সুরা আল মায়িদার নাযিলের সময়কাল এবং আলোচ্য বিষয়।

লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১৪ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৪২:০৩ দুপুর

যখনই আমরা কুরআন অধ্যয়ন করার জন্য বসি তখন সুরার নামকরণ, শানে নুযুল ও আলোচ্য বিষয়গুলো ভাল করে জানলে কুরআন বুঝা ও নাযিলের উদ্দেশ্য অনুধাবন খুব সহজ হয় এবং কুরআন পড়তে মজা লাগে । তাই সকল মুসলমান ভাইবোন যেন কষ্ট করে এই কাজটি করেন এটাই অনুরোধ ।

নাযিলের সময়কালঃ

সুরার আলোচিত বিষয় ও হাদীসের বিভিন্ন বর্ননানুযায়ী সুরাটি হোদয়বিয়ার সর্ধির পর ৬ষ্ঠ হিজরীর শেষভাগে কিংবা ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে নাযিল হয়েছে। যখন মুসলমানদেরকে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে আরো যোগ্যতা, একনিষ্ঠতা ও দূরদর্শিতার সাথে কাজ করার নির্দেশিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।

মুল আলোচ্য বিষয় ঃ

উহুদ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় মদীনা ও তার আশে পাশের এলাকা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত কঠিন বিপদ সংকুল, অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছিল । এই সংকটাপন্ন নাজুক পরিস্থিতিতে তারা হতাশ, সাহস-হিম্মতহারা হয়ে যাননি বরং রাসুলে আকরাম সাঃ এর দুরদর্শি ও সাহসী নেতৃত্বে মুসলমানরা জেগে উঠেছিলেন সুদৃঢ় ঈমান, আত্মবিশ্বাস, ত্যাগ ও কুরবানীর মজবুত জজবা নিয়ে।

ফলে আমুল পরিবর্তন এসেছিল গোটা অঞ্চলে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রাধান্য এক বিস্তীর্ণ এলাকায়, দানা বেধে উঠেছিল একটা স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পুর্ণ সভ্যতা ইসলামের আদর্শ, রীতিনীতি ও দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী উহুদ যুদ্ধোত্তর ৩ বছরের এ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই।

আর তাদের আওতাভুক্ত সমগ্র এলাকাায় যেমন মসজিদ ও জামায়াতের সাথে নামাজের ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, তেমনি চালু করা হয়েছিল ইসলামের দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন, এসেছিল অবাধ সুযোগ ইসলামের দাওয়াত প্রচার ও প্রসারের, অবসর নয় বরং আরো বেড়ে গিয়েছিল তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল আরো বেশী ত্যাগ-কুরবানী পেশ করার, দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সর্ব্বোচ্চ একনিষ্ঠতা।

তাইতো সময়ের দাবী অনুসারে সক্রিয় ভুমিকা পালনে যারা ব্যর্থ হবে তাদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে, ঘোষণা দেয়া হয়েছে ব্যর্থতাকে কঠোরভাবে দেখার এবং মনে করা হবে তারা দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়! ফলে তাদের পরিবর্তে অন্য কওমকে দায়িত্বে নিয়ে আসার ব্যাপারে মহাসতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে। কেননা আরবের সীমান ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাওয়াত সম্প্রসারনের সুযোগকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তখন।

তাই দূরবর্তী অঞ্চল সহ ইরান, সিরিয়া মিসর ও তুরস্ক দাওয়াতের সুচনা করা হয় এই সময়ে । বেরিয়ে পড়ে "দায়ী ইলাল্লাহ" গণ আল্লাহর বান্দাদেরকে কেবলমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার আন্তরিক দাওয়াত দেয়ার জন্য।

এসব অবস্থাকে সামনে রেখে মুসলমানদের ধর্মীয়, তামাদ্দুনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত বিধি বিধান দেয়া হয় এ সুরায়, নির্দেশ দেয়া হয় শাসক গোষ্ঠী হিসাবে সর্বদা সুবিচার ও ইনসাফ কায়ম করার জন্য, বিরত থাকার জন্য যুলুম ও ওয়াদাভংগ করা থেকে, উদ্বুদ্ধ করা হয় আল্লাহর পথে অটল ও অবিচল ভাবে জিহাদ করার জন্য, জয় পরাজয় কিংবা কারো রক্ত চক্ষুর পরোয়া না করে, ঐক্যবদ্ধ হতে বলা হয় ভাষা-বর্ণ ভৌগলিক সীমা রেখার উর্ধে উঠে এবং গোটা মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্বের চেতনায় এক ও অবিচ্ছিন্ন শক্তিশালী হিজবুল্লাহ হিসাবে, সুসংবাদ দেয়া হয় বিজয় ও বিশ্ব নেতৃত্বের।

আশা করি এ বিষয়গুলো ভালো করে অনুধাবন করলে এই সুরায় বর্ণিত পুরা চিত্রটি সামনে এসে যাবেএবং আমাদের করণীয় কি তা ঠিক করতে পারব ইনশা আল্লাহ ।

বিষয়: বিবিধ

১১০২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244658
১৪ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৪ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:২৪
190074
আমি মুসাফির লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাললাগার জন্য ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File