আধাঁর ছেড়ে তোরা এবার মিছিলে বেড়িয়ে আয়
লিখেছেন লিখেছেন নিয়াজ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:২২:২৭ দুপুর
১ম পর্ব
সেই ছেলেবেলা থেকে বইয়ের পাতায় পড়ে এসেছি; “বাঙ্গালী বীরের জাতি”। নতযানু না থাকার এক তীব্র মানষিকতা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিষ্ফোরণ মূখড় এক লড়াকু যোদ্ধা চরিত্র এই জাতির ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ। ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে, পরিবর্তনের প্রতিটি সংগ্রামে, অন্যায়-অত্যাচার আর অবিচারের প্রতিটি ঘটনায় পর্বতসম অসম শক্তির শত্রুর বিরুদ্ধে বুকটান করে দাঁড়িয়েছে এ জাতির অগ্রজ সন্তানেরা। তাই সেই মেসোপটেমিক যুগের ভ্রাম্যান্যবাদের হামলা থেকে শুরু করে বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের হাত ধরে সতন্ত্র ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনায় বাংলার অকুতভয় মানুষ বিশ্বাস (ঈমান) আর সাহস (এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করার নীতি) এর মাধ্যমে জয় করেছে সকল বাঁধা-বিপত্তিকে। পৃথিবীর মানচিত্রে তৈরী করেছে নিজেদের অবস্থান, স্বিকৃতি আদায় করেছে নিজেদের ভাষার ও সংস্কৃতির। তবে এ সবই সোনালী অতীত, সমৃদ্ধ ইতিহাস।
২য় পর্ব:
কিছুদিন আগে ঢাকার একটি পরিচিত পথে লোকাল বাসে যাচ্ছিলাম। যথারিতি ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে বাসের হেল্পার আর যাত্রিদের মধ্যে বিতন্ডা শুরু হয়ে গেলো। ১০ টাকার ভাড়া ২০টাকা চাচ্ছে। যাত্রিদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বিরক্ত মুখে ২০ টাকা দিয়ে বাসের জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, ভাবখানা এমন যে; সে গোটা দুনিয়ার উপরই চরম বিরক্ত। সবকিছুতেই এতটা উদাস যে কোন কিছুতেই তার নিজস্ব কোন বক্তব্য নেই। আবার দু’একজন দেখলাম প্রচন্ড প্রতিবাদ করে ভাড়ার চার্ট দেখতে চাচ্ছে কেউ আবার আরেক ধাপ অগ্রসর হয়ে হেল্পারের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন ফলাফল হলো না, হেল্পার বা যাত্রি দুই পক্ষই টাকায় না পারলেও মুখে বা হাতে এগিয়ে থেকে বিষয়টাকে সমান্তরাল করে নিতে চায়। কিন্তু এই সিস্টেমের পরিবর্তন কেউ চায় না। বাসের এই ভাড়া নিয়ে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে যাত্রিদের মধ্যথেকে একজন বলে উঠলেন: ভাই মূলত: “আমরা ভোদাই ভদ্র” অর্থাৎ চোখের সামনে অন্যায় দেখে প্রতিবাদ না করাটা ভদ্রতা নয় বরং ভোদাই বলেই আমরা অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করি।
এই কথাটি শোনার পর থেকে আমার মনে হয়েছে, কথাটি অত্যন্ত মূল্যবান। এই একটি কথায় গোটা বাঙ্গালী জাতির বর্তমান চরিত্রকে বিশ্লেষণ করা যায়। বাহ! কি সুন্দর কথা “আমারা ভোদাই ভদ্র”।
৩য় পর্ব:
“তমুদ্দুন মজলিস” ইসলামী সংস্কৃতি ও চতেনাকে সামনে রেখে সমমনা শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ১ সপ্টেম্বের ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। অল্প কিছু তরুন বুদ্ধিজীবি শিক্ষাবিদ বাংলাকে রাষ্টভাষা করা এবং নিজস্ব ধর্মীয় ভাবধারায় উজ্জিবিত পরিশিলিত সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতি তাগিদ দিয়ে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে। তমুদ্দুন মজলিস "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা: বাংলা না উর্দূ?" এই শিরোনামে একটি বুকলটে বের করে। বাংলাকে র্পূব পাকিস্তানের অফিস-আদালতে একমাত্র ভাষা হিসেবে ব্যবহারের উপর জোড় দেন। পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রচারনা চালান। এভাবেই শুরু হয় বাংলা ভাষার পক্ষের প্রচারনা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। এভাবেই এ অঞ্চলের নি:গৃহিত মানুষেরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী মুখের ভাষার স্বিকৃতি আদায়ের দাবীতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এই বিষ্ময়কর নজির উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালির এই আত্মত্যাগের দিনটি এখন সারাবিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই দিবস সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন।
৪র্থ পর্ব:
পুজিবাদি অর্থনৈতিক মতবাদ আমাদের আত্নকেন্দ্রিক মানুষিকতার জীব হিসেবে বেঁচে থাকার তালিম দিয়ে সফলতার সাথে চরম সামাজিক বৈষম্য তৈরী করে ভোগবাদি জীব হিসেবে গড়ে তুলেছে। যার কারণে নিজের পেট, পকেট, সংসার, সফলতা, বিত্ত, বৈভব, আরাম-আয়েশ ইত্যাদির বাইরেও যে আরেকটি জগত আছে যেখানে ‘সবার উপর মানুষ সত্য’ বলে একটি ধারনা আছে, সেই চিন্তা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। তাই আমরা আজ হাজারো সমস্যা থাকলেও না দেখার ভান করে বেঁচে যেতে চাই। বৈধ-অবৈধ চিন্তা না করে নিজে বাঁচার একটি সংকির্ণ মানুষিকতা আজ আমাদের সমগ্র জাতিকে গ্রাস করেছে।
৫ম পর্ব:
প্রতিদিন সকালে আপনি বা আমি যখন পত্রিকাটি খুলি তখন হাজারো সমস্যায় আমাদের চোখ আটকে যায়। শুধু পত্রিকা কেন আপনার-আমার চারপাশে একটু তাকান, কত সমস্যা, কত প্রশ্ন, কত জটিলতা; কিন্তু তার বিপরীতে আপনার-আমার পক্ষ থেকে কোন টু শব্দটিও নেই, কোন প্রতিবাদ নেই, কোন উচ্চ বাচ্য নেই, অনেকটা সেই ভোদাই ভদ্রের মতন। একবার চিন্তা করুন, আমাদের অগ্রজেরাও যদি শুধু নিজেরটা ভাবত, খুব আত্নকেন্দ্রিক হতো তাহলে কি আমরা এই ভাষা, এই দেশ এই মানচিত্র এই পতাকা পেতাম? নাহ! পেতাম না। তারা সময়মত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পেরেছিল বলেই আজ আমরা এখানে এসে দাঁড়াতে পেরেছি। তাই অতীতমূখি না হয়ে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথ রচনায় এগিয়ে আসা দরকার, আত্নকেন্দ্রিক না হয়ে সামষ্টিক কল্যাণে অবদান রাখার মানষিকতা তৈরী করা দরকার, অন্যায়ের প্রতিবাদে সদা জাগরুক থাকা দরকার, অন্ধকারের পথ ছেড়ে মিছিলে সামিল হওয়া দরকার।
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
‘এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷’(সুরা আলে ইমরানের ১১০)
আপনি অত্যন্ত সুন্দর বলেছেন, আসলে “আমারা ভোদাই ভদ্র”
উপরযুক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালঅ মুসলমানদের প্রকৃত দায়িত্বের কথা বর্ণনা করেছেন। সৎ কাজের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি অসৎ কাজের প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করাও মুসলমানদের কাজ। কিন্তু তা আমরা কতটা করছি? তাফহীমুল কুরআনের টীকায় বিস্তারিত পড়ুন....
মন্তব্য করতে লগইন করুন