কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলে আঙুল পচে যায়..............
লিখেছেন লিখেছেন জোস্নালোকিত জ্যাস ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:০৪:৩৮ সন্ধ্যা
বাসার পাশেই আমার মসজিদ , মাদ্রাসা , ঈদগাহ ময়দান ও করবস্হান । ছোটবেলা থেকেই আমার কোন ভয় নাই । যে বয়সে আর সব ছেলেপুলে হাফ প্যান্ট এর চেন খোজা/খোলা শিখছিল আমি তখন পায়জামা পড়ে গলাকাটা লাস এর গোছল দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম । যত ভয়ংকর চিজই হোকনা কেন ভয় ছিল না । আর ভয় পেলেও ইউনুস আঃ এর শেখানো দোয়া পড়ে নিতাম । খোদায়ী কোন হিম্মাত পেতাম কি না জানি না তয় এই দোয়া পড়লেই কেন নিজেই ভেবে নিতাম সমস্ত বিপদ আমার পেছনে , আর আমি সামনে । বড় হয়ে বুঝলাম বাপু আমার জেহেনে এসব ছোটমোট আমল পয়দা হওয়ার পর থেকেই ফিট করাতে চেষ্ঠা করেছিলেন । আজও করেন !
তো বাসার সামনে করবস্হান হওয়াতে প্রায়শই আমাকে আম্মাজান গামলায় পানি নিয়ে ওযু করিয়ে দিতেন , পাঞ্জাবি গায়ে ঢুকিয়ে , মাথায় টুপি লাগিয়ে ময়দানের দিকে দৌড়াতে বলতেন । অল্প অল্প বুঝতাম যে , ময়দানের দিক মানে , আজো বুঝি কারো মাইয়াতের নামাজ শুরু হচ্ছে । জানাজা নামাজ নিয়ে আমার তখন ভাবনা ছিল যে , মানুষ গুলো ভুল নামাজ পড়ে । কেউ সিজদাহ দেয়না , এ কেমন নামাজ । আমার শ্রদ্ধেও দাদুজান সব সময়ই আমাকে নিয়ে পরে থাকতেন । বিশেষ করে নামাজের ওয়াক্তে । বুঝি না বুঝি ওনার পার্মানেন্ট মোক্তাদি ছিলাম । তো শিক্ষাটা ওখান থেকেই যখন তখন ফিল হইতো এরা ভুল নামাজ পড়ে । আমরা রোজই নামাজ পড়ি , কতবার যে মেঝেতে মাথা ঘষাঘষি করি আর এ মানুষ গুলো ভুল নামাজে পড়ে তাও আবার অল্প একটু নামাজেই হাপসে যায় ......
যাইহোক একদিন বিকেলে ময়দানে হাজির । সমবয়সী পিচ্চিগুলার খোজ করলাম , কেউ নাই অইদিন । পেছনের কাতারে দেখি আমার এক গ্রাম্য দাদা । যুবক মানুষ , এলেমের ব্যাপারে কঞ্জুস ছিল । উনি আমাকে নানা কিচ্চা কাহিনী শোনাত যেগুলো আমার ভাল লাগত । ওনার পাশে গিয়ে ঠেলে ঢুকলাম । ওনাকে কইলাম এই মিয়াকে কোন দিক দাফনাইবো ? উনি বলেনে না কিছুই , আবার জিগাইলাম । উহুম কিছুই কয়না । এইবার পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকাইতেই মাথা নিচু করলো । তখন একটা ব্যাপার যায়েজ ছিল যে , দাদুদের পকেটে হাত দেওয়া বেয়াদবি নয় বরং ভালবাসা । পকেট চিপ্পা ধইরা কয় , কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলে আঙুল পচে যায় , পড়ে দেখিস কই মাটি দিমু.........
ধরাত কইরা আমার কলিজা উইরা গেল , খাইছ্রে আঙুল পইচা গেলে খামু কেমতে , ওনার পকেট থেকে হাত বাইর কইরা টপকরি নিজের পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকায় নিলাম । ভয় তো ভালই লাগল । নামাজ কোন মতে পইড়া দাদির ঘরে গিয়া ঢুকলাম । ওদিকে ছোট চাচা মিয়া এ ঘর থাইকা ও ঘর, একে একে সব ঘর খুইজা আমারে বাইর করলো । কারন উনার সন্দেহ পড়া ফাকি দিয়া লুকাইছি । দাদিকে কেবল জিগাইছি যে , দাদি কবরের দিকে আঙুল দেখাইলে নাকি আঙুল পইচা যায় ? দাদি হেসে উরিয়ে দিল আর কইলো , আমার সোয়ামি বুঝি পড়তে যাইতে চান না ? চাচা মিয়াও রুমের ভেতরে ঢুইকা দাড়াইল । উনি প্রশ্নটা শুনিতে পাইছেন বুঝলাম । এক প্রকার জোর করিয়া পড়ার ঘরে নিয়ে গেল । এরপর কইলো , আব্বাজান এর একটা মাসলাহ আছে জানবেন ? শুইনা আমিতো পুরা পাংখা । কয় কি , বিকাল থাইকা যে টেনশনে ভুগিতেছি সেই টনশনের সমাধান চাচামিয়ার কাছেই আছে । উনি কইছিলেন অইদিন , এর সমাধান হচ্ছে , যখনই কোন কবরের পাশ দিয়ে যাবো বা চলাচল করবো তাদের যেন সালাম( আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর ) দিয়ে যাই । তাইলেই পচবে না বরং আরও সুন্দর হবে আঙুল । জবাব পেয়ে অইদিনের মত তুষ্ঠ হয়েছিলাম । আজ এতো দিন পর পেছনের কথা ভাবলে হাসতে হাসতে পেট ফুলে ফেপে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয় ......
__________________________
যাইহোক অইদিন অই গ্রাম্য দাদা আমাকে যে ভুল শিক্ষা দিয়েছিলেন তার আসলে কোন ভিত্তি নাই । না কোন দালিলীক প্রমান না কোন ভূয়া ফতোয়াতেও এর হুদিস আজ পর্যন্ত পাইনি আমি , সুতরাং কারো কবর দেখাতে গিয়ে যদি কেউ আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখায় যে, ঐটা অমুকের কবর তাহলে কেউ যদি বলে কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করতে নেই। কারণ হিসেবে যদি বলে থাকে, এভাবে বললে আঙুল পচে যাবে তবে তাকে দমিয়ে দিন । কারন এই ভূল শিক্ষা শিশুদেরও ভূল আকিদায় গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । মূলত এটি একটি ভুল বিশ্বাস, যা অজ্ঞতাবশত মানুষ বলে থাকে। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই.........
বিষয়: বিবিধ
১৭০৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
শৈশবে কত্ত কিছু যে ভুল শেখানো হতো তার হিসেব করাও কঠিন!
আর পরিণত বয়সে সেগুলো তাড়াতেই চুল-দাড়ি সাদা হয়ে এলো!!
আসল কাজ তো অনেক দূর!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন