মুক্তাগাছার মন্ডা, একটি অন্যতম মিষ্টির নাম

লিখেছেন লিখেছেন আকাশদেখি ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৮:০০:১৩ রাত

বাংলাদেশের গৌরবময় মিষ্টান্ন সম্পদ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী মন্ডা আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে বাংলা ১২১৩, ইংরেজী ১৮২৪ সালে স্বর্গীয় গোপাল পাল (পূর্ণনাম রাম গোপাল পাল) সর্ব প্রথম প্রস্তুত করেন। সেই যে চালু হল তা আজ্ও চলছে সমারোহে।

মন্ডার নাম কিভাবে এলো...

শশীকান্তর পিতাঠাকুর সূর্যকান্তর আমলেই গোপাল পাল নামে এক লোককে এক সন্যাসী স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। ১৮২৪ সালের ঘটনা। রাজা সন্যাসী বললেন, ব্ৎস, তোমার নাম গোপাল কেন?

--বাবা রেখেছেন তাই গোপাল। আমার বাবার নামও ছিল রামগোপাল।

--আর?

--যশোদা মায়ের পুত্রের নামও গোপাল।

--বেশ। সেই গোপাল কি করিত?

--গরু চরাত।

--এইতো মাথা খুলিয়াছে। গো-মানে গোরু। আর পাল মানে যে পালন করে।

--মানে গোরুর রাখাল। রাখাল গোরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।

-যথার্থ বুঝিয়াছ ব্ৎস? তোমাদের এলাকায় প্রচুর রাখাল আছে। আর আছে প্রচুর গোরু। এই খাঁটি গোরুর খাঁটি দুধ পাওয়া যায় মুক্তাগাছায়। দুধ দিয়া তুমি মণ্ডা বানাও। মণ্ডা বানাইলে তুমি পূণ্যপ্রাপ্ত হইবে।

পর পর কয়েক রাতেই এক সন্ন্যাসী স্বপ্নে তাকে এক প্রকার মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য তৈরী করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আদেশ করলেন, “গোপাল, কাল তোকেই তুই এই জগতের মানবের খাওয়ার জন্য সুস্বাদু এই মিষ্টি তৈরীর কাজ শুরু করে দে। গোপাল সন্ন্যাসীর স্বপ্নাদেশে এক শুভ দিনে সেই বিশেষ মিষ্টি তৈরীর কাজ আরম্ভ করে দিলেন। মিষ্টি তৈরী শেষ করা মাত্র দেখলেন, স্বপ্নে দেখা সেই সন্ন্যাসী স্বশরীরে তার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে মিষ্টি তৈরীর উনুনে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। গোপাল সন্ন্যাসী কে দেখা মাত্র উনার পদযুগলে মাথা রেখে ভক্তি ভরে প্রণাম করলেন। সন্নাসী বললেন, তোর হাতের তৈরী এই খাবার খেয়ে সবাই তোর অশেষ সুখ্যাতি করবে, আস্তে আস্তে তোর এই মিষ্টি একদিন জগৎ বিখ্যাত হবে এবং পুরুষানুক্রমে তুইও এই মিষ্টি তৈরীর শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবি। তোর অবর্তমানে তোর পরবর্তী পুরুষদের হাতেই শুধু সুস্বাদু এই মন্ডা তৈরী করা সম্ভব হবে। এই আশীর্বাদ করে সন্ন্যাসী অদৃশ্য হয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে সন্নাসী সেই বিশেষ মিষ্টির নাম দিয়ে গেলেন।

..... মন্ডা। মুক্তাগাছার মন্ডা।

বংশধর

মণ্ডার স্রষ্টা গোপাল পাল ১৯০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ১০৮ বছর। গোপাল পালের প্রকৃত নাম রামগোপাল পাল পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পাল, রবীন্দ্রনাথ পাল, রথীন্দ্রনাথ পাল, শিশির কুমার পাল ও মিহির কুমার পাল বর্তমান মণ্ডার দোকানের স্বত্বাধিকারী। তারা গোপাল পালের চুলাতেই এখনো মণ্ডা তৈরী করেন।

বিভিন্ন প্রশংসা পত্র:

মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী বাংলা ১৩৬০ সালের ১ বৈশাখ ইং ১৯৫৩ সালে উনার নিজস্ব প্যাডে ৩য় বংশধর কেদার নাথা পালকে দেয়া প্রশংসাপত্র দেয়ালে কাচের ফ্রেমে বাধানো। আগে এখানে ছিল একখানা রূপোর প্লেটে খোদিত করা মহারাজার দেয়া গোপাল পালের প্রশংসা পত্রসহ আরো অনেক প্রশংসা পত্র, গোপাল পালের পর প্রথম বংশধর রাধানাথ পালের কাচের ফ্রেমে বাধানো ফটো। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ওগুলো চিরদিনের মত হারিয়ে যায়।

শুনেছি মুক্তাগাছার মণ্ডা নাকি উপহার হিশাবে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ার কমরেড স্ট্যালিনের কাছে। স্ট্যালিনের মতন কঠিন হৃদয় লোককে দ্রবীভূত করেছিল সেই মণ্ডা, এমনই নাকি ছিল তার স্বাদ। এবং তিনি রাশিয়া থেকে মণ্ডা-প্রেরক মুক্তাগাছার তৎকালীন মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে একটি প্রশংসাপত্রও পাঠিয়েছিলেন। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও মণ্ডা নিয়ে একবার চিনে গিয়েছিলেন। আপ্যায়িত করেছিলেন মাও সেতুংকে।





মন্ডার দোকানের ভিতর কাঁেচর সৃদৃশ্য শোকেসে রক্ষিত স্বর্গীয় গোপাল পালের কাঠের তৈরী একটি প্রতিকৃতি যা রাজবাড়ির সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রী স্বরুপ সূত্রধর নির্মান করেছিলেন।



মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী নিজস্ব প্যাডে ৩য় বংশধর কেদার নাথা পালকে দেয়া প্রশংসাপত্র দেয়ালে কাচের ফ্রেমে বাধানো।



আসল মন্ডার দোকান এর সাইন বোর্ড



হেরিটেজ এর পাতায় একটি রিপোর্ট



এটাই মন্ডা...

সবাই মন্ডা মুখকরেন এবার...

কিভাবে আসবেন:

মহাখালী বাসস্ট্যন্ড থেকে

সরাসরি মুক্তাগাছার বাসে আসতে পারেন। আবার প্রথমে ময়মনসিংহ পরে মুক্তাগাছা আসতে পারেন। মুক্তাগাছা বাসস্ট্যন্ড থেকে মন্ডার দোকানের ভাড়া নিবে ১০-১২ টাকা। সাথে আবার রাজবাড়িও দেখতে পাবেন... মুক্তাগাছার রাজবাড়ি নিয়ে পরে আর একদিন লিখব... ইনশাল্লাহ

বিষয়: বিবিধ

২৮২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188539
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : মিষ্টির কথা। ভাবলে জিবে জল আসে। ধন্যবাদ।
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৫
140231
আকাশদেখি লিখেছেন : ভালো.। খেয়ে নেন
188581
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চাকুরি সুত্রে ৯ বছর আগে মুক্তাগাছায় যাওয়া হতো নিয়মিত। তখনই স্বাদ নিয়েছি এ্ই সুস্বাদু মন্ডার। পরিচিত হয়েছিলাম এর নির্মাতাদের সাথে। মুক্তাগাছার মন্ডা আসলেই একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টান্ন। অনেকদিন খাইনা।
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৬
140233
আকাশদেখি লিখেছেন : আসেন তাহলে কোন একদিন..।
188764
০৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫২
সজল আহমেদ লিখেছেন : আহা মিষ্টির কথা ভাবলে রুচি বেড়ে যায়।
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৬
140234
আকাশদেখি লিখেছেন : হুমমম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File