ভিশু ভায়ের দেয়া বিষয় অনুযায়ী সুরা ইউসুফের ৩৩-৩৪ নং আয়াত।
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০৭ জুলাই, ২০১৪, ১২:৫৫:০৯ দুপুর
৩৩.) ইউসুফ বললো, “হে আমার রব! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
৩৪.) ---তাঁর রব তাঁর দোয়া কবুল করলেন এবং তাদের অপকৌশল থেকে তাঁকে রক্ষা করলেন। অবশ্যি তিনি সবার কথা শোনেন এবং সবকিছু জানেন।
ব্যাখ্যা ঃ
এ অবস্থা থেকে তদানীন্তন মিসরের উচ্চ ও অভিজাত সমাজে নৈতিকতার অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল তা অনুমান করা যায়। একথা সুস্পষ্ট, আযীযের স্ত্রী যেসব মহিলাকে দাওয়াত দিয়েছিল তারা নিশ্চয়ই নগরের আমীর-উমরাহ ও বড় বড় সরকারী কর্মকর্তাদের বেগমই ছিল।
এসব উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ভদ্র মহিলার সামনে সে নিজের প্রিয় যুবককে পেশ করলো। তার সুদর্শন যৌবনোদ্ভিন্ন দেহ সুষমা দেখিয়ে সে তাদের কাছ থেকে এ স্বীকৃতি আদায় করতে চাইলো যে, এমন সুন্দর যুবকের জন্য যদি আমি পাগল না হয়ে যাই তাহলে আর কী হবো!
তারপর এসব পদস্থ ব্যক্তিবর্গের স্ত্রী-কন্যারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে যেন একথার সত্যতা প্রমাণ করলো যে, সত্যিই এ ধরনের অবস্থায় তাদের প্রত্যেকেই ঠিক তাই করতো যা আযীযের স্ত্রী করেছে।
আবার অভিজাত মহিলাদের এ ভরা মজলিসে মেজবান সাহেবা প্রকাশ্যে এ সংকল্প ঘোষণা করতে একটুও লজ্জা অনুভব করলো না যে, যদি এ সুন্দর যুবক তার কামনার ক্রীড়নক হতে রাজি না হয় তাহলে সে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে।
এ সবকিছুই একথা প্রমাণ করে যে ইউরোপ ও আমেরিকা এবং তাদের প্রাচ্যদেশীয় অন্ধ অনুসারীরা আজ যে নারী স্বাধীনতা এবং নারীদের অবাধ বিচরণ ও মেলামেশাকে বিংশ শতাব্দীর প্রগতিশীলতার অবদান মনে করে থাকে তা আসলে কোন নতুন জিনিস নয়, অনেক পুরাতন, প্রাচীন জিনিস।
অতি প্রাচীনকালে দাকিয়ানুসের শাসনেরও বহুশত বছর আগে মিসরে ঠিক একই রকম শান-শওকতের সাথে এর প্রচলন ছিল যেমন আজকের এ “প্রগতিশীলতার” যুগে আছে।
সে সময় হযরত ইউসুফ যেসব অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন এ আয়াতগুলো আমাদের সামনে তার একটি অদ্ভূত চিত্র তুলে ধরেছে।
উনিশ বিশ বছরের একটি সুন্দর যুবক। বেদুইন জীবনের উদ্দামতায় লালিত বলিষ্ঠ ও সুঠামদেহী। আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবাস জীবন, দেশান্তর ও বলপূর্বক দাসত্বের পর্যায় অতিক্রম করার পর ভাগ্য তাঁকে দুনিয়ার বৃহত্তম সুসভ্য রাষ্ট্রের রাজধানীতে একজন উচ্চ রাষ্ট্রীয় পদমর্যদা সম্পন্ন ব্যক্তির বাড়িতে টেনে এনেছে।
এখানে এ বাড়ির যে বেগম সাহেবার সাথে সকাল-বিকাল তাঁকে ওঠাবসা করতে হয় সে-ই প্রথমে তাঁর পেছনে লাগে। তারপর তাঁর সৌন্দর্যের আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র রাষ্ট্রে। সারা শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়েরা তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। এখন তাঁর চতুর্দিকে সবসময় শত শত সুন্দর জাল বিছানা থাকে তাঁকে আটকাবার জন্য। তাঁর ভাবাবেগকে উসকিয়ে দেবার এবং তাঁর ধার্মিকতাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার জন্য সব ধরনের কৌশল ও ফন্দি আঁটা হতে থাকে।
তিনি যেদিকে যান সেদিকেই দেখতে পান পাপ তার সমস্ত চাকচিক্য ও মোহনীয়তা নিয়ে দরজা উন্মুক্ত করে তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে অসৎ ও অশালীন করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু এখানে সুযোগই তাঁকে খুঁজে ফিরছে এবং সবসময় ওঁৎ পেতে আছে যখনই তাঁর মনে অসৎকাজের প্রতি সামান্যতম ঝোঁকপ্রবণতা দেখা দেবে তখনই সে তাঁর সামনে নিজেকে পেশ করে দেবে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা তিনি এক মহা আতংকের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। কখনো মাত্র এক লহমার জন্য যদি তাঁর ইচ্ছা ও সংকল্পের বাঁধন সামান্যতম ঢিলে হয়ে যায় তাহলে পাপের যে অসংখ্য দরজা তাঁর অপেক্ষায় হরহামেশা খোলা আছে তার যে কোন একটির মধ্য দিয়ে তিনি ভেতরে প্রবেশ করে যেতে পারেন।
এ অবস্থায় এ আল্লাহ বিশ্বাসী যুবক যে সাফল্যের সাথে এসব শয়তানী প্ররোচণার মোকাবিলা করেছেন তা এমনিতেই কম প্রশংসনীয় নয়। কিন্তু এ সর্বোচ্চ মানের আত্মসংযমের পরিচয় দেবার পর আত্মোপলব্ধি ও চিন্তার বিশুদ্ধতারও তিনি চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন।
এমন নজীরবিহীন পরহেজগারীর দৃষ্টান্ত স্থাপনের পরও তাঁর মনে কখনো এ মর্মে অহমিকা জাগেনি যে, “বাহ! কত মজবুত আমার চরিত্র! এতো সুন্দরী ও যুবতী মেয়েরা আমার প্রেমে পাগলপারা কিন্তু এরপরও আমার পদস্খলন হয়নি।” বরং এর পরিবর্তে তিনি নিজের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে ভয়ে কেঁপে উঠেছেন এবং অত্যন্ত দ্বীনতার সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে বলেছেন, হে আমার রব! আমি একজন দুর্বল মানুষ। এ অসংখ্য অগণিত প্ররোচণার মোকাবিলা করার শক্তি আমার কোথায়! তুমি আমাকে সহায়তা দান করো এবং আমাকে বাঁচাও। আমি ভয় করছি আমার পা পিছলে না যায়--- আসলে এটি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের নৈতিক প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় অধ্যায় ছিল।
বিশ্বস্ততা, আমানতদারী, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, সত্যনিষ্ঠা, অকপটতা, সংযম ও চিন্তার ভারসাম্যের অসাধারণ গুণাবলী এ পর্যন্ত তাঁর মধ্যে সুপ্ত ছিল এবং এ সম্পর্কে তিনি নিজেও বেখবর ছিলেন। এ কঠোর পরীক্ষার যুগে এ গুণগুলো সবই তাঁর মধ্যে বিকশিত হয়ে উঠলো। এগুলো পূর্ণ শক্তিতে কাজ করতে থাকলো। তিনি নিজেও জানতে পারলেন তাঁর মধ্যে কোন্ কোন্ শক্তি আছে এবং তাদেরকে তিনি কোন্ কোন্ কাজে লাগাতে পারেন।
ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৎচরিত্রকে এমন শক্তিমত্তা ও দৃঢ়তা দান করা হয় যার ফলে তার মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট নারী সমাজের সমস্ত অপকৌশলই ব্যর্থ হয়ে গেছে। তাছাড়া এ অর্থেও রক্ষা করা যে, আল্লাহর ইচ্ছায় কারাগারের দরজা তাঁর জন্য খুলে দেয়া হয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন