তেল দূষণ !!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫১:১২ সন্ধ্যা
২০০২ সালে একটি গাড়ি বাহী জাহাজের র্যাম্প নামানোর সময় একটা হাইড্রলিক লাইন ফেটে গেলে কিছু তেল জাহাজের গা বেঁয়ে চুইয়ে পানিতে পড়ে । আমরা যাকে আমাদের সিম্যান টার্মে বলি সিপিং । আমাদের জাহাজ
তখন কান্ডা নামক জাপানের এক ইনল্যান্ড সি পোর্টে । সাথে সাথে রেড এলারট বাজিয়ে দেয়া হল । আমি তখন সেকেন্ড অফিসার । দেখলাম চীফ অফিসার খুব হতাশ । আমাকে দেখে বললেন "সেকেন্ড !! আমার মাস্টার প্রমোশন টা নিশ্চিত গেল " । আর ক্যাপ্টেন পারলে জাহাজ থেকে লাফ দেন । গলদঘর্ম হয়ে একটার পর একটা কর্তৃপক্ষ কে জানাচ্ছেন আর মেসেজ পাঠাচ্ছেন । ওদিকে আমরা সবাই অয়েল বুম , ভাসমান রশির দড়ি নামিয়ে সিপিং এর জায়গা টা ঘিরে ফেললাম । যাতে বেশিদূর না যায় । দশ মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টার তার কিছুক্ষণ পর টাগবোট এল । অয়েল ডিস্পারস্যান্ট কেমিক্যাল দিয়ে পরিস্কার করা হল ।
কতটুকু তেল পড়েছিলেন জানেন ? প্রায় ১ লিটার । তাও আবার হাইড্রলিক তেল, যার দূষণ মাত্রা নিতান্তই কম। আমি নিশ্চিত আমার জাত ভাইদের এর চেয়েও মামুলী বাতে এই রকম এলাহী কাজ কারবারের অভিজ্ঞতা আছে । কারন সমুদ্রে এবং নদীতে তেল দূষণ একটি মারাত্মক অপরাধ । ক্রিমিনাল কেস বলে বিবেচিত । Oil pollution is Worst nightmare in a seaman's career !!
আর তেল দূষণ তো পরের কথা তেল মিশ্রিত জল ফেলা্ই অনেক অনেক বড় অপরাধ । তাই তেল মিশ্রিত জল
OILY WATER SEPARATOR (OWS) এ পরিশোধন করে ফেলা হয় । আর এই যন্ত্র ১ মিলিয়ন পানির কনায় সরবচ্চ ১৫ টি তেলের কনা ডিসচার্জ অনুমোদন করে ।
নাহ এইসব কাসুন্দি শোনানোর কোন ইচ্ছেই ছিল না । কিন্তু আজকে নৌ মন্ত্রীর একটা বিবৃতি পড়লাম ।
সুন্দরবনের মধ্যে নদীতে ডুবে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার থেকে ছড়িয়ে পড়া সাড়ে তিন লক্ষ লিটার ফার্নেস বনের কোনো ক্ষতি হবে না। তেলের কারণে সুন্দরবনে এখনো পর্যন্ত¯ খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। জলজ প্রাণীর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিবেশের ছাড়পত্র না পাওয়ায় তেল অপসারণে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। তা ছাড়া ভাসমান তেলের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় এখন রাসায়নিক পাউডার ব্যবহারের প্রয়োজনও নেই।
ভাসমান তেল আহরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে তেল অপসারণে অত্যন্ত¯কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা
জানিয়েছেন, এতে মারাত্মক ক্ষতি হবে না । ( সূত্রঃ প্রথম আলো !)
যদি তাই হয় ; আমি একটু ঐ বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নামগুলো জানতে চাই । তাদের সুত্র ধরে আমি আমার কোম্পানি , IMO আর বিভিন্ন দেশের পরিবেশ অথোরিটি র বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই ।
সাড়ে তিন লক্ষ লিটার ফার্নেস অয়েল দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বর্গ এলাকা দূষণ করেও যদি বনের কোন ক্ষতি না হয় তাহলে মাঝ সমুদ্রে কয়েক বালতি তেল পড়লেই বা কি ক্ষতি ??
অথচ তার জন্য কিনা আমার নাবিক জীবনের কত রাতের ঘুম হারাম করতে হয়েছে কত বুকের দুরপুরানি সহ্য করতে হয়েছে । কত নাবিককে মাসের পর মাস ভিনদেশে জেলে থাকতে হয়েছে । চাকরী হারাতে হয়েছে ।
হুম ম ম . জানি আপনারা মুচকি হেসে বলছেন
মন্ত্রীর কথা মন্ত্রী বলেছে ...।
তাই বলে কি মন্ত্রীর কথায় তর্ক করা শোভা পায় !!
আমি তা করতেও চাই না । কিন্তু যেইসব ফকিরনির পোলারা তেল দূষণ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ , রাষ্ট্র থেকে এর জন্য ভাতা নেন , তার সাথে যেইসব ফকিরনির পোলারা চেতনা করে করে গাছের টা খান আবার গাছের তলাটাও কুড়ান অথচ এখন " আমার ব্যাপার না" বলে মনকলা খাচ্ছেন ; তাদের মুখে থুথু মারতে চাই । ওয়াক...থু ।
দুঃখিত, সুন্দর বনের জীবজন্তু !! এ দেশে জন্মই তোমার আজন্ম পাপ ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Thanks for your thought !
এই গরু-ছাগল মন্ত্রি নিয়েই চলছে দেশ!!!
আপনাকে ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন