বিষয়টা জানা থাকলেও আবারো স্মরণে রাখা দরকার
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৪:৫৪:১৭ বিকাল
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে চলছে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার মরিয়া চেষ্টা। উদ্দেশ্যটি হাসিল করার জন্য ক্ষমতাসীনরা প্রথমে ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধন করেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘আন্তর্জাতিক’ নামের ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে হত্যার পদক্ষেপ নিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ে শাহবাগে নাটক সাজিয়ে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপনের অজুহাত তৈরি করেছেন। এখন চলছে ‘যুদ্ধাপরাধী’ সাজিয়ে দল হিসেবেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আয়োজন।
যথেষ্ট চাতুরিপুর্ণ হলেও তাদের উদ্দেশ্য ও কৌশল কিন্তু ধরা পড়ে গেছে, সাধারণ মানুষও সবকিছু বুঝে ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার বেছে বেছে কেবল জামায়াতে ইসলামীকেই প্রধান টার্গেট বানিয়েছে কেন? উত্তরের পর্যালোচনায় প্রাধান্যে এসেছে ক্ষমতাসীনদের অক্ষমতার দিকটি। বহু বছর ধরে বহু ধরনের কসরত করেও তারা জামায়াতকে ‘ম্যানেজ’ করতে পারেননি। এজন্যই দলটিকে নির্মূল করার অভিযানে নেমেছেন তারা। প্রধান উদ্দেশ্য তাদের দুটি এক. ক্ষমতায় আসার ও টিকে থাকার জন্য নির্বাচনের মাঠে নিজেদের অবস্থানকে নিরংকুশ করা; এবং দুই. বাংলাদেশকে ভারতের সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করা। দুটি উদ্দেশ্যই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হলে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় থাকতে হবে। যে কোনোভাবে, ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে হলেও দলটিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। গণতন্ত্রের নামে মুখে যেহেতু ফেনা তুলে থাকেন ক্ষমতাসীনরা সেহেতু ক্ষমতায় আসার ও আনার জন্য প্রথমে নির্বাচনে জিততে হবে। এটাই ছিল ভারতের একটি মহলের প্রধান এজেন্ডা, যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
অন্যদিকে জামায়াত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পথে প্রবলভাবেই প্রতিবন্ধকের অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন অবস্থা চলছে আসলে দীর্ঘদিন ধরে। জামায়াতকে ‘ম্যানেজ’ করার এবং পক্ষে টেনে নেয়ার চেষ্টাও ক্ষমতাসীনরা করে দেখেছেন। কিন্তুু আওয়ামী ফাঁদে কখনো পা দেয়নি জামায়াত।
উদাহরণ দেয়ার জন্য ১৯৯১ সালের নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করা যায়। ওই নির্বাচনে সমমনাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৪২টি আসন। অন্যদিকে বিএনপির আসন সংখ্যা ছিল ১৩৯টি। সরকার গঠন করার জন্য আওয়ামী লীগের দরকার ছিল নয়জন এমপির সমর্থন। অন্যদিকে বিএনপির দরকার ছিল ১১ জন এমপির সমর্থন। জামায়াত সেবার ১৮টি আসনে জিতেছিল। অর্থাৎ জামায়াত যাকে সমর্থন দেবে সে দলই সরকার গঠন করতে পারবে। অমন এক অবস্থায় সমর্থনের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে চারজন মন্ত্রীর পদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কয়েকটি মহিলা আসনের প্রলোভনও দেখিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষে দুতিয়ালি করেছিলেন বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অন্য এক নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তুু দেশপ্রেমিক জামায়াত আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে রাজি হয়নি বরং মন্ত্রিত্বসহ কোনো রকম লাভ বা ফায়দা ছাড়াই শর্তহীন সমর্থন দিয়েছিল বিএনপিকে। সে কারণেই বিএনপির পক্ষে সরকার গঠন করা সম্ভব হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সে সময় থেকেই আওয়ামী লীগ জামায়াতের বিরুদ্ধে লেগে আছে। মাঝখানে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন করলেও ‘রাগ’ পড়েনি আওয়ামী লীগের!
সে উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবেই সবশেষে তারা জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। তারা এমনকি সংসদকে দিয়ে এ সংক্রান্ত আইনও পাস করানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেটা তারা করতেই পারেন। কিন্তু তাদের কথা ও ইচ্ছাই সব নয়। মাঝখানে বিএনপিসহ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাতিসংঘ এবং ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিও। সুতরাং জামায়াতকে নিয়ে এই ‘খেলা’ এক সময় আওয়ামী লীগের জন্যই বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন