কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় অবশ্যই জানা প্রয়োজন

লিখেছেন লিখেছেন ওয়াজেদ আহমেদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪২:৪৪ রাত

প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকসম্পন্ন, নিজ বাড়ি অবস্থানকারী যে ব্যক্তির মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ সম্পদ থাকে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এই সম্পদ হতে পারে স্বর্ণ, ব্যবসার মাল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত গৃহস্থালি আসবাবপত্র অথবা বসবাসের বাড়ির অতিরিক্ত বাড়ি, প্লট ইত্যাদি। উল্লেখ্য, টেলিভিশন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত :

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য এই সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকের নিকট থাকা শর্ত নয়। যে ব্যক্তি মুসাফির, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু এবং পাগল তার ওপর কোরবানি আবশ্যক নয়। পাগল উন্মাদ ব্যক্তি ঈদের দিনে সুস্থ হয়ে গেলে এবং কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার মতো নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।

উপার্জনে সক্ষম নিসাবের মালিক বালকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব :

পিতা এবং ছেলেমেয়ে প্রত্যেকেই উপার্জনে সক্ষম হলে এবং প্রত্যেকেই নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কোরবানি করা ওয়াজিব; কেননা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকসম্পন্ন নিসাবের মালিক নর- নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব

কোরবানি করার সঠিক সময় :

যে জনপদ বা শহরে জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানি করা জায়েজ নয়। ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানির পশু জবাই করে ফেললে দ্বিতীয়বার কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। তবে যদি ওই শহরের কোনো মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তারপর কোরবানি করা হয়, তাহলে কোরবানি জায়েজ হবে। যদিও কোরবানিদাতা তখনো নিজে ঈদের নামাজ আদায় করেনি।

মায়্যিতের পক্ষ থেকে কোরবানি ও তার গোস্তের হুকুম :

কয়েকজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করলে প্রত্যেকের জন্য কি আলাদা আলাদা অংশ কোরবানি করতে হবে? না এক ভাগই একাধিক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হবে? মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে কোরবানি করা হয় সে গোস্ত খাওয়া জায়েজ হবে কি? এসব বিষয়ে শরীয়তের দিকনির্দেশনা হলো—গরু, উট, মহিষ কোরবানি করলে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা অংশ থাকা আবশ্যক। একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য এক অংশ কোরবানি করা জায়েজ নয়। তবে নিজের পক্ষ থেকে নফল কোরবানি করে তার সাওয়াব জীবিত বা মৃত একাধিক ব্যক্তির উদ্দেশে দান করা জায়েজ আছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কোরবানির সাওয়াব পুরো উম্মতের উদ্দেশে দান করেছিলেন।

যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অছিয়ত করে যায় এবং অছিয়ত অনুযায়ী কোরবানি করা হয় তবে সেই কোরবানির গোস্ত গরিব মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া আবশ্যক। ধনী এবং সৈয়দ বংশের লোকদেরকে দেয়া জায়েজ নয়। আর যদি মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে কোরবানি না করে কেন ব্যক্তি মৃতের পক্ষে নিজ সম্পদ থেকে কোরবানি করে, এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি অছিয়ত করে যাক বা না যাক এ জাতীয় কোরবানির গোস্তের বিধান নিজের সম্পদ থেকে কোরবানি করার মতোই। এর গোস্ত নিজেও খেতে পারবে এবং ধনী ও সৈয়দকেও খাওয়াতে পারবে।

উত্স : ফাতাওয়ায়ে রহীমীয়া, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৩১৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৩২

ক্রয় করার পর কোরবানির পশু মারা গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে ছাহেবে নিসাব ব্যক্তির জন্য আরেকটি পশু খরিদ করে কোরবানি করা ওয়াজিব। আর নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে তার জন্য আরেকটি পশু ক্রয় করে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। ফাতাওয়ায়ে

হিন্দিয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৫৯৭

কোরবানির গোস্ত বণ্টন :

কোরবানিতে যে পশুর মধ্যে একাধিক অংশীদার থাকে সেক্ষেত্রে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে গোস্ত বণ্টন করতে হবে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে গোস্ত বণ্টন করা ঠিক হবে না।

বণ্টন করার পর প্রাপ্ত গোস্ত কিংবা এককভাবে পশু কোরবানি দিয়ে থাকলে সবটুকু গোস্ত তিন ভাগে বণ্টন করা উত্তম। এক ভাগ নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য রেখে দেবে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বণ্টন করে দেবে, আর এক ভাগ গরিব মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে। আর যদি কারো পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি হয় তাহলে সে সবটুকু গোস্ত নিজের পরিবারের জন্য রেখে দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, জবাইকারীকে তার জবাইয়ের মজুরি হিসেবে গোস্ত বা চামড়া প্রদান করা জায়েজ নেই। তাকে পৃথকভাবে মজুরি দিতে হবে।

রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৩০

পশু জবাইকালীন ও তত্পরবর্তী দোয়া :

কোরবানির পশু জবাই করার সময় বিসসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়বে। তবে এর পূর্বে নিম্নবর্ণিত দোয়া পড়ে নেবে।

ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও অমানা আনাল মিনাল মুশরিকিনা ইন্না সালাতি ওয়ানুসুকী ওয়া-মাহইয়ায়া ওয়ামামাতি লিল্লহি রাব্বিল আলামীনা।

‘আমি একমুখী হয়ে স্বীয় আনন ওই সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, এবং আমি মুশরিক নই, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্য। আর জবাই করার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে হবে।

আল্লাহু তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবীকা মুহাম্মাদিও ওয়া খলিলিকা ইবরাহীমা আলাইহিমাস সালাম।

‘হে আল্লাহ্! এই কোরবানিকে আমার পক্ষ হতে কবুল কর, যেমনিভাবে তুমি কবুল করেছ তোমার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইবরাহীম (আ.)-এর পক্ষ হতে।’

ফাতাওয়ায়ে মাহমুদীয়া, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৩০।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File