ইবাদাত পর্ব (৩) ।
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ১০ জুলাই, ২০১৪, ০১:০১:১৫ দুপুর
আর একটি চাকরের উদাহরণ পেশ করা যাক।
মনিব তার চাকরদের জন্য যে ধরনের পোশাক নির্দিষ্ট করেছেন, মাপ-জোক ঠিক রেখে সে ঠিক সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে, বড় আদব ও যত্ন সহকারে সে মনিবের সামনে হাজির হয়, প্রত্যেকটি হুকুম শুনা মাত্রই মাথা নত করে শিরোধার্য করে নেয় যেন তার তুলনায় বেশী অনুগত চাকর আর কেউই নয় । সালাম দেবার সময় সে একেবারে সকলের নসিরে এসে দাড়ায় এবং মনিবের নাম জপবার ব্যাপারে সমস্ত চাকরের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও নিষ্ঠা প্রমাণ করে;
কিন্তু অন্যদিকে এ ব্যক্তি মনিবের দুশমন এবং বিদ্রোহীদের খেদমত করে,মনিবের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং মনিবের নাম পর্যন্ত দুনিয়া হতে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা যে চেষ্টাই করে এ হতভাগা তার সহযোগীতা করে; রাতের আধারে সে মনিবের ঘরে সিদ কাটে এবং ভোর হলে বড় অনুগত চাকরটির মত হাত বেধে মনিবের সামনে হাজির হয় । এ চাকরিট সম্পর্কে আমরা মুনাফিক, বিদ্রোহী ও নিমকহারাম বলতে দ্বিধা করব না।
কিন্তু আল্লাহর কোন চাকর যখন এ ধরনের হাস্যকর আচরণ করতে থাকে তখন তাকে আমরা কাউকে 'পীর সাহেব', কাউকে 'হযরত মাওলানা', কাউকে 'বড় কামেল', 'পরহেযগার' প্রভুতি নামে ভুষিত করি।
এর কারণ আমরা তাদের মুখে মাপ মত লম্বা দাড়ি দেখি, তাদের পায়জামা পায়ের গিরার ২" উপরে দেখি, তাদের কপালে নামাযের কালো দাগ দেখি এবং তাদের লম্বা লম্বা নামায ও মোটা মোটা দানার তসবীহ দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি; এদেরকে বড় দ্বীনদার ও ইবাদাতকারী বলে মনে করি। এ ভুল শুধু এ জন্যই যে, ইবাদাত ও দ্বীনদারীর ভুল অর্থই আমাদের মনে বদ্ধমুল হয়ে আছে।
আমরা মনে করি হাত বেধে কেবলা মুখী হয়ে দাড়ানো, হাটুর উপর হাত রেখে মাথা নত করা, মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারন করা কাজই প্রকৃত ইবাদাত।
হয়ত আমরা মনে করি রমযানের ১ম দিন হতে শাওয়ালের চাদ উঠা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখার নাম ইবাদাত।
হয়ত আমরা মনে করি কুরআন শরীফের কয়েকরুকু পাঠ করার নাম ইবাদাত এবং হয়ত বুঝে থাকি মক্কা শরীফে গিয়ে কা'বা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদাত।
মোট কথা এ ধরনের বাহ্যিক রুপকে আমরা ইবাদাত মনে করে নিয়েছি এবং এ ধরনের বাহ্যিক রুপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো কেউ সমাধা করলেই আমরা মনে করি যে ইবাদাত সুসম্পন্ন করেছে এবং وَمَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَالۡاِنۡسَ اِلَّا لِيَعۡبُدُوۡن এর উদ্দেশ্য পুর্ণ হয়েছে। তাই জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে সে একেবারে আযাদ - নিজের খেয়াল খুশী অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারে।
চলবে..........
বিষয়: বিবিধ
১০২৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন