আমিতো মেয়ে !!!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১৭ জুন, ২০১৪, ০১:৪০:৫৭ দুপুর
স্কুল থেকে ফিরে আমার চার বছরের ছোটির মন খুব খারাপ ।
আমি জিজ্ঞেস করলামঃ মামনি, কি হইছে??
চোখ জল জল করে আমার মেয়ে বললঃ পাপা, আমাদের ক্লাসের সুমন আমাকে পটকী বলে মাথায় টোকা দিয়েছে !
আমি বললামঃ ঐ সুমন কি মোটা না চিকনা ?
মেয়ে বললঃ চিকন ।
আমি হাল্কা ভাবে বললামঃ পরের বার পটকি বললে , তুমি ঐ ব্যাটা কে পটকা বলে একটা টোকা দিবা । তাইলেই তো শোধবোধ !!!
আমার মেয়ে কপট হেসে বললঃ না...হ পাপা !!! আমিতো মেয়ে !!!!
কথাটা শুনে একটু চমকে উঠলাম । এমন নয় যে এ ধরনের কথা প্রথম শুনছি ।বরঞ্চ আর বেশীরভাগ পুরুষের মতই লিঙ্গভেদের প্রাধান্য সারাজীবন উপভোগই করেছি । নারীদেরকে সারাজীবন “ LADIES FIRST” এর মতই আলাদা একটা অবলা চীজ বলে মনে করেছি । এই নিয়ে আমার বউ অভিযোগনামা লিখতে শুরু করলে "লজ্জার" চেয়ে বড় লজ্জাকর একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারবে ।
তবু আজ নিজের বেটি লিঙ্গভেদের কারনে দুর্বলচেতা হয়ে থাকবে , তা মানতে ঢোক গিলতে হচ্ছে !!!!!
ফরাশি ঔপন্যাসিক, সিমোন দ্য বোভোয়ার নারীবাদের বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘ল্য দ্যজিয়েম সেক্স / দি সেকেন্ড সেক্স ’ এর একটা উক্তি বলি “কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী” । মানে নানান বিধিনিষেধ ও কল্পিত বিভাজন আরোপ করে প্রতিটি পুরুষ শাসিত সমাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে তাকে অবলা নারী হিসাবে পরিচিত করে তোলে । মানছি, প্রকৃতিতে নারীর অবস্হান এক , পুরুষের আরেক ৷ দুইয়ের নিজস্বতা আছে ৷ কিন্তু লিঙ্গভেদের সব বৈষম্য কখনই প্রকৃতি কিনবা ধর্মীয় প্রদত্ত নয় বরং সমাজ আরোপিত । ধর্মীয় পরিচয়ে বৈষম্য যে হয়নি তা বলব না তবে এর দায় অনেকাংশে ধর্মের নয় বরং ধর্মীয় অপব্যাখ্যার ।।
অথচ আমাদের বং নারীবাদী সেলিব্রিটিরা , নারী বৈষম্যের জন্য সমাজের এর চাইতে ধর্মীয় সংস্কারের কুপ্রথা, বিধিনিষেধ গুলিকেই বেশি হাইলাইট করেন । কথায় কথায় হিজাব আর বোরখার পোস্ট মরটেম করেন; পশ্চিমা সমাজের কথা বলেন । কিন্তু পশ্চিমা দেশ গুলোর নারীরা কি সত্যিকার স্বাধীনতা লাভ করেছেন ? বরং তাদের অবস্থা অনেকক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলোর চাইতেও নাজুক মনে হয় । অল্প কাপড় পরার স্বাধীনতা মানেই নারী স্বাধীনতা নয় । বরং পুরুষের ভোগপণ্য এবং চিত্ত বিনোদনের উৎকর্ষে পরিনত হবার জন্যই এই চামড়া দেখানোর বায়বীয় স্বাধীনতা । সেসব দেশে ধর্ষণের পরিসংখ্যানটিও আঁতকে উঠার মত । We don't need to exploit sex to recognise that a certain amount of sexiness is both pleasurable and natural ।
আজ সমলিঙ্গ সেক্স আর বিবাহের স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা যেই তথাকথিত ২১ শতাব্দীর মুক্ত প্রগতিশীল সমাজের স্বপ্ন দেখছি , সেখানে নারী বৈষম্য এর কি হাল হবে তা নিয়ে আমি শঙ্কিত !!!
বং দেশে নারীদের দুঃখ বুঝতে নিজের পরিবার দিয়েই শুরু করতে হবে । মা, বউ , মেয়ে আর বোন । দয়া করে বাসার কাজের মেয়ে বা মহিলার জীবনটাকেও বাদ দিবেন না ; সেইখানেই দেখবেন আসল ফাঁকফোকর । কি তার অমানবিক পরিশ্রমী জীবন আর প্রায় শুন্য ভবিষ্যৎ!!! পত্রিকায় পড়লাম, ২০১০-২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ধর্ষিত হয়েছে ৬০১৯ জন। শিশু, কিশোরী, যুবতী, তরুণী, মধ্য বয়সী, প্রতিবন্ধী সবাই আছে ৬০১৯ জনের মধ্যে। ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, যৌতুকের লোভে নির্যাতন সব মিলালে ৪ বছরে তা ২ লাখের কাছাকাছি। এইসব অমানুষগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে নারীবাদীদের কোন জোরদার আন্দোলন দেখিনা । তাই বং দেশে ধর্ষণের সেঞ্চুরিয়ান প্রভাবশালী মানিকদের বিচার হয়না, কেউ চায় ও না । সবচেয়ে ভয়াবহ পরিসংখ্যান হল প্রতি দশটির মধ্যযে মাত্র একটি এসিড সন্ত্রাস, যৌতুকের লোভে নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় আসে । ইভটি জিং এর কথা নাইবা বললাম । তাই আমার অল্প জ্ঞানে আমাদের দেশের সিকিভাগ নারীবাদী আন্দোলনকে ‘ফ্যাশনে’র নামাম্তর বলে মনে হয় ! চ্যানেলে কিংবা চেতনার আলুর গোল টেবিলে বক বক করে আর পুরুষ বিদ্বেষী তসলিমা আইকন হয়ে নারীবাদী আন্দোলন হয় না । নারী শিক্ষার অগ্রসরতা , ট্র্যাডিশনাল সমাজব্যবস্থা আর ধর্মীয় অনুসাশনের মধ্যে থেকেই অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব, মানে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে সমতা আনা যায়।
আমরা আসলে নিজের বিবেকের সাথে স্ববিরোধী মনোভাব আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। শাস্রে আছে নারী-পুরুষ একে-অপরের পরিপূরক৷ যতদিন এটা আমরা শুধু বইয়ের লেখা বলেই মনে করব; ততদিন নারীকে " WO” (man) অথবা “S”(he) লাগিয়ে উম্পা লুম্পা বানিয়ে দ্বিতীয় সারিতেই রাখব ।
আরেকটা কথা , আলাদা করে উইমেনস ডে’পালন করার মাজেজা টা আমি টিউ্ব লাইট বুঝতে পারি না । বাকি দিনগুলো কি তাহলে মেন্স ডে ?
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন নারীর লাগে নুন্যতম এস.এস.সি. পাশ আর একজন পুরুষের কম পক্ষে ডিগ্রী পাশ লাগে ।
বাসে সবাই খুব গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছে । একটা মেয়ে উঠলে মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা সিটে অনেক কষ্ট করে বসা পুরুষটির উঠে যেতেই হল ।
তখন ''আমি একজন মেয়ে '' হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হয় না ?
ব্যাপারটা বুঝতে হবে
মন্তব্য করতে লগইন করুন