অতি চেনা জনপদের অচেনা লোনা পানির পথ !!!!

লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ০২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:০২:৫৭ সকাল



জীবনের প্রথম ভয়েজে এই বন্দরে একবার এসেছিলাম । জাহাজই তখন বুঝিনা আর বন্দর বুঝাতো পরের কথা । দেড় যুগ (+) পর আবার এই বন্দরে আসা। এর ডাঙার প্রতিটি জায়গাই চেনা কারন এখানেই আমার বেড়ে উঠা অথচ এর লোনা পানির পথ বড্ড অচেনা । ময়ু নদী পেরিয়ে সেন্টমারটিন রীফ, তার পূর্বে নাফ নদী । নদী পেরিয়ে উত্তরে এলে এলিফেন্ট পয়েন্ট । ফিশিং ট্রলারের মস্ত মেলা ।তারপর প্রিয় কক্সবাজার এর আবছায়া । তা্কে পাস ঘেঁষে উত্তর পূর্বে এলে সোনাদিয়া , মাতারবারি আর মহেশখালী দ্বীপ এবং সবশেষে কুতুবদিয়া দ্বীপের লাইট হাউস। বন্দরের প্রথম ল্যান্ড মার্ক । অনেক গভীরতার জাহাজ (Capesize আর VLCC) এর বেশি আর উত্তরে যেতে পারে না। ডলফিন শোল হচ্ছে তাদের ঠিকানা । এখানে এসে ছোট জাহাজের মাধ্যমে মাল খালাস করে । তারও উত্তরে গেলে বাহারছড়া, নরমান্স পয়েন্ট আর লোনা পথের সব শেষে কর্ণফুলীর মোহনায় পতেঙ্গা পয়েন্ট ,বন্দরের প্রবেশদ্বার । খাড়ির পূর্বের মুখে জুলদিয়ার সার কারখানা আর মেরিন একাডেমী। আমি তাদেরকে দেখি আর ভাবি , এইতো সেদিন তাদের ছেড়ে এলাম ; হায় সময় কত দ্রুত চলে যায় !!

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো সচল গাড়ী বহনকারী জাহাজের এর মধ্যে একটি হচ্ছে এই জাপানী তৈরি মাঝারি সাইজের জাহাজ। এই খাটিয়া জাহাজে যোগদানের আগেই জানতাম, সে এই বন্দরে মাঝে মাঝে আসে । তাতে বিশেষ কোন অনুভুতি হয়নি তখন । বরং পর্যাপ্ত গভীরতার অভাব, দ্রুত গতির স্রোত , ছোট জাহাজ , ফিশিং বোট , ট্রলার এর আধিক্য আর তার সাথে পতেঙ্গা আউটার অ্যাংকরে চোরাই নৌকার উৎপাত সামলাতে হবে জেনে অস্বস্তি লাগছিল । কিন্তু গতকাল ইয়াঙ্গুন ছাড়ার পর সব অস্বস্তি দূর । মন কেমন উরুউরু । কখন পৌঁছব তা নিয়ে মনের ভিতর অধীর প্রতীক্ষা । হোক না ষোল ঘন্টা তারপর ও নিজ দেশ, নিজ বন্দর আর প্রিয় শহর । কিছু প্রিয়মুখদের দেখা মিলবে আর বাকিদের কণ্ঠ । একটু পর পর ব্রিজে যাই আর দেখি আর কত মাইল বাকী ? চার্টের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন জায়গার নাম মুখস্ত করি । এই জাহাজে আমি ছাড়াও আরও তিনজন দেশী আছে । দুই ক্যাডেট আর সেকেন্ড অফিসার। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তাদের চেয়েও বোধয় আমার এক্সাইমেন্ট মাত্রাতিরিক্ত বেশী। আমার নিজের এক্সাইমেন্ট আমার নিজের কাছেই বালকসুলভ মনে হচ্ছে । জাহাজের অন্যান্য ক্রুরা নির্ঘাত ভাবছে " এই বুড্ডাকো ( মাস্টারের ট্র্যাডিশনাল নিক নেম ) কেয়া হো গেয়া !!!!

আমি তাকে থোড়াই কেয়ার করে মিটি মিটি হাসছি আর ব্রিজের উইং এ দাঁড়িয়ে গুন গুন করে খালাসীদের জাতীয় সঙ্গীত গাচ্ছি ।

"ও রে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া । "

বিষয়: বিবিধ

১২১৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

201523
০২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:২৫
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : চমেৎকার অনূভূতি যে !!
০২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:৩২
151181
ইমরোজ লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
201565
০২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৩১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার লাগল। ধন্যবাদ।
201605
০২ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:০৮
ঘাড় তেড়া লিখেছেন : অনেক সুন্দর লিখা... আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
201937
০৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৫৪
মাটিরলাঠি লিখেছেন : খালাসীদের জাতীয় সঙ্গীতঃ "ও রে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া ।" -এ ভাবেতো কখনো ভাবিনি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

207484
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
ইমরোজ লিখেছেন : ধন্যবাদ সবাইকে । ইন্টারনেট না থাকায় সময়মত উত্তর দেয়া হয়নি বলে দুঃখিত ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File