নব্য ঘসেটি বেগমদের কি চরম পরিণতি বরণকারী ঘসেটি বেগম ও তার দোসরদের কথা মনে পড়ে না??
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ২৩ জুন, ২০১৪, ০৬:২২:১৫ সন্ধ্যা
যুগে যুগে যে বা যারা জাতির সাথে মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে পলাশীর প্রান্তরে সেই ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতকদের চরম পরিণতির কথাটা মাথায় রাখা উচিত কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব কথা এই দুষ্টদের তখন আর খেয়াল থাকে না তাই অনিবার্য পরিণতি যখন সামনে আসে তখন এদের ভুল ভাঙে কিন্তু ততক্ষনে তার সব শেষ হয়ে যায় ।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় এ কথা কারো অজানা নয়। এইদিন এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতকের কারণে বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাহ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এক প্রহসনমূলক যুদ্ধে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের চোরাগলি ধরেই ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী দিল্লির মসনদ দখল করার মধ্যদিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ দখলদারিত্ব কায়েম করে। উপমহাদেশের মুসলমান ও নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও স্বাধীনচেতা শাসকদের দুর্দিনের সূচনা হয়।
২৩ জুন এক শিক্ষণীয় ট্র্যাজেডির দিন। ইতিহাসের এই দিনটিকে স্মরণ করলে কোন দেশপ্রেমিক ক্ষমতার লোভে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলানোর কথা চিন্তা করতে পারেন না।
ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ঐদিন যারা পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করে নবাব সিরাজদ্দৌলাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজের জন্মভূমিকে বিদেশী শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের পরিণতি ভালো হয়নি।
এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া যায় দেশ উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে শুধু আদালতে আখিরাতে নয় এই দুনিয়াতেও শাস্তি পেতে হয়। কয়েকজন বিশ্বাসঘাতকের পরিণতি তুলে ধরা হলো।
এ যুগের বিশ্বাসঘাতকরা তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক সঙ্কটই কেটে যাবে।
মীর জাফর আলী খান : এই বিশ্বাসঘাতকের স্বপ্ন ছিল সে বাংলা বিহার ঊড়িষ্যার নবাব হবে। এই ইচ্ছা পূরণ করতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় মীর জাফর। তার এ ইচ্ছা পূরণ করতেই পলাশীর প্রান্তরে সে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। লর্ড ক্লাইভের তিন হাজার সদস্যের সেনাবাহিনীর কাছে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরাজিত হয় নবাব সিরাজুদ্দৌলার এ বিশাল বাহিনী। সুচতুর ক্লাইভ যুদ্ধের পর মীর জাফরকে সিংহাসনে বসায় কিন্তু ক্ষমতা রাখে নিজের হাতে। কিছুদিন পর তার ইংরেজ প্রভুরা এ বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করতে পারে না। এ বিশ্বাসঘাতককে তারা ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। ইংরেজরা ভাবে যে ব্যক্তি সামান্য ক্ষমতার লোভে তার দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তারা সাতসাগর তের নদীর ওপার থেকে এসে তাকে বিশ্বাস করবে কোন ভরসায়।
নবাবী চলে যাওয়ার পর সে দারুণ অর্থ কষ্টে পরে। মীর জাফর আলী খান কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়। রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক তান্ত্রিকের পরামর্শে হিন্দু দেবীর মূর্তির পা ধোঁয়া পানি খাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বেঈমান অবস্থায় মারা যায় এ বিশ্বাসঘাতক।
মীর কাসিম : পলাশীর আরেক বিশ্বাসঘাতক মীর কাসিম। ব্রিটিশদের তাঁবেদারী করে মীর জাফরের পর নবাব হতে পারলেও এক পর্যায়ে তাকেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি। মীর কাসিম আলী খান নবাব হওয়ার পর ইংরেজদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। তার সাথে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মীর কাসিমের সাথে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির যুদ্ধ হয় যা ইতিহাসে “বক্সারের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দিল্লি পালিয়ে যান মীর কাসিম। অর্থ কষ্টে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। তার নাবালক দুই সন্তান দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে তার জন্য খাবার সংগ্রহ করতো। তারা এক সন্ধ্যায় ভিক্ষা করে ফিরার সময় ইংরেজ সৈনিকদের গুলিতে নিহত হয়। নাবালক কিশোর কিশোরীকে হত্যার দায় এড়াতে ইংরেজরা প্রচার করে অন্ধকারে বাঘ ভেবে ভুল করে তাদের গুলি করেছে সিপাহিরা। মীর কাসিম অর্থ কষ্টে অনাহারে দিল্লি জামে মসজিদের নিকট মৃত্যুবরণ করেন।
ঘসেটি বেগম : ঘষেটি বেগম ছিলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলার আপন খালা। তার স্বপ্ন ছিল পিতা আলীবর্দী খাঁর ইন্তিকালের পর তিনি হবেন বাংলার প্রথম মহিলা নবাব। এই ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনিও হাত মেলান ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে। প্রাসাদের সকল গোপনীয় তথ্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পাচার করতেন এই উচ্চভিলাষী বিশ্বাসঘাতক নবাব নন্দিনী। পলাশী’র যুদ্ধের পর মীরজাফর পুত্র মীরন বুঝতে পারে তার পিতার নবাব হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘষেটি বেগম। তাই মীরন চক্রান্ত করে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে ঘসেটি বেগম’কে হত্যা করে।
মীর মীরন : মীর জাফরের পুত্র মীরন। সে পলাশীর যুদ্ধের আরেক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী। তার নির্দেশেই মোহাম্মাদী বেগ নির্মমভাবে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে হত্যা করে। মীরনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।
জগৎ শেঠ : কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রের প্রধানতম নায়ক এই জগৎ শেঠ। এই কুঠিরে বসেই আঁকা হয় পলাশী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফল তাকে হাড়ে হাড়ে ভোগ করতে হয়। পলাশীর যুদ্ধের পর ষড়যন্ত্রকারীরা মেতে উঠে স্বার্থের দ্বন্দ্বে। মীর কাসিমের নির্দেশে বিহারের মুঙ্গের দুর্গ থেকে বস্তা বন্দী করে তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়। নবাবী আমলের এ ধনকুবে আরো সম্পদের লোভে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। তার পাপের শাস্তি তাকে পেতে হয় পানিতে ডুবে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ পাওয়ার মাধ্যমে।
উমিচাঁদ : কাশিমবাজার ষড়যন্ত্রের আরেক নায়ক উমিচাঁদ। দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে উমিচাঁদ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যোগ দিয়েছিল। সেই ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিই তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনে। কোম্পানি উমিচাঁদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। কপর্দকহীন নিঃস্ব অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নন্দকুমার : আরেক বিশ্বাসঘাতক নন্দকুমারকেও উমিচাঁদের পরিণতি বরণ করতে হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
লর্ড ক্লাইভ : বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধান ছিলেন লর্ড ক্লাইভ। সে পলাশীর যুদ্ধের আগে একটি স্বাধীন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশটির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হরণের প্রধান খলনায়ক। তার লুটেরা বাহিনী যুদ্ধপরবর্তী সময়ে হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজসহ বিবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়। নবাব পরিবারের সাথে তার নিষ্ঠুর আচরণে আজো কেঁপে উঠে যে কেনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী লুটেরার শেষ জীবন কাটে অর্থকষ্টে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজ ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ হউস-অব-কমন্স’এর সদস্যরাও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন।
অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে হউস-অব-লর্ডস। দীর্ঘদিন এই তদন্ত কমিটির শুনানিতে তাকে অংশ নিতে হয় এবং আনীত অভিযোগ মোকাবেলায় আইনি খরচ মেটাতে লুটকৃত বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকার তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। শেষ জীবনে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ক্লাইভ এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। ক্লাইভ হতদরিদ্র অবস্থায় চরম হতাশায় আত্মহত্যা করে।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
২৪৭৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা ক্ষমতার জন্য সমাজে হিংসা আর হানাহানি তৈরী করে তাদের ও সেই হিংসা ধ্বংস করবে।
ধন্যবাদ।
এরা ঘটনা ঘটানোর ২৫-৩০ বছর পর মারা গেলেও বাঙলা পরাধীন হয়ে থাকে বাকীটা সময়ও ।
নব্য ঘসেটি বেগমদের কিছু একটা তো হবেই , তবে যারা তাদের হাতে সাফার করেছে তাদের সাফারিংস কত দীর্ঘ হয় সেটাই কথা ।
নব্য কুচক্রী-প্রতারকদের মানুষ চিরকাল ঘৃণাই করতে থাকবে, দিতে থাকবে অভিশাপ! আর সংশোধিত না হলে তো পরকালের সুব্যবস্থাপনা আছেই!
আমীন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন