হাওয়া ভবন ও তারেক জিয়া এখন তো নেই তাহলে এত লুটপাট করছে কারা ??

লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০১ জুলাই, ২০১৪, ০১:৫৭:৩৭ দুপুর



হাওয়া ভবন-হাওয়া ভবন আর তারেক রহমান-তারেক রহমান শুনতে শুনতে মানুষের কান প্রায় ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। যত দুরাচার-অনাচার, দেশ থেকে যত অর্থপাচার সব কিছুর মূলে ওই হাওয়া ভবন আর তারেক রহমান।

আওয়ামী কলের গানে অবিরাম বেজেছে সেই একই গানের কলি; এখনো বেজেই চলছে বিরতিহীন। সেই কলের গানে কণ্ঠ আছে প্রধানমন্ত্রীর, আছে লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টারের, এমনকি শাসক লীগের গুরুত্বপূর্ণ-গুরুত্বহীন নেতা, আতিনেতা-পাতিনেতার।

এখন হাওয়া ভবন নেই, তারেক রহমানও নেই। কিন্তু দুর্নীতি-দুরাচার-দুঃশাসন আছে, অনাচার আছে, আছে বিদেশে অর্থপাচার। শুধু আছে নয়; রেকর্ড বলছে সব কিছু আরও বেড়েছে। কেমন করে লীগের 'পুণ্য'-'পবিত্র' শাসনে এসব ঘটছে? কোন সে দুরাত্দা, এসব 'অপকর্ম' করে শাসক লীগের খোলস উন্মোচন করে দিচ্ছে?

গত ক'বছর ধরে যেভাবে 'ঢোলক' বেজেছে, তাতে তো এটাই মনে হওয়ার কথা যে, শাসক লীগের সবাই কামেল পীর-ফকির কিংবা দরবেশ! শয়তান গোত্রের কারও এখানে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। তাহলে এদের রাজত্বকালে বর্ধিত হারে 'শয়তানীগুলো' করছে কে বা কারা? জনমনে এই প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়, অস্বাভাবিকও নয়।

মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার কেলেঙ্কারির তিনটি ভয়ঙ্কর বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।

একটি বোমা ফাটিয়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক' (এসএনবি) এবং গত ২৫ জুন বাংলাদেশি মিডিয়ায়

দ্বিতীয় যে বিধ্বংসী বোমাটি ফেটেছে তা ইউএনডিপির। সুইস ব্যাংকের 'ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৩' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬২ শতাংশ।

এতে জানানো হয়েছে যে, ২০১৩ সাল থেকে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের কমপক্ষে ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রয়েছে, যা প্রায় ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা তিন হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১২ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ২২ কোটি ৮৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার গচ্ছিত ছিল, যা বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সমান। অর্থাৎ শেখ হাসিনার বিগত লীগ সরকারের শেষ বছরেই (২০১২-২০১৩) 'সাধু-সন্ন্যাসীরা' একমাত্র সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতেই সরিয়েছে আগেকার তুলনায় এক হাজার ২৫৪ কোটি টাকা বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লুকানো টাকার বাইরের এই হিসাব।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ওই সব দেশেও বাংলাদেশের টাকা পাচার হয়েছে। আবার সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান নিজের নামের বদলে যদি অন্যের নামে কোনো অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি।

সব সময় এটা ধারণা করা হয় যে, লুটেরারা অধিকাংশ পাচারকৃত অর্থই বেনামে গচ্ছিত রাখে। সেই টাকার হিসাব নাকি কখনোই জানার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেনামে জমানো অর্থ যোগ করলে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি দুর্বৃত্তদের আরও বিপুল অর্থ লুকোনোর খবর পাওয়া যেত। বলা হয়ে থাকে, নানা কারণে নিজের টাকা পাচারকারীরাও ভোগ করতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বলেছেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত সব টাকাই পাচার হওয়া টাকা নয়। বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশিও তাদের বৈধ টাকা সুইস ব্যাংকে রাখেন। কিন্তু সাবেক গভর্নর এই বিষয়টি পরিষ্কার করেননি যে, সেই বৈধ টাকা গচ্ছিত টাকার কত পার্সেন্ট হতে পারে! বড়জোর আট-দশ-পনেরো পার্সেন্ট। বাকিটা?

এবার দ্বিতীয় বোমা প্রসঙ্গ। উন্নয়নশীল ৮টি দেশ থেকে অর্থ পাচারবিষয়ক জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে পাচার হচ্ছে ৬২৪০ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮-২০১৩ ওই দশ বছরের একটি বছরও নেই, যে বছর টাকা পাচার হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই এই অর্থপাচার চলছে। গত প্রায় ৪০ বছরে বাংলাদেশ থেকে এভাবে পাচার হয়ে গেছে তিন লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ মোট দেশজ উৎপাদনের ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। চার দশকের এই হিসাব অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার দশ বছরের শাসনকালও বাদ নেই। দুই আমলেই পাচারের পরিমাণ গড়ানুপাতে সমান সমান।

এদিকে তৃতীয় বোমাটি গত বছরের শেষ দিককার। ফাটিয়েছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (ডিএফআই)। তাতে বলা হয়, ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০১০ সালে পাচার করা হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এক বছরে দেশের টাকা বিদেশে পাচারের দুর্বৃত্তায়নে 'উন্নতি' হয়েছে ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের অন্যতম পথ হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কম বা বেশি দেখানো। এই মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের হার হচ্ছে ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ কাজটি সরকারের সর্বোচ্চমহল, মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং সংশ্লিষ্ট আমলারা ছাড়া আর কে করতে পারে? বাকি ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ পাচার করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে এই হুন্ডি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

এখন দেখার বিষয় হলো ভারত সরকার তাদের সুইস ব্যাংকের টাকা পাচারকারীদের সনাক্ত করার জন্য চিঠি দিয়াচে সুইস ব্যাংকে আমাদের সরকার কি পারবে তাদের সনাক্ত করার জন্য তেমন পদক্ষেপ নিতে ?

নিচের লিংটি ভারত সরকারের নেয়া পদক্ষেপ।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

৯৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File