দি প্যালেস্টাইন ট্র্যাজেডি !!!

লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১২ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৫৬:২২ রাত

"প্যালেস্টাইন" গ্রীক ট্র্যাজেডি ‘ইডিপাস’এর মতই এক বিষাদময় বিয়োগান্তক ইতিহাসের নাম । ইহুদি আর পশ্চিমাদের নিষ্ঠুর চক্রান্তের ঘূর্ণিপাকে প্রায় এক শতাব্দীর চলমান বিষাদময় কাহিনী এটি । সময়ে সময়ে আমরা এই কাহিনী পড়ছি । তাদের অপরিসীম হতাশা আর অসহায়ত্ব ভরা জীবন দেখে হা হুতাশ করছি , মানবতা ভুলন্ঠিত হতে দেখে শিউরে উঠছি ; তারপর ভাগ্যের নিয়তি মেনে বইটি সযত্নে আড়াল করছি ।

আশির দশকে প্রয়াত ফজলে লোহানির " যদি কিছু মনে না করেন " ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিন দের করুন কাহিনীর প্রামাণ্য চিত্রটি কি আমাদের প্রজন্মের মনে আছে ??? এই অনুষ্ঠানটি দেখে জায়নবাদের ( ইহুদিবাদ) বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনেক নাম না জানা বাংলাদেশী যুবকরা ইয়াসির আরাফাতের PLO (PALESTINE LIBERATION ORGANIZATION ) তে নাম লিখিয়েছিল । লেবাননে ফিলিস্তিনিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল । !!! আপসোস , তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে আমরা না মূল্যায়ন করেছি; না নতুন প্রজন্ম কে বলেছি ।

ড. হেইস বাইজম্যান -ইহুদি এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী লোকটি বৃটেনের কাছে স্বজাতির জন্য ফিলিস্তিন নামক এক টুকরো ভূমি চেয়েছিলেন । ১৯১৭ সালে বৃটিশরা যুদ্ধে

জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলে ঘোষণা (বেলফোর ঘোষণা ) দেন । ফিলিস্তিনরা ভেবে ছিল যেহেতু এটি তাদের মাতৃভূমি এবং ইহুদিদের তুলনায় তারা

কয়েকগুণ বেশি, সেহেতু এখানে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে ৷ কিন্তু এর মাঝে যে মহা ধোকাটি লুকিয়ে ছিল তা তারা বুঝতে পারেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর বৃটেন

স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে পরাধীন করে রাখে ৷ মূলত এই সময়টিই ইহুদি বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ফিলিস্তিনকে আরব শূন্য করার জন্য ভালোভাবে কাজে লাগায় । ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে তাদেরই চাপে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের বিরোধিতাকে তোয়াক্কা করে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগ করার প্রস্তাব পাশ করে। এই প্রস্তাব অনুসারে জাতিসংঘ মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের প্রদান করে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দেয়। আরব দেশ গুলোর দুর্বল সরকারের সুযোগে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলকে জাতিসংঘ ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা প্রদান করে। সেই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের প্রভাবশালী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের জায়নবাদী গোষ্ঠীর মদদে ইসরায়েল ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার হীন যুদ্ধে লিপ্ত । তাদের মুল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি জাতিগোষ্ঠীকে নিরাপদ অভিবাসিত করা আর আরব দেশগুলোর পরস্পর হানাহানির সুযোগে তাদের তেলখনিগুলোর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন নেয়া ।

মনে রাখতে হবে ইসরায়েল-কেন্দ্রিক জায়নবাদী গোষ্ঠী শিক্ষা দিক্ষা , বেবসা বাণিজ্যে আজ প্রবল প্রবল প্রতাপশালী , যেমনটি ছিল ষোড়শ শতাব্দীতে মুসলিমরা । এরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক-পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আর মিডিয়ায় জায়নবাদীদের আধিপত্যের বর্তমান চিত্র গল্পের মতই চমকময়। এদেরই সুপরিকল্পিত প্রচারণার জোরে তিলকে তাল বানিয়ে মুসলিম মানেই আজ মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী। মুসলমানদেরকে আজ তালেবান, আল-কায়েদা, লাদেন, হিজবুল্লার অনুসারী বানিয়ে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজটি সুক্ষ ভাবে করা হয়েছে । জনবিযুক্ত আর তেলের উপর নির্ভর করে আয়শমান পরিবারতান্ত্রিক অশিক্ষিত আরব সরকার গুলোর ইমেজ দিয়ে ইসলাম ধর্মের পোস্ট মরটেম করা হয়েছে । যেমনটি এ দেশে চলমান বাকু সরকার (জায়নবাদী গোষ্ঠীর পরম মিত্র দাদাবাবুদের সহযোগিতায় ) দাঁড়ি টুপিওয়ালাদের ঢালাও ভাবে রাজাকার , জঙ্গি ,জামাত ইসলামী আর হেফাজতি্র লেবাস দিয়ে ইসলাম ধর্মের ইমেজ সংকট করেছে ।

কিছুদিন আগে জেরুজালেমে আবু খেইদার নামক এক কিশোরকে লা ফেমিলা নামক এক ইহুদি চরম মৌলবাদী গ্রুপ অপহরন করে আগুনে পুড়িয়ে মারে। তার অপরাধ সে মুসলিম এবং ফিলিস্তিনি । আমরা কয়জন এই ঘটনার কথা জানি ??? অথচ যদি উল্টোটা হত তবে তা BBC/CNNব্রেকিং নিউজ হত । এইজন্যই মালালারা নিউজ হয় আর কুকুর বিড়ালের মত মেরে ফেলা ফিলিস্তিন নিস্পাপ শিশুগুলি শুধুই নিছক দুর্ঘটনা।

বিংশ শতাব্দীর এই বিশ্বে মুসলিমরা যদি এক না হতেই পারে ; নেতৃত্ব দেয়ার মত নৈতিক বেক্তির আকাল থাকে , একজন আরেকজনের সাথে গাদ্দারিতে নিমগ্ন হয় আর ইসলাম ধর্মের প্রকৃত আদর্শকে লালায়িত না করে জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দিক্ষা ,বেবসা বাণিজ্যে থেকে দূরে সরে থাকে তবে আমাদের "Save Gaza"/ "Save humanity" বইটি বালিশের তলায় চাপাই থাকবে ।

তাই মাঝে মাঝে ভাবি who cares? এই বিশ্বে একেকজন অভাগা ফিলিস্তিন একেকজন জীবন্ত ইডিপাস

They lived in hell before and will live in hell again......।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244202
১২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:০৮
হতভাগা লিখেছেন : পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল ।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি , উনি যেন ইহুদী ও তাদের দোসরদের দুনিয়া থেকে নিশ্চিন্হ করে দেন এবং পরকালে জাহান্নামে দাখিল করেন - আমিন।
১২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:২১
189669
ইমরোজ লিখেছেন : This doom of Muslims will continue. Because there's no leadership in Arab countries. There's not a single Muslim country which you can admire! Islam itself is divided into opposing sects. The Shia and Sunni do not call each other Muslims! Then there are Wahaabi, Salafi etc etc. Muslims do not have education, sophistication, tolerance, technology, wealth (except Arabs) and they seemed to be happy without these. What we see are some extremist propagating medieval laws (Collected )

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File