“৪২ বছরের উন্নয়ন কিচ্ছা, রেকর্ড রিজার্ভ আর পিঁয়াজের আকাশ ছুঁয়া দাম।
লিখেছেন লিখেছেন তানভীর আরিফ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:১১:২৫ সন্ধ্যা
১৯৭১ আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। স্বপ্নের পাহাড় বুনেছিল এই জাতি, আস্থা রেখেছিল জাতীয় নেতাদের উপর। মন-প্রাণ উজাড় করে ভালবেসেছিল দেশকে যেমনি ভালবাসে আজও। চেয়েছিল একটু শান্তি-সুখ, একটু নিজের মত ভাববার সুযোগ, মন-প্রাণ খুলে স্বজাতির সাথে কথা বলার আনন্দ, চিৎকার করে বলার সুযোগ-এই দেশ আমার, আমরা স্বাধীন। চেয়েছিল শোষণহীন সমাজ যেখানে মিলবে অর্থনৈতিক মুক্তি। চেয়েছিল স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা, সকল ধর্মের মানুষের বৈচিত্রময় মিলনমেলার দেশ। শুধুমাত্র স্বাধীনতার চেতনা আর অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এই দুটো শব্দ দিয়ে বাকী চাওয়া-পাওয়া অস্বীকার করার সুযোগ এখন আর নেই।
তাই উন্নয়নের কথন শুরু হয়েছে। জাতির জীবনে এসেছে অনেক উন্নয়ন ও অর্জন, ইহা অস্বীকার করা আর বোকামির পরিচয় দেওয়া এক কথা। ঠিক যেমন আমরা শিশু হতে কিশোর, যুবা কিংবা বুড়ো হয়েছি, আমাদের উন্নতিও তদ্রুপ। এখানেই আমাদের নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রশ্ন। শিশু, কিশোর হলেই কি আমরা সন্তুষ্ট? আমরা কি চাই না সুস্থ-সবল, শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞ্যান-বিজ্ঞ্যানে উন্নত কিশোর বা যুবা? এই বিষয়টি পরিস্কার হলেই আমাদের উন্নয়ন কতখানি গতানুগতিক পরিস্কার হয়ে যায়।
১৯৭১-৭২ এর বছরে একজন সরকারী চাকুরিজীবি তার এক মাসের বেতন দিয়ে এক ভরি স্বর্ণ কিনতে পারতেন, কিংবা দুটো কোরবানির গরু কিনতে পারতেন, অবসরের ভাতায় জায়গা কিনে তাতে একটি বাড়ী করতে পারতেন, সন্তানের জন্য চির-চেনা দুধ-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারতেন, দালান ছিলনা তবুও বৃষ্টির ঝির-ঝির শব্দে অল্প খিচুড়ির মন ভোলানো স্বাদে পরিবারের সবাই তৃপ্ত হতেন। এরই মাঝে ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় মনুষ্য সৃষ্ট ছিল সেই দুর্ভিক্ষ যা আবারও নেতৃত্বের অযোগ্যতার দিকটিই ইংগিত করে। ১৯৭৫ এর হত্যা, ১৯৮১ এর হত্যা, কিংবা হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা, বিগত কয়েক বছরের হত্যা-গুম প্রমাণ করে দেয় আমাদের সমাজের অস্থিরতার বিষয়টি। এগুলো কি সামাজিক অনুন্নয়নের অংশ নয়? আমরা কি পেরেছি সত্যিকারের উন্নয়ন অর্জন করতে? অধিকন্তু পেয়েছি অস্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এবং হিংসা-বিদ্বেষে ভরপুর একটি সমাজ। এসব নিয়ে কি উন্নয়ন হয়? শহুরে দুর্গন্ধময় যুদ্ধ-বিদ্ধস্থ রাস্থার চাইতে ইট বিছানো মাটির ঘ্রাণের রাস্থা-ঘাট কি সুখময় নয়? আসলে যতখানি না ইট সুরকির উন্নয়ন আমরা দেখছি তার চেয়ে বেশী সামাজিক অনুন্নয়ন দেখছি।
২০১৩ আজ সরকারী চাকুরীজীবী তার এক মাসের বেতনে কি সেই ৭১-৭২ এর মতন এক ভরি স্বর্ণ কিংবা দুটো কোরবানির গরু কিনতে পারেন? এক মাসের বেতন শেষ হতে কয় দিন লাগে? সন্তানের লিখা-পড়ার খরছ চালাতে গিয়ে কতজন বাবা-মা নিজের থালার ভাতগুলোও সন্তানদের মুখে তুলে দিচ্ছেন সেই কথা কি আমাদের নেতৃত্ব জানেন? অবসর ভাতার অর্থে এক টুকরো মাথা গুজার ঠাই যোগাড় করা কি সম্ভব? এই রকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র গণ্ড মূর্খরাই আনন্দিত হতে পারেন অব্যবহৃত বিশাল রিজার্ভের পরিমাণ দেখে যা প্রকৃত অর্থে অতি সামান্য। এই অর্থ রিজার্ভে না রেখে সরকারের প্রতিশ্রুত একটি পরিবার একটি চাকুরি প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিগত সাড়ে চার বছরে সরকারের এবং দেশের অনেক বড় একটি অর্জন হতো বলে আমি মনে করি।
কিছুদিন আগে দেশের রিজার্ভ নিয়ে একটি লিখায় রিজার্ভের বর্তমান অবস্থায় আনন্দিত না হয়ে বরং এর ব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করে বিনিয়োগে সহযোগিতার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিছু বন্ধু রিজার্ভ এর ব্যবহার কোথায় হয়, কিভাবে হয় তা না জানার কারণে আমার এই লিখার ভিন্ন মর্ম বুঝেছিলেন। তাদের উদ্দ্যেশ্যে আমি আবারও লিখছি, কারণ আজকে বুঝাতে সহজ হবে। এখন পিঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁয়া, ব্যবসায়ীরা বলছেন আরো দাম বাড়তে পারে এবং এই অবস্থা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এখানে রিজার্ভের উত্তম ব্যবহারের সুযোগ ছিল, বিশ্ব বাজারে পিঁয়াজের দাম যখন কম ছিল তখন সরকার চাইলে দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে রিজার্ভের কিছু অর্থ পিঁয়াজ আমদানিতে ব্যবহার করতে পারতেন। এখন রিজার্ভের রেকর্ড হল, কিন্তু পিঁয়াজ আমদানিতে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাবহার করতে হবে যা সরাসরি একটি দেশের রিজার্ভের অর্থের অপচয় ব্যতীত আর কি হতে পারে?
বিষয়: রাজনীতি
১২২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন