জার্মান বংশোদ্ভূত এক আমেরিকান ইহুদী মার্গারেট মারকিউস
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ২৩ মার্চ, ২০১৪, ১২:৪৪:৩৫ দুপুর
হয়ত অনেকে জানেন বা নাম শুনেছেন তবুও ব্লগে দেয়া হয়তাবা যারা জানেন না তারা অনুপ্রানিত হতে পারেন।
(মার্গারেট মারকিউস) মরিয়ম জামিলা ১৯৩৪ সনে নিউ ইয়র্কে জার্মান বংশোদ্ভূত এক আমেরিকান ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিউ ইয়র্কে সবচেয়ে ধনাঢ্য ও ঘনবসতিপূর্ণ উপশহর ওয়েচেষ্টারে তিনি লালিত পালিত হন এবং সরকারী বিদ্যালয়ে সম্পূর্ন ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা লাভ করেন। শৈশবেই তিনি অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির বিদ্যানুরাগী ও নিরতিশয় পড়ুয়া হয়ে ওঠেন। হাতে কোন বই ছাড়া তাকে দেখাই যেত না। তার এই পড়ালেখার পরিধি স্কুল পাঠ্য তালিকা ছেড়ে বহুদূর চলে গিয়েছিলো।
যখন তিনি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখেন তখন থেকেই তিনি খুব আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠেন এবং যৌবনের সকল চপলতাকে অবজ্ঞা করতে থাকেন, যা একজন আকর্ষনীয়-সুন্দরী যুবতীর বেলায় সচরাচর দেখা যায় না। তাঁর জ্ঞান তৃষ্ণার প্রবোধ আকর্ষন ছিল ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, সমাজ বিজ্ঞান ও জীববিদ্যা। স্কুল ও মহল্লার পাবলিক পাঠাগারগুলো এবং অবশেষে নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরী তার দ্বিতীয় গৃহ হয়ে দেখা দিল।
উচ্চমাধ্যমিক স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভের পর ১৯৫২ সনে তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে লিবারেল আর্টস প্রোগ্রামে ভর্তি হোন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৫৩ সনে তিনি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার এই অসুস্থতা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে এবং কোন ডিপ্লোমা অর্জন ছাড়াই দু’বছরের মধ্যে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিত্যাগ করতে হয়। সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতাল সমূহে তিনি দু’বছর (১৯৫৭-৫৯) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাসপাতাল থেকে গৃহে ফেরার পরই তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন একজন লেখিকা হিসেবে। মারমাদুক পিকথলের অনুদিত কুরআন এবং আল্লামা মুহাম্মদ আসাদের লেখা দু’টো বই Road to Macca এবং Islam at the Cross Roads তাঁর হৃদয়ে ইসলামের প্রতি আগ্রহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
মুসলিম দেশ সমূহের সমসাময়িক কয়েকজন প্রখ্যাত মুসলিম মণীষীর সাথে পত্রালাপ এবং নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী কয়েকজন নওমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক ব্রুকলাইন ইসলামী মিশনে শেখ দাউদ আহমদ ফয়সালের হাতে তিনি ইসলামে দীক্ষিত হোন। জনাব ফয়সাল তখন তার নাম মার্গারেট মারকিউস থেকে পরিবর্তন করে মরিয়ম জামিলা রাখেন।
এরপর তিনি সারা বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে ব্যাপক পত্রালাপ শুরু করেন এবং ইংরেজীতে প্রকাশিত সকল ইসলামী পুস্তক ও সাময়িকী পড়তে থাকেন। তার এই পড়াশুনার মাধ্যমেই তিনি মাওলানা সাঈয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হন এবং ১৯৬০ সন থেকে তার সাথে নিয়মিত পত্র যোগাযোগ শুরু করেন। ১৯৬২ সনের সুরভিত বসন্তে মাওলানা মওদূদী মরিয়ম জামিলাকে পাকিস্তানে চলে এসে লাহোরে তার নিজ পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বসবাস করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। মরিয়ম জামিলা তার আমন্ত্রণকে সাদরে গ্রহণ করেন। পাকিস্তানে চলে আসার এক বছর পরে জামায়াতে ইসলামীর একজন সার্বক্ষনিক কর্মী জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ খানের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে এই ইউসুফ খানই তার সকল বইয়ের প্রকাশনার দায়িত্ব নেন।
মরিয়ম জামিলা চার সন্তানের জননী। তিনি তার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সাথে একটি বৃহৎ পরিবারে স্বামীর সকল সন্তান ও মুহাররেম আত্মীয়দের সাথে বসবাস করেছেন। বিবাহের পরও তিনি তার সাহিত্যকর্ম ও বুদ্ধিবৃত্তিক সকল প্রয়াস খুবই সফলতার সাথে চালিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তার গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো গর্ভধারণকালীন এবং দুই গর্ভের মধ্যবর্তী সময়ে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি খুবই কড়াকড়ির সাথে পর্দা পালন করে থাকেন।
বর্তমান ও অতীতের সকল প্রকৃতিসহ নাস্তিকতা ও বস্তুবাদের প্রতি তার সীমাহীন ঘৃণা এবং বিমূর্ত ও অতীন্দ্রিয় ধারণার প্রতি তার নিরবিচ্ছিন্ন কৌতূহলই তাকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান ও আবেগের সমস্ত চাহিদা পূরণ করে নির্ভেজাল সরল পথ ইসলামে দীক্ষিত করেছে। ইসলাম তাকে দিয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা।
বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার একটি সবচেয়ে বড় উপাদান হল নগ্নতা ও বেহায়াপনা, যা নারী জাতির সতীত্বের অবমাননা করে। এটা মূলতঃই শয়তানী কাজ। অধুনিক বস্তুবাদী সভ্যতা নারী-পুরুষের সমতার নামে পুরুষের সকল অংগনে নারীকে টেনে এনে যেমন মাতৃত্বের সঠিক দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে; তেমনি নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ দানের দ্বারা গোটা মানব সভ্যতাকেই একটি ভ্রষ্ট পাশবিক সভ্যতায় পরিণত করতে চাচ্ছে। মুসলিম বিশ্ব কিভাবে পাশ্চাত্যের এই ভ্রষ্ট নারীবাদী প্রচারণার শিকার হয়ে নিজ সভ্যতাকে ধ্বংস করছে তার লেখা “ইসলাম ও আধুনিক মুসলিম নারী” শীর্ষক বইয়ে সুবিজ্ঞ লেখিকা তা অত্যন্ত সুন্দর যুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন