তালপট্টি নেই বলে স্বস্তিওয়ালাদের অসস্তি এনে দিল ভারত।

লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১৪ জুলাই, ২০১৪, ০১:৩২:১০ দুপুর



খবর ২টি সকলকে মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রহিল কারণ মিথ্যাচরের এক দাতভাঙা জবাব।

শেখ হাসিনা বলেছেন, তালপট্টির কোন অস্তিত্ব নেই। সাথে সাথেই মন্ত্রী-মিনিস্টার-নেতা-পাতি নেতা-সুশীল-বুদ্ধিজীবী সবাই মিলে এই কথা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিয়েছে। শামীম ওসমান ঠিকই বলেছিলেন। ‘অলি আল্লাহ’ না হলে মানুষ কারও কথা এমনভাবে বিশ্বাস করে না। দেশের মানুষের একটা অংশ এই কথার উপরে সত্যি সত্যি ঈমান এনে ফেলেছে।

এদিকে ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ভারত বিশ্বাস করে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নির্ধারণের একটা ফয়সালা হয়ে গেছে, যা কি না ‘আরবিটারি ফ্যাশন’ তবে ভারতের জন্যে এ রায় সৌভাগ্য বয়ে এনেছে, দুর্ভাগ্য নয়। বিতর্কিত নিউমুর বা তালপট্টি দ্বিপের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ এবং হাড়িয়াভাঙ্গা নদীতে চলাচলের সুবিধা একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়। ওই দ্বিপাঞ্চল সম্ভবত তেল ও গ্যাস সম্পদে পরিপূর্ণ এবং হাড়িয়াভাঙ্গা নদীপথও ঐতিহ্যবাহীভাবে নৌপথ হিসেবে বেশ সুপরিচিত। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীটি পশ্চিমবাংলার সুন্দরবন ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার পাশে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অঞ্চলটি ভারতের অন্ধপ্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি বেসিনের চেয়ে দ্বিগুণ তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ।

আসলেই হিরক রানীর এই দেশটিতে দিনে কয়েকবার মিঃ সেলুকাসকে ডেকে বলতে হয়, হায় সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!

এদিকে তালপট্টি ডুবে যাওয়াকে আল্লাহর রহমত হিসাবে বলেছেন এরশাদ। একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং বিশেষ করে এই দেশের একজন প্রাক্তন সেনাপ্রধানের মুখ থেকে এই ধরনের উক্তি।

এই সেই এরশাদ যিনি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে শুক্রবারে বিশেষ মসজিদে চলে যেতেন এবং তাঁর এই স্বপ্নের কথা মুসল্লিদের শোনাতেন। সরকারের ইন্টেলিজেন্সও কয়েক দিন আগে থেকেই সেই মসজিদে নিরাপত্তা সংক্রান্ত তল্লাশি চালাতেন। কারণ, তারাও জানতেন যে কয়েকদিন পর এরশাদ এই ধরনের স্বপ্নে আদিষ্ট হবেন !

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে তিনি আল্লাহর এই বিশেষ রহমতের কথা জানান।

সমুদ্র জয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এরশাদ বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের রহমত করেছেন। তাই আমরা সমুদ্র জয় করতে পেরেছি।’তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ আর নেই। এ দ্বীপের অবস্থানও নেই। পানির নিচে সব বিলীন হয়ে গেছে। তবে আমরা যে অংশটুক অর্জন করেছি সেখান থেকে আমরা বিপুল সংখ্যক মত্সসম্পদ আহরণ করতে পারবো।’

সমুদ্রগামী জাহাজের কাপ্তানগণ এক ধরনের চার্ট ব্যবহার করেন। তার নাম এডমিরালটি চার্ট। সেই চার্টে সমুদ্রের কোন জায়গায় কতটুকু পানির গভীরতা, কোন জায়গায় আছে কোন ডুবন্ত বস্তু, কোন জায়গায় কোন দ্বীপ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। তা দেখে জাহাজের কাপ্তানগণ বিশাল বিশাল জাহাজ নিয়ে অবলীলায় সমুদ্রে ঘুরে বেড়ান এবং নিরাপদে জাহাজকে কোন বন্দরে নিয়ে যান।

মংলা বন্দর এবং কলকাতা বন্দরের এই জায়গাগুলোর জন্যও তেমন ধরনের চার্ট রয়েছে।

এই চার্টের নম্বর ৮১৪, সংস্করন ১৯৯৬, সংশোধিত সংস্করণ ২০১০.

এই চার্টটি এবং এতদসংক্রান্ত কিছু তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন জোনায়েদ চৌধুরী।

এই চার্টটিতে অত্যন্ত জলজ্যান্তভাবে ঘব িগড়ড়ত্ব ওংষধহফ বা তালপট্টি দ্বীপটি রয়েছে !

চার্টের মধ্যে হলুদ অংশ স্থলভাগ যা সব সময় ভেসে থাকে। চার্টের সাদা অংশ হলো তুলনামূলক গভীর পানি।

হালকা নীল দিয়ে পানির অগভীর অংশকে দেখানো হয়েছে। সবুজাভ হলুদ দিয়ে সেই সব জায়গাকে দেখানো হয়েছে যা ভাটার সময় ভেসে ওঠে, কিন্তু জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়।

প্রতিটা স্থানের গভীরতা মিটার এককে পাশে লেখা রয়েছে। বড় অংকটি দিয়ে মিটার এবং পাশের ছোট অংকটি দিয়ে দশমাংশ বোঝানো হয়েছে। যেমন বড় তিনের পাশে ছোট ছয় থাকলে এর অর্থ হলো উক্ত স্থানের পানির গভীরতা ৩.৬ মিটার।

এবার অনেকটা ব-আকারের নিউ মুর আইল্যান্ডটির দিকে তাকান। মধ্যখানে নোঙরের আকৃতির হলুদ অংশটি হলো সেই অংশ যা জোয়ারের সময়েও ভেসে থাকে। বাকি অংশ জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়। জোয়ারে আংশিকভাবে তলিয়ে যাওয়ার সময় পানির সর্বোচ্চ গভীরতা হয় শূন্য দশমিক নয় মিটার। যা উক্ত চার্টে দেখানো হয়েছে বড় সাইজে শূন্য এবং পাশে নয় অংকটি লিখে। এখানে এরশাদদের জন্যে জোয়ারের সময় তালপট্টির বুকের উপরে রহমতের পানি ওঠে মাত্র ০.৯ মিটার। অর্থাত্ কোন ভরা চান্দের রাইতে জোয়ারের সময় তালপট্টি দ্বীপের শুকনো জায়গায় সুসজ্জিত কোন গার্লফ্রেন্ডকে দাঁড় করিয়ে এরশাদ যদি পানিতে নামেন তবে তাঁর কোমরের বেশি ডুববে না।

উক্ত স্থানে জোয়ার ভাটায় পানির উচ্চতার তারতম্য হয় বছরের বিভিন্ন সময় ভেদে ১.৮ মিটার থেকে ২.৬ মিটার। অর্থাত্ জোয়ারের সময় বেশীর ভাগ ডুবে গেলেও ভাটার সময় পুরো দ্বীপটি সমুদ্রতলা থেকে প্রায় এক মিটার উচু হয়ে ভেসে থাকার কথা। স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব বিবেচনায় এবং টেকনোলোজির বর্তমান সময়ে এই দ্বীপটিকে পুরো ভাসিয়ে ফেলা বা নিরাপদ উচু করে ফেলা মোটেই কঠিন নয়।

কেন এটাকে আমরা আমাদের নিজেদের দ্বীপ বলে দাবি করি। হাড়িভাঙা নদীর মধ্যস্রোত হলো বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সীমানা যা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। দেখুন এই মধ্য স্রোতটি যা দ্বীপের পশ্চিম দিক দিয়ে স্পষ্টভাবে প্রবাহিত হয়েছে । চার্টের সাদা অংশটি দ্বীপটিকে বাংলাদেশ অংশের দিকে রেখে অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে যেখানে পানির গভীরতা বেশি দেখা যাচ্ছে । এখানে সাদা অর্থাত্ গভীর পানি দেখানোর অর্থ হলো স্পষ্টভাবে মধ্যস্রোতটি এই বরাবর চলে গেছে। কাজেই এই দ্বীপটি স্পষ্টতই বাংলাদেশের ভাগে পড়ার কথা।

আমাদের মিডিয়াও আজ এ ব্যাপারে নীরব হয়ে গেছে। তারা এখন সমুদ্রের তেল-গ্যাসের সুখ-স্বপ্ন নিয়ে জাতিকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে পছন্দ করছে। গ্যাস-তেল কী পাবে বা কতটুকু পাবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, তালপট্টির ব্যাপারটি জাতিকে ভুলিয়ে দেয়া।

সবকিছু দেখে মনে হয়, এরশাদ-হাসিনা এই দুই ভাইবোনের ওপরে আসলেই আল্লাহর রহমত রয়েছে। তা না হলে এই ধরনের কথা বলে তারা কীভাবে এখনও এদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকে?

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244630
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:১১
আহমদ মুসা লিখেছেন : শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মনে প্রাণে ঘৃণা করার কারণেই তালপট্টি নিয়ে লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে।
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:২৮
190045
আমি মুসাফির লিখেছেন : তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কিছু অনুসারী ছাড়া হাসিনাকে চরম ভাবে ঘৃণা করে।
244638
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:৪৩
শফিউর রহমান লিখেছেন : বলে লাভ নাই ভাই। আমরা এমন এক জাতি, যারা "মা" পেয়েছি, কিন্তু তার ইজ্জত-আব্রু অন্যের কাছে বিকিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করি না। আমাদের দশা ইসরাইলের পাশে ফিলিস্তিনের মতো হলে তবেই হয়তো বুঝতে পারবো, তার আগে নয়।
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৯
190062
আমি মুসাফির লিখেছেন : আমাদের ঘাড়ে এমন এক নির্লজ্জ বেহায়া শাসক চড়ে বসেছে যা আমাদের সব সম্ব্রম শেষ করে দিল ।
আসলেই আপনার সুরেই বলতে হয় আমাদের কি এতটুকু তাপ লাগছে না যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দানবকে সরিয়ে দেই কবে আমাদের চৈতন্য ফিরবে?

অনেক ধন্যবাদ।
244673
১৪ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
মোদীর সহয়তা পাওয়ার জন্য, দ্বীপ ছেড়ে দিয়েছ।

১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪০
190186
আমি মুসাফির লিখেছেন : তালপট্টি নিয়ে বাংলাদেশে নোংরা রাজনীতি চললেও ওই দ্বীপটি নিয়ে এখন বিস্ময়কর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

ভারতের পাওয়া এই ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যেই পড়েছে দক্ষিণ তালপট্টি। যেখানে মজুদ রয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

কিন্তু বাংলাদেশের পাওয়া অংশে কী পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি। এ নিয়ে কেউ কোনো কথাও বলছেনা ।
244676
১৪ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৩
হতভাগা লিখেছেন : শুধু তো তালপট্টি দিয়েছে । পুরো দেশ দিয়ে দিলেও বা কি করার ছিল ।
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪২
190187
আমি মুসাফির লিখেছেন : ১৯৭০ সালে সমুদ্র তীরে সাইক্লোন ঝড়ে জেগে ওঠা নিউমুর আইল্যান্ড যেটি বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি নামে পরিচিত সেটির মালিকানা উভয় দেশ দাবি করে আসছিল। গবেষণা রিপোর্টটি বলছে ভারতের কৌশলগত দিক বিচার করেই এবং ভারতের দাবির ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের মালিকানা ভারতকে দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর ভারত এখন সময় সুযোগমত দ্বীপের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলন করতে পারবে। এছাড়া রায়ে ভারতের দ্বিতীয় সাফল্য হল যেহেতু বাংলাদেশ প্রায় বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পেয়েছে তাই ভারত সরকার অনেকটাই খুশি হয়েছে।
244755
১৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪৩
আনিস১৩ লিখেছেন : Munafiq. BAL has destroyed the glory of Bangladesh and it's sovereignty. Still some blind people support her like slave...
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪৩
190188
আমি মুসাফির লিখেছেন : বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের পুরোটাই বাংলাদেশের ছিল। রায়ের মাধ্যমে এখান থেকে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার ভারতকে দিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File