আগুনঃ বন্ধু তুমি , শত্রু তুমি !!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ৩১ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:১২:৪৫ রাত
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনে আজ আবার আগুন লেগেছে । আমার দেশ পত্রিকার অফিসের এই অগ্নিকাণ্ডকে অনেকেই পরিকল্পিত চক্রান্ত বলেছেন । এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না । এন টি ভির চেয়ারম্যান ফালু সাহেব কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন " বারবারই এ ভবনে আগুন লাগে, আর আমি বারবারই ক্ষতিগ্রস্ত হই। " অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে আগুন লাগতে পারে । যথারীতি তদন্ত হবে , কিন্তু রিপোর্ট হয় পাওয়া যাবে না নতুবা তা অনুসরন করা হবেনা ।
অবশ্য চক্রান্ত ছাড়াও এ দেশে নিত্য নৈমিত্তিক আগুনের দুর্ঘটনা ঘটে । আর এত ঘটে যে আগুনের দুর্ঘটনাকে আমরা তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাতারে ফেলে স্বাভাবিক করে নিয়েছি ।
তাজ্রীন গার্মেন্টসের ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে । নতুন নিয়ম কানুনে অনেক আগুন নির্বাপক যন্ত্রপাতি এসেছে । অবকাঠামোর পরিবর্তন করতে হয়েছে ।আমার মনে হয় সময় এসেছে সব সুউউচ্চ দালান আর অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেও তাদের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাববার । সবচেয়ে বড় কথা রিএক্টীভের বদলে প্রো একটিভ ফায়ার সেফটি কালচার নিয়ে আমাদের নাক সিটকানো মন মানসিকতা বদলাবার ।
আমি আগুনের প্রশিক্ষণের একটা ছুটা কাম করি । গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা গুলিতে আমেরিকান ক্রেতা ওয়াল মারট আর ইউরোপিয়ান ক্রেতা সি এন্ড এ র পক্ষ থেকে ফায়ার ট্রেনিং আর অডিট করি । আর ব্যুরো ভেরিটাস ( বি ভি) এই ট্রেনিং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা । বিদেশি ক্রেতারা তাজ্রিন , রানা প্লাজা ঘটনার পর আমাদের পোশাক কারখানা গুলিতে একটা সেফটি কালচার গড়তে চান । আর মেরিন ইন্ডাস্ট্রির সেফটি কালচারকে বিশ্বে একটা আদর্শ মডেল হিসাবে ধরা হয় । সেজন্যই বি ভি ফায়ার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার বদলে আমাদের মত খালাসীদের এই সামাজিক সার্ভিসে যুক্ত করেছেন।
দুঃখের বিষয় হল আমাদের স্কুল / প্রতিষ্ঠান এ বেসিক ফায়ার ফাইটিং এর কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়না । অথচ বেসিক ফাস্ট এইডের মত এইটাও সবার জানা উচিত । আসলে আমরা ভাবি আগুন নিভানো শুধু ফায়ার সার্ভিসের কাজ । আমাদের সামান্য প্রশিক্ষণের অভাবে একটা ছোট আগুন বড় হয়ে নিভানোর আয়ত্তের বাইরে চলে যায় । অথচ সব আগুনই শুরু হয় ছোট হয়ে ; একসময় তাপের কারনে বিস্তার লাভ করে বড় হয় । বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস যে সময়ে আসে তখন আগুন তার পূর্ণ তেজে ফলে তারা তাদের অপ্রতুল যন্ত্রপাতিতে তা সঠিক সময়ে নিভাতে পারেন না । তাই বড় আগুন লাগলে কিভাবে নিভাবেন তা হাইলাইট করার বদলে আগুন যাতে না লাগে অথবা ছোট অবস্থায় আগুন কিভাবে নিভিয়ে ফেলব তা নিয়ে ভাবুন এবং প্রশিক্ষণ নিন।
মজার কথা, আমরা যারা এপার্টমেন্টে থাকি তারা কয়জনে সিঁড়ির গোঁড়ায় থাকা DCP পাউডার বা CO2 extingisher ব্যবহার করতে পারি ??? ফলে এগুলো থেকেও নাই । মেইন্টেনেন্স ও হয়না । তাই দেখবেন DCP পাউডারে ঘড়ির কাঁটা র মত যে গোল ডায়াল টা আছে তার কাঁটা কবেই সবুজ বৃত্তাংশ থেকে লালে । মানে যে গ্যাসের চাপে পাউডার বের হওয়ার কথা তা আর ঠিক নেই ।
মনে রাখতে হবে বড় আগুন (যে আগুন তাপের কারনে আর জায়গায় নেই , ছড়িয়ে যাচ্ছে ) আমরা কখনই নিভাতে যাব না । কেননা তা নিভানোর মত যন্ত্রপাতি আমাদের প্রতিষ্ঠানে রাখা হয় না । আর বড় আগুনে যেই তাপ হবে; তাতে দাঁড়াবার মত ক্ষমতাও আমাদের নেই । আর ছোট আগুন নিভানোর পদ্ধতি চারটি ।
১) জ্বালানিকে পৃথক করে আগুনকে দুর্বল করে নিভিয়ে ফেলা (আমরা মজা করে বলি ভাতে মারা )।
২) পানি দিয়ে তাপমাত্রা কমিয়ে নিভানো (পানিতে মারা )।
৩) বালু দিয়ে, ফায়ার ব্লাঙ্কেট বা ফায়ার বিটার দিয়ে আগুন থেকে বাতাস বা অক্সিজেন সরিয়ে আগুন নিভানো (গলা টিপে মারা) ।
৪) ফায়ার এক্সটিনগাইশার দিয়ে ( বিষ দিয়ে মারা ) ।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার আমাদের সবার জানা উচিত । এবং এটা ব্যবহার খুবই সহজ । বড়জোর ৫ মিনিট লাগবে ।
কি ওয়ার্ড টি হচ্ছে PASS
P...Pull ..অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের স্কুইজ লিভারের তলায় অথবা যন্ত্রের গলায় ধরে সেফটি পিন খুলুন
A....Aim... আগুনের গোড়ায় (আগুন হচ্ছে গাছ আর গাছ কাটতে হয় গোড়ায়) লক্ষ্য করুন ।
S....Squeeze...স্কুইজ লিভার চাপুন
S.....Sweep... আমরা আগুন থেকে বাতাস সরাচ্ছি ( মানে ঝাড়ু দিচ্ছি )...তাই ডাইনে বামে ঘুরিয়ে মারতে হবে ।
আর CO2.অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে ধরার জন্য হাতলে একটা বিশেষ জায়গা আছে যেহেতু এই গ্যাস অনেক ঠাণ্ডা তাই
অন্য জায়গায় ধরে রাখতে পারবেন না । ইউ টিউবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে অনেক ছোট ছোট ভিডিও আছে ! একটু দেখে নিলেই বুঝে যাবেন ।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা সুউউচ্চ বিল্ডিং গুলিতে মাসে একবার নিয়মিত মহড়া হতে হবে । কিছু আগুনের মহড়া হবে না জানিয়ে আর কিছু রাতের বেলায় । মহড়ার লক্ষ্য বিপদের সময় আপনার মাথা কাজ না করলেও শুধু অভ্যাসের বলে কিভাবে সঠিক কাজ করে বের হয়ে আসবেন । যেমন আগুন ছড়িয়ে গেলে কিভাবে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে । কিভাবে ধোঁয়ার নীচ দিয়ে আসবেন ইত্যাদি ।
আমরা সবাই আসলে আগুনকে চিনি কিন্ত খুব কম লোকই আগুন সম্পর্কে জানি ।
চেনা আর জানার ফারাকটা কিন্ত ক্ষেত্র বিশেষে বিস্তর । তাই দয়া করে আগুনকে জানুন ।
আজকে থেকেই হোক আপনার জানার চেষ্টা ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন