TSI TSI GONG

লিখেছেন লিখেছেন ইমরোজ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:১১:৫৭ সন্ধ্যা

আমার জানামতে চিটাগাং শহরটির নামকরন হয়েছে চাঁটি গা বা ছোট্ট গ্রাম (চট্টগ্রাম) থেকে কিন্তু গুগল ঘাঁটলে পাওয়া যায় শহরটির নামকরন হয়েছে একটি আরাকানিস প্রবাদ " TSI TSI GONG" থেকে । না, ইতিহাস নিয়ে ক্যাচাল পারার কোন অভিপ্রায়ে আমার এই লেখাটি নয়। আমরা যারা এই শহরটি ফেলে অন্য এক অচেনা শহরে, তাদেরকে ক্ষণিকের জন্য স্মৃতি রোমন্থন মিছিলে টেনে আনার জন্য এই স্ট্যাটাসটি ।

আমি এক শিকড়হীন চাটগাইয়্যা ভইংগা । আমার চলমান জীবন কালের চৌদ্দ আনাই কেটেছে প্রতিশ্রুতিময় অথচ চরমভাবে অবহেলিত এই শহরটিতে । সবুজ পাহাড়ি অরণ্যে আর সমুদ্রের লোনা বাতাসে মাখা পুলিশ লাইন , সার্কিট হাউস, জামিয়াতুল ফালাহ আর নাসিরাবাদ ও আর নিজাম রোডের মাঠগুলোতে মার্বেল, ডাংগুলি , ফুটবল আর ক্রিকেট খেলে কেটেছে আমার সাদা কাল শৈশব। হু হু বাতাসের ভিতর পতেঙ্গা আর পাল্কির চরে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের সপ্ন জাল বুনে কেটেছে কৈশোর আর তারুন্যের অনেক অনেক সন্ধ্যা । সেই সাথে নিশীথ রাতে একাডেমী পালিয়ে কর্ণফুলীতে নৌকা নিয়ে দাপানর বিরল কতগুলো রোমাঞ্চকর মুহূর্ত । যৌবনে জাহাজ থেকে সারেং সাজে ঢাকা এয়ারপোর্ট ফিরে, হাঁসফাঁশ করতে করতে বাস বা ট্রেন চেপে সীতাকুণ্ড পার হয়ে এই শহরের পরিচিত ঘ্রান প্রানভরে উপভোগ করার ঝাপসা স্মৃতি গুলো আজ মনে হয় অন্য এক জীবনের পুরানো কথা ।

জীবনের এই বেলায় এসে মনে হয়, এই শহরটি প্রচণ্ড দুঃখী আর অভিমানী । মান্দাতা আমলের সংকীর্ণ পরিসরের রাস্তা, জনসংখ্যার চাপ, নির্বিচারে পাহাড় কাটা , পানি নিষ্কাশন বাবস্থার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পনাময় হাউসিং সোসাইটি আর সুউচ্চ দালানের চাপে সে প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্থ । ৪২ বছরের ঢাকা কেন্দ্রিক সকল উন্নয়ন আর জীবিকা , তার সাথে ক্ষমতাসীনদের বিমাতাসুলভ আচরণ আর স্থানীয়দের অন্তকন্দলে এই শহরটির গলায় বাণিজ্য নগরীর প্রহসনময় কাঁটার মালা। আমরা আদৌ কি বুঝব !!! দেশকে যদি সত্যিই উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হয় তবে তা এই সমুদ্র বন্দরকে দিয়েই শুরু করতে হবে ।

যাই হোক স্মৃতি রোমন্থন করতে এসে না পাওয়ার বেদনার কথা আর নাই বা বললাম । তার বদলে আজ না হয় মেগা সিটির অসহনীয় শব্দদূষণ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে টাইগার পাস ,সি আর বি , জামাল খান আর চট্টেশরী রোডের ছায়াঘেরা রাস্তার নির্জনতায় নিজেকে আঁকি ।

জানি শৈশবকাল সবার জীবনেই মধুর একটা স্মৃতি । তবু না হয় চোখ রাঙিয়ে গর্ব করে বলি; বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি ; সাগর, পাহাড় আর নদীর মোহনা বেষ্টিত এমন রঙ্গিন্ময় শৈশব কোথাও (বং ) পাবে নাকো তুমি !!!

কল্পনার বাকগ্রাউণ্ডে শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব গেয়ে উঠুক

‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত

লুসাই পাহাড়ত্তুন লামিয়ারে

যার গই কর্ণফুলী!!

বিষয়: বিবিধ

১৩৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File