প্রতীক্ষা - ভালবাসার মালা দানের
লিখেছেন লিখেছেন সালাহ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৭:৫১ সকাল
আমাদের ধর্মীয় ওস্তাদ , ইমামে আজম আবু হানিফা রঃ এর প্রতিবেশী ছিল এক অমুসলিম । সে গান বাজনার মাধ্যমে নিয়মিত ইমাম সাহেবকে ভীষন কষ্ট দিতেন , তার এহেন ব্যবহারে একদিন পুলিশ তাকে জেলে নিয়ে গেল । ইমাম সাহেব ঘরে ফেরার পর প্রতিবেশীর কোন সাড়া শব্দ না পাওয়াতে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলেন তাকে জেলে নেয়া হয়েছে । ইমাম সাহেব সোজা থানায় চলে গেলেন । ইমাম সাহেবকে দেখে থানার কর্মকর্তা জিজ্ঞাসা করলেন , ব্যাপার কি ইমাম সাহেব । ইমাম বললেন , আমার প্রতিবেশীকে কেন আপনারা জেলে দিয়েছেন । থানা নির্বাহী বললেন , উনি নিয়মিত আপনাকে কষ্ট দেয় তাই জেলে দেয়া হয়েছে । ইমাম সাহেব বললেন , ওনাকে ছেড়ে দিন । কারন আল্লাহ যদি হাশরের ময়দানে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন , তোমার প্রতিবেশীকে জেলে নেয়ে হয়েছিলো , তুমি কি তার খোঁজ নিয়েছিলে? আমি তখন আল্লাহর সামনে কি জবাব দেব । এই হল মুসলমানদের চরিত্র ।
যাহোক , এবার আসল কথায় আসি । আমাদের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বন্ধুত্বের ভালবাসার মালাখানি ইন্ডিয়ার গলাতে সযত্নে পরাতে পারলে আমাদের কলিজা শীতল হয়ে জেত । কিন্তু ইন্ডিয়া কি আমাদেরকে সে সুযোগ দিচ্ছেন । ইন্ডিয়া কি আমাদের হৃদয়ের আহবান শুনতে পেরেছে । শত্রুর শত্রু , বন্ধুর তত্ত্বে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে । কারন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ভারতে বিশাল এক জনসমাবেশে বলেছিল , আমি হাজার বছরের প্রতিশোধ নিতে পেরেছি । পাকিস্তান ভাঙ্গতে পেরে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী । যাহোক তবুও আমরা পাক হানাদের অত্যাচারের স্টীম রোলার থেকে মুক্তি পেয়েছি এই জন্য ইন্ডিয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা । কারন , ধন্যবাদ নয় ভালবাসার মাধ্যমে আমরা প্রতিদান দিতে চাই ।
তবে মুক্তিযুদ্ধের পরের ইতিহাস ছিল এক শোষনের ইতিহাস । একবার সাংবাদিক আসাফ উদ্দোউলা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে দুটি প্রশ্ন করেছিলেন । প্রথম প্রশ্ন , পাকিস্তান - বাংলাদেশ এক থাকলে আপনারা কি এই ফারাক্কা বাঁধ দিতে পারতেন ? সে প্রশ্নের কোন উত্তর সেদিন ইন্দিরা গান্ধী দেননি । তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল পাকিস্তান - বাংলাদেশ এক থাকলে কি আপনারা বেরুবাড়ী ফেরত পেতেন বা আঙ্গরপাতা দহগ্রাম দখল করতে পারতেন । সে প্রশ্নেরও কোন উত্তর সেদিন দিতে পারেননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী । তাই ইন্ডিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে বলে ইন্ডিয়ার সাথে দাসত্বের বন্ধনে যারা আবদ্ধ হতে চান । সাংবাদিক আসাফ সাবের এই দুটি প্রশ্ন নিয়ে রাতের আঁধারে একটু ভেবে দেখবেন । যে ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে কার স্বার্থ উদ্ধার করেছে । তাই ইন্ডিয়ার সাথে আমরা দাসত্ব নয় , বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই ।
ইন্ডিয়া আমাদের এত বন্ধু যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । যে ইন্ডিয়া তাদের আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে আমার দেশ থেকে দুই হাজার কোটি টাকার উপর কামিয়ে নেয় । ডেইলি স্টার পত্রিকার সূত্র মতে । সেখানে আমাদের একটা টিভি চ্যানেলও ইন্ডিয়াতে প্রচার করতে দেয়নি । তার উপর বানিজ্যিক সম্পর্কের দিক থেকে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক সবিচেয়ে করুন । অথচ যেই পাকিস্তান স্বাধীনতার সময় আমাদের সর্বনাশ করেছে সেই পাকিস্তানের সাথেই আমাদের লেনদেন সবচেয়ে সম্মান জনক । তাহলে ইন্ডিয়া আমাদের কেমন বন্ধু আমদানি রপ্তানীর ডাটাগুলো একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করলে আপনারাই বের করতে পারবেন । আমাদের থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নেয়া ইন্ডিয়া একটি কানাকড়ি দেয়ার ক্ষেত্রেও হাজার বার চিন্তা করে ।এই জন্যই আমাদের দেশের সচেতন মহল বলে থাকেন - ইন্ডিয়ার মত বন্ধু থাকলে শত্রুর দরকার হয়না ।
সীমান্তে আমাদের মা - বোনদের মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা , ষাটোর্ধ বৃদ্ধকে মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা , বিজিবির উপর হামলা , অবৈধ অস্ত্র পাচার , মাদক নামক বিষবাস্পে আমাদের তরুন সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া সহ বিভিন্ন অপসন্ত্রাসের কথা না হয় আজ নাইবা বললাম । কোন বন্ধু কি পারে তার বন্ধুর এমন সর্বনাশ করতে ।
এই যখন অবস্থা তখন আমি হতভাগার দুশ্চিন্তা করা ছাড়া আর কিইবা করার থাকে । তবুও আমার বিশ্বাস ইন্ডিয়া একদিন তার করা ভূলগুলো শুধরে নেবে । একদিন ইন্ডিয়া সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করবে , একদিন তারা আমাদের দেশে অস্ত্র , মাদক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করবে , একদিন তারা ফারাক্কা নামক অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্তি দেবে , একদিন আমাদের বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে । আর আমরাও তখন ঢাক ঢোল পিটিয়ে ইন্ডিয়ার গলায় আমাদের বন্ধুত্বের ভালবাসার মালা খানি সযত্নে পরিয়ে দেব । হে ইন্ডিয়া তুমি কি অভাগাদের হৃদয়ের ডাক শুনতে পাও ...............
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন