সাম্প্রদায়িক ছাগু !!!

লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২৩:৫৭ রাত

অনেক শাহরিয়ার মুন্তাসির কিছিম ভাদা প্রজাতির থেকে শুনি

" ভারতীয়রা আমাদের কষ্টের কারণে ১৯৭১ এ স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করেছিল আর আমরা শুধু তাদের সহায়তা করেছি । "

মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের লাখ লাখ মানুষ কে আশ্রয় দিয়েছে , পাকিস্তান কে আকাশ পথে রোধ করেছে । আমাদের প্রশিক্ষণ,অস্ত্র,সৈন্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে । আর ভারতের সাহায্যর কারনে আমরা যুদ্ধটা নয় মাসেই শেষ করেছি -সবই সত্য ।

তার বদলে কি আমরা তাদেরকে গত ৪২ বছর ওয়ান সাইডেড ভালবাসা উপহার দেইনি ???

এখন কথা হল, তারা যদি নাও আসত তাহলে কি আমরা স্বাধীন হতাম না ??

"৫২-৭১" ইতিহাস ধরে এগোলে _আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়; ভৌগলিক অবস্থানের কারনে , অধিকাংশ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে্র কারনে, মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসের কারনে , গেরিলা যুদ্ধের সফলতার কারনে , মানবাধিকার ইসুতে তৎকালীন আন্তর্জাতিক চাপে আর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এর কূটনৈতিক সমর্থনে আমরা ঠিকই স্বাধীন হতাম ।

হয়তো অনেক সময় লাগত, অনেকবেশি মানুষ মারা যেত।

বাঙ্গালী দামাল তরুণরা আর পাকবাহিনী/ ইপিআর পরিত্যাগ করে আসা বাঙালী সৈনিক আর অফিসাররা যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেন, তার যথার্থ মূল্য ভারত কখনোই দিতে চায়নি। আমরা আজও জানলাম না মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানী কেন নিয়াজির আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারলেন না । ওটা কি পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ছিল ??? আসলে আমাদের কপাল ভালো, ভারত ছিল আমাদের শত্রুর চরম শত্রু। তাই পাকিস্তান এর ক্ষতি সাধন এবং নিজেদের ভৌগলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত আর অর্থনৈতিক সুবিধা ছিল বলেই , তারা অনেক হিসাব কষে আমাদের কে সাহায্য করেছে ।

অথচ প্রথম আলোর চেতনাধারী সাদা সার্টিফিকেট পাওয়া সুশিলরা প্রায়ই ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিরসারথ সাহায্য করেছে তাই তারা আমাদের চিরস্থায়ী পরম বন্ধু আর আমরা চির ঋণী । উন্নত দেশ গড়ার জন্য নাকি ভারতের সাথে বন্ধুত্তের কোন বিকল্প নাই।

কিন্তু ভারত আমাদের ভাল চায়, এই কথাটি আমি কিছুতেই তাদের দেয়া সুত্র দিয়ে মিলাতে পারি না ।

আমরা ৭১ দেখিনি_ সত্য, কিন্তু চোখের সামনে দেখছি ফারাক্কা বাঁধ_ মরণ ফাঁদ , পদ্মা , যমুনা আর পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের করুন কাহিনী , তিন বিঘা করিডোর বনাম ট্রানজিট , ট্রানজিটের নামে দেশের সড়কগুলোর বারটা বাজিয়ে ভারী ভারী লরি নিয়ে বেনাপোল থেকে ত্রিপুরায় বিনামূল্যে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়া , নদীর উপর দিয়ে অভিনব ডিজিটাল রাস্তা , ফেন্সিডিলের নেশার মরন কামড়, উচ্চ মুল্লের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প , সিট মহল নিয়ে অপরাগতা , ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের লোলুপ থাবা ,সুন্দরবনে আত্মঘাতী রাম্পাল প্রকল্প , সীমান্তে কাঁটা তাঁর আর পশু পাখির মত মারা যাওয়া অসংখ্য ফেলানির লাশের কথা ।

আর আমার নাবিক জীবনের কথা বলি । এই তথাকথিত বন্ধু প্রতিম দেশের বেশীরভাগ বন্দরেই বাংলাদেশী নাবিকরা নামতে পারেন না । বাংলাদেশী বললে ভারতের অনেক প্রদেশে হোটেলের মালিক রুম ভাড়া দিতে চান না , কারন তাদেরকে স্থানীয় থানায় জানাতে হয়, কাগজপত্র জমা দিতে হয়; মানে অনেক ঝুট ঝামেলা ।

২০০৮ এ বিশাখা পটনম এ আমার জাহাজের ইলেকট্রিকাল অফিসার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মানবাধিকার ইসুতেও হাসপাতালে নেয়ার অনুমতি মেলেনি । কারন তার জাতীয়তা বাংলাদেশি । প্রচণ্ড ব্যাথায় আর অপমানে কাঁদতে কাঁদতে তিনি ভারতীয় এজেন্টকে বলেছিলেন " এমন প্রতিবেশী যেন শত্রুরও না হয় !!!" ।

মোদ্দা কথা ভারতের কিছু প্রাদেশিক সরকার পাকিস্থান, আফগানিস্থানের মতই বাংলাদেশকে টেররিস্ট দেশ হিসাবে গণ্য করে এবং আমাদেরকে নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে ।

তাই বিএনপি জামাত আবার ক্ষমতায় আসলে, দেশ পাকিস্তান আর আফগানিস্তান হয়ে যাবে, আওয়ামী সুশীলদের এই কথাটির চেতনা বিশাখা পটনম সুত্র দিয়ে অনুভব করতে পারেন - মনে হবে এ যেন তাদেরই শিখানো বুলি ।

"সাতক্ষীরা অপারেশনে ভারতীয় বাহিনী -ফাঁস হওয়া প্রমানাদি নিয়ে তোলপাড়" -এই অন লাইন সংবাদটি গতকাল অনেকেই হয়তো পড়েছেন । সত্য কি মিথ্যা এমন কোন নিশ্চিত উপসংহারে আসতে পারছি না, শুধু দুই আর দুই ...চার মিলিয়ে .. না পারছি গিলতে না পারছি উগরাতে । কারন বেশিরভাগ মিডিয়াই খবরটি ছাপেনি । অবশ্য "সব কটা ভারতের দরজা খুলে দাও না !!!! " এই গানে মশগুল থাকায় হয়তো সংবাদটি তারা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন ।

বাংলাদেশের ভারতীয় চেতনায় দোলা বুদ্ধিজীবি বলে কথিত শ্রেণীটির হীনমন্যতাবোধ এবং চারিত্রিক দাসত্ব অনেকটা প্রবাদের সামিল। নুন খেলে গুন গাইতে হয় এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রশ্ন হলো কত নুন খেয়েছেন তারা ?? যে আমাদেরকে লেন্দুপ মর্জির সিকিম টাইপের স্বাধীনতার চেতনার নৌকায় উঠিয়ে দিয়েছেন !!!

তোমার (ভারতের !!!) হাতে থাকলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ !!!- এই চেতনার শ্লোগানটি যারা দেন ; আমি তাদের আসলেই বুঝতে পারিনা। কারন তারা এক অসাম্প্রদায়িক নামের আজীব কট্টর ধর্মীয় প্রজাতি। তাদের বোঝার চেতনা আমার নেই।

তবে আত্মসম্মান ও বিবেককে বন্ধক না দিয়ে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমার এই দেশটার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম সত্তার ওপর আধিপত্যবাদী কোন রাষ্ট্রশক্তির প্রতি প্রতিবাদ পোষণ করা যদি সাম্প্রদায়িকতা হয়, ছাগুপনা হয় _ তবে আমি একজন গর্বিত সাম্প্রদায়িক ছাগু !!!

বিষয়: বিবিধ

১১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File