কতটা হস্তক্ষেপ করলে - ভারতকে বন্ধু বলা যায় !
লিখেছেন লিখেছেন বিডি বিবেক ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৬:২০ রাত
ইন্ডিয়া আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করেছিল। আমরা তাই শুধুমাত্র ৯ মাস যুদ্ধ করেই স্বাধীন হয়েছিলাম। আমরা ইন্ডিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ ছিলাম। স্বাধীনতার পরপরই ইন্ডিয়া বাংলাদেশ থেকে অনেক সম্পদ এবং সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছিল - তা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই সর্বোপরি ইন্ডিয়া আমাদের বন্ধু। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র।
আমাদের কমন বর্ডার আছে কিন্তু আমরা দুটি স্বাধীন দেশ - বাংলাদেশ এবং ভারত। আমরা দুটি স্বাধীন জাতি সত্তা। আমাদের আলাদা দুটি পরিচয় আছে। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পূর্ণ আলাদা।
কমন বর্ডারের দেশগুলুতে কিছু না কিছু কমন সমস্যা থাকে। দূরদর্শী দেশগুলো সে সমস্যা সহজেই সমাধান করে ফেলে। উদাহরণ সরূপ - আমেরিকা-কানাডার কমন বর্ডার, ইউরোপের বেলজিয়াম-জার্মানি-নেদারল্যান্ড-ফ্রান্স কমন বর্ডারের কথা বলতে পারি।
ইন্ডিয়া-পাকিস্তান, ইন্ডিয়া-শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া-চীন এর ও কমন বর্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ইন্ডিয়ার প্রতিবেশীরাই সবসময় অনিরাপদ। ইন্ডিয়ার সাথে সবসময় হয় পাকিস্তানের অথবা শ্রীলঙ্কার অথবা বাংলাদেশের দ্বন্ধ লেগেই থাকে। ইন্ডিয়ার ফর্মুলা হলো - এক সাথে সব প্রতিবেশীর সাথে লড়া বুদ্ধিমানের কাজ না । তাই যখন পাকিস্তানের ভিতরে বা বর্ডারে ইন্ডিয়া গন্ডগুল বাধায় তখন শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ নিরাপদ থাকে। যখন শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরে গন্ডগুল বাধায় তখন বাংলাদেশ সহ অন্যান্য প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে। ঐতিহাসিকভাবে চীনের সাথেও ইন্ডিয়া অনেক দ্বন্ধে জড়িয়েছিল, কিন্তু এখন আর সাহস করে না।
ইন্ডিয়ার হাতে বিকল্প দুটি ফর্মুলা আছে। ১) কুটকৌশলে প্রতিবেশিকে দুর্বল করা, প্রতিবেশীর রাজনীতি এবং অর্থনীতিকে দুর্বল করা এবং নিজের অর্থনীতি চাঙ্গা করা।
অথবা
২) বন্ধুত্বের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলুর মত নিজের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং অন্যের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা হতে সহযোগিতা করা।
প্রশ্ন হলো - কোনটি ইন্ডিয়ার জন্যে ভালো?
অর্থনীতিতে একটি কনসেপ্ট আছে - টেকসই উন্নতি বা টেকসই প্রবৃদ্ধি (sustainable development) । যে উন্নতি হবে দীর্ঘস্হায়। সেটি সম্ভব হবে যদি ইন্ডিয়া দ্বিতীয় ফর্মুলাটি ব্যবহার করে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ইন্ডিয়া ব্যবহার করছে প্রথমটি।অন্য দেশের অর্থনীতি ধংশ এবং নতজানু রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একধরনের অর্থনৈতিক সম্রাজ্যবাদ কায়েম। এই পদ্ধতিটি অকার্যকর প্রমানিত হয়েছে। সেকারণে ঠান্ডা-লড়াইয়ের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে নব্বয়ের দশকের শুরুতেই। ইন্ডিয়ার নজর এখন বাংলাদেশের উপর। তাই বাংলাদেশ আজ জলছে রাজনীতির আগুনে।
ইন্ডিয়া প্রচুর অর্থ খরচ করছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে অনেক ইন্ডিয়ান এজেন্ট কাজ করছে, যারা প্রতিমাসে ইন্ডিয়ান বেতন-ভাতা ভোগ করছে। বিনিময়ে বাংলাদেশের বর্ডারে ইন্ডিয়ার আধিপত্য রয়েছে এবং ইন্ডিয়া সেভেন সিস্টার - অরুনাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যগুলোকে পুরোপুরি কন্ট্রোল করছে। এটি স্বল্প-মেয়াদে সন্দেহাতীতভাবে ইন্ডিয়ার অর্জন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি কোনো অর্জন নয়। কারণ - ইন্ডিয়ান নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের জনগণ আজ ইন্ডিয়া বিরুধী। আজ হোক কাল হোক, ইন্ডিয়ার সমর্থনপুষ্ট আওয়ামিলিগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। বাংলাদেশের মানুষ আজকের মত এত ঘৃনা ইন্ডিয়াকে কখনোই করেনি। ইন্ডিয়ার নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তি করতে গেলে এখন থেকে সবসময় বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করবে। ইন্ডিয়ার কি বাংলাদেশের একটি দলের সমর্থন প্রয়োজন নাকি বাংলাদেশের জনগনের সমর্থন? আমি মনেকরি বাংলাদেশের জনগণ যদি ইন্ডিয়াকে বন্ধু ভাবে (শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দল নয়) তবে ইন্ডিয়ার সেভেন সিস্টার সহ সকল স্বার্থ রক্ষা অনেক সহজ হবে। তাই ইন্ডিয়া এখনো বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে, শুধুমাত্র একটি দলের বন্ধু নয়। ইন্ডিয়ার উচিত তাদের পলিসি পরিবর্তন করা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন