বদর দিবসের স্মরণে ।

লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১৬ জুলাই, ২০১৪, ১২:৩০:৪৭ দুপুর



আমাদের মাঝে কতই না দিবস আসে এবং তা আবার ঘটা করেও পালন করি কিন্তু এমন অনেক দিবস আছে যার সাথে মুসলমানদের হৃদয়ের সম্পর্ক আছে । এসব কতজনে মনে রাখে। আজ বদর দিবস এই দিবসের গুরুত্ব আমাদেরকে অনুধাবন করে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই বাঞ্চণীয়।

বদর যুদ্ধের পটভূমি ঃ

দ্বিতীয় হিজরীর শা’বান মাসে (৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রূয়ারী কিংবা মার্চ কুরাইশদের এক বিরাট কাফেলা সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মুসলিম অধিকৃত এলাকার কাছাকাছি এসে পৌঁছলো। কাফেলার সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার আশরাফী মূল্যের ধন-মাল এবং ৩০/৪০জনের মতো তত্ত্বাবধায়ক (মুহাফেজ ) ছিল। তাদের ভয় ছিল, মদিনার নিকটে পৌঁছলে মুসলমানরা হয়ত তাদের ওপর হামলা করে বসতে পারে। কাফেলার নেতা ছিল আবু সুফিয়ান। সে এই বিপদাশংকা উপলব্ধি করেই এক ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্যে মক্কায় পাঠিয়ে দিল। ঐ লোকটি মক্কায় পৌঁছেই এই বলে শোরগোল শুরু করলো যে, ‘তাদের কাফেলার ওপর মুসলমানরা লুটতরাজ চালাচ্ছে। সুতরাং সাহায্যের জন্যে সবাই ছুটে চলো।’

কাফেলার সঙ্গে যে ধন-মাল ছিল, তার সাথে বহু লোকের স্বার্থ জড়িত ছিল। ফলে এ একটা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হলো। তাই সাহায্যের ডাকে সাড়া দিয়ে কুরাইশদের সমস্ত বড় বড় সর্দারই যুদ্ধের জন্যে বেরিয়ে পড়লো। এভাবে প্রায় এক হাজার যোদ্ধার এক বিরাট বাহিনী তৈরি হয়ে গেল।এই বাহিনী অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা ও শান-শওকতের সঙ্গে মক্কা থেকে যাত্রা করলো। এদের হৃদয়ে একমাত্র সংকল্প :মুসলমানদের অস্তিত্ব এবার নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে, যেন নিত্যকার এই ঝঞ্ঝাট চিরতরে মিটে যায়। বস্তত ,একদিকে তাদের ধন-মাল রক্ষার আগ্রহ , অন্যদিকে পুরনো দুশমনি ও বিদ্বেষের তাড়না - এই দ্বিবিধ ক্রোধ ও উন্মাদনার সঙ্গে কুরাইশ বাহিনী মদিনা আক্রমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।

কুরাইশদের হামলা

এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাHappy এর কাছেও এই পরিস্থিতি সম্পর্কে যথারীতি খবর পৌঁছতে লাগলো। তিনি বুঝতে পারলেন, এবার সত্যসত্যই মুসলমানদের সামনে এক কঠিন সংকটকাল উপস্থিত হয়েছে। এবার যদি কুরাইশরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হয় এবং মুসলমানদের এই নয়া সমাজ-সংগঠনটিকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে সামনে এগোনো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

এমনকি, এর ফলে ইসলামের আওয়াজও হয়তো চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। মদিনায় হিজরতের এ যাবত দুটি বছর ও অতিক্রান্ত হয়নি। মুহাজিরগণ তাদের সবকিছুই মক্কায় ফেলে এসেছে এবং এখনো তারা রিক্তহস্ত । আনসার গণ যুদ্ধ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। অন্যদিকে ইহুদীদেরও অনেকগুলো গোত্র বিরুদ্ধতার জন্যে প্রস্তত । খোদ মদিনায় মুনাফিক এবং মুশরিকদের অবস্থিতি এক বিরাট সমস্যার রুপ পরিগ্রহ করেছে। এমনি অবস্থায় কুরাইশরা যদি মদিনা আক্রমণ করে ,তাহলে মুসলমানদের এই মুষ্টিমেয় দলটি হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়েও যেতে পারে। আর হামলা যদি নাও করে বরং আপন শক্তি বলে ,শুধু কাফেলাকে মুক্ত করে নিয়ে যায়,তবুও মুসলমানরা নিবীর্য হয়ে পড়বে।

অতঃপর তাদেরকে জব্দ করতে আশ-পাশের গোত্রগুলোকে আর কোন বেগ পেতে হবে না। কুরাইশদের ইঙ্গিতে তারা মুসলমানদের কে নানাভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করবে। এদিকে মদিনার ইহুদী ,মুনাফিক এবং মুশরিকগণও মাথা তুলে দাঁড়াবে। ফলে মুসলমানদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। এসব কারণেই হযরত মুহাম্মদ (সাHappy সিদ্ধান্ত নিলেন যে, বর্তমানে যতটুকু শক্তিই সঞ্চয় করা সম্ভব ,তা নিয়েই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং মুসলমানদের কে আপন বাহুবল দ্বারা টিকে থাকার অধিকার প্রমাণ করতে হবে।

মুসলমানদের প্রস্তুতি

এই সিদ্ধান্তের পর নবী করীম (সাHappy মহাজির ও আনসার গণকে জমায়েত করে তাদের সামনে সমগ্র পরিসি'তি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলেনঃ‘একদিকে মদিনার উত্তর প্রান্তে রয়েছে ব্যবসায়ী কাফেলা আর অন্য দিকে দক্ষিণ দিক থেকে আসছে কুরাইশদের সৈন্য-সামন্ত । আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, এর যেকোন একটি তোমরা লাভ করবে। বলো,তোমরা এর কোনটি মুকাবেলা করতে চাও? জবাবে বহু সাহাবী কাফেলার ওপর আক্রমণ চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

কিন্তু নবী করীম (সাHappy এর দৃষ্টি ছিল সুদূরপ্রসারী । তাই তিনি তার প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি করলেন। এরপর মুহাজির দের ভেতর থেকে মিকদাদ বিন আমর(রাHappy নামক জনৈক্য সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেনঃ‘হে আল্লাহর রাসূল ! প্রভু আপনাকে যেদিকে আদেশ করেছেন সেদিকেই চলুন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আমরা বনী ইসরাঈলের মতো বলতে চাইনা - যাও তুমি এবং তোমার খোদা গিয়ে লড়াই করো, আমরা এখানে বসে থাকবো।

কিন্তু এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আনসারদের থেকেও মতামত গ্রহণের প্রয়োজন ছিল । এজন্যে হযরত (সাHappy তাদেরকে সরাসরি সম্বোধন করে উল্লিখিত প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি করলেন । এরপর হযরত সা’দ বিন মা’আজ (রাHappy দাঁড়িয়ে বললেন। হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আপনাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছি এবং আপনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সবই সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছি। সর্বোপরি আমরা আপনার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছি। অতএব হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা-ই কার্যে পরিণত করুন। যে মহান সত্ত্বা আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, তার কসম , আপনি যদি আমাদের নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ও ঝাঁপ দেন, তবুও আমরা আপনার সাথে থাকবো এবং এ ব্যাপারে আমাদের একটি লোকও পিছু হঠবে না । আমরা যে শপথ নিয়েছি , যুদ্ধকালে তা হরফে হরফে পালন করবো। সাচ্চা আত্মোৎসর্গীর ন্যায় আমরা শত্রুদের মুকাবেলা করবো। কাজেই আল্লাহ খুবই শিগগিরই আমাদের দ্বারা আপনাকে এমন জিনিস দেখাবেন, যা দেখে আপনার চক্ষু শীতল হয়ে যাবে। অতএব , আল্লাহর রহমত ও বরকতের ওপর ভরসা করে আপনি আমাদের নিয়ে এগিয়ে চলুন।

এই বক্তৃতার পর স্থির করা হলো যে, কাফেলার পরিবর্তে সৈন্যদেরই মুকাবেলা করা হবে। কিন্তু এটা কোনো মামুলি সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ কুরাইশদের তুলনায় মুসলমানদের সংগঠন ছিল নেহাত দুর্বল ।

যুদ্ধের জন্য তাদের মধ্যে ঘোড়া ছিল মাত্র দু’-তিন জনের কাছে।

উট ছিল মাত্র সত্তরটির মতো।

যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম ও ছিল অপ্রতুল ।

মাত্র ষাট ব্যক্তির কাছে ছিল লৌহবর্ম ।

এ কারণে মাত্র কতিপয় মুসলমান ছাড়া বাদবাকী সবারই মনে ভীতির সঞ্চার হলো। তাদের অবস্থা দেখে মনে হতে লাগলো, যেনো জেনে-শুনে তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।

সূরা আনফালের নিম্নোক্ত আয়াতে এই দৃশ্যই ফুটে উঠেছেঃ “ (হে নবী !) এই লোকগুলো তো আপন বাড়ি ঘর থেকে তেমনি বের হওয়া উচিত ছিল ,তোমার প্রভু যেমন তোমায় সত্য সহকারে তোমার গৃহ থেকে বের করে এনেছেন ; কিন্তু মুসলমানদের একটি দলের কাছে এ ছিল অত্যন্ত অপছন্দনীয় । তারা সত্য সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হওয়ার পরও সে সম্পর্কে তোমার সঙ্গে তর্ক করছিল; তাদেরকে যেন দৃশমান মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । (সেই সময়ের কথা) স্মরণ করো ,যখন আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন,(আবু সুফিয়ান ও আবু জেহেলের ) দুই দলের মধ্যে থেকে যেকোন একটি তোমাদের করায়ত্ত হবে। আর তোমরা চেয়েছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল(অর্থাৎ নিরস্ত্র)দলটিকে বশীভূত করতে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তিনি আপন বিধানের দ্বারা সত্যকে অজেয় করে রাখবেন এবং কাফিরদের মূলোচ্ছেদ করে দিবেন, যেন সত্য সত্য হয়েই থাকে এবং মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায় -অপরাধীদের কাছে এটা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।”

মদিনা থেকে মুসলমানদের যাত্রা

যুদ্ধ সম্ভার ও রসদ পত্রের এই দৈন্য সত্ত্বেও দ্বিতীয় হিজরীর ১২ রমজান নবী করীম (সাHappy আল্লাহর ওপর ভরসা করে মাত্র তিনশ’র মতো মুসলমান নিয়ে মদিনা থেকে যাত্রা করেন। তারা সোজা দক্ষিণ কোণে পা বাড়ালেন; কারণ কুরাইশদের বাহিনীটি ঐ দিক থেকে আসছিল। ১৬ রমজান তারা বদরের নিকটে পৌঁছলেন। এটি মদিনা থেকে কিঞ্চিত দিক ৮০মাইল দক্ষিন -পশ্চিম অবস্থিত একটি প্রান্তর । এখানে পৌঁছার পর জানা গেল যে, কুরাইশ বাহিনী প্রান্তরের অপর সীমান্তে এসে পৌঁছেছে। তাই হযরত(সাHappy এর নির্দেশে এখানে ছাউনি ফেলা হলো।

কুরাইশদের বাহিনীটি অত্যন্ত জাঁকালো সাজ-সজ্জা সহকারে বের হয়েছিল । এদের দলে এক সহস্রাধিক সৈন্য ছিলো,সর্দার ছিলো প্রায় একশোর মতো। সৈন্যদের জন্যে রসদ-পত্রেরও খুব উত্তম আয়োজন ছিল। উতবা বিন রাবিয়া ছিল সিপাহসালার ।

বদরের কাছে কাছে পৌঁছে কুরাইশ সৈন্যরা জানতে পারলো যে, তাদের বাণিজ্য কাফেলা মুসলমানদের আয়ত্ত্বের বাইরে রয়েছে ।এতে জাররাহ ও আদী গোত্রের প্রধানগণ বললো যে, এখন আর আমাদের যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই । কিন্তু আবু জেহেল তাতে সায় দিলেন না। ফলে জাররাহ ও আদী গোত্রের লোকেরা মক্কায় ফিরে গেল এবং বাকী সৈন্যরা সামনে অগ্রসর হলো।

যুদ্ধক্ষেত্রের যে অংশটি কুরাইশদের দখলে ছিল , উপযোগিতার দিক দিয়ে তা ছিল খুবই উত্তম তাদের জমিন ছিল অত্যন্তু মজবুত। পক্ষান্তরে মুসলমানরা যেখানে ছাউনি ফেলেছিল,তা ছিল লবণাক্ত ভূমি। সৈন্যদের পা তাতে দেবে যাচ্ছিল। অন্যান্য দিক দিয়েও তাদের অসুবিধা ছিল প্রচুর। এই পরিস্থিতিতে রাতভর সমস্ত সৈন্য বিশ্রাম গ্রহণ করলো;কিন্তু নবী করীম (সাHappyসারারাত ইবাদাত -বন্দেগীতে মশগুল রইলেন। ১৭রমজান ফজরের পর তিনি মুসলিম সৈন্যদের সামনে জিহাদ সম্পর্কে এক উদ্দীপনাময় ভাষণ দিলেন।

অতঃপর যুদ্ধের নিয়ম অনুসারে সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করা হলো। এ বছরই মুসলমানদের প্রতি রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় ,এই পয়লা রোজার মধ্যেই মুসলমানদের তিনগুন বেশি সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুত হতে হলো। কি কঠোর পরীক্ষা!

সে রাতে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত স্বরুপ দুটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো।

প্রথমত ,মুসলিম সৈন্যগণ অত্যন্ত প্রশান্তি ও সুনিদ্রার ভেতর দিয়ে রাত যাপন করলো। প্রত্যুষে তারা সতেজ বল-বীর্য নিয়ে ঘুম থেকে জাগলো

দ্বিতীয়ত, রাতে খুব বৃষ্টিপাত হলো। তার ফলে লবণাক্ত জমি শক্ত হয়ে গেলো। এবং মুসলমানদের পক্ষে ময়দান খুব উপযোগী হলো। পক্ষান্তরে এই বৃষ্টির ফলে কুরাইশদের অধিকৃত অংশ কর্দমাক্ত হয়ে গেল এবং তাতে সৈন্যদের পা দেবে যেতে লাগলো ।

পরন্ত মুসলমানদের অধিকৃত অংশের নীচু ভূমিতে পানি জমে গেল এবং তাতে তাদের ওযু-গোসল ইত্যাদির প্রচুর সুযোগ হলো। এসব কারণে মুসলমানদের অন্তর থেকে ভয়-ভীতি ও শংকাবোধ দূর হয়ে গেল সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত মনে তারা শত্রু সৈন্যদের মুকাবেলার জন্যে প্রস্তত হলো।

ময়দানে যখন উভয় পক্ষের সৈন্যদল মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো, তখন এক অদ্ভূত দৃশ্যের অবতারণা হলো। একদিকে ছিল আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণকারী তার বন্দেগী ও আনুগত্য স্বীকারকারী মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান, যাদের কাছে সাধারুণ যুদ্ধ সরঞ্জাম পর্যন্ত ছিল না। অন্যদিকে ছিল অস্ত্র-শস্ত্র ও রসদ-পত্রে সুসজ্জিত এক সহস্রাধিক কাফির সৈন্য,যারা এসেছে তওহীদের আওয়াজকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে নবী কারীম(সাHappy খোদার দরবারে হাত তুললেন এবং অতীব বিনয় নম্রতার সাথে বললেনঃ‘হে খোদা এই কুরাইশরা চরম ঔদ্ধত্য ও অহমিকা নিয়ে এসেছে তোমার রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে । অতএব আমায় যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি তুমি দিয়েছিলে ,এখন সে সাহায্য প্রেরণ করো। হে খোদা ! আজ এই মুষ্টিমেয় দলটি যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়ায় তোমার বন্দেগী করার আর কেউ থাকবে না। ’

এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল মুহাজিরদেরকে । এদের প্রতিপক্ষ ছিল আপন ভাই,পুত্র এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন। কারো বাপ , কারো চাচা, কারো মামা আর কারো ভাই ছিল তার তলোয়ারের লক্ষ্যবস্তু এবং নিজ হাতে তাদের হত্যা করতে হয়েছিল এইসব কলিজার টুকরা কে ।

এই কঠিন পরীক্ষায় কেবল তারাই টিকে থাকতে পেরেছিল , যারা সাচ্চা দিলে আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করেছিলঃ যে সব সম্বন্ধকে তিনি বজায় রাখতে বলেছেন,তারা শুধু তাই বজায় রাখবে আর যেগুলোকে তিনি ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন - তা যতোই প্রিয় হোক না কেন - তারা ছিন্ন করে ফেলবে ।

কিন্তু সেই সঙ্গে আনসারদের পরীক্ষাও কোনো দিক দিয়ে সহজ ছিল না। এ যাবত আরবের কাফির এবং মক্কার মুশরিকদের চোখে তাদের ‘অপরাধ’ ছিল এটুকু যে, তারা তাদের দুশমন অর্থাৎ মুসলমানদের কে আশ্রয় দান করেছে। কিন্তু এবার তারা প্রকাশ্যভাবেই ইসলামের সমর্থনে কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, তারা তাদের জনপদটির (মদিনা) বিরুদ্ধে গোটা আরবদেরকেই দুশমন বানিয়ে নিয়েছে। অথচ মদিনার জনসংখ্যা তখন সাকুল্যে এক হাজারের বেশি ছিল না । এতো বড় দুঃসাহস তারা এজন্যেই করতে পেরেছিল যে, তাদের হৃদয় আল্লাহর ও রাসূলের মুহাব্বত এবং আখিরাতের প্রতি অবিচল ঈমানে পরিপূর্ণ হয়েছিল। নতুবা আপন ধন-দৌলত স্ত্রী-পুত্র-পরিবারকে এভাবে সমগ্র আরব ভূমির শত্রুতার ন্যায় কঠিন বিপদের মুখে কে নিক্ষেপ করতে পারে ?

কুরাইশদের পরাজয়

বস্তত ঈমানের এই স্তরে উন্নীত হবার পরই বান্দার জন্যে আল্লাহর সাহায্য অবতীর্ণ হয়ে থাকে । বদর যুদ্ধেও তাই আল্লাহ তাআলা এই সহায়-সম্বলহীন ৩১৩ জন মুসলমানকে সাহায্য দান করেন। এর ফলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এক সহস্রাধিক সুসজ্জিত সৈন্য অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো এবং তাদের সমস্ত শক্তি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেল। এই যুদ্ধে কুরাইশ পক্ষের প্রায় ৭০ ব্যক্তি নিহত হলো এবং সম সংখ্যক লোক বন্দী হলো।নিহতদের মধ্যে তাদের বড় বড় নামজাদা সর্দারগণ প্রায় সবাই ছিল। এদের মধ্যে শায়বা, উতবা, আবু জেহেল, জামআহ , আস, উমাইয়া প্রমুখ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব নামজাদা সর্দারের মৃত্যুর ফলে কুরাইশদের মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙ্গে পড়লো। মুসলমানদের পক্ষে প্রায় ৬ জন মুহাজির এবং ৮ জন আনসার শহীদ হলেন।

যুদ্ধে যারা বন্দী হলো, তাদের কে দু’-দু’ চার জন করে সাহাবীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হলো এবং নবী করীম (সাHappy তাদের কে সদাচরণ করার নির্দেশ দান করলেন। ফলে সাহাবীগণ তাদের কে এমনি আরামে রাখলেন যে, বহুতর ক্ষেত্রে তারা নিজেরা কষ্ট স্বীকার করলেও বন্দীদের কষ্ট দেন নি। এই সদাচরণের ফলে তাদের হৃদয়ে ইসলামের জন্যে অনেক নম্রতার সৃষ্টি হলো। আর এটাই ছিল আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য । পরে এইসব বন্দীর অনেকেই ফিদয়ার(মুক্তিপণ) বিনিময়ে মুক্তি লাভ করে। যারা গরীব অথচ শিক্ষিত ছিল, তাদেরকে দশ-দশটি শিশুকে লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হয়।

বদর যুদ্ধের ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া

ফলাফল ও প্রতিক্রিয়ার দিক দিয়ে বদর যুদ্ধ ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ । প্রকৃতপক্ষে ইসলামের দাওয়াত অগ্রাহ্য করার দরুন মক্কার কাফের দের জন্যে যে খোদায়ী আযাব নির্ধারিত হয়েছিল , এ যুদ্ধ ছিল তারই প্রথম নিদর্শন। তাছাড়া ইসলাম ও কুফরের মধ্যে মূলত কার টিকে থাকবার অধিকার রয়েছে এবং ভবিষ্যতের হাওয়ার গতিই বা কোন দিকে মোড় নেবে, এ যুদ্ধ তা স্পষ্টত জানিয়ে দিল। এ কারণেই একে ইসলামী ইতিহাসের পয়লা যুদ্ধ বলা হয়। কুরআন পাকের সূরা আনফালে এই যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক বিস্তৃত পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে দুনিয়ার রাজা- বাদশাহ বা জেনারেলগণ কোন যুদ্ধ জয়ের পর যে ধরণের পর্যালোচনা করে থাকে , এ পর্যালোচনা তা থেকে সম্পুর্ণ স্বতন্ত্র ।

এ পর্যালোচনার একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এর ওপর একটু বিস্তৃত ভাবে দৃষ্টিপাত করলে ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃতি এবং মুসলমানদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অত্যন্ত সুস্পষ্ট উদ্ভাসিত হয়ে উঠে।

উৎসঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস্সালামের বিপ্লবী জীবন।

বিষয়: বিবিধ

১০২৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

245171
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
190445
আমি মুসাফির লিখেছেন : পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
245219
১৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৬ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৭
190501
আমি মুসাফির লিখেছেন : আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File