যেসব মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান দখল করেছে পশ্চিমারা
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১০ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৪০:২১ বিকাল
মুসলমানদের অবদানকে কোন সময় পশ্চিমা বা কাফের জগত ভালভাবে নেয়নি। নামের বিকৃতি ঘটিয়ে হলেও কৃতিত্বটা তাদেরই বলে প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে ।
নবীদের নাম পর্যন্ত এরা পরিবর্তন করে ফেলেছে।
যেমন ঃ
হযরত দাউদ আঃ কে বলে ডেভিড, হযরত ইব্রাহীম আঃ কে বলে আব্রাহাম, হযরত ইউসুফ আঃ কে বলে জোসেফ এমন আরো আছে যা মুসলমান মহামনিষি হিসাবে পরিচিত হলেও নামের বিকৃতি ঘটিয়ে তাদের পক্ষে নেয় ।
আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি এবং আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান আল-আযদীর মুসলিমগণ বিশ্বের মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা। উনারাই আলোকিত করেছেন আমাদের চিন্তাচেতনাকে, সভ্যতা-সংস্কৃতিকে, জীবন ও জগতকে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পাশ্চাত্যের অনেক গবেষক এ সব মুসলিম মনীষীর নামকে উপস্থাপন করেছেন বিকৃতভাবে। ফলে প্রাচ্যের লোকগুলো তাদের চিরচেনা এসব মনীষীকে পাশ্চাত্যের দেয়া নামে চিনতেও পারেন না। নিচে উনাদের কয়কজন কথা তুলে ধরা হলো :
(১) প্রথমেই ধরা যাক আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমির কথা। তিনি ছিলেন পার্সিয়ান (ইরানী) মুসলমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম একজন। তিনি একাধারে ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। ইউরোপীয়রা বিশেষত ল্যাটিন লেখকরা তার নামকে বিকৃত করে লিখছে “গরিটাস” বা “আল গরিদম” ।
(২) রসায়ন বিজ্ঞানী আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান আল-আযদীর কথা আমরা জানি। কেবল চিকিৎসা বিষয়েই জাবির প্রায় ৫০০ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রসায়নবিদদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক জাবির ইবনে হাইয়ানের প্রণীত ‘কিতাবুস সুসুম’ (Book of Poison) আরব ঔষধ বিজ্ঞানের অন্যতম উৎস। অথচ তাঁর নামটি বিকৃত করে পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা লিখেছে “জিবার” ।
(৩) আবূ ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দি ছিলেন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহশাস্ত্র, ইতিহাস, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, রাজনীতি, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি নানা বিষয়ে বিশারদ। তিনি ছিলেন গ্রিক, হিব্রু, ইরানি, সিরিয়াক এমনকি আরবি ভাষাতেও বুৎপত্তিসম্পন্ন। তিনি নানা বিষয়ে ২৬৫ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তার নাম বিকৃত করে তাকে পরিচিত করেছে “আল কিন্ডাস” নামে।
(৪) তেমনি জাফর ইবনে মুহম্মদ আবু মাশার আল বলখী একজন বিখ্যাত পার্সিয়ান জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, গণিতবিদ ছিলেন। তিনি আল ফালাকী, আবুল মাসার, ইবনে বলখী নামেও পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার নাম বিকৃত করে রাখা হয় “আল বুসার”এবং “আল বুক্সার” ।
(৫) কাগজের অন্যতম আবিষ্কারক ইউসুফ ইবনে ওমরের নাম ইংরেজি স্টাইলে রাখা হয়েছে “উমট” ।
(৬) আবু আব্দুল্লাহ। মুহম্মদ ইবনে জাবির ইবনে সিনান আ রাকী আল হারানী আস। সাবী আল-বাত্তানী ছিলেন একজন মশহুর জ্যোতির্বিদ এবং গণিতজ্ঞ। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার জন্য নিজস্ব মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বহু বছর ধরে জ্যোতির্বিদ্যায় প্রচলিত ভুলগুলো সংশোধন করে এই শাখার অনেক সংস্কার ও উন্নতিসাধন করেন। অথচ পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তাকে উল্লেখ করেছে “আল বাতেজনিয়াজ”, “আল বাতেজনি”, “আল বাতেনিয়াজ” ইত্যাদি নামে।
(৭) আবু বকর মুহম্মদ ইবনে যাকারিয়া আল রাজীর নাম কে না জানে। তিনি একজন পার্সিয়ান পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, দার্শনিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তিনি প্রায় দুশ’র মতো গ্রন্থ রচনা করেন, যার শ’খানেক চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর। তবে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে ‘আল জুদায়ী ওয়াল হাসবাহ’ নামক গ্রন্থটি। ইংরেজি ভাষাতেই ১৪৯৮ থেকে ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত এই গ্রন্থখানা মোট চল্লিশবার মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কিতাব আল মনসুরী নামে দশ খণ্ডে চিকৎসা গ্রন্থও প্রণয়ন করেন। এই মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানীর নাম ইউরোপীয়রা বিশেষত ল্যাটিন লেখকরা বিকৃত করে লিখছে “রাজেস” বা “রাজিজ” ।
(৮) আরব জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ আবু ইসহাক ইবরাহিম ইবনে ইয়াহিয়া আল নাক্কাসআল-জারক্বালী। তাঁর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ছকের (Astronomical Table) জন্য পাশ্চাত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
তাঁর Book of Tables ত্রয়োদশ শতকে রাজা আলফোন্সোর (King Alfonso X) নির্দেশে অনূদিত হয় এবং এর মাধ্যমে পাশ্চাত্যে গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যার পুনর্জন্ম হয়। তিনি অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্রের উন্নতিসাধন করেন এবং বুধগ্রহ সংক্রান্ত টলেমীর মতবাদে সংশোধনী আনেন। তাঁর নাম পাশ্চাত্য গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হয়েছে “মারজাকেল” নামে।
(৯) চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয় ইবনে সিনা কে। তার প্রকৃত নাম আবু আলী আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা। তার উপাধি হচ্ছে আল শেখ আল রইস। তিনি একাধারে পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, ভূগোলবিদ, হাফিজ, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, কবি, ইসলামি চিন্তাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ছিলেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর রচিত ১৬টি মৌলিক গ্রন্থের ১৫টিতে তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু যে গ্রন্থটি তাঁকে অমর করেছে তার নাম “কানুন ফি-তিব্ব” যা ছিল ৫ খণ্ডে এবং ৮০০ পরিচ্ছেদে।
এ গ্রন্থটি সমগ্র এশিয়া এবং ইউরোপে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত বিপুলভাবে সমাদৃত হলো। ইউরোপে এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইবেল (Bible of Medicine) নামে সমধিক পরিচিত। এজন্য তাঁকে অনেকে চিকিৎকদের চিকিৎসক (Doctor of doctors) বলে অভিহিত করেন। অথচ তার নামও বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তার নাম দিয়েছে “এভিসিনা” ।
(১০) আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ। তিনি ইবনে রুশদ নামে বেশি পরিচিত। তিনি একজন আন্দালুসীয়ান (স্পানিস) মুসলিম বিজ্ঞানী।
তিনি একাধারে ইসলামিক দার্শনিক, ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদ, যুক্তিবিদ, ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ, পদার্থবিদ ছিলেন। তাঁর নাম পাশ্চাত্য গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হয়েছে “এভেরুন” নামে।
(১১) আবূ মারওয়ান আব্দুল মালিক ইবনে জুহুর । তিনি ইবনে জুহুর নামেও পরিচিত। তিনি একজন মুসলিম পদার্থবিদ, শল্যচিকিৎসক, ঔষধ বিশেষজ্ঞ, ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন। পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তাঁর নাম বিকৃত করে রেখেছে “এভেনযোর” ।
(১২) প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, যুক্তিবিদ, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিদ, মহাকাশবিদ আবূ নাছের মুহম্মদ আল ফারাবী । তারা তার নাম বিকৃত করে রেখেছে “আল ফারাবিয়াস” ।
(১৩) প্রখ্যাত পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, প্রকৌশলী, গণিতবিদ, চিকিৎসাবিদ, চু বিশেষজ্ঞ, দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী, আবূ আলী আলহাছান ইবনে আল হাছান আল ইবনে হাইছাম। তিনি বসরায় জন্মগ্রহণ করায় আল বাসরী নামেও পরিচিত।
আলোকবিজ্ঞানে অসামান্য সংযোজন “কিতাবুল মানাজির”-এর ১৫-১৬ অধ্যায়ে জ্যোতির্বিদ্যার আলোচনা রেখেছেন। এছাড়া, তাঁর “মিযান আল-হিকমাহ।” (Balance of Wisdom) এবং “মাক্বাল ফি দ্য আল-ক্বামার” (On the Light of the Moon) গ্রন্থদ্বয়ে তিনি সর্বপ্রথম গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা চালান। তারা তার নাম বিকৃত করে রেখেছে “আল হ্যাজেন” ।
(১৪) প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ, মনোবিজ্ঞানী, কবি এবং বিজ্ঞানী আবূ বকর মুহম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আল সাইগ। তবে তিনি ইবনে বাজ্জাহ। নামে বেশি পরিচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তাঁর নাম বিকৃত করে রেখেছে “এভেমপেজ” ।
(১৫) আবু বকর মুহম্মদ ইবনে আব্দুল মালিক ইবনে মুহম্মদ ইবনে তোফায়েল আল কুসী আল আন্দালুসী । তবে তিনি ইবনে তোফায়েল নামে পরিচিত। তিনি একজন মুসলিম লেখক, উপন্যাসিক, দার্শনিক, ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদ ছিলেন। তারা তার নাম বিকৃত করে রেখেছে “আবু বাসের।”
(১৬) নুর আদ-দীন ইবনে ইসহাক আল-বেতরুগী। তিনি ইসলামী স্বর্ণযুগে মরক্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। তার নাম বিকৃত করে রেখেছে “আলপেটরাজিনাস।”
(১৭) আবূ হামিদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ আল গাজালী । তিনি একাধারে ধর্মতত্ত্ববিদ, দার্শনিক, মহাকাশবিদ, মনোবিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর নাম বিকৃত করে রেখেছে “আল গ্যাজেল।”
(১৮) আলী ইবনে আব্বাস আল মাজুসী। তিনি মাসউদী নামেও পরিচিত। তিনি একজন পার্সিয়ান পদার্থবিদ এবং মনোবিজ্ঞানী। তাঁর রচিত কিতাব আল মালিকি (Complete Book of the Medical Art)। তাঁর নাম বিকৃত করে রেখেছে “হ্যালী আব্বাস।” সূত্র : ইন্টারনেট
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৮১২ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ বাস্তবাতার আলোকে মন্তব্যের জন্য ।
বাস্তবধর্মী মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ।
সোনারবাংলা পত্রিকা এইসব আজেবাজে জিনিষ ছাপানো শুরু করেছে কবে থেকে কে জানে।
দির্ঘদিন ক্যালকুলাস এর মেীলিক উদ্ভাবন এর কৃতিত্ব নিউটন ও লিবনিটজ কে দেয়া হতো। এখন অবশ্য এই ক্ষেত্রে আল বাত্তানি ও আল বিরুনির অবদান স্বিকার করে নেয়া হচ্ছে।
তবেকি? আমার কাছেও বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান সংক্রান্ত ৫/৬ হাজার পেইজের ভলিউম আছে সময়ের অভাবে পড়া হয়ে উঠছে না। অনেক পুরুনো বই সম্ভবত ৬০/৭০ সালের হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন