ইবাদাতঃ পর্ব (২)
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০৯ জুলাই, ২০১৪, ০৪:১৫:০৩ বিকাল
আগে ইবদাতের অর্থ আলোচনা করেছি । এবার সেই অর্থটা সামনে রেখে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করি।
একটি চাকর যদি মনিবের নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে বরং তার সামনে কেবল হাত বেধে দাড়িয়ে থাকে, লক্ষ বার কেবল তার নাম জপে, তবে এ চাকরটি আমরা কি বলব?
মনিব তাকে অন্যান্য মানুষের প্রাপ্য আদায় করতে বলে কিন্তু সে কেবল সেখানেই দাড়িয়ে থেকে মনিবের সামনে মাথা নত করে দশবার সালাম করে এবং আবার হাত বেধে দাড়ায়।
মনিব তাকে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে আদেশ করে কিন্তু সে সেখান থেকে একটুও নড়ে না বরং সে কেবল সিজদাহ করতে থাকে।
মনিব তাকে চোরের হাত কাটতে বলেন কিন্তু সে দাড়িয়ে থেকে সুললিত কন্ঠে ২০বার উচ্চারন করতে থাকে -"চোরের হাত কাট" কিন্তু সে একবারও এমন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে না যার অধীনে চোরের হাত কাটা সম্ভব হবে।
এমন চাকরকে কি আমরা বলতে পারি যে, সে প্রকৃতপক্ষে মনিবের বন্দেগী ও ইবাদাত করছে?
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লাহর যে চাকর এরুপ আচরণ করে তাকে আমি বা আমরা "বড় আবেদ" (ইবাদতকারী,বুযুর্গ ইত্যাদি) নামে অভিহিত করি। এরা সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলার কত শত হুকুম পাঠ করে, কিন্তু সে গুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটুও চেষ্টা করে না।
বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, আল্লাহর নামে হাজার দানা তাসবীহ জপতে থাকে এবং মধুর কন্ঠে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করতে থাকে। আমরা এ ধরনের কার্যাবলী দেখি আর বিষ্মিত হয়ে বলিঃ " ও'হে! লোকটা কত বড় আবেদ আর কত বড় পরহেযগার।"
আমাদের এই ভুল ধারণার মুল কারণ হলো আমরা 'ইবাদাত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ মোটেই জানি না।
আর এক জন চাকর সে রাত-দিন পরের কাজ করে, অন্যের আদেশ শুনে এবং পালন করে, অন্যের আইন মেনে চলে এবং তার প্রকৃত মনিবের যত আদেশ ও ফরমানই হোক না কেন তার বিরোধীতা করে। কিন্তু সালাম দেবার সময় সে তার প্রকৃত মনিবের সামনে উপস্থিত হয় এবং মুখে কেবল তার নাম জপতে থাকে। এমন চাকরের সালাম অবশ্যই আমরা তার মুখে ছুড়ে মারতে দ্বিধা করব না।
আমরা এ কথাও বলব যে চাকরটি ডাহা মিথ্যাবাদী ও বেঈমান; কারণ সে আমাদের বেতন খেয়ে অন্যের তাবেদারী করে, মুখে আমাদের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে সে অন্যের কাজ করে বেড়ায় ।
কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা ! যারা রাত-দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করে, কাফের ও মুশরিকদের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং নিজেদের বাস্তব কর্ম জীবনে আল্লাহর বিধানের কোন পরোয়া করে না; তাদের নামাজ-রোযা,তাসবীহ পাঠ, কুরআন তেলাওয়াত, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে আমরা ইবাদাত বলে মনে করি। এ ভুল ধারণার মুল কারণ ইবাদাত শব্দের প্রকৃত অর্থ না জানা।
চলবে.................
বিষয়: বিবিধ
৮৩৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন