Double Success , but...........( বিয়ে )
লিখেছেন লিখেছেন সালাহ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১৫:৩২ দুপুর
প্রথম সফলতা
আমি জীবনে দুটো বিয়ে দেয়াতে সফল হয়েছিলাম । একটা হল আমাদের অতি পরিচিত এক মেয়ে । আধুনিকতার ছোঁয়ায় উজ্জীবিত মেয়েটি এক ছেলেকে ভালবাসে । আমি বাড়ির ছেলে হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি জানার সুযোগ হয়নি । একদিন সবাইকে অবাক করে মেয়েটি তার প্রেমিকের হাত ধরে বের হওয়ার পথে স্বজনদের বাধার মুখে ফিরে আসে । ছেলের তেমন একটা সমস্যা না হলেও কলঙ্কের ভারে আক্রান্ত মেয়েটি কাউকে মুখ দেখাতে পারে নি । এমনকি তার বাবা পর্যন্ত কয়েকদিন ঘর থেকে বের হতে পারে নি । সমাজের লোকজন আঙ্গুল তুলে অপবাদ দিতে থাকে ।
তো বিষয়টি আমাকে খুব ভাবাত । মেয়েটিকে বিয়ে দিতে পারলে হয়ত সব ঝামেলা চুকে যেত । কিন্তু ছেলে দরিদ্র হওয়ার কারনে ছেলের বিষয় ফাইনাল । একদিন বাজারে গল্প করছি । হঠাৎ এক খেলার সাথী এসে খবর দিল । তোদের বাড়িতে বিয়ে করব । প্রতি উত্তরে আমি বললাম - ভালোতো ! কিন্তু মেয়েটি কে ? তখন ছেলেটি খুলে বলাতে আমি বুঝতে পারলাম । পাশাপাশি সে আরও জানতে চাইল । মেয়েটা কেমন , চরিত্র কেমন ? আমি সব লুকিয়ে তাকে বললাম , মেয়ে কিন্তু আমার সম্পর্কের ভাতিজি ।
চায়ের দোকানে ভোজন পর্ব সেরে , তাকে এক উত্তরে সব শেষ করে দিলাম । দোস , আমাকে তোর কেমন মনে হয় ! আর মনে কর , ওই মেয়ে আমারই মেয়ে । ছেলে আর উত্তর বাড়াল না । সাথে করে তাকে নিয়ে এলাম , মেয়ে দেখাতে । কাউকে জানাইনি । কারন , জানালে অনেকে বদনাম করে বিয়ের বারটা বাজিয়ে দিত । মেয়েকে দেখে ছেলেটি খুশি মনে ফিরে গেল । কিছুদিন পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল । ঘটক হওয়া সত্ত্বেও আমি বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ।কারন, আমি ছিলাম তখন ঢাকাতে । কদিন আগে শুনলাম , তারা খুব ভাল আছে , একটি মেয়েও আছে তাদের ।
দ্বিতীয় সফলতা
আমার আম্মুর বান্ধবী , থাকেন কুয়েতে । ওনার দুটো ছেলে - মেয়ে , থাকেন ঢাকাতে । মেয়ে মানে আপুটি নাকি খুব সুন্দর । নামাজী ও হিজাব পালনকারী । খালামনির প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আপুটির বিয়ে হচ্ছে না দেখে আমার ভীষণ চিন্তা হত । কোন ভাল - চাই সে ছেলে বা মেয়ে , লেখক বা লেখিকা , চেনা বা অচেনা যাই হোক না কেন , তাকে কেন যেন আপন আপন মনে হয় । এটাকে বদ অভ্যাসও বলতে পারেন । যাহোক , অনেক কষ্টে মামাত ভাইয়ের কাছ থেকে আপুর নাম্বার জোগাড় করলাম , কিন্তু আপু আমাকে চিনতে না পেরে লাইন কেটে দিলেন । মোবাইল বন্ধ করে রাখলেন ।
দীর্ঘ মাস খানেক পর আমি আবার সে নাম্বারে ফোন দিলাম । আপুটি ফোন ধরে সোজা তার ছোট ভাইকে দিল । আমি আমার আসল পরিচয় না দেয়াতে ছোট ভাই বলল , আমার নামে তার কোন আত্নীয় নেই । পরে তার মায়ের কাছে জানতে পেরে আপু আমার সাথে আলাপ করা শুরু করলেন , আপু হয়ত ভেবেছিলেন , আমি তাকে বিয়ে করতে চাই । কিন্তু , আমি এই অবস্থা দেখে ফোন বন্ধ করে দিলাম । প্রায় মাস ছয়েক পর ফের ফোন দেয়াতে উনি আমাকে বললেন , এতদিন পর কি মনে করে ফোন দিলা ? আমি সরাসরি তাকে বললাম , আপনার এখনও বিয়ে হয়না কেন ? আপু আমাকে বললেন , তুমি কি চাও - আমি কোন ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে যাই ! আপুর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসল ।
আমি তার কাছ থেকে তার চাহিদার কথা শুনে কয়েকটা পাত্র পাঠালাম । কাউকে আমার আপুর পছন্দ হল না , আবার কারওবা আমার আপুকে পছন্দ হল না । অবশেষে জগন্নাথ থেকে ইংলিশে অনার্স করা এক বড় ভাইকে পাঠালাম , দুজন দুজনকে ভীষন পছন্দ করলেন বিয়ে হয়ে গেল , কিন্তু উকিল বাবা সালাহ উদ্দিন সাহেব আগের মত এই বিয়েতেও উপস্থিত হতে পারলেন না । এখন আপুর দুটো মেয়ে সন্তান । খুব সুখেই আছে আমার আপুটি ।
তৃতীয় পর্ব , কিন্তু......
আম্মুর চাপাচাপিতে বিদেশ আসতে বাধ্য হলাম । এসে দেখি সবাই ফেবু চালায় , ল্যাপটপ চালায় । আমিও তাদের দেখে ,একখান ল্যাপটপ কিনে ফেলি । কিন্তু সমস্যা হল , না জানি ফেবু চালানো , না ল্যাপটপ ব্যবহার।একদিন এক আরবী সহকর্মীর মাধ্যমে একখান ফেবু একাউন্ট খুললাম । তাও , উনি আরবীতে খুলে দেয়াতে কিছুই বুঝলাম না , পরে ইন্ডিয়ান সহকর্মীর বদৌলতে ইংরেজী ভার্সন নিয়ে আসলাম । কিন্তু , পড়লাম আর এক সমস্যায় বাংলা লিখতে জানি না ।
একদিন এক মিস ডাক্তারের একখান পোষ্টের উপর আমার নজর আটকে যায় ।আমি অনেক বার পড়ে সেটার অর্থ বুঝতে পেরে তাকে একখান নিমন্ত্রন পাঠাই , উনি আমার নিমন্ত্রন গ্রহন করেন , আমি একখান মেসেজ পাঠাই - কেন জানি আমি ডাক্তারদের ভীষন ভালবাসি । মিস , আমাকে একখান ধন্যবাদ দিলেন । পরে আর একখান মেসেজ দিলাম , উনি আমাকে না চেনার কারনে উত্তর দিলেননা । কি আর করা , আমি একখান জটিল মেসেজ দিলাম , আপনি ডাক্তার হওয়ার কারনে দেমাগ দেখান ।
পরের দিন , উনি আমাকে মেসেজ দিলেন ভাইয়া , কিছু মনে করবেননা , আমি অনেক ব্যস্ত থাকি , তাই অনেক সময় উত্তর দেয়া হয়ে উঠে না । বুঝলাম না চিনলেও , বেচারীর কলিজাখান ভালোই ।ওনার আরও কিছু লিখা দেখার পর , লিখার প্রতি আমার বুকের ভিতর কেমন যেন একখান ঢেউয়ের সঞ্ছার হল ।আমি ওনাকে বললাম , আপু আপনি কিভাবে লিখেন , আমি বাংলা লিখতে চাই , আর অমনি ওনার দেয়া সাজেসান্স মোতাবেক আমিও লিখতে সক্ষম হই । পরের বার ধন্যবাদ দিলাম , সাথে একখান দোয়াও করলাম আল্লাহ যেন ওনাকে ২টা ছেলে এবং ২টা মেয়ে দান করেন । উনি মনে হয় হাসলেন , তবে একটূ বেশি হয়ে গেল না বলে একখান রিপ্লাই দিতেও কিন্তু ভুল করলেন না ।
ছোট বেলা থেকে একটা স্বপ্ন ছিল , ডাক্তার হয়ে রাজনীতিতে সফল হব । কিন্তু হতে পারিনি । তাই চিন্তা ছিল ডাক্তার বিয়ে করব । এমন চিন্তার উপর নির্ভর করে সেই মিস ডাক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব করি । লাজুক স্বভাবের মেয়েটি আমাকে না করেনি তবে , বলেছে সে একখান কাজে সফল হলে বিয়ে করবে । তার কাছে জানতে পারলাম , সে কাজে সফল হুওয়ার সম্ভাবনা একশ ভাগ । তাই আমিও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম । তার ব্যাপারে অন্য এক ছেলের মাধ্যমে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম । মেয়ের পছন্দ , অপছন্দ অনেক কিছু জেনে নিলাম । এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা ক্লাবকেই উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে রাখলাম ।পরিবারের সবার সাথে বিষয়টি বিনিময় করলাম ।
কিন্তু একদিন সকালে উঠে শুনি সেই মানব সেবিকার বিয়ে হয়ে আছে । তার বিয়ে হওয়াতে কি যে কষ্ট পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না । সে অনেক মানুষের বুকের ব্যথা সারিয়েছে , হয়ত কর্মজীবনে আরও অসংখ্য মানুষকে তার কোমল হাতের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলবে । কিন্তু আপনাদের খালামনির এই সরল ছেলেটির কথা সে একবারও ভাবল না , ছেলেটির হৃদয়ের ডাক একবারের জন্যও তাকে স্পর্শ করল না , এই অভাগাকে অকূল দরিয়ায় ভাসিয়ে চলে গেল অন্যের ঘরে । কি আর করা , বুকের আগুনকে ছাই চাপা দিয়ে হলেও তার জন্য রইল শুভ কামনা । কারন সে আমার বন্ধুই শুধু নয় , সে যে আমার শিক্ষকও ।
তাই পরোপকারী বন্ধুর জন্য আমার ছোট্ট একখান উপহার -
ওই চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহন ,
জ্যোৎস্নায় ভরে থাক সারাটা জীবন .........
বিষয়: বিয়ের গল্প
১৯৫০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন