বেলার হক না আদায়ের কারণে শেষ জীবনের চরম হতাশা () থেকে বাঁচতে এ যুক্তি যথেষ্ট নাও হতে পারে।
আসুন আমরা আমাদের পারিবারিক প্র্যাকটিসের অন্তভূক্ত করি;
১) আপনার সন্তানকে সময় দিন, সম্পর্ক বাড়ান, আলোচনা করুন। তার সকল প্রশ্নের জবাব দিন। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবেন না। যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করুন।
২) যেকোন নেগেটিভ মোটিভেশনের সোর্স থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন। হতে পারে গৃহ শিক্ষক,টিভি অনুষ্ঠান, পত্রিকা, প্রিয় লেখক, তার আগ্রহের অনেক বিষয়। বাসায় কট্টর আদর্শবিরোধী দৈনিক না রাখাই উত্তম। সাবধান! এটি আপনার কোমলমতি সন্তানের জন্য সাইলেন্ট মোটিভেটর। বুদ্ধিমত্তার সাথে তার সম্মতি নিয়েই পার্থক্য নিরুপন করা প্রয়োজন।
৩) সন্তানরা অগ্রসর হতে পিতামাতার সক্রিয়তাকেই অনুসরন করবে। নিজেরা আন্দোলনে সক্রিয় থাকুন, সন্তানদের সামনে কখনই বর্তমান আন্দোলনে পলিসি বা নেতৃত্ব নিয়ে কটু মন্তব্য করবেননা। যে পরিবারে সমালোচনা প্রখর, সেখান থেকে আন্দোলনের ত্যাগী কর্মীর আশা করা বোকামী।
৪) বাক্য পড়ার উপযোগী হবার পর হতে প্রতি বছরে নানা উপলক্ষে তার বয়স উপযোগী ভালো বই উপহার দিন। ইসলামী সিডি, ভিসিডি,ডিভিডি কার্টুন কিনে দিন। তবে মনে রাখবেন, এ যুগের ছেলে মেয়েদের পড়ার অভ্যাস কম। তার সাথে থেকে নিজে পড়ে পড়া চালু করে দিন।
৫) আপনার সন্তানকে সঠিক ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা দিন, সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করতে শেখান।
৬) মাথা ব্যথার চিকিৎসা তা কেটে ফেলা নয়। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির বিরোধিতা আপনার সন্তানকে পিছিয়ে দেবে। বরং বাসার ডিশ সংযুক্ত টিভি বা নেট যুক্ত কম্পিউটার বাড়ীর কমন প্লেসে রাখুন, যেখানে লোকজনের যাতায়াত আছে। এতে অপব্যবহার হতে পারবে না।
৭) যোগাযোগের প্রয়োজনে আপনার সন্তানকে যদি অল্প বয়সে মোবাইল কিনে দিতেই হয়, স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে ভিডিও যুক্ত মোবাইল কিনে দেবার কোন যৌক্তিকতা নেই।
৮) আপনার সন্তানকে টিভি কিংবা কম্পিউটার নির্ভর ''গৃহ পালিত ব্রয়লারে'' পরিণত না করে তাকে খেলাধূলা বা বই পড়ায় উৎসাহিত করুন। এতে সে সামাজিক হতে শিখবে।
৯) আপনার সন্তান কি দেখছে, গভীর রাতে কম্পিউটারে কি পড়ছে, কার সাথে চ্যাট করছে তা জানার অধিকার অবশ্যই আপনার আছে। তবে জোরজবরদস্তি বা গোয়েন্দাগিরি নয় বরং সচেতন থাকুন, চোখ কান খোলা রাখুন। সামান্য সচেতনতা, এতটুকু কাঠিন্য আমাদের সন্তানদের অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।
১০) আপনার কন্যাটিকে অল্প বয়স থেকেই হিজাবে উদ্ধুদ্ধ করুন। একজন আদর্শ মুসলিম নারী হবার তালিম দিন, মহীয়সীদের জীবনী পড়ান।
১১) ছোট বয়স থেকেই সংগঠনে যাবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করুন। বৈষয়িক যে কোন কিছুর চাইতে সাংগঠনিক বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
১২) ''শুধু উচ্চ শিক্ষিত নয়, চাই মুমিন সুসন্তান''- হোক ব্যক্তি ও পরিবারের ভিশন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাসে ১-২টি তরবিয়তী বৈঠক নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এত সন্তানগণ অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবে। সম্ভাব্য স্থানে পরিবারের সন্তান বা স্ত্রীদের নিয়ে প্রতি বছর রি-ইউনিয়ন বা পূর্নমিলনী, শিক্ষা-সফর, শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। ''সুরা তাকাসুর সিনড্রম'' বা সুরা হাদীদের ২০ আয়াতের সাধারন মানবীয় গুনে আক্রান্ত না হবার ব্যাপারে পরিবারে মোটিভেশন চালু রাখা প্রয়োজন।
১৩) মনে রাখবেন, আদর্শ মুসলিম হিসাবে আপনার মতো করে গড়ার জন্য সময়কাল মাত্র দশটি বছর (৫-১৫)। এর পর হায় হুতাশ করে লাভ নেই।
Written By: Mohibbur Rahman Rafe
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে কি পাও
তারই রথ নিত্য উধাও"
--না না, তা নয়, এর চেয়েও ভাল সেটি । তা হল--
১৩টি উপদেশ । একেবারে আসল জায়গায় হাত । বাস্তবভিত্তিক সমাধান ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন