ইউনাইটেডের শিক্ষা !!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:১৫:১২ রাত
সেদিন সকাল থেকেই সে ব্যাথায় কাঁতরাছিল । আমি তা মরন ঘাতক ব্যাধির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভেবে চুপ করে ছিলাম। ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকের সময়ে পজিটিভ কথা শুনে উল্টো আশায় বুক বাঁধলাম , ২/ ৩ দিনের মধ্যেই তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারব । কিন্ত হায় ঠিক ঘণ্টা দুয়েক পরেই সে বাথরুমে ঢলে পড়ল। আমি তার পরাজিত করুণ চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, সে শেষ বিদায় জানিয়ে ফেলতে চাইছে । তবু মন তা বোঝেও বোঝে না । ইউনাইটেড এর কেবিন থেকে তাকে তাড়াতাড়ি আই সি ইউ তে নেয়া হল , দেয়া হল অর্থহীন ভেন্ট সাপোর্ট । চ্যাংড়া চ্যাংড়া মুডী ডাক্তার এসে বলে এই ভাল , এই খারাপ । ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না ওখানে কি হচ্ছে ??? পরিচিত এক ডাক্তারের হাতে পায়ে ধরে অবশেষে ভিতরের কিছু খবর মিলল ।
আই সি ইউ র বাইরে দাঁড়িয়ে আমি তাই কিংকর্তব্যবিমুর । আমার মন আর শরীরের উপর ২৪/৭ বুল্ডোজার চলছে । ডাক্তাররা প্রতিটা চিকিৎসা দেয়ার আগে ইনিয়ে বিনিয়ে জেনে নিচ্ছে টাকা পয়সা আছে কিনা ??? পুরো চিকিৎসাই চলছে রোগীর আর্থিক অবস্থার উপর । তারপর ফর্মে সাইন চলছে । আমি মনে মনে বলছি, খোদা আমাকে কেন তুমি বড় সন্তান বানালে ? কেনইবা এত কঠিন সিদ্ধান্তগুলি আমাকে দিয়ে নেয়ালে !!!
আই সি ইউ তে চাইলেও যখন তখন তাকে দেখা যায় না , অথচ প্রধান মন্ত্রির কোন এক আত্মীয় তার পাশের বেডে ... ডজনে ডজনে লোক একের পর এক তাকে দেখতে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বড্ড কড়া নিয়ম । একজন /দুইজন এক ভিজিটিং আওয়ারে । যতই বুঝাতে চাচ্ছি সে আর বেশীক্ষণ থাকবে না তবু তারা নিয়মের হাইকোর্ট দেখাচ্ছে । পাশের বেডের প্রসঙ্গ তুলতেই তারা ডেমকেয়ার ভাবে বলল উনাদের বিশেষ অনুমতি আছে । কথাটা শুনে নিজের দেশে নিজেকেই উদ্বাস্তু মনে হল । আমরা যেন ইতিহাসে পড়া বর্ণবাদের তীরে বিদ্ধ ১৯ শতাব্দীর সেই অসহায় কৃষ্ণাঙ্গ গোত্র ।
এ দেশে ক্ষমতার কাছাকাছি না থাকলে আপনি আসলে নেহাত ই তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক ! আর টাকা পয়সা না থাকলে কুকুর বিড়ালের মত চারপেয়ে প্রাণী ।
আমার কষ্টটা বুঝেই হয়তো সে আমাকে মুক্তি দিয়ে খুব সহসা ইউনাইটেডের পত্রপাঠ চুকাল ???
যে সমাজে তার জন্ম হয়েছিল সেখানে একদা হিসাব হতো মানবিক গুণাবলির, কদর ছিল সংবেদনশীলতার। জীবনের সায়ানহে এসে তার মরিচীকাময় ছায়াটাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দেখেলেন । আর আমি ইউনাইটেডের মত অভিজাত শ্রেনির ৫ স্টার হাসপাতাল কাম হোটেলে এসে বুঝলাম, স্বাস্থ্য সেবা “কেনার” সামর্থ না থাকলে এদেশে হয় আপনাকে মরতে হবে আর না হয় আজীবন ভুগতে হবে । আর এখানে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করেও অভিজ্ঞ আর বড় ডিগ্রী ওয়ালা ডাক্তারের দেখা না পেয়ে আপনার মনে দিবা নিশি শঙ্কা জাগবে আসলেই কি তারা সঠিক চিকিৎসা করার সামর্থ রাখে কি না ??
জীবনের জটিল সমীকরণের সমাধান কষবার অপ্রয়োজনীয়তাকে আমি এখানে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ।
জানিনা, কেন বারবার ভুলে যাই যে পৃথিবীতে সুস্থ ও স্বাভাবিক শরীর নিয়ে বেঁচে থাকতে পারাটাই বিধাতার কত বড় নেয়ামত !!!
হায়!! মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে আমার চিন্তাটা যদি একটু বিস্তারিত হত তবে হয়তো আমার পাপচার কমে আসতো এবং আমিময় সমাজটা হতো অন্য রকমের সুন্দর।।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমরা ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও পাবার ক্ষেত্রে কতটা অবহেলা এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
এ ব্যাপারে কি করণীয় রয়েছে ভাবছি। আমরা কি জিম্মি হয়ে আছি?
ধন্যবাদ তোমার অনুভূতি সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য। আর লেখার ভিতরের বিষাদ অনুভুতিটুকুও অনুভব করলাম। আল্লাহ পাক তোমার আব্বাকে জান্নাত নসীব করুন- আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
চিকিতসা যে এখানে সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর চেয়ে আহামরি ভাল - মোটেই তা নয় । সরকারী হাসপাতালে মানুষ যায় না দালালদের দৌরাত্ন্যে । আর এখানে আসলেও গলা কাটা দামে চলতে হয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন