ভালবাসা অমর

লিখেছেন লিখেছেন আলোকর্বর্তিকা ২৯ মে, ২০১৪, ০৩:৪৬:৫৩ দুপুর

মেয়েটা বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে । একটুও কাজ করতে দিচ্ছেনা । সেই তখন থেকে টেবিলের উপর উঠে আপন মনে লাফাচ্ছে তো লাফাচ্ছেই । থামার কোন নাম নেই ।

- মামনি, পড়ে যাবে তো ।

- না বাবা, পলবো না ।

আবার লাফাচ্ছে । কোন কথাই শুনছেনা । বাচ্চা মানুষ করাটা যে ছেলে খেলা না, আরিফ সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছে । বিয়ের পর সংসারের সব কাজের সাথে সাথে এ দায়িত্বটাও মেয়েদের ঘাড়েই চাপে । কিন্তু, মিতু মারা যাবার পর আরিফকেই নিতে হয়েছে । ভালবেসে বিয়ে করেছিল মিতুকে । একই সালে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বিয়ে করে নেয় ওরা । আরিফ পড়ত আইন নিয়ে । আর মিতু সমাজবিজ্ঞান । পালিয়ে বিয়ে করলেও, পরে দু’পরিবারেই মেনে নেয় সবকিছু ।

মিতু প্রায়ই বলত আরিফকে, “যদি মরে যাই কখনও, আমাদের বাবুটাকে ভাল করে মানুষ করবে তো ?”

এ কথার বিনিময়ে এত্তগুলা বকা শুনতে হতো মিতুকে । তারপর একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো । তারপর কান্না থামিয়ে আরিফের চোখ মুছে দিত মিতু । মিতুর ভেজা চোখেই চুমু এঁকে দিত আরিফ ।

তারপর একদিন সত্যি সত্যিই আরিফকে ছেড়ে চলে যায় মিতু । যাবার আগে দিয়ে যায় মিষ্টি একটা বাবু । ডাক্তার বলেছিল, মা হতে গেলে মিতুর জীবন সংশয় হতে পারে । কি যেন একটা রোগ আছে ওর । নামটা মনে নেই । কিন্তু, মিতুর খুব ইচ্ছে, আরিফকে একটা বাবু গিফট করবে । আর নাম দেবে “বাটি” । আরিফকে ভালবেসে “বাবুই পাখি” ডাকতো মিতু । আর আরিফ মিতুকে “টিয়া” । দুইয়ে মিলে “বাটি” । নামটা মিতুরই ঠিক করা । খুব হেসেছিল দুজনে সেদিন ।

ফোনে কথা বলছিল একজোড়া পাখি । বাবুই-টিয়া..

- “এ্যাই বাবুই পাখি”

- “জ্বি টিয়া পাখি বলো”

- “আমাদের বাবুটার একটা সুন্দর নাম ঠিক করো তো” ।

- “উমম... উমম.. নাহ্ টিয়া, ভাল নাম মাথায় আসেছেনা তো” !

- “তোমার মাথায় দেখছি হারপিক দিয়ে ঠাসা ! হি হি হি..”

- “পাগলী একটা, তুমিই ঠিক করো না.."

- “আমাদের বাবুর নাম হবে “বাটি” ।। বলেই ফিক করে হেসে দেয় মিতু । হাসলে মিতুর গালে টোল পড়ত । ফোনে কথা বলতে বলতেই মুগ্ধ হয়ে শুনতো আরিফ । আর হারিয়ে যেতো মিতুর টোল পড়া গালে । কল্পনাতেই ছুয়ে দিতো মিতুকে ।

আরিফ এখন এ মিষ্টি বাবুটার মাঝেই খুঁজে ফেরে মিতুর স্মৃতিগুলোকে । মিতুর মতই দেখতে হয়েছে বাবুটা । ওদের “বাটি” । যে বাটিতে জমা হয়ে আছে আরিফ মিতুর সীমাহীন ভালবাসা ।

টেবিলের উপর লাফিয়েই চলেছে বাবুটা । কচি কচি পায়ের ছাপ লেগে যাচ্ছে টেবিলের গায়ে ।

সন্ধ্যা নেমে আসছে । কালো হয়ে যাচ্ছে চারপাশটা । পরিষ্কার হচ্ছে তারাগুলো ।

- মামনি, ছাদে যাবে ?

- তলো বাবা

সন্ধ্যা নামলেই মেয়েকে নিয়ে ছাদে যায় আরিফ । কারণটা জানেনা ছোট্ট বাবুটা l শুধু অবাক বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে । দেখে, তখনও বাবা খুঁজে যাচ্ছে আকাশের সবচে বড় তারাটাকে ।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

227983
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৬
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : এক টানে পড়ে ফেল্লাম। ভীষণ কষ্ট পেলাম। আহ কি ভালোবাসার পরশ। এই ভালোবাসা ছেড়ে কি কারো যেতে ইচ্ছে করে অন্ধকার কবরে। তবুও নিয়তি। বাবুটার জন্য কষ্ট হচ্ছে যে তার মা নেই। হাজার তারার মাঝে খুঁজে ফিরে তার মাকে । Sad Sad Sad


এক কথায় অসাধারণ লিখেছেন।
০১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
175585
আলোকর্বর্তিকা লিখেছেন : মন্তব্য কররার জন্য ধন্যবাদ
227999
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
মুজিব সেনা লিখেছেন : খুবই সুন্দর লেখা।
228011
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
নোমান২৯ লিখেছেন :






ছোট বাবুদের কথাগুলো খুব সুন্দর তাই না ?
- মামনি, ছাদে যাবে ?

- তলো বাবা

228038
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : বাহ বাহ খুব সুন্দর গল্প। পলে ভাল লাগতে
০১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
175584
আলোকর্বর্তিকা লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্য কররার জন্য ধন্যবাদ
228045
২৯ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৪
মুজিব সেনা লিখেছেন : ছোট বাবুদের কথাগুলো খুব সুন্দর তাই না ?
- মামনি, ছাদে যাবে ?

- তলো বাবা
কি লিখব বুঝতে পারছি না,আসলে সবারই কোন না কোন দিকে কিছুটা কমতি থাকে এটা আল্লাহ প্রদত্ত। না হলে আমরা ভালো-মন্দ, আলো-আঁধার এর মর্মটা বুঝব না। Rose Rose Rose

০১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
175583
আলোকর্বর্তিকা লিখেছেন : মন্তব্য কররার জন্য ধন্যবাদ
228061
২৯ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
সন্ধাতারা লিখেছেন : It is an amaizing story but sad though. Thanks for nice writing.
০১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
175582
আলোকর্বর্তিকা লিখেছেন : ওয়েলকাম
229182
০১ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০০
ভিশু লিখেছেন : খুব ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File