"তুই অধম বলিয়া আমি কেন উত্তম হইব ??

লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৭:২২ সকাল

জামাত শিবির নিয়ে আজকাল কথা বলতে ভয় লাগে । পাছে মুখ ফস্কে কি বলতে কি বুঝায় ফেলি ??? নিজ দেশে ছাগু, রাজাকার, নরপশু, ফেরাউনের বংশধর শুনার আগে; কল্পিত লাথি খেয়ে পাকিস্থান আর আফগানিস্থানে কিংবা শ্রম মন্ত্রনালয়ে বেয়াইয়ের কাছে চলে গেলেই বোধয় ভাল হয় ??? যদিও আমার জানামতে বেশীরভাগ প্রবাসী রাজাকার আলবদররা এখন বহাল তবিয়তে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডাতেই আছেন ।

আজকাল কথায় কথায় বিভিন্ন সমস্যার মুলে তথাকথিত স্বাধীনতার চেতকরা এই দলটিকেই দায়ী করেন। এমনকি মখা ফরমুলায় ইতিহাসের ভয়াবহতম ভবন ধস রানা প্লাজার ট্রাজেডির মুলেও নাকি এই দল (!!!!)। তাই বোধয় পাশের দেশের দিদিরাও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের তোয়াক্কা না করে আমাদের শাসিয়ে যান; আর যেই আসুক বাপু; এই দলের আসা চলবে না!!! এতে আমাদের রাজনীতিবিদ আর কর্পোরেট মিডিয়ারা কোন মাইন্ড খান না; কারন ঐ যে কথায় আছেনা গরিবের বউ সবার ভাবী । আমাদের ভারত প্রেম এখন সানি লিউন মার্কা শালীন প্রেম । ফলে দাদাবাবুরা মনে করেন বাংলাদেশ- সার্বভৌমত্বহীন এক স্বাধীন রাষ্ট্র্ ; সিকিম জাতীয় কিছু ; তাই জনমত উপেক্ষা করে তারা তাদের ফর্মুলার সরকার ক্ষমতায় বসাতে চান । সেখানে অবশ্য কেউ আমরা স্বাধীনতার চেতনার কোন বলাৎকার দেখিনা ।

হুম্মম্মম ...... তাই......। "রাজনীতিতে চির শত্রু বা চির বন্ধু বলে কিছু নেই "

এই খেলার ম্যান অব দা ম্যাচ কে ? নিঃসন্দেহে জামাত/শিবির ।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জামাত/শিবিরের ১৯৭৯ সালে পুনর্বাসন । অবশ্য বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের জন্ম ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারী। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠাকালে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন দাবী করে কোনো রাজনৈতিক দলের অংগ সংগঠন না হওয়ার ঘোষণা দিলেও; ১৯৭৯ সালে তারা অলিখিত ভাবে জামাতের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হন । তারপর গত ৩৪ বছরে সময়ে অসময়ে আওয়ামী / বিএনপির সাথে কুতকুত খেলে রাজনীতি এবং নানা পেশায় এই দলটি সাংগঠনিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়

আমরা স্বীকার করি বা নাই করি; আওয়ামী , বিএনপির পরই এই দলের অবস্থান । সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত কঠোর অবস্থানের পরও এ দলটিকে দমানো যায়নি। তাদের ওপর যে দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সিকিভাগও যদি বিএনপি বা আওয়ামীলীগের ওপর প্রয়োগ করা হয় তা হলে তাদের শাহাবাগের যাদুঘরে খুঁজতে যেতে হবে ।

যুদ্ধাপরাধ আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাহাবাগ আন্দলনের আগে জামাত/শিবির নিয়ে আমাদের কোন মিডিয়া, বুদ্ধিজীবীদের এত হৈ চৈ করতে শুনিনি। সবচেয়ে পরিহাসের বিষয় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ এর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মধ্য দিয়ে যে গন আদালত করেন এবং একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতা বিরোধি সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে যে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সে লড়াইয়ে সাড়া দেননি মুক্তিযুদ্দের সপক্ষের বড় দল তৎকালীন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা এবং জনগনের সমর্থন থাকা সত্বেও গনরায়ের বাস্তবায়ন করেননি । তখন এ নিয়ে আমাদের কোন মুন্নি সাহা কিনবা শাহরিয়ার / মুন্তাসির/ নাসির টাইপের সুশীলদের " গেল গেল বলে " এত হৈ চৈ করতেও শুনিনি।

আজকে একটা শ্লোগান প্রায়ই শুনি ; জামাত শিবির রাজাকার,এই মুহূর্তে বাংলা ছাড় । রাজাকারের ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তার সাথে যারা ঢালাও ভাবে জামাত/শিবির যোগ করেন, তারা কি জানেন, এই মুহূর্তে জামাত শিবিরের একটিভ কর্মীর সংখ্যা কত??? স্বাধীনতার ৪২ বছরে বাংলদেশে আটকে পড়া আড়াই/ তিন লাখ লোককেই আমরা তাদের নিজদেশে পাঠাতে পারিনি আর এই নিজ দেশের লাখ লাখ লোকগুলোকে কোন তরিকায় নিরবাসনে দিব তা জানতে পারলে ভাল হত !! অবশ্য এই কথাগুলো যদি মুখ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বলেন তাইলে অন্য কথা !!!

আমরা স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম । গোলাম আযমকে আর রাজাকারদের ঘৃণা করেই আমাদের বড় হওয়া । কারণটা আর কিছুই নয় । ১৯৭১ এ তাদের জঘন্য ভুমিকা ।

১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছে। তৎকালীন জামাত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যা ,ধর্ষণ, লুন্ঠন প্রভৃতি মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডকে ইসলামের নামে জায়েজ ঘোষণা দিয়ে, তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে , মানবতা, বাঙ্গালিসত্তা এবং ইসলামকে পদে পদে কলঙ্কিত করেছে। সেজন্য তাদের দলের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হতে হবে এটাই স্বাভাবিক ।

কিন্তু এই নিয়ে রাজনৈতিক মুলা ঝুলিয়ে নিজের ফায়দা লুটবেন আর জামাতকে ইসলামের আইডল বানিয়ে , জঙ্গিতত্তের ফতোয়ায় আপামর মুসলমানদের পোস্ট মরটেম করবেন, তাইলে কিন্তু জামাত নামক বাঘটি রাখাল বালকের গল্পের বাঘটিতে পরিনত হবে ।

আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে এই চারা গাছটি কেন এই বৈরি পরিবেশেও বেড়ে উঠে আজ বৃক্ষতে পরিনত হল ??

যে শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, সে জন্মের ইতিহাস নিয়ে কত মিথ্যাচার হয়েছে । ৪২ বছরেও ৩ লক্ষ শহীদেরও তালিকা হল না । আমরা যুদ্ধাপরাধিদের খুঁজতে গিয়ে ভাগ্য বঞ্চিত বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্দাদের গল্প এই প্রজন্মকে শোনালাম না । আমরা এই প্রজন্মকে একটা সার্বজনীন মুক্তিযুদ্দের ইতিহাস দিতে পারলাম না । রাজনতিক ভিন্নমতের কারনে কাদের সিদ্দিকিকেও গোলাম আজম কাতারে ফেলে দিলাম । স্বাধীনতার ৪১ বছর পরেও আমরা এখন নিজেদের দেশের লুটেরা শ্রেণী দ্বারা, সরকারব্যবস্থা দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছি। দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রবল প্রসারের ফলাফল জাতি হিসেবে আমাদের সার্বিক নৈতিক অবক্ষয়।

৭১’ এ জামায়াতে ইসলামীর অনৈসলামিক নাক্কারজনক ভূমিকার জন্য এবং এই ৪২ বছরে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনারও না চাওয়ার জন্য এই দলকে আপনি নৈতিক ভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন তার জন্য কোন দ্বিমত নাই । কিন্তু ২০১৩ তে এসে জামাত/ শিবির কে আপনি বায়বীয় ফুঁৎকারে নিষিদ্ধ করে দিতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন এবং সন্দেহ আছে । যুদ্ধাপরাধীর বিচার আর জামাত/ শিবির করার বিচারকে দয়া করে এক কাতারে ফেলবেন না । জামাতকে কিভাবে রাজনৈতিক আর দেশ প্রেমের চেতনায় মোকাবেলা করবেন তা আপনাদের নতুন ফরমুলায় ভেবে দেখবার সময় এসেছে ।জামাত শিবিরের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল এর পক্ষে যদি জনমতই থাকে তাহলে গণভোটের আয়জন করুন। জনগণই না হয় ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিবে ।

আজ আমরা ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধা আর আমাদের বিরোধীরা ভার্চুয়াল রাজাকার ।

"তুই অধম বলিয়া আমি কেন উত্তম হইব ?? এই আদর্শে, বিভক্তির রাজনিতির খেলায় মত্ত।

এভাবে দেশ এগোবে না বরং প্রথম আলোর মত বদলাবে ।

শুধু ঘৃণা দিয়ে দেশপ্রেম হয়না , হয়না নৈতিকতার যুদ্ধও ।

Hating Is An Emotional Disease So If You Hate Me Get Well Soon

বিষয়: বিবিধ

১১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File