মানুষের চেয়ে দালাল বেশী !!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:০৮:৩৫ রাত
দেশে এখন দালাল, তোষামোদকারী / খয়ের খাঁ এর সংখ্যা কত হবে ??? প্রকৃত সংখ্যাটা পাওয়া গেলে কি ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যাবার মত অবস্থা হবে ??
রাজনীতির পাতি নেতাদের পোস্টার গুলি দেখুন , প্রচারে অমুক, সৌজন্যে তমুক । ফেবু দালালদের ডিজিটাল প্রপোগান্ডা পড়ুন , সাংসদ / মন্ত্রীদের নেতা /নেত্রিকে পীর বানিয়ে ফেলার বন্দনার কথাগুলো শুনুন কিংবা গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের মিডিয়ার নবণীতা , মুন্নিসাহা দালালদের কিচিরমিচির টকশোর খয়ের খাঁ দের কথা শুনুন ।
আপনি নির্ঘাত আবহমান এই বাংলার ছবি আঁকতে গিয়ে সৈয়দ ওয়ালিউল্লার স্টাইলে বলে বসবেন "মানুষের চেয়ে দালাল বেশী" ।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ এ চরম হতাশায় বলেছিলেন " আমার কম্বলটা কোথায়? কি করবো আমি, যে দিকে তাকাই, দেখি চাটার দল, সকলে পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।"
২০১৪ তে বেঁচে থাকলে নিশ্চিত বলতেন , আমরা পেয়েছি দালাল আর খয়ের খাঁ দের খনি ????
১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ ইতিহাসের এ লম্বা পথ পরিক্রমায় এই দালালদের সংখ্যাটা চক্রাকারিক হারে উত্তরতর বেড়েই চলছে । যুগে যুগে মীর জাফরের মত দালাল তোষামোদকারী বেইমানরা খোলস পাল্টিয়ে ভিড়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের সাথে। আর দেশপ্রেমিক মোহনলালরা হয় দেশান্তরিত নয় চরম ভাবে অবহেলিত। তাই স্বাধীন বাংলার ৪৩ বছরের এইসব দালাল তোষামোদকারীদের ইতিহাস ক্ষমতা দখলের ইতিহাস, লুটপাটের ইতিহাস, দল বিভক্তির ইতিহাস, নিত্যনতুন নেতা গজানোর ইতিহাস, সাইনবোর্ড গড়ার ভাঙার ইতিহাস, বাড়ি দখল-বেদখলের ইতিহাস, হরতাল-ভাঙ্চুর, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা আর লুটপাটের ইতিহাস।
হায় ! ইতিহাসের কী বিপরীত শিক্ষা !!!
এ দেশের আম জনতা শুধু দেখছে ক্ষমতার সিংহাসনে আরোহন করছে একবার এ দল আরেকবার ও দল। আর তাদের লেজুড়বৃত্তি করছে বিভিন্ন পেশা আর পরিচয়ের দালালরা । তারাই একজোট হয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে । এদের তোষামোদের বেড়াজালেই পচে যাচ্ছে দেশ ও সমাজের বিবেক ।
আর সুশীলরা "তোমরা যারা দালালী কর " বই না লিখে হলুদ ইতিহাসে মোড়া বিভক্তিমুলক চেতনা আর আমিময় পাশ্চাত্য স্টাইলের ভোগ বিলাসের ইয়াবা খাওয়াচ্ছেন নতুন প্রজন্মদেরকে । দালালী আর তোষামোদি করতে গিয়ে তারা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভুলে গেছেন । বিবেকের কাণ্ডারী বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন টাকার হিসেবে। এসবেরই সুযোগ নিচ্ছে বিদেশি ফড়িয়া ও তাদের দেশীয় এজেন্টরা।
রাজনীতির দালাল আর খয়ের খাঁ দের সাথে তালমিলিয়ে এ দেশটার আরো এক প্রকার ভয়ংকর ব্যুরোক্র্যাট দালালের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের কর্মচারী হয়েও তারা সেজে গেছে জনতার মুনিব। লুটেপুটে খেয়ে ফেলছে দেশের সব সম্পদ। চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা, উন্নয়নমূলক কাজের নামে টেন্ডার ভাগাভাগি করে কোটি কোটি টাকা, বদলি বাণিজ্যে অগুনিত টাকা, এমনি করে প্রতিটি দফতরে চলছে সাধারণ
জনগণের সবকিছু হাতিয়ে নেয়ার বিচিত্র ধান্ধা। দেখার কেউ নেই, সঠিক বিচার চাওয়ার কোনো স্থান নেই। সর্বত্র দখল করে আছে ওরা।
লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মধ্যবিত্ত , নিম্নবিত্ত তরুণ বা তরুণীটি আজ যে চাকরি নিচ্ছে; ঘুষ না খেলে, সে ঋণ করে দেয়া ঘুষের টাকাটা শোধ করবে কী করে?
ফলে কি এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরি হতে থাকবে কাল বিড়াল ? ভাবতে অবাক লাগে , যে দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাসে ঘুষ/ দুর্নীতি প্রথা একেবারেই হারাম, তারাই দুর্নীতিতে বছরের পর বছর চ্যাম্পিয়ন !!!
তাই এইসব দালাল আর তোষামোদকারীদের সামাজিক ভাবে কিভাবে প্রতিহত করা যায়, তা ভেবে দেখবার সময় আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে । হতাশার মোড়কে নিমজ্জিত হতে চাইনা । বিশ্বাস করতে চাই, একদিন জাগ্রত বিবেকের জয় হবেই ।
আশা রাখি এই যুগের মোহনলালরা আমাদের এই প্রজন্মদের কাছে এইসব দালাল আর খয়ের খাঁ দের মুখোশ খুলে দিবেন । তাদেরকে শিখাবেন , যে তোষামোদকারী সে নতুন কে ভয় পায় , অপ শক্তির পক্ষেই তার অবস্থান, আত্মপরিচয় তার বিস্মৃত, ক্ষমতায় আসীন হওয়া
মানে তার কাছে দুর্নীতি-অনিয়ম-অপকর্ম করার লাইসেন্স ।
জি. ও. ব্রেয়ন এর উক্তিটি তাদের মনে ভালভাবে গেঁথে দিবেন
" আক্রমণকারী শত্রু অপেক্ষা তোষামোদকারী বন্ধুকে বেশি ভয় করো। "
বিষয়: বিবিধ
১২৮৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই হচ্ছে দি দালালী.।.।.।.।.।.।.।।
গোলাম-গোলাম আজম,
ফারুক-কর্নেল ফারুক,
ব্যাটা কী করবে এখন............?
আর যে ব্যক্তি নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছে, তার শেষাবধি কোনো নামই থাকবে না, দেখতে পাচ্ছি দিব্য দৃষ্টিতে।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা তোমাকে লেখাটির জন্য।
ওদের নামতো থাকবেই, সেটি হচ্ছে 'দালাল'।
তোমাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন