শহীদ মিনার ছোঁয়ার অযোগ্য লাশের কথা !!!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১৭ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:২১:৪৪ রাত
শহীদ মিনার ছোঁয়ার অযোগ্য লাশের কথা !!!!
হুমায়ূন আজাদের ছেলে , ব্লগার অনন্য আজাদের একটা মন্তব্য অনলাইনে পড়ে একটু বদহজমই হচ্ছে ।
তার কথায় যারা মুখে রাজাকারদের বিচার চায় বলে উচ্চবাচ্য করে, তারাই নাকি আবার গতকাল (১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ ) থেকে রাজাকারপুত্র-রাজাকারপ্রেমি পিয়াস করিমের মৃত্যুতে অশ্রু ফেলেই যাচ্ছে।
কথাটার মানে কি ? আসেন, একটু শাহাবাগের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সফটওয়ারে পোষ্ট মরটেম করি ।
আপনার বাবা/ভাই বা রক্তের সম্পর্কের বা আত্তিয়সুত্রে (!) কেউ রাজাকার হলে অথবা আপনি রাজাকারদের (মনে মনে জামাত/হেফাজতি পড়ুন ) পক্ষে ( যৌক্তিক হলেও ) কথা বললে; আপনার মৃত্যুতে আমাদের শোক প্রকাশ করা গজামদের চেতনা ধর্ম অনুযায়ী হারাম !!!
আমি জানি, এ্টা শুধু এক অনন্য আজাদের কথা নয় , এইরকম হাজার লক্ষ অনন্য আজাদ এখন আমাদের চারপাশে । এরাই আমাদের চেতনার অধিপতি , ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা তুই রাজাকার তুই মুক্তিযোদ্ধার বিভক্তির আতর ছড়ানো সুশিল দালাল।
তাইতো শহীদ মিনারে ব্যানার দেখি 'রাজাকার পুত্র পিয়াস করিমের লাশের ভার বইবে না শহীদ ।
কে এই ডঃ পিয়াস করিম ? তাদের কিতাবের ভাষায় তিনি কুমিল্লা শহরের জজকোর্ট রোডের অ্যাডভোকেট এম এ করিমের ছেলে। টিভি টকশোতে একজন সুশীল সুপরিচিত জামাত তোষনকারি । তিনিই শাহাবাগের ঐতিহাসিক মহান (!) গণজাগরণ সম্পরকে বিরূপ মন্তব্যকারী । তার বাবা অ্যাডভোকেট এম এ করিম মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন। পিয়াস করিমের বাবা এম এ করিম বিয়ে করেন আরেক মুসলিম লীগ নেতা জহিরুল হক লিল মিয়ার মেয়ে কে। জহিরুল হক লিল মিয়া এর আগে আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। ছিলেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় জহিরুল হক লিল মিয়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
এই হচ্ছে শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের " রোড টু শহীদ মিনার অস্পৃশ্য" হওয়ার সার সংক্ষেপ কাহিনী !!!
আইসিটি ৫৭ র ফর্মুলায় ধরে নিলাম সবই সত্য ।
তারপরও আমার মত ছাগুর কিছু নাদান প্রশ্ন থেকে যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা নানা কারনে দেশ বিভক্তির পক্ষে ছিলেন না , যারা শান্তি কমিটিতে ছিলেন অথচ যুদ্ধাপরাধী নন তারা সবাই কি এই পিয়াস করিম ফরমুলায় পড়েন ?? যদি তাই হয় তাদের সঙ্খাটা কত (তাদের বংশধর সহ ) ??? আমার ভয় হচ্ছে এইরকম ছোঁয়ার অযোগ্য পিয়াস করিমদের খুঁজতে গেলে পুরো দেশের কথাই বাদই দেন ; উনাদের নিজস্ব গাঁ ও বোধহয় উজার হয়ে যাবে !!!!
ডঃ পিয়াস করিম বামপন্থি/ বিএনপি পন্থি যাই হন না কেন ; আমি তার ফিদা বা মুরিদ নই । তিনি দোষে গুনেই মানুষ । কিন্তু তার মত সাহস করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মত লোকের আকাল এদেশে বরাবরই । জীবিত অবস্থায় তিনি অন্তত মৃত পরজীবী ছিলেন না । তাই তার মৃত লাশটিও এদের মনে ভীতি জাগাচ্ছে । ফলে লাশের নামেও কুৎসা ।অথচ যে সমাজে আমরা বড় হয়েছি একদা সেই সমাজে মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য সামাজিক বা ধর্মীয় ভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলনা । মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে ল্যাটিন সেই বিখ্যাত প্রবাদটার কথা বলি ,
De mortuis nihil nisi bonum (“Of the dead, nothing unless good.”)
কিন্তু সমাজের বিবেক আর নৈতিকতার আত্মাটাও আমরা আজ হিমাগারে লুকিয়ে রেখেছি । ভয়ংকর এক চেতনাবাদ সিন্দাবাদের মত সমাজের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তারা শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে একটি নতুন ফাটকা ধর্মের প্রচলন ঘটিয়েছে । যে শহীদ মিনার অন্যায় অত্যাচার শোষণ জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছিল, দুর্ভাগ্যক্রমে আজ তা হয়ে উঠেছে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা দলীয় অন্ধ মোসাহেব আর চাটুকার দালালদের আরাধ্য স্থান । এরা দলকানা, দলদাস। তাইতো শহীদ মিনারে এলেও এদের কোনো অগ্রসর চিন্তাশীল বিবেকবোধসম্পন্ন আত্মমর্যাদাশীল মানুষ মনে হয় না। ।
শাহাবাগের গজাম রা আমাদেরকে আসলে কি দিয়েছে, তা আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও ঠাউর করতে পারিনা । আমার সদ্য প্রয়াত বাবার মতে শাহাবাগের বিশিষ্ট ফাটকাবাজরা আমাদের হোমোজনিয়াস জাতিকে "with me or against me fallacy" ফরমুলায় দুইভাগে বিভক্ত করেছে । বহু মানুষের মোলায়েম পোশাকটি খুলে তার ভেতরের ফ্যাসিস্ট পশুটিকে দেখিয়েছে । আবার বহু সাহসী মানুষকে মেনি বেড়াল হিশেবে আমাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বহু মৌসুমি পরজীবী বুদ্ধিজীবি আর নস্ট ভ্রস্ট অনন্য আজাদদের বাম্পার ফলন ঘটিয়েছে । আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা, ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নাস্তিকতা এইসব জিনিস নিয়া ত্যানা পেঁচানো যতদিন বন্ধ হবে না, ততদিন এই দেশের অগ্রযাত্রা বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেঁয়ে উপরে উঠার মতই হবে !
শুধু ঘৃণা দিয়ে দেশপ্রেম হয়না , হয়না দেশ অগ্রগতির কোন সফল রোড ম্যাপ ।
Hating Is An Emotional Disease. So If You Hate Me, Get Well Soon !!!!
বিষয়: রাজনীতি
১০৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যাক্তিগতভাবে আমি 'লাশ'কে আল্লাহর কাছে হাওলা করার আগে - শহীদবেদীতে উপস্থাপন আর ১৪০০ বছর আগে লাত, মানাত, উজ্জা ইত্যাকার মূর্তির সামনে কোন লাশকে উপস্থাপনের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখি না।
আমাদের কৃষ্টি, কালচার যদি আমাদের ধর্মের মধ্যে ভাগ বসায় - তবে বুঝতে হবে জাতি হিসাবে আমরা আমাদের ধর্মের মৌলিকত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ করছি। সুতরাং শহীদ মিনার নন মুসলিমদের জন্য ছেড়ে দেওয়া উত্তম। ধন্যবাদ।
শহীদ মিনার / চত্বর একটি প্রতীকী জায়গা.।.।। এখানে লাশ রাখা মানে রাষ্ট্রীয় ভাবে বা জাতগত ভাবে তাকে সম্মানিত করা .।।এতে লাশের কোন উপকার হবেনা সত্তি তবে এটা তার পাওনা সন্মান। এবং তা নতুন প্রজন্মকে তাদের মত হবার প্রেরনা যোগাবে .।.।
এই লেখাটা আসলে লাশ রাখার কারন হিসাবে যে বিভক্তি মুলক কুৎসাগুলো বলা হচ্ছে তাকে হাইলাইট করা । আপনাকে ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন