ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি নিউ এজ’এর উপসম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে।
লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০৬ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪৪:৪৭ দুপুর
‘ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বৈধতা বর্তমান সরকারের নেই’
06 Mar, 2014 ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা নেই। কারণ, এটি একটি জাতীয় ইস্যু। এ ধরনের কোনো বিষয়ে সিদ্ধাšত্ম নিতে হলে বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা জরুরি। সে সম্পর্কে বিরোধীদের মতামত এবং সম্মতি নেয়া অত্যাবশ্যক। আর বর্তমান জাতীয় সংসদে যেহেতু কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। যারা আছে তারা যেহেতু সরকারেরই একটি অংশ। সুতরাং ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে এই সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা নেই।
বৃহস্পতিবার জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি নিউ এজ’র উপসম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বেশ কিছু যৌক্তিক দাবি আদায় করতে না পারা সত্ত্বেও ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে। যা সত্যিই দুঃখজনক । কারণ, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরও সফলতার মুখ দেখেনি তিস্তা ও অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। স্থলসীমাšত্ম চুক্তি কার্যকর করার ব্যাপারেও ভারতের কোনো আগ্রহ দৃশ্যমান হয়নি। সীমাšেত্ম নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিককে প্রতিনিয়ত গুলি করে হত্যা করছে দেশটির সীমাšত্ম রক্ষীবাহিনী-বিএসএফ। এটিও কমিয়ে আনার ব্যাপারে ততটা আšত্মরিক নয় ভারত সরকার। অথচ সেই ভারতকে তাদের দেশের একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা করে দিতে বাংলাদেশকে অনেক বেশি উদগ্রীব দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয়ের দেশের মধ্যে রেলপথ, স্থলপথ, নদীপথ ও আকাশ পথে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যেসব বিষয় উভয়ের দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিল সেগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতেও জোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির নামে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার পক্ষে সরকার দলীয় নেতাদর যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন দিল্লিকে একটি বিশেষ সুবিধা দিতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টি জোরেশোরে বলা হলেও এতে কেবল একতরফাভাবে ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ। তাতে লাভবান হচ্ছে ভারত। দেশটি তাদের অভ্যšত্মরে একটি রাজ্যের সঙ্গে আরেকটি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নতি করার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সুবিধা পাচ্ছে। আর বাংলাদেশ হচ্ছে বঞ্চিত। এক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের তেমন কিছুই পাওয়া হচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কিছু মন্ত্রী বলছেন, ট্রানটিজের সঙ্গে তিস্তা বা অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। ট্রানজিট দেয়া হলে উভয়ের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
তবে বিশেষজ্ঞর বলছেন অন্য কথা। তাদের মতে, এই ট্রানজিটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত শুধু দেশের অভ্যšত্মরেই যোগাযাগ বৃদ্ধির সুযোগ পাবে না। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ খাতে উন্নতি করবে।
সরকারের যেসব শীর্ষ মন্ত্রী-এমপিরা ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার কথা জোর দিয়ে বলছেন তারা মূলত জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য যে ভারতের অবদান তার ঋণ শোধ করা হচ্ছে। ট্রানজিট দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ মূলত ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে জাতীয় নির্বাচনে তাদের পাশে থাকার জন্য। কারণ, একতরফা ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এবং কার্যত বিরোধী দলবিহীন সংসদ গঠন করতে ভারতের অনেক অবদান রয়েছে। আর এই দেশটি একতরফতা ওই নির্বাচনে সরকার গঠনের পর সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগ সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়।
প্রতিটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ক্ষেত্রে পারস্পরিক কিছু স্বার্থ লক্ষ্য করা যায়। ট্রানজিটকে সেভাবে না দেখলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের চুক্তির ব্যাপারে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতাও নেই। কারণ, এ ধরনের চুক্তির আগে বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করতে হবে। সেখানে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় সংসদে তো প্রকৃতপক্ষে কোনো বিরোধী দল নেই। যারা আছে তারা তো সরকারেরই একটি অংশ।
বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এ ধরনের দেশ ও দেশের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধাšত্ম নেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ, দেশটি কিছু সংখ্যক মানুষের স্বার্থের কাছে জিম্মি হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের ভেবে দেখার সময় এসেছে। উৎস ঃ নিউ এজ ,আমাদের সময়
বিষয়: বিবিধ
১২৭৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন