সৌদি আরব সম্পর্কে এদেশের মানুষের কতিপয় ভুল ধারনা-

লিখেছেন লিখেছেন সময়ের কন্ঠ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:১৩:০৯ দুপুর

১। এদেশের সাধারন মানুষ এবং মাদ্রাসার (সৌদির অর্থপুষ্ট) ছাত্রদের ধারনা, সৌদি আরব একটা ইসলামী রাষ্ট্র। আসলে সৌদি আরব কোন ইসলামী রাষ্ট্র নয়, নয় কোন ইসলামী প্রজাতন্ত্র। এটা পুরাপুরিই একটা রাজতান্ত্রিক কট্টর আরব জাতীয়তাবাদী দেশ। (উল্লেখ্য যে, ইসলামে জাতীয়তাবাদ কঠোরভাবে হারাম)

২। অনেকের ধারনা, সৌদি আরব ইসলামী আন্দোলনসমুহকে সাহায্য সহযোগিতা করে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সৌদি আরব বরাবরই ইসলামী আন্দোলনকে ভয় পায়। ইসলামী আন্দোলন তো বটেই, ইসলামী সরকারকে পর্যন্ত তারা সহ্য করতে পারে না। মিশরের মুরশী সরকারকে উৎখাত করার পিছনে সৌদিরা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

৩। শুনতে অবাক লাগলেও, মুসলিম ব্রাদারহুড-এর মত শান্তিপূর্ন ইসলামী সংঘটনকে সৌদি আরব ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে কালো-তালিকাভূক্ত করেছে এবং এখনো কালো-তলিকাভূক্ত আছে।

৪। এদেশের মানুষের ধারনা, সৌদি আরব আহলে বাইতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। কিন্তু তারা আহলে বাইতের পক্ষে আছে মর্মে প্রচারনা চালালেও, কার্যতঃ বিপরীত। ইমাম হুসাইন-এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতকে তারা ‘হক-আর বাতিলের’ যুদ্ধ বলে গন্য করে না। কারবালার যুদ্ধের জন্যে তারা ইমাম হুসাইনকেই দায়ী করে এবং ইয়াযীদের পক্ষাবলম্বন করে। এর কারন হলো, ইয়াযীদই ছিল মুসলিম জাহানে চেপে বসা প্রথম বাদশাহ। আর ইসলামী জাহানে রাজতন্ত্রের সুচনা করেছিলেন সাহাবী মুয়াবিয়া। একারনে সৌদিদের (কেবল সৌদি নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সকল রাজতান্ত্রিক দেশ) কাছে মহানবীর পরই মুয়াবিয়ার স্থান। সৌদির আলেমরা ইয়াযীদ-এর নাম উচ্চারনের সময় ‘রাহমাতুল্লাহি’ বলে সম্বোধন করে। কেবল তাই নয়, তাদের এদেশীয় এজেন্টরাও একই কাজ করে। ইমাম হুসাইনের যুদ্ধ ছিল ইয়াযীদের অন্যায় ও রাজতান্ত্রিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে। কিন্তু রাজতন্ত্রের অর্থে লালিত আলেমনামধারীরা একটা গোঁজামিলের ইতিহাস তৈরী করে যুগে যুগে তা মানুষকে গেলাবার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং এখনো আছে। এই গোঁজামিলের ইতিহাসে বলা হয়, ইয়াযীদ ইমাম হুসাইনকে হত্যা করেনি। তার নিয়োজিত গর্ভনর যিয়াদই হত্যা করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, যিয়াদকে ইয়াযীদ কি শাস্তি দিয়েছিল না বরখাস্ত করেছিল? এটার কোন উত্তর তারা দেয় না। তাদের আকিদা নাকি ইমাম হুসাইনকেও সমর্থন করা (সেটা মেকি) আবার তার হত্যাকারীকেও সমর্থন করা।

৫। অনেকের ধারনা আর যা-ই হোক, সৌদি আরবে নামাজ কায়েম করা হয় ঠিকভাবে। শুনে অবাক হবেন, সৌদি আরবে রয়েছে প্রচন্ড ক্ষমতাধারী ধর্মীয় পুলিশ। এরা মানুষকে জোর জবরদস্তি করে মসজিদে যেতে বাধ্য করে। জেল জরিমানা করে। সৌদি আরবের এই সিস্টেম, ইসলামের মূল শিক্ষার বিপরীত। ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। আর জোর করে মসজিদের নেয়া ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে আসলে ভুল সংকেতই দেয়। এটা কোনভাবেই ইসলামের পক্ষের কোন কর্মকান্ড নয়। আল্লাহর নবী মানুষকে কখনোই এ শিক্ষা দেননি।

৬। সৌদি আরবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোন প্রার্থনালয় করতে অনুমতি দেয়া হয় না। এর দ্বারা ইসলামকে অন্য ধর্মের কাছে হেয় করা হয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার স্বীকৃত। সৌদি আরবের কার্যকলাপ ইসলামী শিক্ষার পুরাপুরি বিপরীত।

৭। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সৌদি আরবের ৫% লোক নাস্তিক। এই নাস্তিকতা সেখানে ক্রমেই বাড়ছে। সৌদি সরকার নাস্তিকদের চাইতেও ইসলামী আন্দোলনকে বেশী ভয় পায়। যার সুযোগ নিচ্ছে নাস্তিকেরা।

৮। সৌদি আরব পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা কোটি কোটি ডলার খরচ করছে ‘শিয়া-সুন্নী’ বিরোধ সৃষ্টিতে। ইরানে ইমাম খোমেনীর ইসলামী বিপ্লব সাধিত হওয়ার পর ‘শিয়া-সুন্নি’ বিরোধে ঘি ঢালছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের এই প্রোগ্রাম কখনোই থেমে থাকেনি এবং এর সুত্রে তারা ইসলামী রাষ্ট্র সমুহের মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই অর্থ সরবরাহ করে আসছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আমাদের দেশের মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেরা (দেওবন্দীসহ) ইয়াযীদের নাম শুনলেই ‘রাহমাতুল্লাহি’ বলে উঠে। শিয়াদের কাফের ফতোয়া দিতে এরা এক মুহুর্তও দেরী করে না। অথচ শিয়াদের ঈমান-আকিদা সম্পর্কে তারা বেশীরভাগই জানে না। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের এদেশে শিয়া না থাকলেও, শিয়াদের বিরুদ্ধে লেখা বইয়ে বাজার পূর্ন।

৯। মক্কা-মদীনাকে স্বয়ং আল্লাহপাক নিরাপদ স্থান হিসাবে ঘোষনা করেছেন। এখানে একটা মশা মরাও নিষিদ্ধ। অথচ এ নিরাপদ স্থানকেও সৌদিরা নিরাপদ রাখেনি। বাদশাহ ফাহদের আমলে এখানে ৪০০ ইরানী হাজীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইরানীদের দোষ ছিল, তারা আমেরিকা-রাশিয়া ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। যদিও কোরআন-হাদীসের আলোকে এ মিছিল নিষিদ্ধ কিছু ছিল না। সুরা হজ্বে বলা হয়েছে, হজ্বের দিবসে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হচ্ছে যে, মুমীনদের সাথে মুশরিকদের কোন সম্পর্ক নেই।’ আর ইরানীদের মিছিলের নাম ছিল, ‘মুশরিকদের সাথে সম্পোর্কচ্ছেদ’। তাদের শ্লোগান ছিল, ইসলামের কমন শত্রুদের বিরুদ্ধে। অন্য কোন দেশ বা জাতীর বিরুদ্ধে নয়। তথাপি গুলি না চালিয়েও এটা রোধ করা যেতো। কিন্তু সৌদিরা কোন আন্দোলনকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। সেকারনে আল্লাহর ঘোষিত নিরাপদ স্থানটিকেও তারা আর নিরাপদ রাখেনি। পবিত্র কাবাতেই তারা গনহত্যা চালিয়েছে।

১০। একথা বলাই বাহুল্য যে, সৌদিরা এশিয়ার গরীবদেশগুলোর মানুষকে মিছকিন বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও, পশ্চিমাদেশগুলোকে প্রভু জ্ঞান করে।

১১। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবই একমাত্র দেশ, যেটা পুরাপুরি ইসরাইল-বান্ধব। সৌদির আলেম-ওলামা এবং গ্রান্ড মুফতি পর্যন্ত ইসরাইলের পক্ষে নানাভাবে বক্তব্য দেন। সাম্প্রতিককালে হামাসের উপর ইসরাইলী বর্বর হামালার সময় পুরো বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালেও, সৌদিরা ছিল নিরব। উপরন্তু সৌদির গ্রান্ড মুফতি ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করা নাযায়েজ। এই কানা মুফতিই প্রতিবছর হজ্বে মুল ভাষন দেন। কি সেলুকাস! অন্যদিকে মিশর সরকার ইসরাইল বান্ধব হলেও, সেদেশের জনগন সচেতন এবং তারা পুরাপুরিই ইসরাইল বিরোধী। জর্ডানকেও পুরাপুরি ইসরাইল বান্ধব বলার জো নেই সেদেশের জনগণের প্রতিরোধের কারনে। সৌদি আরবে জনগণের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের কোন সুযোগ নেই। রাজতন্ত্র সেটা এলাও করে না।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২৯১৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343346
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : ইরান এবং সৌদির মাঝে পার্থক্যগুলো তুলে ধরুন। আপনারা খোলাফায় রাশেদীনের তিন খলীফা সহ অধিকাংশ সাহাবাদের ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করেন কেন ?
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৮
284610
আনোয়ার আলী লিখেছেন : উনার পোষ্ট খুলে সবগুলো পড়লাম। খোলাফায় রাশেদীনের তিন খলীফা সহ অধিকাংশ সাহাবাদের ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য-কোথায়?
343349
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০০
আনোয়ার আলী লিখেছেন :
ময়লার গাড়ী দিয়ে লাশ পরিস্কার। আল্লাহর মেহমানদের সাথে এটা কেমন ব্যবহার!
343352
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৭
আনোয়ার আলী লিখেছেন : সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পূত্রর গাড়ি বহরের কারণেই মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছ-
শয়তানকে পাথর মারার জন্য প্রবেশ ও বাহিরের মোট চারটা পথ। দুইটা পথের বাহির বন্ধ করে দেওয়া হয় সৌদি প্রিন্স সালমান তার বিশাল বহর নিয়ে শয়তানকে পাথর মারতে এসেছিল বলে।
ফলে চারটা প্রবেশ মুখ দিয়েই হাজিরা ঢুকেছে কিন্তু তারা জানেই না সামনের দুইটা পথের বাহির বন্ধ। যারা সামনে গিয়েছে তারা ইতিমধ্যে আটকা পড়ছে এবং তাদের পক্ষে পিছনের হাজিদের চাপ রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। পালিয়েও যাওয়া ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার।
পিছন থেকে ব্যাপক চাপ আসতে থাকায় সামনে লাশের স্তূপ শুরু হয়েছে। কেউ কেউ লাশের উপর দিয়ে উঠে প্রানে বাঁচতে চেয়েছিল, কিন্তু পারে নাই। মৃতের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সৌদি প্রশাসন তা প্রকাশ করা থেকে বিরত আছেন। নিজেদের কুকর্ম ঢাকার জন্য।
এখনও কিছু চামচা এই মৃত্যুকে জায়েজ করার চেষ্টা করবে। রহমতের তকমা দিবে, বলবে সবাই বেহেশতে চলে গেছে। কিন্তু মৃত্যুকে তারা হত্যাকাণ্ড হিসাবে দেখার চেষ্টা করবে না। (সংগ্রহ)
343362
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : স্বাগত
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
343364
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:১১
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
ইসলামের ও সৌদী আরবের উপর বেসিক নলেজ এর ভিত্তিতে ডেফিনিটলী আপনার ১, ২, ৩, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ নং পয়েন্ট এর সাথে কিছু রিজার্ভেশানের সাথে গ্রসলী একমত পোষন করা যায়।

ব্যাক্তিগতভাবে আপনার ৪ নং পয়েন্ট টিকে এ লিখার সাথে বেমানান তথা জোর করে ছাপিয়ে দেওয়ার মত মনে হয়েছে।

৫ নং পয়েন্ট টিকে আপনি যে রেফারেন্স এ নেগেট করতে চেয়েছেন - তা যথার্থ হয়নি বলে মনে হয়েছে। বরং উল্টোটা ই সত্য। ইসলামের মধ্যে থেকে ইসলামের কোন আবশ্যকীয় বিধান মানতে অস্বীকার করলে - রাষ্ট্রের (খেলাফতের হবে) সুযোগ থাকলে - তা মানাতে বাধ্য করার অধিকার আছে এবং বল প্রয়োগের ও অধিকার আছে। যেমন আমরা দেখেছি আবু বকর রাঃ জাকাত প্রদানে অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। আমি মনে করি এ বিষয়ে আলেম রা আরো ভাল বলতে পারবেন তবে আমি আপনার সাথে এ বিষয়ে একমত হতে পারিনি।

৬ নং পয়েন্ট টি আমার জানা মতে যথার্থ নয়। কারন সীরাহ অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সঃ ওনার ওফাতের আগে সাহাবী রাঃ এর প্রতি এ অছিয়তের প্রমান পাওয়া যায় - যেখানে জাজিরাতুল আরবে দ্বিতীয় কোন ধর্মের অবস্থানকে নেগেট করা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোন ভূখন্ডের জন্য এ বিধানটি কার্যকর নয়।

স্যেকুলার লেন্স এ দেখলে এমন ইচ্ছাটিকে অযৌক্তিক মনে হবে। কিন্তু ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং ওভার দ্যা ইয়ারস্‌ এ সব ধর্মের বিকাশ ও সংকোচন ও প্রভাব দেখলে এবং সে সাথে কোরান ও হাদীসের প্রফেসী সমূহ দেখলে, জানলে ও বুঝলে এবং তা বিশ্ব মানচিত্রে সাজালে যে প্যাটার্ন পাওয়া যায় - তাতে এটা ক্লিয়ার হয় যে - এটা প্রফেসী ও আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়ন এর জন্য অবশ্যম্ভাবী।

ইব্রাহীম আঃ এর শিরক এর বিরুদ্ধাচারন এবং ওনার বংশীয় দুটি ধারা নিয়ে কোরান ও হাদীস এবং বাইবেল (তাওরাত, যবুর ও ইন্জিল) এর আলোকে বিচার বিশ্লেষন করলে ধর্মীয় ও লজিক্যাল জ্ঞানে তা যথার্থ বলে স্বীকৃত হবে - কিন্তু ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি দিয়ে তা বড় বেশী বেমানান মনে হবে।

ধন্যবাদ।
343370
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
343376
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : পড়লাম।
343430
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৯
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : শি’আদের নিকট কারবালা ও হুসেইন রাঃ)-এর কবরের মর্যাদা বাইতুল্লাহ তথা কাবা হতেও উত্তম। বিখ্যাত শি’আ আলেম আল-মাজলেসীর প্রসিদ্ধ একটি কিতাব বিহারুল আনওয়ার। গ্রন্থটি শি’আদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি কিতাব। নিম্নে আমরা উক্ত কিতাব থেকে হাজ্জ সম্পর্কে তাদের আকিদা-বিশ্বাস সংক্ষেপে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ইন শা আল্লাহ।

বাইতুল্লাহর চাইতে কারবালা উত্তমঃ
***********************************
আবু আবদুল্লাহ জাফর সাদিক হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ ‘’আল্লাহ তায়ালা কাবার প্রতি এ মর্মে ওয়াহী করেন যে, যদি কারবালার মাটি না হতো, তাহলে তোমার কোনো ফযিলত দিতাম না। হুসেইন যদি কারবালার মাটি স্পর্শ না করতো তাহলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না এবং ঐ ঘরও (মাসজিদুল হারাম) সৃষ্টি করতাম না যে ঘরের দ্বারা আমি ফখর করি। অতএব কারবালার মাটির প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে ধীর-স্থিরভাবে নতজানু, লজ্জিত- অপমানিত, হীন ও ছোট হয়ে থাকো। কোনপ্রকার অহংকার ও ফখর করবে না, যদি এরুপ করো তাহলে তোমার প্রতি অসন্তোষ হয়ে তমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।

শি’আরা কারবালায় হুসেইন (রাঃ)-এর কবর যিয়ারতকে ইসলামের পঞ্চম রুকন হাজ্জ পালনের চেয়ে উত্তম মনে করেঃ
*******************
বাশির আদ দাহহান-এর বরাতে মাজলেসী উল্লেখ করেনঃ ‘’আমি আবু আব্দুল্লাহকে বললাম যে, যদি আমার হাজ্জ ছুটে যায় আর আমি হুসেইনের মর্যাদা অনুধাবন করে তার কবরের নিকট যাই, তাহলে কি আমার হাজ্জ হবে? জবাবে তিনি বললেনঃ ‘’হে বাশির! তুমি ভালই করেছ, যে কোন মুসলিম যদি ঈদের দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন হুসেইনের মর্যাদা যথাযথ অনুধাবন করে তার কবরের নিকট আসে তাহলে তার জন্য (তার আমলনামায়) বিশটি মাবরুর (কবুল) হাজ্জ ও বিশটি কবুল উমরাহর সমপরিমান ফযিলত লেখা হয়। এবং প্রেরিত নাবী-রাসুল অথবা ন্যায়পরায়ন শাসক (ইমাম)-এর সঙ্গী হয়ে বিশটি যুদ্ধের ফযিলত লেখা হয়।

আর যে ব্যক্তি হুসেইনের যথাযথ মর্যাদা অনুধাবন করে আরাফার দিনে তার কবর যিয়ারত করে তার জন্য এক হাজার মাবরুর হাজ্জ ও উমরাহর সমপরিমান ফযিলত লেখা হয়। এবং প্রেরিত নাবী-রাসুল অথবা ন্যায়পরায়ন শাসক (ইমাম)-এর সঙ্গী হয়ে এক হাজার যুদ্ধের ফযিলত লেখা হয়।

আরাফার মাঠে উপস্থিত ব্যক্তিরা হচ্ছে যেনার সন্তানঃ
****************************************************
কারবালাতে হুসেইনের কবর যিয়ারতকারীগন হচ্ছে, অতি পুত-পবিত্র আর আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীগন হচ্ছে যেনাকারীর (জারজ) সন্তান। আলী ইবন আসবাত, তিনি আবু আবদুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন সন্ধ্যাবেলায় হুসেইনের কবর যিয়ারতকারীদের প্রতি দেখতে (নজর দিতে) শুরু করেন।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আরাফায় অবস্থানকারীদের নজর দেয়ার পূর্বেই? জবাবে তিনি বলেন, হাঁ! আমি বললাম, এটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বললেন, এটা এজন্যই সম্ভব যে, আরাফায় অবস্থানকারীগণ হচ্ছে যেনার (জারজ) সন্তান আর হুসেইনের কবর যিয়ারতকারীদের মধ্যে কোন যেনার সন্তান নেই।

আল-মাজলেসী, বিহারুল আনওয়ার ৮৫/৯৮
সুত্রঃ শি’আদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস-সালাফী; অনুবাদ মুহাম্মাদ আবদুল হাই বিন শামসুল হক, পৃষ্ঠা নঃ ৫৬-৫৮
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১০
284931
আনোয়ার আলী লিখেছেন : শিয়ারা কে কি মনে করে তাতে আমাদের কি? আমরা তো শিয়া আকিদা নিয়ে থাকি না। বা সেসব গবেষনাও করি না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File