একটি মুহূর্ত , সুপ্রিম কোর্ট ও কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন সালাহ ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৫৬:২৩ দুপুর



বনানী থেকে সায়েদাবাদ যাচ্ছি । হঠাৎ দেখলাম , মাঝ বয়সী এক সুন্দরী ললনা বাসে উঠল । সবার নজর তার দিকে । আমিও অবশ্য এক নজর দেখলাম , কারন তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল । মিনিট খানেক পর এক যুবক এসে তাকে টানাটানি শুরু করছে । ওই আয় , তুই না কইছস - টাকা পাইলে আইবি.........। কিন্তু মেয়েটা যেতে চাচ্ছে না । বুঝলাম , কিছু একটা গাফলা আছে । আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম , বাস ভর্তি মানুষ থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করছেনা । গাড়িওয়ালা চুপচাপ দেখছে , কিন্তু গাড়ি ছাড়ছেনা । এদিকে আমার ব্লাড হাই হাই লেভেলে পৌঁছে গেল ।কিছু না করতে পারার ক্ষোভে । আবার ভয়ও লাগছে , যদি আমাকে এরা দলবলসহ হামলা করে । কিন্তু বয়সটা ছিল না ভাবার । পিছে কি হবে সেটা ভাবার যে মোটেই ফুরসত নেই ।তারুন্যের জোয়ার যে আমাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে চলেছে ।

অমনি আমি পেছন থেকে সামনে এসে লোকটাকে হাত ধরে ভেতরে হ্যাঁচকা এক টান দিলাম । আর বিকট এক হুঙ্কার ছুঁড়লাম , এই ড্রাইভার গাড়ী ছাড় । সায়েদাবাদ চল , দেখি ওর কোন বাবা আসে ওকে বাঁচাতে । এমন ভাব নিলাম - যেন আমি সায়েদাবাদের বড় ভাই । কাজও হল -লোকটা ভীষন ভয় পেয়ে গেল । লোকটা হাত টানছে বাহিরের দিকে , আর আমি টানছি ভেতরের দিকে । অবশ্য আমার বুকটাও তখন দুরু দুরু করছে ।যদি ওরা আসে । কিন্তু না ওরা আসেনি । বখাটে যুবকটা কোন রকমে হাতটা ছাড়িয়ে দিল এক দৌড় । আল্লাহ সম্ভবত বখাটের বখাটের বুকের মধ্যে ভীতির ঢেউ সঞ্ছারিতে করে দিয়েছেন । ড্রাইভার মামাও ভয় পেয়ে গাড়ী ছাড়ল হাই স্ফীডে । নাহলে সায়েদাবাদ গেলে যে তার বারটা বাজবে । নিশ্চিত ইজ্জত নিয়ে বেঁচে গেল আমার একটা অচেনা , অবলা ,সহজ - সরল বোন ।

কিন্তু সেদিন দেখলাম বাংলাদেশীদের শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্টের সামনে যে নারকীয় ভঙ্গীতে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু সোনার ছেলে একটা মহিলা আইনজীবীকে নির্যাতন করেছে । তা দেখে আমার আবেগাক্রান্ত কলিজাটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে । হায়রে , একটা যুবকও সেদিন আমার সেই হতভাগা বোনটির ইজ্জত রক্ষার্থে দাড়ালনা । হায়রে ছাত্রলীগ । এই জন্যই বুঝি পিচ্ছি পিচ্ছি ছেলে মেয়েরা স্ট্যাটাস দেয় - জয় বাংলা , টয়লেট সামলা । শিবির যখন মাঠে নামে তোমরা তখন পুলিশের আন্ডার ওয়্যারের নিচে লুকাও । শিবির যখন নারায়ে তাকবীর , আল্লাহু আকবর - শ্লোগান দেয় তোমাদের কলিজা তখন ফুটো হয়ে যায় । আর এক মহিলাকে দেখে তোমাদের সাহসের চেতনা এমন ভাব দেখাল , মনে হয় তোমরা বিশ্ব জয় করছ ।তোমরা কেমন মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছ , আমার জানতে ইচ্ছে করে ।

আমি একটা কথা বলার চেষ্টা করি । যে জাতি তার মা - বোন ও কন্যাদের নিরাপত্তার চাদরে আগলে রাখতে পারে না । সে জাতি আর যাই হোক সভ্য হতে পারে না । ইন্ডিয়ান বন্ধুদের সামনে তোমরা আমাকে ছোট করে দিলে । ওদের সামনে আর বুকে আঙ্গুল ঠুকিয়ে বলতে পারবোনা , আমার দেশে মেয়েরা , মায়ের কোলের ন্যায় নিরাপদ । ছাত্রলীগের চরিত্রের পারদ এত নিচে নেমেছে যে , বলতেও লজ্জা লাগে । আপন বোনের হাতে তোমাদের লিঙ্গ পর্যন্ত বিচ্ছেদের ইতিহাস দেশবাসী দেখেছে । তোমরা কি সেই ছাত্রলীগ থেকে এসেছে , যে ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলন , ঊনসত্তর থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এমনকি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও তারা ছিল সবচেয়ে সরব । আর আজ তোমাদের এত অধঃপতন । যা দেখে শয়তানও লজ্জা পায় । চরিত্র পাল্টাও নাহলে একদিন দেশবাসী...।

এখন দেশবাসীকে ভাবার সময় এসেছে । তারা দেশের মা - বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বখাটে যুবকদের দেশ নামক বাস থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেবেন , নাকি নিরীহ যাত্রীর ন্যায় মা - বোনদের ইজ্জত হরনের লজ্জাহীন দৃশ্য উপভোগ করবেন । একটা মূলনীতি অবশ্য রয়েছে । যে জাতি পাক হানাদারদের পরাজিত করতে জানে । যে জাতি রক্ষীবাহীনির নির্যাতন থেকে পরিত্রান পেতে জানে । যে জাতি স্বৈরাচার হটাতে জানে । সে জাতি আর যাই নব্য হানাদারদের কাছে পরাজিত হতে পারে না । তাই চিন্তিত মনে সুদূর ডুবাইতে বসে আপনাদের জয়লাভের দৃশ্যটুকু দেখার অপেক্ষায় মায়ের মায়াবী মুখ মিস করা এক যুবক .........।।

বিষয়: রাজনীতি

১০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File