নিশ্চয় পড়ে ভাল লাগবে এক বিরল দানের কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০৫ মে, ২০১৪, ০২:২৬:১৮ দুপুর
দেশজুড়ে চলছে চরম দুর্ভি। মদীনার ঘরে চলছে হাহাকার। খাবারের তীব্র অভাব। মদীনার বেশির ভাগ মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাই মানুষ পাগলের মতো ছুটছে খাবারের খোঁজে। কেউ কেউ ছুটছে কাজের সন্ধানে। কিন্তু কে দেবে কাজ? কোথাও কাজ নেই। নেই খাবারও। চারদিকে চলছে এক ভয়ানক দুর্ভি। শিশুরা খাবারের জন্য চিৎকার করে কাঁদছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। শিশুদের অনেকে কান্নার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে। খাবারের অভাবে অনেক শিশুর শরীর শুকিয়ে কঙ্কালরূপ ধারণ করেছে। কে দেখবে এসব অবুঝ শিশুদের। ওদের মা-বাবারা আজ বড় অসহায়। না খেয়ে খেয়ে তারাও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শহরের ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে খাবারের চালান নিয়ে আসছে। তবে তা সাথে সাথেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধনী লোকেরা খাবার নিয়ে মজুত করছে। আর সওদাগরগণ এসব খাবার কিনে নিয়ে কালোবাজারি করছে। ফলে দুর্বল ও অভাবী লোকেরা খাবার সংগ্রহ করতে পারছে না। কী আর করবে এসব দীন-হীন মানুষগুলো? কিভাবে বাঁচবে ওরা? তারা কোথায় পাবে খাবার?
ফলে দিন যত যাচ্ছে অসহায় মানুষের হাহাকার তত বাড়ছে। মদীনার অলিতে-গলিতে কেবল রোনাজারি শোনা যাচ্ছে। চারদিকে বুভুু মানুষ আর জীর্ণ-শীর্ণ শিশুদের দল চোখে পড়ছে। অসহায় মায়েরা পেটে পাথর বেঁধে অবুঝ বাচ্চাদের বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদছে। বাবা তার অসহায় অবস্থার জন্য বুক চাপড়াচ্ছে। শেষমেশ সবাই তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে। এখন একমাত্র ভরসা সরকার। তারা যদি সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন তবে সমস্যা দূর হতে পারে। দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে গেল। দুঃখের আঁধার যেন আর শেষ হয় না, বরং তা দিনকে দিন বাড়ছে। এমন সময় একদিন মদীনায় ঘটল এক বিস্ময়কর ঘটনা। মদীনার রাস্তায় হঠাৎ উটের এক বড় কাফেলা দেখা গেল। সিরিয়া থেকে গম, তেল, আর মনাক্কা উটের কাফেলা ঢুকল মদীনায়। এক হাজার উটের বিশাল সেই কাফেলা। উটের কাফেলা দেখে নিরাশ মানুষগুলো উৎফুল্ল হলো। খুশিতে তাদের বুক ভরে উঠল। তারা ভাবল, এবার হয়তো একটা সুরাহা হবে। খাবারের অভাব হয়তোবা খানিকটা ঘুচবে। কিন্তু সবার কাছে একটাই প্রশ্ন। কোথা থেকে এলো এত বড় কাফেলা? কারা এই কাফেলা নিয়ে এলো?
কাফেলা এগিয়ে আসছে। সবার চোখ স্থির হয়ে আছে কাফেলার দিকে। দেখতে দেখতে উটের কাফেলা এক জায়গায় এসে থামল। তারা এবার অবাক হলো। কাফেলা থামল হজরত উসমান (রা.)-এর বাড়ির সামনে। মদীনার ধনী ব্যবসায়ী হজরত উসমান (রা.)। অতিশয় দয়ালু ও দানশীল মানুষ তিনি। এসব মালামাল যে উসমান (রা.) নিয়ে এসেছেন তা বুঝতে কারো আর বাকি রইল না। উটের কাফেলা থামতে দেরী। ধনী ব্যবসায়ী আর সওদাগরগণ সেখানে ভীড় জমাতে দেরী হলো না। তাদের সবাইকে মহাখুশি মনে হলো। ব্যবসায়ীদের খুশি হবার কারণও ছিল। অনেক মালামাল এসেছে মদীনায়। এবার ভালো মুনাফা হবে। মদীনার অগণিত অভাবী মানুষ উসমান (রা.)-এর বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে ভীড় জমাল। তবে ব্যবসায়ীদের চাপে তারা কাছে ঘেঁষতে পারল না। সওদাগরগণ কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে গম, তেল আর মনাক্কার দাম নিয়ে দর কষাকষি করল। নানাজন নানা দাম হাঁকল। ফলে দ্রব্যের দাম বেড়ে গেল ।
হজরত উসমান (রা.) দূর থেকে দেখছিলেন। ব্যবসায়ীদের লোভ দেখে তিনি হতাশ হলেন। এবার তিনি মুখ খুললেন। উসমান (রা.) ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘শোন ব্যবসায়ী ভাইয়েরা। তোমরা আমার পণ্যের যে দাম হাঁকিয়েছ তা বেশ কম হয়েছে। আমি এ দামে পণ্য বিক্রি করছি না। আমার মালের আরও বেশি দাম চাই।’
উসমান (রা.) এর কথা শুনে সওদাগররা অবাক হলো। তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। উসমান (রা.) সবার পরিচিতি। তাঁর স্বভাব চরিত্র সবাই জানে। তিনি মালের দাম নিয়ে অমন কথা আগে কোনোদিন বলেননি। অথচ আজ তাঁর মনোভাব একেবারেই ভিন্ন। তাই ব্যবসায়ীদের একজন উসমান (রা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা জনাব! আপনি মালামালের দাম আরো বাড়াতে চান। তা হলে কী দাম চান আপনি?’
হজরত উসমান (রা.) হেসে দিয়ে বললেন, ‘একজন আমার এ মালের দশগুণ দাম বলেছেন। আপনারা যদি তার চেয়ে বেশি দাম দিতে পারেন, তা হলেই আমি এসব পণ্য বিক্রি করতে পারি।’
উসমান (রা.)-এর কথা শুনে ব্যবসায়ীরা বিস্মিত হলো। তারা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। তারা নিজেদের মধ্যে কানাকানি করল। তাদের মুখে মুখে প্রশ্ন, কে সেই সওদাগর? কে পণ্যসামগ্রীর দশগুণ দাম বলছে? অথচ এখানে এমনতো কেউ নেই, যে দশগুণ দাম বলতে পারে?
ব্যবসায়ীরা হজরত উসমান (রা.)-কে প্রশ্ন করল, ‘জনাব! আমরা কী ঐ ব্যবসায়ীর নাম জানতে পারি?’
উসমান (রা.) এবার মুখ খুললেন। তিনি বললেন, ‘তিনি দয়াবান আল্লাহ। তিনি আমার সওদার জন্য দশগুণ বদলা দেয়ার ওয়াদা করেছেন।’
উসমান (রা.) এর জবাব শুনে ব্যবসায়ীরা চুপ হয়ে গেল। তারা কোনো কথাই বলতে পারল না। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। হজরত উসমান (রা.) ব্যবসায়ীদের অবস্থা দেখে আশ্চর্য হলেন। তিনি হেসে দিয়ে বললেন, ‘জানি আপনারা আল্লাহর চেয়ে বেশি কিছু দিতে পারবেন না। তা হলে ঠিক আছে, আমি আল্লাহকেই আমার সব মালামাল বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
এ কথা বলার পর হজরত উসমান (রা.) এগিয়ে গেলেন। উটের পিঠ থেকে সব মালামাল নামানোর ব্যবস্থা করলেন। আর এ সব পণ্যসামগ্রী মদিনার গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
দানবীর উসমান (রা.)-এর কাজ দেখে সওদাগররা লজ্জা পেল। আজ তারা ব্যবসার সুযোগ পেল না। তাই সবাই খালি হাতে যার যার বাড়িতে ফিরে গেল।
এদিকে মদীনার ঘরে ঘরে নেমে এলো খুশির বন্যা। হজরত উসমান (রা.)-এর দান পেয়ে অজস্র অসহায় মানুষের মুখে মুখে হাসি ফুটল। অবুঝ শিশুরা অনেক দিন পর খাধার পেয়ে আনন্দে মেতে উঠল। উপোস মানুষের বুক খুশিতে নেচে উঠল। এভাবে মদীনায় খাবারের সঙ্কট ঘুচে গেল।
মদিনার লোকেরা দু’হাত তুলে হজরত উসমান (রা.)-এর জন্য দোয়া করল।
ইতিহাসের পাতা থেকে।
বিষয়: বিবিধ
১০০৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছোট থাকতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রকাশিত বইয়ে এই ঘটনাটি পড়েছিলাম।
অশেষ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন