" বিদায় খ্রিষ্টধর্ম, স্বাগত ইসলাম "

লিখেছেন লিখেছেন আমি মুসাফির ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩৬:২০ দুপুর



ফ্রান্সে ইসলামের প্রসার ও প্রভাব নিয়ে পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি তুলে ধরেছেন ফাতিমা ফেরদৌসী এবং আমি অনুপ্রানিত হয়ে আপনাদের জন্য সেটা ব্লগে উপস্থাপন করলাম ।

আমি এ বিষয়ে এতটুকু বলব যে মুসলমান অধ্যুষিত দেশ গুলোতে মুসলমানদের অবস্থা যখন চরম অবনতির দিকে কাফের দুনিয়ার কিছু কিছু দেশে ইসলামের প্রভাব অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে । তাই মুনাফেকী মুসলমান হতে আমাদেরকে বাচতে হবে এবং কাফেরদের হাতিয়ার হিসাবে নিজেরা ব্যবহৃত না হয়ে প্রকৃত মুসলমান হিসাবে আমাদের পথে চলতে হবে তাহলেই প্রকৃত শান্তি আসবে।

গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১০০ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামায কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ইসরাইল ন্যাশনাল নিউজে Catholic France, Adieu; Welcome, Islam শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

প্যারিসের সিন জেলা শহরে বাস করন ৫০০ লোক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর এখানকার বয়েসেটস গির্জার ঘণ্টা বাজত। এরপর প্রশাসনিক আদালত সেই ঘণ্টাধ্বনি বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ১৯০৫ সালের ফরাসী আইনে রাষ্ট্র ও গির্জাকে আলাদা করা হয়েছে।এই অবস্থা বর্ণনা করার জন্য ১০ বছর আগে ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী ডেনিয়েল হার্ভেউ লেগার তার ‘ক্যাথোলিসজ, লা ফিন দুন মদেঁ’ গন্থে ব্যবহার করেছিলেন এক্সকালচারেশন (Exculturation) শব্দটি। এর অর্থ হচ্ছে লড়াই এখনো শুরু না হলেও খেলা শেষ। ফরাসী ক্যাথোলিক ধর্ম সম্পর্কেই তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।

পৃথিবীর স্পটলাইট থেকে বহু বছর আগেই হারিয়ে গেছে ফ্রান্স। এক সময়ে গির্জা কন্যা নামে দেশটির যে পরিচিতি ছিল তাও এখন আর অবশিষ্ট নেই। রাষ্ট্রীয় সেক্যুলারিজম এবং ইসলামের মধ্যে ‘ক্রসফায়ারে’ পড়ে ক্যাথোলিক ফ্রান্স নৈতিকভাবে এখন মৃতপ্রায়।বিশিষ্ট লেখক রেনাল্ড কেমাস বয়েসেটসের প্রসঙ্গে স্পষ্ট করেই বলেছেন, সেক্যুলারিজম হচ্ছে মুসমিল বিজয়ীদের ট্রজান হর্স।ট্রজান হর্স অর্থ সাহসী যোদ্ধা ঘোড়া অথবা যে কাঠের ঘোড়ায় লুকিয়ে গ্রিকরা ট্রয়নগরী দখল করেছিল।

ফ্রান্সের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নেতা দালিল বুবাকিউর বলেছেন, ফ্রান্সে মসজিদের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৪০০০-এ উন্নীত করা হবে।অন্যদিকে, ইতোমধ্যেই অন্তত ৬০টি ক্যাথলিক গির্জা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর বেশ কয়েকটা মসজিদে রূপান্তরিত হবে।ফ্রান্সে জনসংখ্যা তাত্ত্বিক হিসেবে ইসলামই বিজয়ী। ফ্রান্সে অমুসলিম পরিবার প্রতি শিশুর সংখ্যা ১.২। কিন্তু মুসলিম পরিবারে শিশুর সংখ্যা এর ৫ গুণ বেশি।গত ১০০ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামায কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।

প্যারিসের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ মনসিঙ্গর ভিঙ্কট ট্রয়েস বলেন, আগে ফ্রান্সের গ্রামবাসী প্রতি রবিবার গির্জায় যেতো। এখন যায় প্রতি দুই মাসে একবার। তাই গির্জাগুলোর তিন চতুর্থাংশই খালি পড়ে থাকে।ফ্রান্সের মত একই অবস্থা পুরো ইউরোপের। বর্তমানে প্রতি ২০ জন ফরাসী নাগরিকের একজন ধর্মকর্ম পালন করেন। আছে যাজক সংকটও। ফরাসী যাজক না পাওয়ায় এখন তাদের স্থান দখল করছেন আফ্রিকার যাজকরা।

ফ্রান্সে যাজকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০০০-এ। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও যাজকের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার। ২০০০ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শিশুদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণের হার ২৫ শতাংশ কমেছে। ধর্মীয়ভাবে বিয়ের হার কমেছে ৪০ শতাংশ।ফরাসী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ১৯৬৫ সালে ফ্রান্সে নিজেকে ক্যাথলিক বলে পরিচয় দিত ৮১ শতাংশ মানুষ। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে। এ সমরের মধ্যে রবিবারের প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগদানকারীর সংখ্যা ২৭ থেকে কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৪.৫ শতাংশে।ইসলামে ধর্মান্তর ক্যাথলিক ফ্রান্সের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। প্যারিসের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শহর ক্রেটেইলে ধর্মান্তরিতদের জন্য একটি আধুনিক ও সুপ্রশস্ত মসজিদ রয়েছে।৮১ মিটার উঁচু মিনারের এই মসজিদটিতে বছরে ১৫০ বার ইসলাম গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটা ফ্রান্সে ইসলামের শক্তিশালী অবস্থানের প্রতীক।

গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে পুরনো গির্জাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে গেস্টের বাসিন্দারা ঐতিহাসিব সেইন্ট-পিয়ের-অক্স-লিয়েন্স গির্জাকে শেষ বিদায় জানায়। যুদ্ধে ধ্বংস একটি গির্জার ওপর ১৮৫৪ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে এটি পুনঃনির্মিত হয়েছিল।এটির বিদায়ের কারণ- সেখানেই কেউই আসত না। ফলে এটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। জর্জ ওয়েগেল ‘দা কিউব অ্যান্ড দা ক্যাথেড্রাল’ নামে একটি বই লিখেছিলেন।তাতে তিনি জমকালো আধুনিক সেক্যুলার ফ্রান্সের প্রতীক হিসেবে প্যারিসে প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ মিতেরাঁ নির্মিত গ্রান্ড আর্চ ডি লা বিল্টকে দেখিয়েছেন কিউব হিসেবে। আর ক্যাথেড্রাল হলো ক্যাথেড্রাল অব নটরডেম। এটি এখন পর্যটকদের জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।ফ্রান্সে ক্যাথেড্রালের ওপর জয়ী হয়েছে কিউব। তবে কিউব আর ক্যাথেড্রালের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে ক্রমবর্ধমান ইসলামিক অর্ধচন্দ্র। ছবি: দা গ্রান্ড মসজিদ, প্যারিস

বিষয়: বিবিধ

১২১৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

171951
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪৭
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : আল্লাহু আকবার।
আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের বানী সারা বিশ্বে এভাবেই উদ্ভাসিত হবে।

পড়ে আনন্দে চোখের পানি ফেললাম।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪০
126016
আমি মুসাফির লিখেছেন : এটাই তো একটা মুসলমানের অনুভুতি হওয়া উচিত।

সুরা আনফাল আয়াত ২.) সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায়২ এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।

২) অর্থাৎ যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বেড়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা, আশা-আকাংখা, চিন্তা-ভাবনা মতবাদ, পরিচিত আচার-আচরণ, স্বার্থ, আরাম-আয়েশ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ‌ ও রসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে কষ্ট স্বীকার করে নেয়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা ও পরিপুষ্ট হয়। পক্ষান্তরে, এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণ শক্তি নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। কাজেই জানা গেলো, ঈমান কোন অনড়, নিশ্চল ও স্থির জিনিসের নাম নয়। এটা শুধুমাত্র একবার মানা ও না মানার ব্যাপার নয়। একবার না মানলে শুধুমাত্র একবারই না মানা হলো এবং একবার মেনে নিলে কেবলমাত্র একবারই মেনে নেয়া হলো এমন নয়। বরং মানা ও না মানা উভয়ের মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি রয়েছে। প্রত্যেকটি অস্বীকৃতির মাত্রা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। আবার এমনিভাবে প্রত্যেকটি স্বীকৃতি ও মেনে নেয়ার মাত্রাও বাড়তে কমতে পারে। তবে ফিকাহর বিধানের দিক দিয়ে তামাদ্দুনিক ব্যবস্থায় অধিকার ও মর্যাদা নির্দিষ্ট করার সময় মানা ও না মানার ব্যাপাটির একবারই গণ্য করা হয়। ইসলামী সমাজে সকল স্বীকৃতি দানকারীর (মু’মিন) আইনগত অধিকার ও মর্যাদা সমান। তাদের মধ্যে মানার (ঈমান) ব্যাপারে বহুতর পার্থক্য থাকতে পারে। তাতে কিছু আসে যায় না। আবার সকল অস্বীকৃতিদানকারী একই পর্যায়ের যিম্মী বা হরবী (যুদ্ধমান) অথবা চুক্তিবদ্ধ ও আশ্রিত গণ্য হয়, তাদের মধ্যে কুফরীর ব্যাপারে যতই পার্থক্য থাক না কেন।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৩
126059
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : ঈমানের খোরাক উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
171976
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : তবে ফ্রান্সের রাজনীতিতে ও সমাজে মুসলমানদের প্রভাব নাই বললেই চলে। অথচ এখানে জনসংখ্যার দশ শতাংশের বেশি মুসলমান।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪২
126017
আমি মুসাফির লিখেছেন : যদিও ফ্রান্সের রাজনীতিতে ও সমাজে মুসলমানদের প্রভাব নাই তবুও মুসলমানদের সামাজিক প্রভাব তো পড়ছে । এটাই তো কম পাওয়া না।
ধন্যবাদ।
172209
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আমি যে ষ্টেটে থাকি, ওখানে তিন ,চারটা
মসজিদ ছিল। আজ এখানে ৫০টির উপরে
মসজিদ রয়েছে। ৯/১১ পরে ইসলামের প্রসার ঘটছে বেশী। অনেক ধন্যবাদ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
126018
আমি মুসাফির লিখেছেন : আপনি ভাবুন আপনি যে ষ্টেটে থাকেন ওখানে আগে মাত্র তিন ,চারটা মসজিদ ছিল আজ সেখানে ৫০টির উপরে
মসজিদ রয়েছে এটা মুসলমানদের কম গৌরবের কথা ।
আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৪
126060
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর।
172434
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১৩
আহমদ মুসা লিখেছেন : ইসলাম যে তরবারীর জোরে প্রসার লাভ করেনি। তার বাস্তব দলীল হচ্ছে আধুনিক যুগের ফ্রান্সের জনগনের ইসলামের দিকে পত্যাবর্তন। লেখক অনেক ধন্যবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের জানানোর জন্য।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১০
126142
আমি মুসাফির লিখেছেন : বিষয়টি অবগত হবার জন্য আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File