প্রধানমন্ত্রী জনগণের জীবন নিয়ে রক্ত খেলায় মেতে উঠেছেন
লিখেছেন লিখেছেন মুখোশ উন্মচন ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:০৪:৪৬ সন্ধ্যা
প্রধানমন্ত্রীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ১৮ দলীয় জোট কর্তৃক ঘোষিত দেশব্যাপী সড়ক, নৌ, রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখার জন্য দেশের সংগ্রামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের সাথে উপহাস করছেন। ১৮ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় লোকদের সন্ত্রাসী তা-বের দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাচ্ছেন। তিনি গত মঙ্গলবার এক বক্তব্যে ‘খবর পেয়েছি লঞ্চ, ফেরি ডুবিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে’ মর্মে আজগুবি তথ্য হাজির করে প্রকারান্তরে তার দলের লোকদের দিয়ে লঞ্চ ডুবিয়ে তার দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপানোরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমরা বার বার বলেছি জামায়াত ও ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। দেশে আজ যে ভয়াবহ অরাজকতা চলছে তার জন্য দায়ী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। তিনি পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের জন্য ব্যবহার করছেন। তিনি পুলিশ দিয়ে গুলী চালিয়ে মানুষ হত্যা করে দেশকে রক্তাক্ত করছেন। প্রধানমন্ত্রী জ্বালাও, পোড়াও, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের জন্য বিরোধী দলকে টার্গেট করে যে বক্তব্য রেখেছেন তা একেবারেই ভিত্তিহীন। চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও বগুড়ায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে জ্বালাও, পোড়াও, অগ্নিসংযোগ ও লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করার ইতিহাস।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে উস্কানিকমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বক্তব্য রাখার সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে মাঠে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে মূলত সংঘাত সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার গণভবনে এক বৈঠকে বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য দলীয় লোকদেরকে রাজপথে নামার নির্দেশ দেন। তার এই বক্তব্য উস্কানিমূলক, হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক। ২০০৬ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় তিনি লগি-বৈঠা নিয়ে তার কর্মীদেরকে ঢাকায় সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশে সারা দেশে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের বর্বরতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। একই কায়দায় তিনি বিরোধী দলের মোকাবিলার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি দ্বারা সরাসরি গুলী চালাচ্ছেন। আবার দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে রাজপথে নামারও নির্দেশ দিচ্ছেন। তার ঘোষণায় দেশ আজ রক্তাক্ত। তিনি বলেন, গত ৩০ দিনে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৬৯ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গুলীবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন হাজারের অধিক নেতাকে। এই হত্যা ও রক্তপাতের দায়িত্ব অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীকে বহন করতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি সরকার বিচারের নামে জামায়াত নেতৃবৃন্দের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। সরকার দলীয় লোকেরা ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন বিজয় দিবসের পূর্বেই জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। দেশবাসীর প্রশ্ন বিচার করবেন আদালত আর রায় ঘোষণার তারিখ কি করে সরকার ও প্রসিকিউটর ঘোষণা করতে পারে? সরকার ও প্রসিকিউটরের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সরকার নির্দেশিত ছকে বিচারের নামে এ নাটকের আয়োজন করা হয়েছে। দেশবাসী সরকারের এ প্রহসনের নাটক মানে না।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে গোটা দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে জনগণ তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করবে। সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণতার শিকার হয়ে গতকাল নাটোরে ১৫ জন, বরিশালে ১০ জন, গাজীপুরে ২৫ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, রংপুরে ১০ জন, নোয়াখালীতে ২০ জন, সিলেটের বিয়ানী বাজারে ১০ জন, ফেনীতে ১৫ জনসহ সারা দেশে প্রায় দু’শতাধিক জামায়াত-ছাত্রশিবির ও ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের জীবন নিয়ে রক্ত খেলায় মেতে উঠেছেন। প্রতিদিনই আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি ভেবেছেন জনগণের রক্তের ওপর দিয়ে আবারো তিনি ক্ষমতায় আসবেন। তার এই স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়ন হবে না। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৫২, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সহ অতীতের সকল গণআন্দোলনের কথা। জনগণ রাজপথে নেমে আসলে কোন স্বৈরশাসকের পক্ষ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না। দেশের জনতা আজ আপনার জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছে। জনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচান। রক্তপাত বন্ধ করুন। অন্যথায় জনরোষের শিকার হয়ে আপনাকে করুই পরিণতি বরণ করতে হবে।
গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল, গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি ও জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে ১৮ দলীয় জোট কর্তৃক ঘোষিত সড়ক, নৌ, রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
৭৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন