"বিপদজনক তুমি" !!!!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ০৭ মে, ২০১৪, ০৪:৪৫:৫৯ বিকাল
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রজন্মের সামনে ঘটেনি। আমরা ছোট কাল থেকেই গুরুজনদের কাছ থেকে , বই আর মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি মুক্তি যুদ্ধের পটভূমি, যুদ্ধকালীন সময়,এবং এর পরবর্তী ঘটনা সমূহ । তবে বেশীরভাগ ইতিহাসমূলক রচনাগুলোই সার্বজনীন নয়। রাজনৈতিক পক্ষপাতে প্রবল্ভাবে ভারাক্রান্ত । সত্যিকার ইতিহাস জানাটা সবসময়ই কঠিন আর বং গুবেলসের দেশে তা বড়ই কঠিন । এখানে গুবেলসরা সবাই বেস্ত তাদের মিথ্যাগুলোকে বারংবার বলে সত্য বানাতে । ইতিহাস সবসময়ই বিজয়ী কিনবা ক্ষমতাশালীদের ভার্সনে লেখা হয় । আর কেউ ইতিহাস লেখার সময় নিজেকে ভিলেন হিসাবে উপস্থাপন করে না । তাই সত্যের জন্য আপনাকে সব ভার্সনের ইতিহাস শুনতে, সমান ভাবে আগ্রহী হতে হবে । আওয়ামী ভার্সনের ইতিহাস , বি এনপি ভার্সনের ইতিহাস , প্রো পাকিস্থানিদের ইতিহাস আর বামপন্থি ভার্সনের ইতিহাস । তাদের ভার্সনের গল্পের ভিতরে ইচ্ছে করে মুছে দেওয়া লাইনগুলো পড়ার ইচ্ছেশক্তি, বিবেকবোধ আপনার থাকতেই হবে । তবেই আপনি সত্যের খুব কাছাকাছি যেতে পারবেন। যা অনেকসময় আপনার জন্য চরম অপ্রিয় অথবা তিক্ত স্বাদের হতে পারে।
৪৩ বছরের আগের ঘটনা নিয়ে অনেক ধুম্রজাল ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি বিশেষ দল বরাবরই গন জাগরণের ফসল ছিনিয়ে নিয়ে এককভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে । বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব কিংবা জিয়াকে নিয়ে লেবু কচলে কচলে অপর পক্ষের কাছে বিষ বানানো হয়েছে ! এই ইতিহাসে দেশের চেয়ে বেক্তি আর তার দলকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে । কিছুদিন আগে হাসিনার আমেরিকাপ্রবাসী ,বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রত্যাশী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০১ সালের ইতিহাস পাল্টে গিয়ে নিজেই অবশেষে পল্টি খেয়েছেন। অবশ্য ২০৪১ রূপকল্পে ; কে জানে!!! এই সব গুবেলস রা হয়তো আর কিছুদিন পর ২০০১ সালের ইতিহাস নিজ মনের মাধুরি মিশিয়ে রচনা করতে পারবেন। যেমনটি এখন ৭১ এর ইতিহাস রচনা করে চলছেন তাদের বিরবল শুশীল কুশীল, বুদ্ধিজীবি দিয়ে । যারা সুযোগ থাকতেও নিজেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নি । এইসব সাধাসিধে চেতনার বুদ্ধিজীবি কথিত শ্রেণীটির হীনমন্যতাবোধ এবং দলের প্রতি তাদের চারিত্রিক দাসত্ব অনেকটা প্রবাদের সামিল।
কিছুদিন আগে মিসেস শারমিন আহমেদ তার বাবা তাজউদ্দীনকে ইতিহাসে জীবিত রাখার প্রয়াসে একটি বই লিখেছেন । তিনি প্রশ্ন করেছেন, কেন একটি দল ইতিহাস বলতে গিয়ে ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের পর ১৯৭২ এর জানুয়ারিতে ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে চলে যায় ?? কারনটি তিনিও জানেন কিন্তু বলেন নি । এই দলের লোকরা ৭১ এর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে র সময় বেশির ভাগই ছিলেন আত্মগোপনেরত। তাদেরকে দেখা গেছে কোলকাতার অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে জমজমাট আড্ডায় ব্যস্ত। গরম কফির কাপে চুমুক দেয়ার সময় মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলোতে অবস্থানরত হাজার হাজার তরুণের বেদনাহত চেহারাগুলো তারা কখনই দেখেননি । বাজি ধরে বলতে পারি ; এই দেশে যদি কোনদিন আবার গৃহযুদ্ধ লাগে , তবে এদের কারো টিকিটিই বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না।
তাই যাদের এ দেশে থাকতে হবে এবং যাদের রক্ত ঝরবে ; তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সত্যিকার ইতিহাস খুঁজতে । খুঁজতে হবে কিছু প্রিয় /অপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর ।
পূর্ব বাংলার বাঙালির স্বাধীনতার বীজ বপন করতে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি ভাসানির কি ভুমিকা ছিল ?
আমাদের জানতে হবে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৪ টি শর্তের মধ্যে আসলে কি বলতে চেয়েছিলেন ?? তিনি কি ঐদিন আদৌ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কিনবা কোন ইঙ্গিত ??
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আমাদেরকে সহযোগিতার কি কারন? তাদের কি রাজনৈতিক এবংভৌগলিক স্বার্থ ছিল ??
কেন পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীরা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করল ???
যে ভদ্রলোক গোটা দেশকে ১১টা সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধের নেত্রীত্ব দেন সেই মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধীনায়ক এম,এ জি উস্মানী সাহেব , স্বাধীন বাংলা সরকারের নেতা তাজউদ্দীন / নজ্রুল ইসলাম কিংবা , জিয়া এবং কাদের সিদ্দিকী সহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প কেন এই তরুন প্রজন্মকে শোনাব না ??
কেন ৪৩ বছরে বঙ্গবন্ধু র কথিত ৩০ লাখ শহিদের ১০ % ও নামের তালিকা হল না ???
৭২-৭৫ এর প্রকৃত ইতিহাস কি ছিল ? রক্ষিবাহিনী কর্তৃক প্রকাশ্যে হত্যাযজ্ঞের কি কারন ছিল ??
কেন শেখ মুজিব নিজ দলের চাটারদের থেকে পরিত্রান পেতে আত্মঘাতী বা্কশাল গড়তে চেয়েছিলেন??
কেন বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা কে দেশ স্বাধীনের মাত্র তিন বছরে এত নির্মম ভাবে হত্যা করা হল ??
আমরা যদি এই তরুন প্রজন্মকে একটা সার্বজনীন মুক্তিযুদ্দের ইতিহাস দিতে চাই , তাহলে উপরের এই প্রশ্নগুলোর বিভিন্ন ভার্সনের উত্তরগুলো শুনতে হবে । তার সাথে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিপক্ষে যারা কাজ করেছিল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও তৃতীয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের কৈফিয়তগুলোও আমাদের পড়তে হবে ।
শুধু ঘৃণার বীজ বপন করে যে ইতিহাস রচনা হয় তা দিয়ে দেশপ্রেম শিখা যায় না, হয়না নৈতিকতার যুদ্ধ !!
তাই স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও পথে ঘাঁটে নদীতে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরপন করছি । ৪৩ বছরের পরও নেতৃত্ব দেওয়ার মত লোকের বড্ড আকাল ।
" If you want to know the truth, no one is going to tell you the truth. They will only tell their version. So if you really want to know the truth then you have to seek it out for yourself, infact thats where the real power lies in your willingness to go beyond the story !! And you will be always dangerous to them !!! "
(উইলিক্সের ঘটনা নিয়ে ২০১৩ তে নির্মাণ করা THE 5th ESTATE ছায়াছবির একটি সংলাপ)
আশা রাখি, আগামি ভবিষ্যতে বং তরুন প্রজন্মে; হারিয়ে যাওয়া জহির রায়হানের মত অনেক সত্যানুসন্ধানি " বিপদজনক তুমি" কে খুঁজে পাব !!!!
বিষয়: রাজনীতি
১০৫৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যি অসাধারণ বলেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন