বৈশাখের গল্পঃঅভিনব বৈশাখ পালন।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সুবাতাস ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:২৪:৫৯ দুপুর
-হ্যালো রশিদ,কি করছ?
-তেমন কিছু না,বসে বসে একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।তুমি কি করছ?
-আমি আর কি করব?বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম।ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলি,তাই ফোন দিলাম।তা এমন কি বিষয় নিয়ে ভাবছ,যেটা তোমার কাজের মধ্যে গণ্য হলো?একটু বুঝিয়ে বলবে কি?
-হাঁ,বুঝিয়ে তো অবশ্যই বলব,তুমি জানতে না চাইলেও এই ব্যাপারে তোমাদের জানাতাম।তবে তা ফোনে জানানো যাবেনা।তুমি যেহেতু অলস সময় কাটাচ্ছ,তুমি কষ্ট করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিহাব,মোরশেদ,হামিদ,তারেক,পারভেজ,সালাহ উদ্দিন সহ আমাদের বন্ধুদের যাদেরকে পাও নিয়ে আমার বাসায় এসো।খুব জরুরি একটা বিষয়ে আলোচনা আছে।
-ঠিক আছে আমি যাদের পাই,নিয়ে আসতেছি।নাস্তা খাওয়াতে হবে কিন্তু।
-ঠিক আছে খাওয়াব।
-একটু যদি বলতে বিষয়টা কি?
-বলব বলেইতো তোমাদের আসতে বলছি।এত অস্থির না হয়ে তাড়াতাড়ি এসো।সকলকে একসাথে জানাব।রাখি,বাই।
বলেই বেলালকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রশিদ ফোন রেখে দিল।তারপর বন্ধুদের আসার অপেক্ষা করতে লাগল।ওদিকে বেলাল অস্থির বিষয়টা নিয়ে,কি এমন বিষয় যা সবাইকে একসাথে বলবে?ও তাড়াতাড়ি সকলকে জানাল এবং তাড়াতাড়ি রশিদের বাড়িতে আসতে বল্ল।ওরা সকলে আশ্চর্য হলেও আসবে বলল।সকলে আসার পর রশিদ সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে বসতে বল্ল।মোরশেদ একটু হেসে বলে উঠল,
-এবার বল তোমার সেই বিষয়টা,যা নিয়ে তুমি ভাবছিলে এবং আমাদেরকেও ভাবাচ্ছিলে।আর তর সইছেনারে ভাই।
-হুম,বলতেছি।তার আগে তোমরা বল,বৈশাখ মাস আসতে আর কয়দিন আছে?
রশিদের কথাশুনে সকলে আশ্চর্য,হটাত রশিদ বৈশাখ নিয়ে লাগল কেন?কয়েকজন
বলল জানেনা।একজন বলল, ‘বৈশাখ তো মনে হয় চলে গেছে।এখন বৃষ্টি শুরু হয়ে
গেছে না?আষাঢ়-শ্রাবণেইতো বৃষ্টি হয়।’
ওর কথা শুনে সকলে হেসে উঠল।আরেকজন বলল,
-বৈশাখ আসতে তো আরোও কয়েকদিন আছে,এত আগে থেকে কি করবে?
রশিদ বলল, ‘হাঁ,বৈশাখ আসতে আর মাত্র ৭ দিন বাকি আছে।আমরা বাঙ্গালীরা থার্টি-ফাস্ট নাইট যেভাবে পালন করি,তাতে মনে হয় যে আমরা বাঙ্গালী না,আমরা ইংলিশ।অথচ আমরা আমাদের নিজেদের বর্ষ কখন শুরু তাও ভাল করে জানিনা অনেকেই।’
বেলাল বলল,-ঠিক বলেছ,তা এখন কি জন্য ডেকেছ তা বল তাড়াতাড়ি,আমার একটা কাজ় আছে।
-আমি এইবার আমাদের ১লা বৈশাখটা একটু ভিন্নভাবে পালন করতে চাই।যাতে আমরা নিজেরা আনন্দ পাব,পাশাপাশি আমাদের মাধ্যমে কিছু মানুষও আনন্দ পাবে।
তারপর সকলকে তার প্লানের কথা জানিয়ে দিল।কেউ কেউ প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে রাজি হয়ে গেল।সকলকে সব কাজ বুঝিয়ে দিল রশিদ।আলোচনার মাঝখানে রশিদের ভাগিনা নাস্তা এনে পরিবেশন করল।নাস্তা পর্ব শেষ হলে রশিদ বলল,
-আমরা আমদের প্লান মাফিক কাজ করব।১লা বৈশাখের আগে কাউকে কিছু জানাব না।আমাদের সকলের যেন এটা মনে থাকে।জানি আমাদের অনেকের কাজটাতে একটু কষ্ট হবে।কষ্ট হলেও কাজ শেষে বুঝবে কাজটিতে কত তৃপ্তি।আগামীকাল সকাল থেকে আমাদের কাজ শুরু করব আমরা।
কথা শেষ করে সকলে চলে গেল।পরদিন থেকে ওরা সকলে কাজে লেগে গেল।তারা খুব মন দিয়ে কাজ করছে।অনেকের কাছে টাকা না থাকাতে ধার করে ও অন্যান্য উপায়ে টাকা জোগাড় করল।একজনেতো নিজের শখের দামি মোবাইলটাই বিক্রি করে দিলো।
১লা বৈশাখের আগের রাতে সকলে বসে সব কাজ ঠিকভাবে হয়েছে কিনা দেখে নিল।তারপর সকলে বাড়ি চলে গেল।
১লা বৈশাখের দিন সকাল ৬ টার আগে সকলে নির্দিষ্ট স্থানে এসে গেল।সকলের মনে খুব আনন্দ।ওরা অনেকগুলো বক্স নিয়ে আসল রশিদের বাড়ি থেকে।যা তারা আগের রাতে এনে রেখেছিল।প্রতিবেশী সহ সকলে আশ্চর্য হয়ে ওদের কাজ দেখছিল আর এটা সেটা বলাবলি করছিল।ওরা কারও কথার দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজেদের কাজ করছিল।সব কাজ শেষ হলে ওরা ওদের দাওয়াত করা মেহমানদেরকে নিয়ে এলো।মেহমান্দের সকলেই হল ওদের নিকটস্থ গরীব ও বস্তির ছেলে-মেয়ে।যাদের অনেকে পড়া-লেখা করে কিন্তু পড়ার খরচ বহণ করতে কষ্ট হয়।আবার পাঁচ জন পড়া-লেখা বন্ধ করে দিয়েছে অভাবের কারণে।
রশিদরা এবার তাদের বক্স খুলল। বক্স থেকে একে একে বের করল অনেকগুলো ব্যাগ।প্রত্যেকটি ব্যাগে রয়েছে খাতা,কলম,পেন্সিল,জ্যামিতি বক্স ও অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী।তারা আগত মেহমানদের সকলকে একটা করে ব্যাগ দিল এবং ঘোষণা করল লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া পাচঁ জন ছেলে-মেয়ের খরচ ওরা বহণ করবে।ওদের এমন বৈশাখ পালনের কথা কাউকে না জানালেও কৌতুহল বসত ওনেকেই ওদের অনুষ্ঠানে এসেছিল।যেখানে স্থানীয় সাংবাদিক আরফাতও ছিল।তিনি ওদের কাছে অনুভূতি জানতে চাইল।রশিদ বলল, ‘আমাদের সমাজে সকলে বৈশাখের দিন পানতা-ইলিশ খায়।ভিবিন্নভাবে উৎসব পালন করে,কিন্তু তাদের পাশে অনেক গরীব যে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তার দিকে কারও নজর নেই।তারা দেখেও দেখেনা। আজকে আমরা হয়তো পানতা-ইলিশ খাইনি,বা কাউকে খাওয়াতে পারিনি।কিন্তু আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা করতে পেরেছি করার চেষ্টা করেছি।আমার সকল বন্ধুরা নিজেদের বৈশাখ পালনের টাকা দিয়ে এই আয়োজনে শরীক হয়েছে।ওরা আমার ডাকে সাড়া না দিলে এবং আল্লাহর রহমত না থাকলে হয়তো আমি একা এসব করতে পারতাম না।আপনারা সকলের সহযোগীতা পেলে আগামীতে আমরা আরও বড় কিছু করতে পারব।আমরা কাজগুলো করতে গিয়ে অনেকের কটু কথাও শুনেছি,তবুও আমরা সফল হতে পেরে সকল কটু কথা মন থেকে মুছে গেছে। আমরা সকলের প্রতি আহবান জানাব, যারা যে এলাকায় বসবাস করি সে এলাকায় যদি এভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি তাহলে আমাদের সমাজে আর কারও পড়া-লেখা বন্ধ হবেনা।বিশেষকরে মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন আমাদের এই ছোট ছোট কাজগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।যা দেখে আমাদের সমাজের মানুষ জানবে যে তরুণ-তরুণীরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।পহেলা বৈশাখটা যে শুধু ধনীদের না,সবার, তা আমরা প্রকাশ করতে পারলাম।’
পরদিন সকালে বিভিন্ন পত্রিকায় হেড নিউজ, “একদল তরুণের অভিনব বৈশাখ পালন।” খবরটি দেখে এবং তাদের কাজে উৎসাহিত হয়ে অনেক তরুণ-তরুণী আগামীতে এমন করে বৈশাখ বা অন্যান্য দিবস পালনের পরিকল্পনা নিয়ে ওদের সাথে যুক্ত হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিও করেছি সৈকত ভ্রমন করতে গিয়ে ।
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/2668/rashic/41397
মন্তব্য করতে লগইন করুন