সালাফী কারা, এদের চিনে রাখুন-
লিখেছেন লিখেছেন সময়ের কন্ঠ ০৯ জুলাই, ২০১৬, ১১:৫৬:২২ সকাল
১। শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী, দেওবন্দী, বেরেলভী, তাবলিগী, সুফিবাদী, আগাখানী, আহলে হাদীস, ন্যাচারিয়া, এনায়েতপুরী, আটরশী, চন্দ্রপুরী, দেওয়ানবাগী, রাজারবাগী, মাইজভান্ডারী, রেজাখানী- এর মত এটাও একটা বাতিল ফেরকা। সিরিয়ার অধিবাসী ইবনে তাইমিয়া এই ফেরকার সৃষ্টিকর্তা। প্রথমদিকে সালাফীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতভুক্ত হাম্বলী মাযহাবপন্থী হিসাবেই নিজেদের পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে নজদের অধিবাসী ইবনে আবদুল ওহাব নজদী এটাকে অনেক ঘষামাজা করে একটা পরিবর্তিত ফেরকার সৃষ্টি করেন। আর এর অনুসারীরাই হলেন বর্তমান সালাফী। সালাফীরা সৌদি রাজতন্ত্রের আনুকুল্যে নিজেদের মতবাদকে ‘প্রকৃত ইসলাম’ বলে দুনিয়াব্যাপী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। বলাই বাহুল্য, সালাফী মতবাদ আগাগোড়াই রাজতন্ত্র-বান্ধব একটা মতবাদ।
২। তৎকালীন হক্কানী-উলামায়ে কিরাম ইবনে তাইমিয়া ও তার অনুসারীদেরকে মুরতাদ বলে ঘোষণা করেছিলেন। ইবনে তাইমিয়া তার এক বয়ানে বলেছেন- উমর ইবনুল খত্তাব জীবনে বহু ভুল করেছেন। আলী ইবনে তালিব জীবনে তিনশত ভুল করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ) ফলতঃ ইবনে তাইমিয়া একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে অতঃপর ৭২৮ হিজরী মতান্তরে ২৭শে সেপ্টেম্বর ১২২৮ ঈসায়ীতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। ইবনে তাইমিয়ার শিষ্য ইবনে কাছিরও তাইমিয়ার মতাদর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
৩। সালাফীদের কিছু পজিটিভ দিক রয়েছে। তারা মাজারপূঁজার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। শিরক বিদআতের বিরুদ্ধেও এদের অবদান আছে (যদিও তাতে অনেক বাড়াবাড়িও আছে)। তারা নিজেদের ১০০% হাম্বলী, ১০০% শাফেয়ী, ১০০% হানাফী, ১০০% মালেকী বলে পরিচয় দেন। অর্থাৎ তারা সকল মাজহাবকেই সম্মান করেন।
৪। সালাফীরা সকল কথাবার্তাই দলীল ভিত্তিক বলেন। তবে তাদের অনুকুলে থাকা দলীলগুলোই কেবল তারা পেশ করেন। বিপরীত মতকে প্রকাশ করেন না। যেমন, ইয়াজীদকে রাহমাতুল্লা বলার ক্ষেত্রে তারা ইমাম গাজ্জালীর দলীল পেশ করেন। কিন্তু ইমাম গাজ্জালীর চাইতেও অনেক বেশী মর্যাদার ইমামগণ যে এধরনের কথা বলতে নিষেধ করেছেন, সে দলীলগুলো তারা পেশ করেন না। ইয়াজীদের ক্ষমা প্রাপ্তি সংক্রান্তে এরা সহি বুখারীর শরীফের দলীল পেশ করেন। অথচ এটা যে অসত্য সে দলীল তারা পেশ করেন না। যেমন, রোম সাম্রাজ্যে প্রথম যে সেনাদলটি যুদ্ধ করবে, তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা রয়েছে মর্মে বুখারী শরীফের হাদিস আছে এটা সত্য। তবে ইয়াজীদ যে প্রথম সেনাদলের নয়, সেটা এরা এড়িয়ে গিয়ে মানুষকে ধাঁধাঁয় ফেলে ফায়দা লুটেন। তারা কথায় কথায় দলীল পেশ করেন ঠিকই, তবে সেগুলো তাদের মতবাদের অনুকুলেরই দলীল। আর এই দলীল দিয়েই কেল্লা ফতে করলেন বলে তারা বগল বাজান। যদিও তাদের পেশ করা দলীলের বিপরীত দলীলের ভিত্তি এবং গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশী।
৫। সালাফীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মোড়কে রাজতন্ত্রের অনুকুলে সবকিছুকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন করেন। রাজতন্ত্রকে ইসলামী বলে প্রচারণা চালানোই এদের প্রধান লক্ষ্য। ইসলামী খিলাফতের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ইসলামী জাহানে প্রথম রাজতন্ত্রের প্রচলন করেছিলেন আমীর মুয়াবিয়া। আর সে কারনে এরা আমীর মুয়াবিয়ার একেবারে অন্ধ ভক্ত। সাহাবীর মর্যাদা বলতে এরা কেবল আমীর মুয়াবিয়া এবং তার সমর্থকদের মর্যাদাকেই বুঝে থাকেন। আর তাবেঈ বলতে বুঝেন ইয়াজীদকে। ইয়াজিদ বিরোধী সকল কর্মকান্ডকে শীয়াদের কাজ বলে প্রচার করেন। রাজতন্ত্রের অনুকুলে না গেলে কোন ইসলামী ব্যাখ্যাই এরা মেনে নেন না। এই মতবাদে বিশ্বাসী অনেক আলেম ও মুফতি রয়েছেন, যারা সবকিছুকেই রাজতন্ত্রের অনুকুলে তাদের ইসলামী ব্যাখ্যা পেশ করেন।
৬। রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার প্রধান শক্তি ‘বিভাজন’-কে এরা যারপরনাই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। মুসলিম আকিদায় বিশ্বাসীদের মাঝে শীয়া, সুন্নী ইত্যাদি বিভাজন করে রাখতে এরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
[এখানে আল-কোরআনের আয়াতগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য, ১. অ আতাছিমু-তাফাররকু।[৩: ১০৩] এবং তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু (কোরান) মজবুতভাবে ধারণ করো। তোমরা দল-উপদলে বিভক্ত হইও না।
২. ইন্নাল্লাজীনা- ইয়াফ আলুন। [৬: ১৫৯] অর্থ: যারা ধর্ম সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মতের সৃষ্টি করেছে/করবে ও দল উপদলে বিভক্ত হয়েছে/হবে, তাদের উপর আপনার কোনই দায়িত্ব থাকলো না/থাকবে না। তাদের দায়-দায়িত্ব আল্লাহর উপরেই ছেড়ে দিন। আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কৈফিয়ৎ তলব করবেন।
৩. মিনাল্লাজীনা-ফারিহুন। [৩০: ৩২] অর্থ: যারা ধর্মে মতভেদ সৃষ্টি করেছে/করবে ও দল উপ-দলে বিভক্ত হয়েছে/হবে, তারা নিজস্ব মতবাদ নিয়েই মত্ত রয়েছে/রবে।
অতীতের দল উপ-দলের ধর্ম বিভক্তকারীদের দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে আল্লাহ/রাছুল সতর্ক করে দিলেন:
৪. অলা- আজীম। [৩: ১০৫] অর্থ: তোমরা অতীতের মত হইও না। যারা তাদের নিকট স্পষ্ট বিধান আসার পরেও নিজেদের মধ্যে মত পার্থক্য করে দল উপ-দলে বিভক্ত হয়েছে; তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।]
কাজেই বোঝা গেলো, ইসলামে ঐক্য ফরয আর বিভক্তি হারাম। যারা এই বিভক্তির কাজ যারা করেন তারা আল-কোরআনের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। আর এটা সুষ্পষ্ট কুফরী।]
৭। রাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই সালাফী মতবাদকেই প্রকৃত ইসলাম বলে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্ম প্রচারের কেন্দ্রগুলোকে এই মতবাদ দিয়েই সাজানো হয়েছে। তাদের মতবাদের বাইরের সকল কিছু শিরক-বিদআত এবং শিয়া-মতবাদ বলেই এরা প্রচার প্রগান্ডা চালান।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৩৬৭৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাজেই আপনাকে গালি দিয়ে আমার মুনাফিক হবার কি এমন দরকার? গাঁধা যে গালি, এটা প্রথম শুনলাম। আমি জানতাম যাদের বুদ্ধি থাকার পরেও নির্বোধের মত কাজ করে, তাদেরকে গাঁধা বলা হয়। আমিও তার চেয়ে বেশি কিছু করিনি। যাক আপনি এটলাস্ট সত্যি কথাটা বলেই দিলেন যে, আপনার জ্ঞানের উৎস হল, গুগল। কি মহান গুণী ব্যক্তি আপনি যিনি ইসলামের ইতিহাস, কুরান-হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ, আরবী গ্রামার ইত্যাদি না জেনেই কোন আলেমের তোয়াক্কা না করেই গুগল দেখে ইসলামিক বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলেন। ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর মত সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মুজতাহিদ আলিমকে পথভ্রষ্ট প্রমাণ করার কাজে লেগে গেলেন। যেন এই হাদিসটাই সত্যি প্রমাণ করছেন:-
#রসূল ﷺ বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যে ইলম দান করেছেন তা হটাৎ করে ছিনিয়ে নেবেন না বরং ইলমের বাহক উলামায়ে কিরামকে তাদের ইলেমসহ ক্রমশ তুলে নেবেন। তখন শুধুমাত্র মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ঠ থাকবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে। তারা মনগড়া ফাতওয়া দিবে ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ঠ হবে,অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ঠ করবে। (বুখারী, হাদিস নং: ৬৮০৯, অধ্যায় ৮১/ফিৎনা ও কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ, পাবলিশার: ইফাবা)
# রসূল ﷺ বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে। সে সময় হারজ- ব্যাপকতর হবে। আর হারজ- হল (মানুষ) হত্যা। (বুখারী: ৬৫৮৪, অধ্যায় ৮১- ফিৎনা, ইফাবা)
রাসূল ﷺ বলেছেন: শেষ যামানায় (কিয়ামতের পূর্বে) একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে স্থুলবুদ্ধির অধিকারী। তারা নীতিবাক্যগুলো আওড়াতে থাকবে। তারা ইসলাম থেকে (এমন দ্রুত গতিতে ও চিহ্নহীনভাবে) বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ অতিক্রম করে (অন্তরে প্রবেশ) করবে না। ( বুখারী হাদিস নং: ৩৩৫৩, অধ্যায় ৫০/ আম্বিয়া কিরাম, ইফাবা)
সাবধান হোন হে জ্ঞানী দাবি করা ব্যক্তি।
#কাব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি "যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা নির্বোধদের (মুর্খ) সাথে বাক বিতন্ডা করার জন্য, অথবা মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইলম অধ্যয়ন করেছে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।(সহীহ আত তিরমিযি, হাদিস# ২৬৫৪, হাদিসঃ হাসান)
সুন্নী যেটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ এর সংক্ষিপ্ত রূপ এই টার্মটা আপনি বুঝেন?? আরবী জানেন? তাফসীর? ইসলামের ইতিহাসের কতটুকু আপনি পড়েছেন? কি বলছেন হিসাব আছে?
এই লেখাটা পড়বেন নিজেকে মুফাস্সিল ইসলামের কাতারে নিয়ে যেয়েন না।
http://www.bd-desh.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/73257#.V4D1Ad7bvR0
জাঝাক আল্লাহ
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত আলিমকে যে অমুসলিম ঘোষণা করার মত দুঃসাহস দেখায় তাকে সোজা বাংলা ভাষায় বেয়াদব বলা ছাড়া আর কোন শব্দ পাইনা। আহংকারীরা নিজেদের গর্ত নিজেরাই খোড়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন