প্রাইম ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্সের স্কিম জালিয়াতি
লিখেছেন লিখেছেন ির্যাতন ১৪ মার্চ, ২০১৪, ১০:১৯:৪০ রাত
নিজস্ব প্রতিবেদন : লাইফ ইনস্যুরেন্স বা জীবন বীমা মানেই হল জীবিতাবস্থায় জীবনের এবং মৃত্যু বরণ করার তার পরিবারের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এই যুক্তিটি নীতি বাক্যের মাধ্যমে অনেক পূর্ব থেকেই বিশ্বের দরবারে প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ ব্যক্তিদেরকে যে কোন ভাবে বুঝিয়ে তাকে লাইফ ইনস্যুরেন্স তালিকাভুক্ত করে তার কাছে থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করাই হল কর্মচারীদের কাজ। প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মচারীদের কোন বেতন নির্ধারিত না থাকলেও চাপার জোরে কাউকে লাইফ ইনস্যুরেন্সে অংশ গ্রহণ করিয়ে সংগৃহীত সেই সদস্যদের জমা-কৃত টাকার একটা বৃহত্তম অংশই সেই শ্রেণীর কর্মচারীগনই পেয়ে থাকে। যাহোক অন্যান্য কোম্পানির দেখা-দেখি প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি একটি ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি হিসাবে প্রকাশ পায়। মুলতঃ কোম্পানিটির নামের সাথে ইসলামী সংযুক্ত থাকাতে খুব অল্প দিনেই তারা বাজার পেয়ে বসে।
সাধারন মানুষ তাদের জীবনের কষ্টের টাকার কিছুটা নিজের বিপদ আপদ এর জন্যই সংগৃহীত করতে চায় । এর ফলে লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মীদের চাপার জোর আর কোম্পানির লিখিত কূটনীতির মারপ্যাঁচের ফাঁদে তারা আটকে যায় খুব সহজেই। বীমা করার শুরুর দিকে তাদের লোভনীয় বিভিন্ন স্কিম থাকলেও আসলে আমরা কিসে জরিয়ে যাচ্ছি সেটা বুঝতেই পারিনা। বীমা করার সাথে সাথে আপনি তাদের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছেন। শুধু ভাল ভাল স্কিম আর কথা বলেই টাকা নিতে তারা প্রস্তুত। আপনার টাকা আপনি উঠাতে পারবেন না যতণ না তাদের অফিস আপনার ১০০ বারের মত যাওয়া হয়। আবার টাকা টাও পুরোটা পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। বীমা করার সময় আপনাকে তাদের অফিসেও যেতে হবেনা। ঘরে বসেই আপনি আপনার লাইফের বীমা করে নিতে পারবেন। মাসে মাসে আপনার বীমার টাকা ঘরে বসেই জমা দিতে পারবেন। এর জন্যে একজন মাঠকর্মী নিয়জিত থাকবে। খোঁজ নিলে যানা যাবে হয়ত সে তার কোম্পানির মালিকের নাম অথবা ম্যানেজারের নামটিও যানেনা। প্রশ্ন জাগবে তাহলে তারা কিভাবে কোম্পানির কর্মী হল। খুব সহজেই একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মী হওয়া যায়। আপনার এলাকায় আপনার পরিচিতের মাঝে ৩-৪ টা বীমা করিয়ে দিতে পারলেই আপনি বীমা কোম্পানির কর্মী হয়ে যাবেন। হ্যা, ঐ বীমা কোম্পানিতে আপনার হয়ত বড় বোন অথবা ভাই কাজ করে। খুব ভাল পোস্টেই আছেন তারা। তাদের কাজ শুধু কাগজে কলমে। আসল কাজটি করছে এই মাঠকর্মী।
একজন মানুষকে নতুনভাবে ইনস্যুরেন্স করানোর জন্য যে কত প্রকার কৌশলই ব্যবহার করা হয়,সেগুলোর আর কোন ইয়ত্তা নেই। হয়ত কখনো একজন মানুষ মৃত্যু বরন করলে তাকে সেই টাকা দেয়ার জন্য বিশাল সেমিনার বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যাতে করে তাদের সকল ভাল দিকগুলো জন সম্মুখে প্রকাশ পায় এবং বেশি বেশি করে মানুষ মৃত্যুর পরে তার উত্তরসূরিদের নিরাপত্তার জন্য লোভে পরে লাইফ ইনস্যুরেন্স করে। কিন্তু একজন মানুষ বিশ বছরের হিসাবে লাইফ ইনস্যুরেন্স করে দু বৎসর টাকা জমা করার পর যদি বন্ধ করে দেয়, তাহলে যে তার পূর্বের জমা-কৃত সকল টাকাই বাতিল হয়ে যায়, এই তথ্যগুলো কিন্তু একেবারেই বলে না।
প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে একজন বীমাক্রিত সাধারন মহিলার সাথে। তার সাথে আমাদের সাাতকারটি তুলে ধরলাম।
প্রতিনিধি - আপনার বীমাটি কে করেছে? কিভাবে আপনি এ কোম্পানির সাথে জড়িত হলেন?
ভুক্তভুগী - আমার এলাকারই একজন আছেন। একই এলাকার তাই আমাদের সম্পর্কটাও একটু ভালো। প্রায়ই আমাদের বাসায় আসা যাওয়া। হঠাৎ একদিন কথায় কথায় তুলল বীমার কথা। কোম্পানিতে তার বড় ভাই আর বোন কাজ করে অনেক বড় পোস্টে। বীমা করলে লাভ আছে জেনে আমিও চিন্তা করলাম। বিপদ আপদে কাজে লাগবে।
প্রতিনিধি - বীমা করার সময় আপনি তাদের অফিস দেখেছিলেন? অথবা তাদের অফিসে গিয়েছিলেন?
ভুক্তভুগী - না। উনি বলল যে, কোন ঝামেলা নেই। আপনার যেতেও হবে না। কাগজপত্র আমি নিয়ে আসব আর ছবি দিয়ে দিবেন। মাসে মাসে আমি এসে টাকা নিয়ে যাব। কোন ঝামেলা নেই।
প্রতিনিধি - কত বছর চালিয়েছেন? এখন বন্ধ করতে চাইছেন কেন?
ভুক্তভুগী - আমি ১৮-১৯ মাস টাকা জমা দিয়েছি। আমার মেয়ের শরীর ভালো না। ঢাকায় এনে ভালো ডাক্তার দেখান প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তার খরচের জন্য কোথাও টাকা একসাথে করতে পারছিলাম না। ভাবলাম বীমাটা বন্ধ করে দিব। আমার মেয়ে যদি এখনই ভালো না থাকতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমিয়ে কাকে দিব?
প্রতিনিধি - তারপর? টাকা তুলতে পেরেছেন? ১৮-১৯ মাস দিয়ে থাকলে আপনার মেয়েকে সুস্থ করার জন্য ভালো টাকাই হাতে পাবেন।
ভুক্তভুগী - টাকা আর পেলাম কই? তুলতে গিয়েই তো যানতে পারলাম আসল ঘাপলাটা। যে আমার বীমা করে দিল তাকে ব্যাপারটা জানালাম। শুরু হয়ে গেল টানা হেঁচড়া। ওদের অফিসে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। অনেক ঘুরেও শেষমেষ টাকাতো হাতেই পেলাম না, কিন্তু জানতে পারলাম লাভের টাকা দূরে থাক আমার আসলের পুরো টাকা পাবোনা। এত অল্প সময়ে আমার টাকা দিয়ে কোম্পানি কোনো ব্যাবসা করতে পারেনি। কোম্পানির তিপুরন হিসেবে আমার টাকা কাটা যাবে। বলেন আমার কি দোষ ছিল?? আমার বিপদের জন্যে আমি টাকা রেখেছি। তারা অনেক স্কিম দেখিয়েই আমার বীমা করেছে। আমিতো তাদের কাছে যাইনি। বীমা করার সময় এটাতো বলেনি যে, আমার টাকা নিয়ে তারা ব্যাবসা করবে। আমার টাকা আমি তাদেরকে ব্যাবসা করতেতো দেইনি। তাহলে তির ভাগ আমি কেন দিব? আমাদের মত সাধারন মানুষ যারা অন্ধ বিশ্বাসে নিজের টাকা বিপদ আপদের জন্যে বীমা কোম্পানিগুলোতে জমা রাখে। তারা কোথায় যাবে? কার কাছে তার কষ্টের টাকা আদায়ের জন্যে আবেদন জানাবে? মেয়েটা আমার অসুস্থ। ভাবলাম টাকাটা তুলে মেয়ে কে সুস্থ করে তুলবো। কিন্তু এখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বলতে বলতে কান্না করে দিলো ভদ্রমহিলা।
কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার চোখের কোনে পানি কখন চলে আসলো বুঝতেই পারলাম না। সত্যিই তো, কার কাছে যাবে এ শ্রেণীর সাধারন মানুষ। যারা অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে। যা কিছু পায় সেটাও বীমা কোম্পানিগুলো চুষে নিয়ে যায়। খোঁজ নিলে যানা যায়, কোম্পানিগুলোর মালিক কোটিপতি, বড় শ্রেণীর মানুষ। যাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা করাতো দূরে থাক। পুলিশ কাচারি করলে, উল্টো নিজেই ফেঁসে জাবার ভয় কাজ করে। সাংবাদিক অথবা টিভি কোম্পানিগুলোতে বললেও হয়ত কাজ হবে ওতটুকুই যে, তারাও টাকা অথবা তাদের পত্রিকা ও টিভির জন্যে বিজ্ঞাপন পেয়ে খুশি হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দিবে।
ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সব থেকে যে বিষয়টি ফলাও করে বেড়ায়, তাহলো “আল্লহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন”। লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কোথায় কোন ব্যবসা করেন? তারা ব্যবসা করে কোথায় তিগ্রস্ত হয়েছেন? তাদের ব্যবসায় কোন কাঁচামাল আছে কি? তাদের ব্যবসার সামগ্রী ক্রয়ের যায়গা কোনটি আর বিক্রয়ের যায়গাই বা কোনটি?
আমার মনে হয় তাদের দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ের বাজার হল সাধারণ জনগণ,আর বিক্রয়ের বাজার হল ব্যাংক বা ধনি ব্যক্তিগন। প্রশ্নানুসারে একজন মানুষ ১,০০,০০০/ টাকার চার কিস্তি বীমায় ১,৪০,০০০/ টাকা জমা করে চতুর্থ কিস্তিতে সে সর্বমোট ১,০০,০০০/ পায়। লাভের কথা না হয় পরেই থাকল,তাহলে নগদ জমা-কৃত টাকার বাকি ৪০,০০০/ কোথায় যায়? মনে রাখা দরকার যে, এই টাকাগুলোই হল চাকুরী-পাপ্ত কর্মচারী এবং কর্মকর্তারা মিলে মিশে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকে।
প্রত্যেক মানুষ মৃত্যু বরন করার পর একমাত্র একমাত্র লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সকল প্রকার সাহায্য তথা যে কয়টি টাকা তার পাওয়ার কথা,তা দিলেই সেই পরিবারের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে,এই কথা বিশ্বাস করা একেবারেই শিরকি গুনাহ এবং লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্মীদের কর্তৃক একপ্রকার বিশেষ রকমের প্রতারণা মাত্র। এই ধরনের লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যারা মৃত্যু বরন করেছেন,তাদের পরিবার ছাড়া সবাইই তিগ্রস্ত হয়েছে।
আমি হয়ত তেমনটা ভালো লিখতে পারি না। কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারি যে, সাংবাদিক অথবা বিভিন্ন গনমাধ্যমের লেখকদের সাধারন পিরিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। যাদের কথা ছোট্ট একটি চীৎকারেই নিঃশেষ হয়ে যায়, যাদের আর্তনাদ মাটি চাপা পরে যায়, তাদের হয়ে লড়া উচিত। আজ অন্য কেউ ভুক্তভুগী। কাল আমাদের মাঝেরই কেউ হতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন