আমার জীবনের প্রথম লেখাঃএকজন আদর্শ মায়ের স্বপ্নময় দিন।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সুবাতাস ২১ মার্চ, ২০১৪, ০২:৩০:২০ রাত
-বাবা আশফাক,আশফাক,তাড়াতাড়ি উঠ।
-কি হয়েছে মা?
-ফজরের আজান হয়েছে বাবা,অজু করে মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে এস।যাওয়ার সময় তোমার বন্ধু ফরহাদকেও ডেকে নিও।
-মা,আর একটু ঘুমাইনা।এখনো ত আজান হল মাত্র।
-না বাবা,আলসেমী করিও না।আলসেমী করলে তোমার নামাজ কাযা হয়ে যাবে।আর তুমিত জানই কাযা নামাজের শাস্তি কি?তাছাড়া ফরহাদকেও যে ডেকে নিতে হবে।তোমার আন্টি রাত্রে বলে গেছে ফরহাদকে ডেকে নেওয়ার জন্য।দুইজন মিলে নামায আদায় করে তারপর না হয় আবার ঘুমাও।
-ঠিক আছে মা,যাচ্ছি।আপুরা কি উঠেছে?
-হা,আপুরা সবাই উঠেছে।তুমি মসজিদ থেকে আসার সময় ফরহাদকেও নিয়ে এস।খুব সুন্দর একটা গল্প শুনাব তোমাদেরকে।
-আচ্ছা মা,আমি নামাজ আদায় করে আসি।
মায়ের সাথে কথা শেষ করে আশফাক মসজিদের দিকে রওয়ানা হল।মা গেইট পর্যন্ত গিয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।ফরহাদের বাড়ির কাছে যেতেই দেখল ফরহাদও বের হচ্ছে।দুইজনে মিলে নামায আদায় করল।ফিরার পথে দুইজনে তাদের দাদুর কবর যিয়ারত করে বাড়িতে গেল।এইটা ওর প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।সেই ৪/৫ বছর বয়স থেকেই এই অভ্যাস।ওর মা প্রতিদিন ওকে ফরহাদকে উঠাতে হবে বলে ঘুম থেকে উঠাবে।অন্যদিকে ফরহাদের আম্মুও আশফাককে ডাকতে হবে বলে তুলে দিবে।আজান দিলে ওর ঘুম এমনিতেই কোথাই ছলে যায়।তবুও মাঝে মাঝে মায়ের সাথে একটু দুষ্টমি করে না উঠার কথা বলে মায়ের সোহাগ মাখা বকুনি খেতে চায়।
বাসায় এসে দেখতে পায় মা কোরআন তিলাওয়াত করছে,আপুরাও মায়ের পাশে বসে তিলাওয়াত করছে।ওরা ঘরে ডুকতেই ওর মা বলল,
-বাবা,তোমরাও একটু কোরআন তিলাওয়াত করে নাও।তোমাদের তিলাওয়াত শেষ হলে সকলকে একটা সুন্দর গল্প শুনাব।
প্রতিদিন আর একটু ঘুমাবে চিন্তা থাকলেও মায়ের মুখের মধুর গল্প শুনার কথা শুনে ওর ঘুম পালিয়ে যায়।ওরা দু’জনও তিলাওয়াত করতে বসে গেল।কিছুক্ষন পর ওর মা সকলকে কাছে আসতে বলে।সকলে কাছে আসলে বলে,
-আজ আমি তোমাদেরকে কুরআনের ৩০ তম পারার সুরা লাহাব এর কাহিনীটা শুনাব।এই সুরাটিতে আয়াত সংখ্যা হচ্ছে ৫,আর রুকু সংখ্যা ১।এইটা কোরআনের ১১১ তম সুরা।এতে বলা হয়েছে,
(১)ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।(২)তার ধন-দৌলত এবং সে যা উপার্জন করেছে তা তার কোন কাজে আসেনি।(৩)শীঘ্রই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে,(৪)এবং তার স্ত্রীও,যে ইন্দন/কাঠের বোঝা বহন করে।(৫)তার গলায় থাকবে উত্তম্রুপে পাকানো একটি রশি।
আমি একটা কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,এই সুরাটি অবতীর্ন হয়েছে মক্কায়।
সকলে মুগ্ধ হয়ে মায়ের কথা শুনছিল।মা প্রতিদিন নতুন নতুন কাহিনী শুনায়।আশফাক এতক্ষনে কথা বলল,
-মা,ওদের হাত ধ্বংস হোক বলেছে কেন?
-সুন্দর প্রশ্ন করেছ আব্বু,আমি বলার আগে জানতে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ।শুন তাহলে কাহিনীটা কি?কেন তাদের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে?
আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) যখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে এলেন,তখন কুরাইশ গোত্রের অন্যান্যরা তাঁর বিরুধীতা করলেও বনী হাসেম ও বনী মুত্তালিব কেউই তাঁর বিরুধীতা করেনি বরং তাঁকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে।অথচ শুধুমাত্র একজন লোক ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও শ্ত্রুতায় অন্ধ হয়ে এ আদর্শ মূলনীতি লংঘন করে।সে ছিল আর কেউ না আবু লাহাব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।নবী (সঃ) এর নিজের চাচা।সে বিভিন্নভাবে নবী কারীম (সঃ)কে অত্যাচার করত।
একদিনের ঘটনা,কুরআনে “সবার আগে নিকট আত্মীয়দেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখান।” এই নির্দেশ পাওয়ার পর হুজুর (সঃ) সকাল বেলা সাফা পাহাড়ে উঠে সকল গোত্রকে নাম ধরে ডেকে আযাবের ভয়ের কথা জানালে কেউ কিছু বলার আগেই আবু লাহাব বলল,“তোমার ধ্বংস হোক,তুমি কি এ জন্যই আমাদের ডেকেছ?”এই রকম ভাবেই সে বিরুধীতা করত।
আশফাকের আপু আনিকা বলে উঠল,
-মা,ওর স্ত্রীর ধ্বংসের কথা কেন বলা হয়েছে?
-হ্যাঁ আম্মু,সুন্দর প্রশ্ন করেছ তুমিও।তাহলে শুন সেই কথা,
মক্কায় আবু লাহাব ছিল হুজুর (সঃ) এর নিকটতম প্রতিবেশী।উভয়ের ঘরের মাঝখানে ছিল একটিমাত্র প্রাচীর।ওরা নবী (সঃ) কে বাড়িতেও শান্তিতে থাকতে দিত না।নামাজে দাঁড়ালে উপর থেকে ছাগলের নাড়িভুড়ি নিক্ষেপ করত।কখনো বাড়ির আঙ্গিনায় রান্নাবান্না হলে এরা হাড়ির মধ্যে ময়লা ছুঁড়ে দিত।হুজুর (সঃ) বাইরে এসে তাদের বলতেন,“হে বনী আবদে মান্নাফ!এ কেমন প্রতিবেশীসূলভ আচরণ?” আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল(আবু সুফিয়ানের বোন) প্রতি রাতে নবী (সঃ) এর ঘরের দরজার সামনে কাঁটা গাছের ডাল পালা ছড়িয়ে রেখে দিত।এটা ছিল তার প্রতিদিনের স্থায়ী আচরণ।যাতে হুজুর (সঃ) বা তাঁর শিশু সন্তানরা বাইরে বের হলে পায়ে কাঁটা বিধে যায়।এই রকম আরও অনেক ঘটনা আছে,যা আমি তোমাদেরকে একটা একটা করে শুনাব আগামীতে।অদের এমন কিছু জগন্য কাজ আছে,যা বলতেও কষ্ট লাগে।
আশফাক এবার কথা বলে উঠল,
-মা,এই রকম পচা ও খারাপ মেয়েকে মহানবী (সঃ) এর চাচা বিয়ে করেছিল?এই জন্যই ত তাঁর চাচাও আরও বেশী খারাপ হয়ে গিয়েছিল।যদি মেয়েটি ভাল হত তাহলে আমাদের মহানবী (সঃ) কে এত কষ্ট পেতে হতনা।
এটা বলেই ও কান্না করতে লাগল।ওর কান্নাতে বাকিদেরও কান্না চলে আসল।পরিবেশটা সহজ হলে ওর মা বলল,
-হ্যা বাবা,ঠিক বলেছ।মেয়েটি ভাল হলে হয়ত এমন হত না।আর তোমাদেরকে একবার বলেছিলাম।কথাটা নিশ্চয় মনে আছে।তবুও আবার বলছি,আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃযে ভাল,তার পরিবার/বন্ধু বান্ধবও হবে ভাল।আর যারা খারাপ,তাদের পরিবার/বন্ধু বাছাই করতে তারা খারাপ থেকেই বেছে নেয়।যেমনঃআমরা আল্লাহকে মেনে চলার চেষ্টা করি,তাই আমরা যারা ভাল তাদের সাথেই কথা বলি।তুমিও ফরহাদকে বন্ধু বানিয়েছ।
তোমার প্রিয় গানটার কথায়,
“চরিত্রবান মানুষ ছাড়া,বন্ধু বাচাই করবে না।
আদর্শবান সঙ্গী ছাড়া,এদিক ওদিক ঘোরবেনা।”
একটা কথা মনে রেখ,যারা দুষ্ট তাদের সাথে মিশিও না।যদি কখনো কথা বলতেও হয় বাড়াবাড়ি কর না।তারা সর্বদা অন্যের ক্ষতি করতে চায়।আজ অনেক হল।তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।
ফরহাদ বলে উঠল,
-আন্টি,আপনি নাস্তার কথা চিন্তা না করে আমাদেরকে আরও কাহিনী শুনান।তাহলেই আমরা তৃপ্তি পাব।
-শুন আমার পাগল ছেলের কথা,তা হয় নাকি বাবা?তোমরা না খেলে ত আমিও খেতে পারব না।আমাকে কি না খাইয়ে রাখবে নাকি?আরও কাহিনী শুনাব আগামীকাল।এখন নাস্তা খেয়ে বাড়ি গিয়ে পড়তে বসবে।আর তোমরা যখন বন্ধুদের সাথে অবসর সময় কাটাও তখন তাদেরকে এই কাহিনীগুলো শুনাবে।তাতে তোমাদের ভাল লাগবে এবং নিজে সওয়াবও পাবে।আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল পথে থাকার তাউফিক দান করুন।সকলে বলে উঠল,আমীন।
তারপর সকলে মিলে নাস্তা করে ফরহাদ তার বাসার দিকে রওয়ানা দিল।আশফাকের আম্মু বলল,
-সাবধানে যাবে বাবা,তোমার আম্মুকে সালাম বলিও।ফি আমানিল্লাহ।
আশফাকের মায়ের খুব ভাল লাগে ছেলে-মেয়েদেরকে কোরআন-হাদীসের দিকে আকৃষ্ট করতে পারায়।তিনি ভাবতে থাকেন,একদিন তার ছেলে-মেয়েরা তার মত করে তাদের সন্তান্দেরকে মানুষ করবে।যেদিন হয়ত তিনি এ পৃথিবীতে থাকবেন না।তার আফসোসও হয়,আহা!যদি আমাদের সমাজ থেকে সকল আপসংস্কৃতি দূর করা যেত?সকলে যদি নিজ নিজ পরিবারকে ইসলামের চায়াতলে আনার চেষ্টা করত?এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনায় দু’ফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে।যা তার আদরের সন্তান আশফাক তার কচি হাতে মুছে দেয়।
(লিখেছি ১৮/০৩/২০১৪ইং রাত ১১ টায়
ভুলত্রুটি হলে সংশোধন,পরামর্শ ও ক্ষমা চাই।)
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৬ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিশেষ ধরনের সাবলীল বর্ণনা!
বিশ্বাস হলো > অনেক অন্নেক কিছু পাওয়া যাবে আপনার লেখা থেকে ইনশাআল্লাহ!
এগিয়ে চলুন! থামবেন না একটুও, কেমন...
দুয়া করি প্রভুর কাছে "আল্লাহ্ যেন আপানাকে সুস্থ রাখেন, সব প্রয়োজন পুরন করেদেন, সব জায়েজ ও মোবাহ্ ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়ন করেদেন।"
মন্তব্য করতে লগইন করুন